আমাদের দেশে সিনেমা প্রেমী মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ভালো মুভিগুলির প্রতি বরাবরই আমাদের আকর্ষণটা একটু বেশি থাকে। অবসর সময়ে একটি দারুন মুভি যেন বিনোদনের এক নতুন মাত্রা যোগ করে। বর্তমানে আমাদের দেশেও ভালো মানের মুভি তৈরী হলেও অনেক আগে থেকেই হিন্দি, চাইনিজ, জাপানিজ এবং হলিউডের মুভিগুলোর প্রতি আমাদের বিশেষ একটা দুর্বলতা কাজ করে। আর মুভি যদি হয় রোমান্টিক তাহলে সেই তালিকায় চাইনিজ মুভিগুলোর নামই সবার আগে নিতে নিতে হয়।
রোমান্টিক মুভি তৈরীর দিক থেকে বরাবরই চাইনিজ নির্মাতারা অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে আছে। একটি সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়কে তারা আবেগ ও বাস্তবতার সমন্বয়ে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন বহুদিন আগেই।
চাইনিজ রোমান্টিক মুভিগুলোর এত জনপ্রিয়তার বড় একটি কারণ হলো এর গল্পের নতুনত্য। গতনুগতিকভাবে রোমান্টিক মুভিগুলোতে আমরা প্রায়ই একই ধাঁচের গল্প দেখে থাকি। শুধু মাত্র হয়তো গল্পের কিছু নির্দিষ্ট প্লটে পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু চাইনিজ মুভির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু আলাদা।
অনেক চাইনিজ মুভিতেই দেখা যায় দুজন মানুষের জীবনের আদি অন্ত না দেখিয়ে শুধুমাত্র তাদের জীবনের একটি বিশেষ ঘটনার উপর ভিত্তি করেই মুভির গল্প তৈরী হয়, যা একে অন্যান্য মুভি থেকে একেবারেই আলাদা করে তোলে। এ রকমই ৪টি রোমান্টিক মুভি নিয়ে আমাদের আজকের লিভিং লাইফের পোস্ট।
চাইনিজ রোম্যান্স মুভি
যে ৪টি রোমান্টিক মুভি নিয়ে আলোচনা করা হল, সেগুলোর সবটিই চায়নাসহ সারা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে দারুণভাবে সমাদৃত হয়েছে। প্রতিটি ছবিই রেটিং এর দিক থেকে অন্যান্য মুভির তুলনায় অনেক আছে। কাজেই, ইউটিউব কিংবা গুগলে সার্চ দিয়ে দেখে নিতে পারেন মুভিগুলো। আশা করি, প্রতিটি রোমান্স মুভিই আপনাদের ভাল লাগবে। এছাড়া, আগে পোস্ট করা ২০১৮ সালের কয়েকটি ইংলিশ রোমান্স মুভি নিয়ে লেখা রিভিউটিও ঘুরে আসতে পারেন।
The Sorcerer and the White Snake
যারা ফ্যান্টাসী এবং রোম্যান্স এর সংমিশ্রণে মুভি দেখতে পছন্দ করেন, তাদের এই মুভিটি মারাত্বকভাবে ভালো লেগে যাবে। ছবিটিতে একটি ইচ্ছাধারী সাপের সাথে একজন সাধারণ মানুষের প্রেমের গল্পকে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিটির মারাত্বক সিজিআই আর ভিজুয়্যাল ইফেক্ট আপনাকে মুগ্ধ করবে। পাশাপাশি সাপ এবং মানুষের প্রেম কাহিনী এবং তাদের জীবন চলার পথের বিভিন্ন প্রতিকূলতা আপনাকে গল্পের মধ্যে ধরে রাখবে।
যদিও মুভিটির শেষে তাদের আলাদা হতে হয়, তবে আমার মতে এটাই মুভিটির শ্রেষ্ঠ দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি যা আপনাকে কাঁদতে বাধ্য করবে।
ছবিটিতে অভিনয় করেছেন জেট লি, রায়মন্ড ল্যাম, ইভা হুয়াং, চার্লিন চই, ওয়েন ঝাং সহ আরো অনেকে।
Under the Hawthorne Tree
সব রোমান্টিক মুভিকে যে হাসি কান্না নির্ভর হতে হবে, তা জরুরী নয়। এমনও কিছু রোমান্টিক মুভি রয়েছে যা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা বহন করে। এই মুভিটি ঠিক তেমন ধাঁচের একটি কাহিনী নির্ভর মুভি। মুভিটিতে দুজন কিশোরের প্রেম করার সময় অভিভাবকের হাতে ধরা পড়ার পরবর্তী সমস্যাগুলি নিয়ে ছবিটির গল্প এগিয়ে যায়।
ছবিটিতে একটি সংষ্কৃতির কিছু পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতে দেখা যায়। একই সাথে ছবিটিতে মানুষের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন এবং রক্ষনশীল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মত দিকগুলিও ধরা পড়ে। প্রেমিক কিশোর জুটি তাদের পরিবারের বিপদের কথা চিন্তা করে একে অপরকে অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং পরবর্তীতে এক হওয়ার দৃশ্যগুলি আপনাকে যথেষ্ট্য পরিমাণে আবেগী করে তুলবে।
Beijing Meets Seattle (Finding Mr. Right)
চাইনিজ মুভির গল্প শৈলি যে হলিউডের থেকে কোন অংশে কম নয়, তা এই মুভিটি দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন। ছবিটিতে একটি সুন্দর গল্পের সাথে সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বিভিন্ন সমস্যার দিক তুলে ধরা হয়েছে। একজন প্রতারক ব্যবসায়ীর অবৈধ সন্তান জন্ম দেয়ার সামাজিক প্রতিকূলতা এবং সেই সময়ে বিশেষ একটি মানুষের পাশে থাকার কাহিনীকে নিয়েই এই ছবিটি তৈরী হয়েছে।
তবে এই ছবিটিতে আমেরিকার মত দেশের বার্থ সেন্টারগুলির কিছু স্পর্শকাতর দিক নির্ভীকভাবে তুলে ধরা হয়েচে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ছবিটি এতটাই মনোমুগ্ধকর যে চায়নার পাশাপাশি গোটা বিশ্বেই এটি ব্যপকভাবে সমাদৃত হয়েছে।
The Mermaid
রোমান্টিক হওয়ার সাথে সাথে এটি একটি ফ্যান্টাসি গল্প নির্ভর মুভি। ছবিটিতে আমার সবচেয়ে ভালো লাগার দিকগুলি ছিল এর অসাধারণ গ্রাফিক্স, গল্পের গভীরতা, সামাজিক বার্তা এবং কমেডি টাইমিং।
ছবিটিতে একজন লোভী ব্যবসায়ীর ব্যবসায়ীক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সমুদ্রের একটি অঞ্চলের জলজ প্রাণীদের ধ্বংস করার চেষ্টা করার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে আমরা আমাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কতটা নিচে নামতে পারি সেই রূপ তলে ধরেছে।
একই সাথে সেই জলজ প্রাণীদের মধ্যেই একটি মারমেইডের মানুষ রূপে আবির্ভূত হওয়া এবং বিভিন্ন সংগ্রাম ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে নিজেদের বাসভূমিকে রক্ষা করার মাধ্যমে ছবিটি শেষের দিকে এগিয়ে যায়।
ছবির কাহিনীতে মারমেইডের সাথে মানুষের রোম্যান্স এতটাই জমে ওঠে যা আপনাকে অভিভূত করবে। আর সবশেষে মারমেইডের বাসস্থান রক্ষা করা এবং মানুষের মাঝে পরিচয় গোপন করে সংসার করতে থাকার মত দৃশ্যগুলি খুবই আবেগময়।
একটি মুভি কতটা সফল হবে তা নির্ভর করে তার গল্প, নির্দেশনা আর অভিনয় এর উপর। আর বলা যায় যে, এই সবদিক থেকেই চাইনিজ মুভিগুলি নিজেদের মৌলিক বৈশিষ্টের কারণে আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। ছবিগুলির বিভিন্ন দৃশ্যতে আবেগের এমন বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়, যাতে দর্শক কোন না কোন ভাবে গল্পের সাথে নিজেকে জুড়ে ফেলেন। আর এটিই চাইনিজ মুভিগুলির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট। আর এ কারণেই চাইনিজ রোমান্টিক মুভিগুলি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এত বেশি জনপ্রিয়।
আমাদের মধ্যে যারা দেশীয় ছবি খুব বেশি একটা দেখেন না, তাদের প্রায় হলিউড বা ভারতীয় মুভির গল্প করতে শোনা যায়। আপনি যদি এর আগে কোন চাইনিজ মুভি না দেখে থাকেন, তাহলে আমি আপনাদের বলবো একবার এই মুভিগুলি দেখুন। মুভিগুলো আপনাকে একটি সুন্দর গল্পসহ কিছু সামাজিত বার্তাও দিতে সক্ষম হবে যা চাইনিজ রোমান্টিক মুভির প্রতি আপনার আগ্রহকে আরো বেশি বাড়িয়ে তুলবে।
আতিফ says
আমি এই লিস্টে থাকা the mermaid মুভিটা দেখেছি। খুব চমৎকার একটা মুভি।