হাতে ঘড়ি পরার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই আছে। এটি যেমন ব্যক্তিত্বের মাঝে এক ধরণের আভিজাত্য এনে দেয়, তেমনি একজন মানুষের সময়জ্ঞানকেও আরও একটু প্রখর করে তোলে। বর্তমান একটু ফ্যাশন সচেতন এবং প্রযুক্তি পছন্দ করে, এমন প্রায় বেশিরভাগ মানুষের হাতেই স্মার্টওয়াচ নামের বিশেষ ধরণের হাতঘড়ি দেখা যায়। স্মার্টওয়াচ ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে তারা সবাই ওয়াকিবহাল। আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ হাত ঘড়ির সাথে এর কোন অমিল খুঁজে না পেলেও কাজের দিক থেকে স্মার্টওয়াচ বহুগুণে এগিয়ে রয়েছে সাধারণ হাতঘড়ির চেয়ে।
স্মার্টওয়াচ অনেকেরই এখন নিত্য ব্যবহার্য প্রযুক্তি পণ্য, ক্ষেত্র বিশেষে জনপ্রিয়ও বটে। কিন্তু আমরা যারা স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করি না বা এর সম্পর্কে খুব বেশি জানি না, তাদের কাছে এই সুবিধাগুলো অনেকটাই অস্পষ্ট। আর দামের কারণেই হোক বা প্রযুক্তি সম্পর্কে বাজে ধারণার জন্যই হোক, স্মার্টওয়াচের নাম শুনতে পারে না এমন মানুষেরও অভাব নেই আমাদের চারপাশে। এরকম সবার জন্যই স্মার্টওয়াচ নিয়ে আজকেই এই লেখা।
স্মার্টওয়াচ ব্যবহারের সুবিধা
স্মার্টওয়াচ কী বা এটি কীভাবে কাজ করে সেটা আমরা এখানে আলোচনা করব না। বরং দেখব স্মার্ট ওয়াচ এমন ১০টি চমৎকার দিক, যার ফলে স্মার্টওয়াচ নিয়ে আপনার অনেক দ্বিধা এবং ভ্রান্তি দূর হবে। সেই সাথে মনে হবে স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করা মোটেও অপচয় বা খারাপ কিছু না, বরং সুযোগ থাকলে সাধারণ ঘড়ির পরিবর্তে স্মার্টওয়াচই ব্যবহার করা প্রয়োজন।
এখন আর কথা না বাড়িয়ে এবার সরাসরি মূল আলোচনা, স্মার্টওয়াচের চমৎকার দিকগুলোতে এবার আলোকপাত করি।
০১. ফিটনেস ট্র্যাকিংঃ
প্রথমেই, ফিটনেস ট্র্যাকিং। স্মার্ট ওয়াচের এই সুবিধাটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি চমকপ্রদ লাগে। যেন হাতে বাঁধা মিনি ডায়াগনেস্টিক সেন্টার। আপনার এই মুহূর্তে ব্লাড প্রেশার কত, বা হার্ট রেট কর এটা জানার জন্য আর কোথাও দৌড়াদৌড়ি করার প্রয়োজন নেই, যখন আপনার হাতে একটি স্মার্টওয়াচ থাকবে। নিঁখুতভাবে এসব শারীরিক অবস্থা পরিমাপ করে জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, আপনাকে আরেকটু স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে পারে স্মার্টওয়াচ।
০২. হাতঘড়িতে প্রয়োজনীয় নোটিফিকেশনঃ
কখনও খেয়াল করেছেন ঠিক কোন কাজে আপনার স্মার্টফোনটি সবচেয়ে বেশিবার আনলক করেন? হ্যাঁ, নোটিফিকেশন চেক করার জন্য। কিন্তু সবসময় সব অবস্থায় মোবাইল বের করে সেগুলো চেক করা বা জবাব দেওয়া বেশ ঝামেলার। সেক্ষেত্রে স্মার্টওয়াচ এর একটি চমৎকার সমাধান। আপনার স্মার্টফোনটি স্পর্শ না করেই হাতে থাকা স্মার্টওয়াচটির আপনি জরুরী নোটিফিকেশন দেখে সেই অনুযায়ী জবাব দিতে পারবেন।
০৩. তাৎক্ষণিকভাবে কল রিসিভ এবং মেসেজ রিপ্লাই দিন স্মার্টওয়াচেঃ
জরুরী কল রিসিভ বা মেসেজের তাৎক্ষণিক রিপ্লাই দেওয়ার জন্যও যে সবসময় স্মার্টফোন বের করা লাগবে এমন কোন কথা নেই, স্মার্টওয়াচ থেকেই সেই কাজটি করা সম্ভব। তাছাড়া, অনেক সময় স্মার্টফোন সাইলেন্ট থাকায় সেসব মিস হয়ে যাওয়ার যে সম্ভাবনা থাকে, স্মার্টওয়াচ সেটি একেবারেই দূর করে দেয়। কথা বলার পাশাপাশি ভয়েস ইনপুট কীবোর্ড ব্যবহার করে মেসেজের রিপ্লাই বা নোট লেখার কাজটিও করা যায় স্মার্টওয়াচে!
০৪. স্মার্টফোন খুঁজে দেয় স্মার্টওয়াচঃ
হঠাৎ ফোন খুঁজে না পাওয়ার অভিজ্ঞতাটুকু হয়ত সবারই আছে। আরও বিপদ বেড়ে যায় যখন সেই ফোনটি সাইলেন্ট থাকে। সেক্ষেত্রে আপনার হাতের স্মার্টওয়াচটি ফোন খুঁজে বের করে দিতে পারে এক নিমিষেই। স্মার্টওয়াচে মাত্র কয়েকবার স্পর্শ করেই জিপিএস ব্যবহার করে ফোনের তাৎক্ষণিক অবস্থান দেখতে পারবেন এর স্ক্রিনে। স্মার্টওয়াচ ব্যবহারের সুবিধা হিসেবে অসাধারণ এটি।
০৫. নিরাপত্তার জন্য স্মার্টওয়াচঃ
মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইটির হাতে স্মার্টওয়াচ থাকলে সে কোনভাবেই মেলায় হারিয়ে যেতে পারত না। হ্যাঁ, স্মার্টওয়াচ যেরকম জিপিএস ব্যবহার করে এর সাথে সংযুক্ত স্মার্টফোনের অবস্থা বলে দিতে পারে ঠিক সেরকম স্মার্টফোনেও একটি স্মার্টওয়াচের তাৎক্ষণিক অবস্থান দেখা সম্ভব। তাই ছোট ছেলেমেয়ে বা নিজের খেয়াল রাখতে পারে না এরকম যে কারো হাতে স্মার্টওয়াচ থাকলে ফোনের মাধ্যমে দেখতে পারবেন তার তাৎক্ষণিক অবস্থান।
০৬. ভ্রমণের সঙ্গী স্মার্টওয়াচঃ
একদমই অচেনা নতুন কোথাও ঘুরতে গেলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই থাকে। তবে হাতে থাকা স্মার্টওয়াচটি আপনাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবে। এর শক্তিশালী জিপিএস আপনাকে প্রতিমুহূর্তে বর্তমান অবস্থান জানানোর পাশাপাশি চাইলে যে কোন জায়গায় যাওয়ার ডিরেকশন দিয়ে দিবে ম্যাপ ব্যবহার করে।
০৭. নিখুঁতভাবে আউটডোর অ্যাক্টিভিটি রেকর্ড করেঃ
ফিটনেস ট্র্যাকিং এর মতো এটিও আমার কাছে খুব পছন্দের। ধরুন আপনি সাইকেল চালাচ্ছেন, এখন কোন রাস্তা ধরে কতক্ষণ কত গতিতে সাইকেল চালালেন এ সব তথ্যই আপানাকে জানাবে স্মার্টওয়াচ। শুধু সাইকেল নয়, হাঁটাহাঁটি, ব্যায়ামসহ যে কোন ধরণের আউটডোর এক্টিভিটি একদম নিখুঁতভাবে রেকর্ড করে আপনাকে জানাবে স্মার্টওয়াচ, যে সুবিধা সত্যিকার অর্থেই অনেক কাজের। কমন স্মার্টওয়াচের পাশাপাশি শুধু মাত্র আউটডোর এক্টিভিটি রেকর্ড করার করা ভিন্ন ভিন্ন ডেডিকেটেড স্মার্টওয়াচ রয়েছে বাজারে।
০৮. আরও বেশি কানেক্টেটেড থাকার জন্য স্মার্টওয়াচঃ
স্মার্টওয়াচ যেহেতু হাতে পরে থাকা হয়, তাই সারবক্ষণিকভাবেই এটি ব্যবহারকারীর চোখের সামনে থাকে। তাই স্মার্টফোনের চেয়ে অনেক বেশি কানেক্টেড থাকা যায় অন্য সবার সাথে। যেটা সাধারণত অনেক ভালো একটি বিষয়। এছাড়া অনেক স্মার্টওয়াচই এখন বাজারে পাওয়া যায় যেগুলো টানা দুই থেকে তিনদিন ব্যাটারী ব্যাক-আপ দিতে থাকে। এর বাইরে ডেডিকেটেড স্মার্টওয়াচগুলো এক চার্জে মাসখানেক পর্যন্ত চলে যায়।
০৯. স্মার্টওয়াচে এন্টারটেইনমেন্টঃ
ওয়ারলেস হেডোফোন ব্যবহার করে গান বা রেডিও শোনার সময় সেটা পরিবর্তণ কিংবা সাউন্ড বাড়ানোর কমানোর কাজটি করা যায় স্মার্টওয়াচে। এমনকি স্মার্টফোন ব্যবহার না করে সরাসরি ঘড়ি থেকেই সরাসরি গান শোনা সম্ভব।
১০. ওয়াচফেস কাস্টোমাইজেশনঃ
ওয়াচফেস হচ্ছে, আপনি যখন স্মার্টওয়াচটি সাধারণ ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করবেন তখন তার স্ক্রিণে কেমন ঘড়ি দেখাবে সেটা। সাধারণ ঘড়ি যেখানে সারাজীবন একই রকম দেখাবে, সেখানে আপনি চাইলেই আপনার রুচি এবং সুবিধা অনুযায়ী স্মার্টওয়াচের চেহারাটা বদলে নিতে পারবেন যে কোন সময়। উপরের ছবির দিকে তাকালে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি স্মার্টওয়াচকে স্মার্টফোনের চেয়ে বেশি উপকারী মনে করি। তার কারণ খুবই সহজ, স্মার্ট ফোন দরকারী হলেও এটি এক ধরণের অ্যাডিকশন তৈরী করতে পারে, যেটা স্মার্ট ওয়াচের ক্ষেত্রে হয় না বললেই চলে। স্মার্টওয়াচ ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে জানলেন। সুতরাং, নিশ্চিত থাকেন এটি প্রতিদিনই আপনাকে সাহায্য করবে একটি সহকারীর মতো, কিন্তু অযথা একটা মিনিটও আপনি ব্যায় করতে পারবেন না এতে!
এখন এতোকিছু জানার পরে সিদ্ধান্ত আপনার হাতে। আজকের আলোচিত এই সুবিধাগুলো যদি আপনার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করা উচিৎ।
Leave a Reply