আপনি কোন হাই গ্রাফিক্সের গেম খেলছেন, গান শুনছেন বা কারো সাথে চ্যাটিং করছেন। এমন সময় আপনি লক্ষ্য করলেন যে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি চার্জ হঠাৎ শেষ হয়ে আসছে। আপনি তখনই আপনার স্মার্টফোনটি চার্জারের সাথে সংযুক্ত করলেন এবং আপনার কাজ অব্যাহত রাখলেন।
একটু ভেবে দেখুন আর নিজেকে প্রশ্ন করুন-
- আপনি যা করলেন তা আসলে কতটা নিরাপদ?
- এটি কি কোনভাবে আপনার স্মার্টফোনটির ব্যাটারির ক্ষতি করছে?
- এর ফলে আপনার স্মার্টফোনে ভবিষ্যতে কি কোন মারাত্বক সমস্যা দেখা দিতে পারে?
উপরের সবগুলি প্রশ্নের উত্তর একদম সহজ, আর তা হচ্ছে “হ্যাঁ”। এখন হয়তো আপনার জানতে ইচ্ছা করছে যে, আমার এমন বলার কারণ কি? আপনি হয়তো মনে মনে এমন একটি কারণ খুঁজছেন যা আপনাকে এই কাজটি পুনরায় না করতে সাহায্য করবে।
বর্তমানে ১ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ডিভাইস ব্যবহার করছেন। বলা যায় যে, এত বিপুল সংখ্যাক মানুষের অধিকাংশ মানুষই তাদের স্মার্টফোনের ব্যাটারী সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
তবে আইওএস এর তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ আইওএস এর তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড অনেক বেশি পরিমাণে চার্জ শোষণ করে থাকে। তাই, মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার এবং স্মার্টফোনের সঠিক যত্ন নেয়ার মাধ্যমে বেশি দিন টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আর এর জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যাটারির যত্ন, বিশেষ করে ব্যাটারী চার্জ করার সঠিক নিয়ম জানা।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি চার্জ
বর্তমান বাজারের প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোনই দীর্ঘক্ষণ চার্জ ধরে রাখার সক্ষমতা দাবি করে। একটি সাধারণ স্মার্টফোনের ব্যাটারীর চার্জ ৭-৮ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। একটি স্মার্টফোন কতক্ষণ পর্যন্ত চার্জ ধরে রাখতে সক্ষম, এই বিষয়টি যারা স্মার্টফোন ক্রয় করে থাকেন, তাদের কাছে মূখ্য একটি বিবেচনার বিষয়।
কিন্তু তার পরেও বেশিরভাগ মানুষই কিছুদিন ব্যবহারের পর থেকেই তাদের স্মার্টফোনের ব্যাটারীর চার্জের স্থায়ীত্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আপনার ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্য হয়ে থাকলে, আগে বিবেচনা করে দেখুন যে, হয়তো ভুলভাবে চার্জিং এর অভ্যাসের কারণে আপনার ফোনের ব্যাটারীর ক্ষতি আপনি নিজেই করছেন।
যেহেতু আমাদের সবার স্মার্টফোনই সবার কাছে অতি প্রিয়, তাই দেরি না করে চলুন জেনে নিই স্মার্টফোন চার্জিং এর করণীয় এবং বর্জনীয় কাজগুলি সম্পর্কে।
ফাস্ট চার্জার ব্যবহার:
সবসময় ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করা আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারীর স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। এই প্রক্রিয়াতে অতিমাত্রায় ভোল্টেজ সম্পৃক্ত, যা আপনার ফোন তাৎক্ষনিভাবে গরম করে ফেলে।
সব ফোনেই ফাস্ট চার্জিং এর সাথে সাথে স্বাভাবিক চার্জিং এরও ব্যবস্থা থেকে থাকে। তাই যতটা সম্ভব ফোন স্বাভাবিকভাবেই চার্জ করার অভ্যাস করতে হবে এবং একান্ত খুবই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ফোন ফাস্ট চার্জার দিয়ে চার্জিং না করাটাই ভালো। ফাস্ট চার্জার ব্যবহার না করেও স্মার্টফোনের ব্যাটারি দ্রুত চার্জ করার উপায় আছে। এরপরও যদি ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করতে হয়, তবে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলুন।
আর ফাস্ট চার্জার ব্যবহারের সময় যদি দেখেন যে, ফোন অতিরিক্ত গরম হয়ে গিয়েছে, তাহলে ফোনের পাওয়ার বাটন কয়েক সেকেন্ড চেপে ধরে রাখুন। এরপর আপনার ফোনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসলে পুনরায় অন করুন। শুধু চার্জিং এর সময়েই নয়, গেম খেলা বা অন্যা কোন ভারি কাজের সময়েও যদি ফোন অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, তাহলে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে চলুন।
নিজের চার্জার ব্যবহার করুন:
আপনি যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, যারা প্রায় সময়ই অন্যের চার্জার দিয়ে যেখানে সেখানে ফোন চার্জ করেন, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। আপনি আপনার অজান্তেই আপনার ফোনের ব্যাটারীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। চার্জের প্রয়োজনের সব সময় আপনার নিজের চার্জারটিই ব্যবহার করুন। কারণ অন্যান্য চার্জার আপনার ফোনের ব্যাটারী, চার্জ ধারণ ক্ষমতা এবং আয়ুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
যদি কোন কারণে অন্য কারো চার্জার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়েই পড়ে, তাহলে তার ফোনের চার্জারের ইনপুট-আউটপুট ভোল্টেজ এবং আপনার ফোনের চার্জারের ইনপুট-আউটপুট ভোল্টেজ একই কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
চার্জ সম্পূর্ণ শেষ হতে দিন:
অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী তাদের ফোনের চার্জ সম্পূর্ণ শেষ হবার পূর্বেই পুনরায় চার্জিং করে থাকেন। চার্জ শেষ হয়ে আসতে থাকলে প্রতিটি ফোনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জার সংযুক্ত করার জন্য সংকেত দিয়ে থাকে। প্রত্যেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মনে রাখা উচিৎ যে, ব্যাটারীরও একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত চার্জ গ্রহণের ক্ষমতা থাকে। বার বার অকারণে চার্জ করার ফলে ব্যাটারীর দীর্ঘায়ু অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
প্রতিটি লি-আয়ন ব্যাটারীই ৩০-৮০ শতাংশ চার্জ ধারণ কালীন সময়ের মধ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠ উপযোগিতা প্রদর্শনে সক্ষম হয়ে থাকে। যদি চার্জ তার নিচে নেমে আসে, তখন আপনি অবশ্যই ফোনটি চার্জ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। একইভাবে ৮০ শতাংশ চার্জ হয়ে যাবার পর আপনি চাইলে সেটি পুরোপুরি চার্জ না করেও ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যাটারীকে যদি আমরা আমাদের নিজের শরীরের সাথে তুলনা করি, তাহলে বলা যায় যে আমাদের যেমন মারা যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে বিশ্রাম করার প্রয়োজন নেই। অথবা পুরোপুরি ৮-৯ ঘন্টা ঘুম না হলেই যে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারবো না, এমন কোন শর্ত নেই। স্মার্টফোনের ব্যাটারীর ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই ধরনের।
ভুল স্থানে ও ভুল সময়ে ফোন চার্জ করা:
এক্ষেত্রে আপনার মনে হতেই পারে যে, ফোন চার্জ করার জন্য আবার জায়গা নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা কি? হ্যাঁ, আপনাকে অবশ্যই ফোন চার্জিং করার জন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে খুব বেশি তাপমাত্রা নেই।
আমি ইতিপূর্বেই বলেছি যে, লি-আয়ন ব্যাটারী একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রাতে তার সবচেয়ে ভালো ফলাফল প্রদর্শণে সক্ষম। ভুল স্থানে স্মার্টফোন চার্জ করলে অনাকাঙ্খিতভাবেই আপনার ফোনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং এটি ভবিষ্যতে খুব বেশিদিন ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। একই কথা অনেক কম তাপমাত্রায় চার্জিং এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আবার অনেকে দেখা যায়, নতুন কোন ফোন কেনার পরে আগের ফোনটির ঠিকমতো যত্ন নেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফোনটি অব্যবহৃত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি আপনার ব্যাক-আপ ফোনটি সঠিকভাবে নিয়মিত চার্জ না করেন, তাহলে পরবর্তীতে যদি ঐ ফোনটি আবার কোন কারণে ব্যবহারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তখন হয়তো সেটি চালু করতে আপনার যথেষ্ট কষ্ট পোহাতে হবে। অথবা চালু হলেও অনেক কম সময়েই ফোনটি চার্জ হারিয়ে ফেলবে।
স্মার্টফোন আজকের দিনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরই একটি অংশ হয়ে উঠেছে। আর কেনই বা উঠবে না, আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলিকে সহজভাবে সম্পাদন করতে এটি আমাদের অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। তাই দ্রুত সময়ে ব্যাটারীর চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া আমাদের সবার জন্যেই অনেক বেশি বিব্রতকর। দ্রুত চার্জ শেষ হওয়ার পেছনে আরো একটি বিশেষ কারণ কিছু অ্যাপের ব্যবহার। কাজেই, জেনে নিন যে-সব অ্যাপ আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারির মারাত্মক ক্ষতি করছে।
পূর্বে একটি ব্যাটারীর কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করলে অনেকেই পুনরায় নতুন ব্যাটারী কিনে নিতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বেশির ভাগই স্মার্টফোনই অপ্রতিস্থাপনযোগ্য লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারীযুক্ত হওয়ায় ব্যবহারকারীদের আরো বেশি বিপদে পড়তে হয়।
আমি এটা স্বীকার করি যে, ক্যাডমিয়াম ব্যটারীর চাইতে এ ধরনের ব্যাটারী অনেক দীর্ঘায়ু সম্পন্ন। কিন্তু ব্যবহারকারী যদি এর সঠিক প্রয়োগ না করেন, তাহলে এসব ব্যাটারীও অল্প সময়েই কাজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই স্মার্টফোনের ব্যাটারি চার্জ সংক্রান্ত সমস্যা এড়িয়ে চলার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কি কারণে সমস্যা হয় সেগুলি জানা এবং সেগুলি না করা।
Leave a Reply