বেশির ভাগ মানুষই বর্তমান সময়ে তাদের ওয়েবসাইটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন ওয়েব কন্টেন্টকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি এ সময়ে সব ধরনের ডিভাইসের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য ওয়েবসাইট যে রেসপন্সিভ হতেই হবে এ ব্যাপারেও তাদের চিন্তার শেষ থাকে না। কিন্তু সেই একই ওয়েবসাইটটিকে প্রতিযোগীতার বাজারে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি মান-সন্মত হোস্টিং কোম্পানী থেকে নেওয়া হোস্টিং প্ল্যানের গুরুত্ব কতটুকু তা বেশিরভাগ মানুষই ভুলে যান।
তবে সবাই এক ধরনের নয়, আমি এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যারা সময় নিয়ে এমন একটি কোম্পানী থেকে হোস্টিং সেবা গ্রহণ করে থাকেন, যারা তাকে একটি সাশ্রয়ী হোস্টিং প্ল্যানসহ সবদিক থেকে তার ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কারণ শুধুমাত্র সেবা মূল্যের উপর নির্ভর করে কোন হোস্টিং প্ল্যান নির্বাচন করলে তার ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধ্বংসাত্বক প্রমানিত হয়।
সেরা হোস্টিং কোম্পানী
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন Forbes এর কন্ট্রিবিউটর James Lyne এর মতে ইন্টারনেটে প্রতিদিন ৩০ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে থাকে। বিগত দুই বছরে অনেক খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটও শুধুমাত্র এই ধরনের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হ্যাকিং এর শিকার হয়েছে।
যদিও হ্যাকিং থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন নিশ্চিত সমাধান নেই। কিন্তু ভাল হোস্টিং কোম্পানীগুলো এ সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়মিতভাবে তাদের সার্ভার ব্যাকআপ করা সহ রিমোট সার্ভারের ব্যবস্থা রেখে থাকেন, যাতে আপনি হ্যাকিং এর শিকার হলেও আপনার মূল্যবান তথ্য সুরক্ষিত থাকে।
অপরদিকে একটি ওয়েবসাইট ডাউন থাকাকে সেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করা যায় যেখানে কাস্টমার এসেও ফিরে যাচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানটির মালিকের ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও সে কোন ধরনের অর্থ উপার্জন করতে পারছেন না। একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে সেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যাকে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কাস্টমারের সেবা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয় এবং ওয়েবসাইটটির মালিক এর বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে থাকেন। কিন্তু আপনার ওয়েবসাইট বন্ধ থাকলে আপনি এর কিছুই পাবেন না। ২০১৩ সালে অ্যামাজনের মত কোম্পানী ৩০ মিনিট সার্ভার ডাউন থাকার কারণে ৬৬, ২৪০ মার্কিন ডলার লস করে।
সমস্যা এখানেই শেষ নয়। অধিক সময় ওয়েবসাইট ডাউন থাকলে আপনার ওয়েবসাইটটি সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংকিং হারাবে। কারণ আপনার ওয়েবসাইটটি বন্ধ থাকার কারণে আপনার অনেক ভালো মানের কন্টেন্ট সার্চ ইঞ্জিন ইনডেক্স করতে পারবে না যা সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই আপনার জন্য সেরা হোস্টিং কোম্পানী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলির প্রতি গুরুত্ব দিন-
আপনার কেমন হোস্টিং প্রয়োজন সে সম্পর্কে অবগত থাকুন
একটি ওয়েব হোস্টিং কোম্পানী থেকে সেবা গ্রহণের পূর্বে আপনার ওয়োবসাইটের প্রয়োজনগুলোকে বুঝুন। যদি আপনি এমন কোন ওয়েবসাইট বানানোর কথা ভাবেন, যেখানে ভিডিও শেয়ায় করার স্বাধীনতা থাকবে অর্থাৎ ভিজিটর রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে তার নিজের ভিডিও আপনার ওয়েবসাইটে আপলোড করে শেয়ার করতে পারবে, তাহলে একটি সাধারণ ওয়েবসাইটের তুলনায় আপনার ওয়েবসাইটের চাহিদা অনেক গুন বেশি।
যে ওয়েবসাইটগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে ট্রাফিক আসে সে-সব ওয়েবসাইটের জন্য কখনোই কোন শেয়ার্ড হোস্টিং প্লান নির্বাচন করা উচিত নয়। কারণ শেয়ার্ড হোস্টিং সেই সব ওয়েবসাইটের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী যাদের ট্রাফিক ও চাহিদা তুলনামুলক কম। শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভারে সাধারণত অনেক ওয়েবসাইট হোস্ট করা থাকে, আর এগুলোর ভেতর যদি কোন ওয়েবসাইটে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার থাকে, তবে এগুলো আপনার ওয়েবসাইটকেও অ্যাটাক করবে। সুতরাং, ভবিষ্যৎ ভালোর জন্য দামি হলেও সেরা হোস্টিং কোম্পানী থেকেই হোস্টিং কিনুন।
সঠিক হোস্টিং প্লান নির্বাচন
অনেক ছোট ব্যবসায়ী টাকা সাশ্রয় করার জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং সেবা গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু এই কম মূল্যের সেবা তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন তাদের ওয়েবসাইট ধীর গতিতে লোড হওয়া শুরু করে। একজন ক্রেতা কখনোই কোন কিছু কেনার জন্য একটি ধীরগতির ওয়েবসাইটের লোড হওয়ার অপেক্ষা করে না।
আপনার যদি দ্রুত গতি সম্পন্ন ওয়েবসাইট প্রয়োজন হয় এবং একই সাথে ডেডিকেটেড সার্ভার কেনার মত অবস্থা না থাকে তাহলে ভিপিএস বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার নেওয়ার মাধ্যমে আপনি এ সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান করতে পারবেন। যদিও এর জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং এর তুলনায় আপনার একটু বেশি অর্থ ব্যয় করতে হলেও এটি আপনার ভিজিটরদের আগের চাইতে তুলনামূলক ভালো মানের সেবা নিশ্চিত করবে।
রিভিউ পড়ার অভ্যাস করুন
প্রতিটি সেরা হোস্টিং কোম্পানী তাদের সেবার গুনগত মান যাচাই করার জন্য বিভিন্ন ধরনের রিসার্চ ও জরিপ করে থাকে। থার্ড পার্টি রিভিউগুলি থেকে খুব সহজেই একটি কোম্পানীর সেবার মান সম্পর্কে জেনে নেওয়া সম্ভব। লক্ষ্য করুন যে, ওই কোম্পানীগুলি গ্রাহকদের অভিযোগ পরবর্তী কেমন সময়ে এবং কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। স্বনামধন্য কোম্পানীগুলি সব সময় গ্রাহক সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এছাড়া গ্রাহক ছাড়া যে কোন ব্যক্তির সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শকে তারা সাদরে গ্রহণ ও বিবেচনা করে থাকে।
ব্যান্ডউইথ এর পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন
ইন্টারনেটের বেশিরভাগ ওয়েবসাইটই খুব বেশি ব্যান্ডউইথ খরচ করে না। কিন্তু আপনি যে হোস্টিং প্লানটি ক্রয় করতে যাচ্ছেন সেই কোম্পানীটি আপনার নির্বাচিত প্লানে কত পরিমাণ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে এবং হোস্টিং নবায়নের ক্ষেত্রে পুনরায় ব্যান্ডউইথ নির্ধারণ বা অন্য কোন চার্জ প্রদান করতে হবে কিনা তা যাচাই করে নিন।
আপনাকে এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি যখন হোস্টিং কিনবেন তখন সেটিতে যেন আপনার চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমান ব্যন্ডউইথ সরবরাহের নিশ্চয়তা থাকে।
অর্থকে কম গুরুত্ব দিন
নতুন ব্যবসায়ে কম বেশি অনেকেই প্রথম দিকে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করতে চান। আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কাছেও এক্ষেত্রে অপক্ষোকৃত কম মূল্যের হোস্টিং প্লানগুলিকে আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে, যেমনটা এরা নিজেদের দাবী করে থাকে।
সবসময় মনে রাখবেন আপনি সেটাই পাবেন যার মূল্য আপনি পরিশোধ করবেন। তুলনামুলক সস্তা হোস্টিং প্লান কেনার ফল হিসাবে আপনাকে পেতে হতে পারে একটি ধরি গতির সার্ভার, খুবই বাজে কাস্টমার সার্ভিস, স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্রারিতিরিক্ত সার্ভার ডাউনটাইম এবং সর্বশেষ এমন কিছু ওয়েবসাইটের সাথে হোস্টিং শেয়ার করা যা আপনার ওয়েবসাইটের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর।
ওয়েবসাইটের জন্য সেরা হোস্টিং কোম্পানীটিকে বেছে নেওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। এর জন্য অনেক মেধা, পরিশ্রম ও বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। উপরে বর্ণিত বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হোস্টিং সেবাটি আপনি বেছে নিতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
তথাপি অনেকেই হোস্টিং কেনার আগে কোম্পানীর টার্মস এন্ড কন্ডিশনগুলো পড়েন না। আমি অনুরোধ করব যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ওই কোম্পানীর নীতিমালা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবেন। এতে আপনার ক্ষতিগ্রস্থ্য হওয়ার আশংকা অনেকটাই কমে যাবে।
Leave a Reply