স্মার্টফোনে দিনের প্রায় অর্ধেকটা সময় কাটায় এ রকম মানুষ খুঁজে বের করা এখন একটুও কঠিন কাজ নয়। ঘরে কিংবা বাহিরে দিনের বেশিরভাগ সময় স্মার্টফোনে কাটানো অনেকটা মহামারির মতো হয়ে গেছে। তবে স্মার্টফোন ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব হলেও স্মার্টফোনের প্রোডাক্টিভ ব্যবহার করা কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়।
স্মার্টফোনের প্রোডাক্টিভ ব্যবহার
যে কোন জায়গায় আপনি যদি পাশের মানুষটির থেকে কোন কাজে একটু বেশি দক্ষ হন, কিংবা আপনি দক্ষ এ-রকম কাজের সংখ্যা একটু বেশি থাকে, তাহলে আপনার গুরুত্বটুকু যে বেশি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই দক্ষতাটুকু অর্জন করার জন্য স্মার্টফোনে কাটানো সময়গুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারে, যদি আপনি চান। আজকে কথা বলব স্মার্টফোনের কিছু প্রোডাক্টিভ ব্যবহার নিয়ে যেগুলো আপনাকে বিভিন্ন কাজে দক্ষ করে তুলবে।
ডকুমেন্ট তৈরী ও সম্পাদনা
কম্পিউটারের একদম বেসিক কাজ হিসেবে ওয়ার্ড, এক্সেল বা পাওয়ার পয়েন্টের ব্যবহার করার জ্ঞানটুকু সব ক্ষেত্রেই কমবেশি কাজে লাগে। তবে এই কাজগুলো ইচ্ছে করলেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই খুব চমৎকারভাবে করা যায়। এর জন্য যে কম্পিউটার বা খুবই পাওয়ারফুল স্মার্টফোন লাগবে ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। একদম কমদামী একটি স্মার্টফোনেও কাজগুলো খুব সুন্দরভাবে করা যায়। এমনকি পিডিএফ এর কাজগুলোও সহজেই করা যায় স্মার্টফোন থেকে। ওসিআর এর জন্য স্মার্টফোন থেকে পারফেক্ট কিছু আছে বলে মনে হয় না।
তবে কাজ যেহেতু স্মার্টফোনের মাধ্যমে করা হয়, তাই খুব বেশি বড় কাজ এখানে করার চেষ্টা না করাই ভালো। কোন সিভি/অ্যাপ্লিকেশন, এসাইন্টমেন্ট, ছোটখাটো প্রেজেন্টেশন, কিংবা হালকা পাতলা হিসেবের কাজ, পিডিএফ তৈরী করা এসব ব্যাপারে নিশ্চিন্তে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন।
ছবি ও ভিডিও সম্পাদনা
শুধু ফিল্টার ব্যবহার করে প্রোফাইল পিকচারটাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা নয়, চাইলে হাতের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটাতেই করা যায় ছবি সম্পাদনার প্রাথমিক কাজগুলো। কালার কম্বিনেশন, ড্রয়িং এমকি লোগো ডিজাইনের মতো কাজটিও ফোনে করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে এখন স্মার্টফোন অনেক এগিয়ে। সাদামাটা একটি স্মার্টফোন দিয়েই এখন চমৎকার সব রঙের খেলা দেখানো যায়। Adobe এর ক্রিয়েটিভ অ্যাপগুলোকে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। এছাড়া ভিডিও এডিটিং এর প্রাথমিক কাজ গুলো অ্যান্ড্রয়েডে খুব স্বাচ্ছন্দ্য করে ফেলা যায়। এ জন্য ব্যবহার করতে পারেন AndroVid , VidShow , PowerDirerctor , VivaVideo এর মতো App গুলো। এছাড়াও, দেখে নিতে পারেন অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য সেরা পাঁচটি ফ্রি ফটো এডিটিং অ্যাপস্।
ফটোগ্রাফি
এজন্য একটু ভালোমানের ক্যামেরা যুক্ত ফোন প্রয়োজন। তবে লাগবেই যে এরকম কোন কথা নেই। সাদাকালো মুডেও অসাধারণ সব ফটোগ্রাফি করা যায়। স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিন দিন উন্নত হওয়ার ফলে, স্মার্টফোন ফটোগ্রাফির এখন ভালো গুরুত্ব রয়েছে। অনলাইনে বাংলায় ফটোগ্রাফির ব্যাপারে অনেক লেখা আছে সেগুলো পড়ে শুরু করে দিতে পারেন আজ থেকেই। ছবি তোলার পর সম্পাদনার কাজটিও স্মার্টফোনেই করে নেওয়া যাবে।
এছাড়া স্মার্টফোন ফটোগ্রাফি করে আপনি খুব সহজেই গুগলের একজন লোকাল গাইড হয়ে যেতে পারেন। নিজের আশেপাশের কিংবা বেড়াতে গিয়েছেন এ সব জায়গার চমৎকার সব ছবি তুলে গুগল ম্যাপে দিতে পারেন। যা আপনাকে সারা বিশ্বের সাথে সুপরিচিত হওয়ার একটি সুযোগ করে দিবে। সুতরাং, দেরি না করে শুরু করুন এবং আরো সুবিধার জন্য ব্যবহার করুন হাই কোয়ালিটি ছবি ও ভিডিওর জন্য ৫টি অ্যান্ড্রয়েড ক্যামেরা অ্যাপ।
প্রোগ্রামিং
প্রোগ্রামিং আমাদের দেশে এখনও তেমন জনপ্রিয় হতে পারেনি, প্রোগ্রামিং এর ব্যাপারে এক ধরণের ভীতি কাজ করে আমাদের মধ্যে। স্কুলের গণিত কিংবা ইংরেজি বিষয়ের মতো মনে হয় এটিকে। অনেকেই ভাবি যে এটা হচ্ছে জ্ঞানিগুণি মানুষদের ব্যাপার। এর জন্য পড়াশোনা করা প্রয়োজন। কিংবা অনেকের মনের মধ্য প্রশ্ন জাগে, এটা দিয়ে আসলে কী করে? এটা শিখে উপকারটা কী?
তবে এখন এই ভাবনার উন্নতি হচ্ছে। হাইস্কুল পর্যায়ে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সবাই একটু একটু করে বুঝতে পারছে, আগামীদিনের সবচেয়ে কাজের জ্ঞান হবে প্রোগ্রামিং।
একটা সময় প্রোগ্রামিং সাধারণ মানুষদের মোটামুটি ধরা-ছোঁয়ার বাইরের বিষয় ছিলো। পারসোনাল কম্পিউটার এবং তারপরে স্মার্টফোন হাতে আসার পরে কথাটি একেবারে মিথ্যা হয়ে গেছে। স্মার্টফোন হাতে এখন প্রত্যান্ত অঞ্চলের একজন মানুষও একজন অসাধারণ প্রোগ্রামার হয়ে উঠতে পারে। নিজের যুক্তি আর চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়ে যে কোন সময় যে কোন জায়গায় বসে সমস্যা সমাধান করতে পারেন।
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেই শুরু করতে পারেন প্রোগ্রামিং শিরোনামে একটা লেখা লিখেছিলাম। এখনও স্মার্টফোনের এই সুবিধা না উপভোগ করলে লেখাটি থেকে ঘুরে এসে শুরু করে দিতে পারেন।
লেখালিখি ও ব্লগিং
লেখালিখির একটু আধটু অভ্যাস থাকাটা সব সময়ই চমৎকার একটি গুণ! গত কয়েক বছর হলো সেটাকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ব্লগিং। হাতের স্মার্টফোনটি ব্যাবহার করে অবসরে নিজের চিন্তাগুলো বা জানা বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারেন ব্যক্তিগতো কিংবা পাবলিক ব্লগে। এর জন্য আপনাকে সাহিত্যিকদের মতো লিখতে পারতে হবে, সেরকম নয়। মোটামুটি নিজের কথাগুলো বোঝানোর ক্ষমতা থাকলেই ব্লগ লেখা চলে।
আয়ের ব্যপারটা তো থাকছেই। পেইড আর্টিকেল রাইটার কিংবা নিজের ব্লগে দেওয়া বিজ্ঞাপন থেকে মোটামুটি অংকের একটি অর্থ উপার্জন করা খুবই সম্ভব ব্যাপার।
অর্থ উপার্জন বা মানুষের সাথে জ্ঞানকে শেয়ার করে নেওয়ার আনন্দটুকু বাইরেও এটি আপনার কর্মজীবনে যোগ করবে দারুণ একটা স্কিল। যেটা যে কোন ক্ষেত্রেই প্রচণ্ড রকম মূল্যবান। আপনি যদি স্মার্টফোন দিয়ে বাংলায় ব্লগিং করতে চান, দেখে নিতে পারেন স্মার্টফোনে লেখালেখির জন্য চমৎকার ৫টি অ্যান্ড্রয়েড বাংলা কি-বোর্ড।
যুগের সাথে অভ্যাসের পরিবর্তণ আসাটাই স্বাভাবিক। তবে অভ্যাসের পরিবর্তণটা যদি ইতিবাচক দিকে হয় তাহলে আর দুশ্চিন্তার কিছু থাকে না। স্মার্টফোনের প্রোডাক্টিভ ব্যবহার করে নিজের জানা বিষয় গুলোকে যদি আরও একটু ঝালিয়ে নেওয়া যায় কিংবা নতুন একটা কাজে একটু ধারণা আনা যায় অথবা কাজের ক্ষেত্রে জীবনকে আরও সহজ করে নেওয়া যায় তাহলে লাভ ছাড়া তো ক্ষতি নেই!
Leave a Reply