যখন তখন যেকোন জায়গায় ভিডিও ধারণ করা এখন তেমন কোনও কঠিন কাজ নয়। কারণ, আমাদের প্রত্যেকের হাতেই হাই-রেজ্যুলেশনের ক্যামেরাসহ স্মার্টফোন রয়েছে। কাজেই, কোথাও কোন সুন্দর কিংবা আকর্ষণীয় দৃশ্য দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও করে নেয়া যায় যা পরবর্তীতে অনেকেরই মনোরঞ্জণে ভূমিকা রাখে।
শুধু অন্যকে আনন্দ দেয়ার জন্যেই নয়, নানা রকম প্রয়োজনেও আজকাল ভিডিও ধারণ করতে হয়। কোথাও যাচ্ছেন আর দেখলেন চোখের সামনেই একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ব্যাস্, স্মার্টফোন বের করে ভিডিও ধারণ করে নিলেন, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে আপলোড করে দিলেন। আর পরবর্তীতে এই ভিডিও দিয়েই ছিনতাইকারী শনাক্ত করা গেল।
অনেক সময় দেখা যায় কোন চলতি ঘটনা কোন টিভি সাংবাদিক আসার আগেই আপনি ভিডিও ধারণ করে নিলেন আর শেয়ার করে দিলেন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে। কিংবা আপলোড করে শেয়ার করে দিলেন ফেসবুকে। ব্যাস্, মুহূর্তের মধ্যেই ভিডিওটি হিট খেয়ে গেল।
আনন্দের জন্যে হোক আর সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে হোক, যে ধরণের ভিডিওই ধারণ করুন না কেন, আপনাকে সেটি এডিট করতে হবে। না হয়, দেখা যাবে ভিডিওর ভেতর অনেক অযাচিত ক্লিপ থেকে যাবে যা ভিডিওর সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দেবে।
ক্যাপচার করা যে কোন ভিডিওকে সুন্দরভাবে উপস্থাপণের জন্যে বেশ কিছু ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো পিসিতে ইনস্টল করে নিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু সব সময় যে নিজের পিসি কাছে থাকবে তার তো গ্যারান্টি নেই। ধরা যাক, জরুরী ভিত্তিতে একটা ভিডিও এডিটিং করা দরকার হয়ে পড়েছে। আর আপনি রয়েছেন কোনও বন্ধুর বাসায় যার পিসিতে আপনার ব্যবহৃত সফটওয়্যারটি নেই। এরকম অবস্থায় অনলাইন ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারই আপনার ভরসা। আসুন, এ রকম কিছু অনলাইন সফটওয়্যার বা টুলের সঙ্গে পরিচিত হই।
অনলাইন ভিডিও এডিটর
ভিডিও এডিটিং এখন আর এক্সপার্ট ভিডিও এডিটরদের হাতেই সীমাবদ্ধ নয়। যদিও ভিডিও এডিটিং শেখার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো থেকে যে কেউ এক্সপার্ট হয়ে উঠতে পারেন। তবে এক্সপার্ট হওয়া ছাড়াও যে কেউই চাইলে এখন ভিডিও ধারণ করে নিজেই এডিট করে নিতে পারেন। আর এর জন্যে দরকার সহজভাবে ব্যবহার করা যায় এমন কিছু অনলাইন ভিডিও এডিটর।
ClipChamp
ভিডিও এডিটিং এর জন্যে আপনার যা কিছু প্রয়োজন তার প্রায় সবই আছে ClipChamp অনলাইন এডিটরে। সহজভাবে ভিডিও এডিটিং সুবিধার পাশাপাশি কম্প্রেসর, কনভার্টর এবং ওয়েবক্যামসহ আরো অনেক বাড়তি সুবিধা রয়েছে এই অনলাইন ভিডিও এডিটিং সফট্ওয়্যারে।
ট্রিমিং, কাটিং, স্পিড কন্ট্রোলসহ যাবতীয় যত ধরণের এডিটিং অপশন প্রয়োজন তার সবগুলোই আছে এই এডিটরে। সহজ ইন্টারফেসের এই অনলাইন এডিটরে আরো রয়েছে টাইটেলব্লক ও ফিল্টারিং সুবিধা। কয়েকটি সিম্পল ক্লিক আর ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ অপশনের মাধ্যমেই আপনি যে কোন ভিডিও খুব সহজেই এডিট করে নিতে পারবেন ClipChamp মাধ্যমে।
WeVideo
স্ক্রিণ ক্যাপচার, ভিডিও তৈরি, ভিউ ও শেয়ার করার সুবিধাসহ আরো অনেক কিছুই পাবেন WeVideo নামের এই অনলাইন ভিডিও এডিটিং সফট্ওয়্যারে। এটি আপনি ম্যাক, ক্রোমবুক ও যে কোন পিসি কম্পিউটার ব্রাউজারে ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি, আপনার অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইফোনেও এটি ব্যবহার করে যে কোন ভিডিও এডিট করতে পারবেন।
WeVideo আপনাকে যে কোন প্লাটফর্মে ভিডিও প্লেব্যাকের জন্যে ফোর কে রেজ্যুলেশন সুবিধা দিচ্ছে। নিজস্ব ক্লাউড স্টোরেজ সুবিধা থাকার কারণে আপনার এডিট করা ভিডিও সেভ করে রাখতে পারবেন। সেই সাথে যেখানে কাজ করে থেমে গিয়েছেন বা পজ দিয়ে অন্য কাজে যুক্ত হয়েছেন, ফিরে এসে ঠিক ওখান থেকেই আবার এডিটিং শুরু করতে পারবেন।
Magisto
এই অনলাইন ভিডিও এডিটরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে হাইটেক এ ওয়ান ভিডিও মেকার যা আপনার যে কোন ভিডিওকে দারুণ একটি গল্পে রূপ দিতে সক্ষম। মাত্র কয়েকটি ক্লিকেই আপনি আপনার স্টোরি নির্ভর ভিডিওটি শেয়ার করার জন্যে রেডি করে ফেলতে পারবেন।
আপনি যদি একজন অনলাইন প্রোডাক্ট মার্কেটার হয়ে থাকেন, তবে এখন পর্যন্ত বের হওয়া অনলাইন এডিটরের মধ্যে এটাই হবে আপনার জন্যে সেরা। কারণ, এই এডিটর আপনাকে শুধু ভিডিও এডিট করার ক্ষেত্রেই নয় বরং প্রোডাক্ট ভিডিও ও মার্কেটিং ভিডিও তৈরিতে দারুণভাবে সাহায্য করবে। এই এডিটরে এমন কিছু টুলস্ ও ফিচার রয়েছে যেগুলো মূলত ভিডিও মার্কেটারদের জন্যেই ইন্টিগ্রেট করা হয়েছে।
Adobe Spark Video Maker
নাম দেখেই বুঝতে পারছেন এটি অ্যাডোবি ফ্যামিলির সদস্য। এই অনলাইন ভিডিও মেকার আপনাকে দ্রুত ভিডিও এডিট করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার সুযোগ দিচ্ছে। অসাধারণ এই অনলাইন এডিটরটি বিগিনার এবং এক্সপার্ট উভয় ধরণের ভিডিও এডিটরদের জন্যেই তৈরি করা হয়েছে।
Adobe Spark Video Maker যেমন অনলাইনে ব্যবহার করা যায়, অন্যদিকে অ্যাপল কোম্পানীর আইফোনেও ব্যবহার করা যায়। আইফোনের ব্যবহারের জন্যে এই টুলটিকে একটি অ্যাপে রূপ দেয়া হয়েছে। আর অ্যান্ড্রয়েডে ব্যবহারের জন্যে এখন পর্যন্ত কোন ভার্সণ বের হয়নি। তবে ভবিষ্যতে বের হবে বলে এর অফিশিয়াল সাইট থেকে জানা গিয়েছে।
Online Video Cutter
আপনি যখনই অনলাইন ভিডিও কাটার এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন, মূলত তখনই আপনি ভিডিও এডিটিং শুরু করে দিতে পারবেন। কারণ, সিম্পল ভিডিও এডিটিং এর জন্যে যা কিছু দরকার তার সবই রয়েছে Online Video Cutter এ এবং এটি সব ধরণের ফ্যান্সি ডিজাইন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। ফলে, দ্রুত ও সহজভাবে ভিডিও এডিট করার জন্যে এটি অনন্য।
Online Video Cutter এ যে কোনও ফরমেটের ভিডিও আপলোড ও এডিট করা যায়। ট্রিম করা, ভিডিও কাটা ও রোটেট করার জন্যে যে অপশনগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ। আর এতে থাকা সব ফিচারই আপনি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন।
এই ছিল সেরা কিছু অনলাইন ভিডিও এডিটর নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আশা করি, এখানকার সবগুলো অনলাইন টুলই আপনি চেক করে দেখেছেন এবং নিজে ব্যবহারের জন্যে সবচেয়ে পছন্দেরটি বাছাই করে রেখেছেন। আপনার পছন্দ যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্যে এই লেখাটি আপনার টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন। এতে করে পরবর্তীতে আবার আপনাকে অনলাইন ভিডিও এডিটিং টুল খুুঁজে বেড়াতে হবে না।
Leave a Reply