আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি যদি চার্জ নেয়া বন্ধ করে দেয় কিংবা ঠিকমত চার্জ না হয়, তবে ভাববেন না যে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গিয়েছি। আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এর প্রতিকার আপনার চিন্তার চেয়ে সহজ। এক্ষেত্রে, আপনি নিচের ১০টি সহজ কাজ করে দেখতে পারেন, কোন না কোনটি দিয়ে দেখবেন আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি চার্জ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে, আপনার স্মার্টফোনটি আবার স্মার্টলি চার্জ নেয়া শুরু করেছে।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি চার্জ সমস্যা ও সমাধান
চার্জিং সমস্যা দুই রকমের হতে পারে, একটা একেবারেই চার্জ না হওয়া, অন্যটা ধীর গতিতে চার্জ হওয়া। এ দুটি’র যেটিই হোক না কেন, সমাধান পেয়ে নিচের ১০টি সম্ভাব্য সমাধানের ভেতর।
চার্জিং ফিন বাঁকা থাকলে ঠিক করে দিন
প্রায়ই কোন না কোন কারণে ইউএসবি পোর্ট ও ইউএসবি চার্জার একটা আরেকটার সঙ্গে ঠিকমত কানেশন করতে না পারলে অর্থাৎ কানেকশনে কোন বিঘ্ন ঘটলে চার্জে সমস্যা দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে, প্রথমে ফোনটি বন্ধ করুন, এরপর ব্যাটারিটি খুলে ফেলুন। তারপর ভেতরে দেখুন চাজিং ফিনগুলো কোনটি বাঁকা হয়ে রয়েছে কিনা। যদি বাঁকা হয়ে থাকে, তবে টুথপিকের মত ছোট কিছু দিয়ে সাবধানে সোজা করে দিন।
ইউএসবি পোর্ট চেক করুন
আপনি নিশ্চয়ই বেশিরভাগ ব্যবহারকারির মত আপনার স্মার্টফোনটি জিন্সের পকেটে রাখেন। কিংবা মেয়ে হলে আপনি হয়তো পার্সের ভেতর, ব্যাগের ভেতর কিংবা যে কোন চামড়া বা কাপড়ের তৈরি ক্যারিং ব্যাগে রাখেন। প্রায়ই জিন্সের পকেট কিংবা কাপড়ের ব্যাগ থেকে ছোট ছোট গুটি ওঠে আর আমাদের অজান্তেই সেগুলো ইউএসবি পোর্টে ঢুকে পড়ে।
এক্ষেত্রে, ইউএসবি পোর্টটি ভাল করে চেক করুন, দেখুন পোর্টের ভেতর কোন কিছু আঁটকে আছে কিনা কিংবা কোন ময়লা জমেছে কিনা। যদি জমে থাকে, কম্প্রেসের সাহায্যে বাতাস প্রবেশ করিয়ে কিংবা নরম ও ছোট কোন জিনিস দিয়ে সাবধানে পরিস্কার করে নিন।
চার্জার ক্যাবল পরিবর্তন করুন
আপনার অরিজিনাল চার্জারের ক্যাবলটি খুলে ফেলুন আর অ্যাডাপ্টের সাথে অন্য একটি ক্যাবল লাগিয়ে দেখুন। তখন যদি ফোন চার্জ হতে শুরু করে, তাহলে বুঝবেন ক্যাবলটিতেই সমস্যা। ভাল মানের একটি ক্যাবলের ব্যবস্থা করুন কিংবা চার্জারটিই পরিবর্তণ করে ফেলুন।
চার্জার অ্যাডাপ্টর চেক করুন
ক্যাবল পরিবর্তণ করেও যদি দেখেন যে একই অবস্থা, তাহলে এবার অ্যাডাপ্টর চেক করুন। অন্য একটি অ্যাডাপ্টের সাথে ক্যাবল লাগিয়ে দেখুন চার্জ হয় কিনা। হলে বা না হলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন সমস্যা আসলে ক্যাবলের না অ্যাডাপ্টরের।
ওয়াল প্লাগ চেক করুন
ওয়ালে লাগানো প্লাগ, যেখান থেকে চার্জারের অ্যাডাপ্টরে বিদ্যুৎ পাস হয়, সেটিও চেক করুন। অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না যে, প্লাগটি বিকল হয়ে আছে। অন্য প্লাগে লাগিয়ে দেখার কথাও অনেক সময় মাথায় আসে না। এখন থেকে প্লাগের বিষয়টিও মাথায় রাখুন।
অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করুন
অনেক সময় অরিজিনাল চার্জার নষ্ট হয়ে গেলে, আমরা যেনতেন কোন চার্জার কিনে ফেলি। এ রকম চার্জার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুব নিম্নমানের হয় যা আপনার ব্যাটারি, এমনকি ফোনটিকেই বিকল করে দিতে পারে। তাই, নিরাপত্তার খাতিরে একটু বেশি খরচ হলেও অরিজিনাল চার্জারই কিনুন।
মনে রাখুন – নিরাপত্তাই ফার্স্ট প্রায়োরিটি
কখনোই পানির কিংবা আগুনের কাছাকাছি কোন স্থানে ফোন চার্জ দেবেন না। এমনকি, খুব গরম হয়ে থাকা প্লাগ কিংবা অ্যাডাপ্টরেও চার্জ দেবেন না। কেননা, চার্জ দেয়ার সময় একটু এ-দিক ও-দিক হলেই ধ্বংসাত্বক কিছু ঘটে যেতে পারে, মনে রাখুন – নিরাপত্তাই প্রথম।
ওভার চার্জ থেকে সতর্ক থাকুন
প্রায়ই আমরা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মোবাইল চার্জে দিয়ে বিছানায় যাই। কিন্তু মধ্যরাত কিংবা শেষ রাতের দিকে ফুল চার্জ হয়ে গেলেও ঘুমে থাকার কারণে আনপ্লাগ করতে পারি না। ফলে, সারারাত ধরে ওভার চার্জ হওয়ার ফলে দ্রুত ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়।
ব্যাটারি পরিবর্তণ করুন
কোন ব্যাটারিই চিরকাল টেকে না। আপনি যদি টেকার আশা করেন তো সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সুতরাং, ব্যাটারি চার্জ নিতে দেরী করলে কিংবা ব্যাটারি বিকল হয়ে গেলে সেটা সহজভাবে মেনে নিন। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাটারি পরিবর্তণ করে ফেলুন।
সঠিক সোর্স থেকে চার্জ দিন
আপনি যদি আপনার ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ থেকে মোবাইল চার্জ দিয়ে থাকেন, আর ভাবেন যে এত স্লো কেন, ব্যাটারিটা বুঝি গেল! তাহলে, জেনে রাখুন যে, ওয়াল সকেট কিংবা প্লাগ থেকে যত দ্রুত চার্জ হয় তার অন্তত ২ থেকে ৩ ভাগ কম চার্জ হয় কম্পিউটারের প্লাগ থেকে। সুতরাং, সঠিক সোর্স হিসেবে ওয়াল প্লাগ ব্যবহার করুন।
সফট্ওয়্যার আফডেট দিন অথবা পুরনো ভার্সণে ফিরে যান
সফট্ওয়্যার আফডেট কিংবা অ্যান্ড্রয়েডের নতুন ভার্সণ অনেক সময়ই পুরনো স্মার্টফোনের সঙ্গে স্মার্টলি ম্যাচ করতে পারে না। এক্ষেত্রে, ব্যাটারি ডাউন হতে পারে কিংবা চার্জ নেয়ায় অধিক সময় নিতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি ২/৩ বছর পর হঠাৎ একবার আফডেট দিয়ে থাকেন, তবে এই সমস্যার সন্মুক্ষিন হতে পারেন।
এক্ষেত্রে, হয় নিয়মিত আফডেট দিন অথবা অ্যান্ড্রয়েড এবং সফট্ওয়্যারের পুরনো ভার্সণেই ফিরে যান। কেননা, নতুন ভার্সণগুলো সব সময় আরো নতুন ফিচার এবং সিকিউরিটি যুক্ত হয়ে আফডেট হয়। আর মাঝখানে গ্যাপ দিয়ে অনেক দিন পর হঠাৎ আফডেট দিলে প্রায়ই ব্যাটারি ড্যামেজ হয়।
স্কাইপি কিংবা ইমোতে ব্যবহারের সময় চার্জ নয়
প্রায়ই আমরা স্কাইপি কিংবা ইমোতে কথা বলার সময় খেয়াল করি যে, চার্জ কম। তখন কথা বলা অবস্থাতেই তাড়াতাড়ি চার্জে দিয়ে কথা চালাতে থাকি। এরকম ক্ষেত্রেও চার্জিং স্লো হয়ে যায়, অনেক ক্ষেত্রে ব্যাটারি ড্যামেজ হতে শুরু করে। সুতরাং, স্কাইপি, ইমো কিংবা যে কোন ভিডিও কলিং সফট্ওয়্যার ব্যবহারের সময় চার্জ দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
চার্জ সিগন্যালের দিকে খেয়াল রাখুন
কিছু ফোন আছে যেগুলো বার বার ব্যাটারি লো দেখায় অথচ লো দেখানোর পরেও দার্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এমনও হয় যে, লাল দাগ দেখানোর পরও ১ ঘন্টা কথা বলা কিংবা ইউটিউব ভিডিও দেখা অনায়াসেই চালিয়ে দেয়া যায়। সুতরাং, ব্যাটারি লেবেলের দিকে খেয়াল রাখুন, আপনার ফোনের ব্যাটারি আসলে কখন লাল সিগন্যাল দেখায়।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি চার্জ সংক্রান্ত ১০টি সমস্যা ও সেগুলোর সমাধান পেলেন। আশা করি, ব্যাটারি নিয়ে আপনাকে আর বেশি ভাবতে হবে না। এই সাধারণ কাজগুলো করে আপনি নিজেই আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
Leave a Reply