যদি প্রশ্ন আসে যে, পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং মহৎ পেশা কোনটি, তাহলে নিঃসন্দেহে আপনি আমি যে কেউই বলবো ডাক্তারী। কারণ মানুষের জীবন রক্ষার চাইতে মহৎ পেশা আর কিছুই হতে পারে না। আর এই মহৎ পেশার কারিগর তৈরীর কাজে বাংলাদেশের সবগুলি সেরা মেডিকেল কলেজ অকান্তভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে যারা আগামী দিনে কাজ করে যাবে তাদের সুশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলাই মেডিকেল ইউনিভার্সিটিগুলির একমাত্র লক্ষ্য।
বাংলাদেশে যেমন সেরা কিছু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তেমনি রয়েছে বেশ কিছু সংখ্যক মেডিকেল কলেজ ও ইউনিভার্সিটি। মোটামুটি সবগুলিতেই চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বমানের পাঠদান করা হয়ে থাকে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীন হওয়াতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণের পূর্বে ও পরবর্তীতে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেন।
সেরা মেডিকেল ইউনিভার্সিটি
বাংলাদেশে যতগুলি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি রয়েছে তার সবগুলিই যোগ্য ও দক্ষ চিকিৎসক তৈরীতে যার যার অবদান রেখে চলেছেন। চলুন জেনে নেই এর মধ্য থেকে সেরা ৭টি সরকারি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ:
ঢাকা মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বকশিবাজার এলাকায় অবস্থিত। একই সাথে এটির অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলোজি বিশ্ববিদ্যালয়েরও খুব নিকটবর্তী। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল।
প্রতিবছর এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় সবার উপরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অবস্থান। এখানে ৫ বছর মেয়াদী এমবিবিএস কোর্সে প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ:
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের একটি অন্যতম সরকারি মেডিকেল কলেজ হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ঢাকা মেডিকেল স্কুলের ন্যায় ১৮৭৫ এটিও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৬২ এটি নবাবের অনুদানের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজের রুপ নেয় এটি। পরবর্তীতে এটিকে নবাব স্যার স্যার সলিমুল্লাহর নামে নামকরণ করা হয়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ:
বাংলাদেশের সেরা সেরা মেডিকেল ইউনিভার্সিটিগুলির তালিকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ তার শক্ত অবস্থান অনেক আগে থেকেই ধরে রেখেছে। এটির শিক্ষা কার্যক্রম ২০০৬ সালের মে মাসের ৬ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়।
প্রথম পর্যায়ে এটি বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ নামেই সবার কাছে পরিচিত ছিল। তদসময়ে মাত্র ১০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে সেখানে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যে কোন মেডিকেল শিক্ষার্থীর কাছেই স্বপ্ন পূরনের চাইতে কম কিছু নয়।
২০০৯ সালের জুন মাসের ০১ তারিখে এটির নাম পরিবর্তন করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ রাখা হয়। বর্তমানে এখানে ৯০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী ৬ টি ব্যাচে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এটি ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ:
চট্টগ্রামে অবস্থিত এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিও বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপিঠ। বর্তমানে এখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, ইরান, মালেয়শিয়া, নেপাল, প্যালেষ্টাইন, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার শিক্ষার্থীরাও এমবিবিএস কোর্স সফলতার সাথে সম্পন্ন করছে। ১৯৬০ সালে এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ:
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ এ দেশের আরো একটি স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজ যা ১৯২৪ সালে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় স্থাপিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিবিএস, বিডিএস এবং পোষ্ট গ্রাজুয়েট কোর্সগুলিসহ মোট ২৭টি বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোর্স পরিচালনা করা হয়।
প্রতি বছর পোষ্ট গ্রাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় ১৩৮ জন নতুন শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয়। তাছাড়া গ্রাজুয়েট পর্যায়ে ১৯৭ জন এমবিবিএস এ এবং ৫২ জন বিডিএস কোর্সে ভর্তি হয়, যাদের ১০ শতাংশই বিদেশ থেকে আগত শিক্ষার্থী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ:
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এ দেশের জনপ্রিয় একটি মেডিকেল কলেজ। এটি ১৯৫৮ সালে স্থাপিত হয়। রাজশাহী জেলায় এটির অবস্থান এবং এই মেডিকেল কলেজটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কোর্স পরিচালনা করে।
এছাড়াও রাজশাহী মেডিকেল বাংলাদেশর সবচেয়ে বড় হাসপাতালগুলির মধ্যে একটি যা এদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষদের দীর্ঘ দিন যাবত মানসম্মাত স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করে আসছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ:
কুমিল্লা জেলার কুচাইতলীতে অবস্থিত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ এদেশের নামীদামী মেডিকেল কলেজগুলির মধ্যে একটি। এটির স্থাপনার কাজ ১৯৭৯ সালে শুরু করা হলেও মেডিকেল কলেজটি ১৯৮১ থেকে ১৯৮২ এর মধ্যবর্তী সময়ে চালু করা হয়। ১৯৯২ সালে অনেক বেশি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এখানে এমবিবিএস কোর্স চালু করা হয়।
কোর্স চালুর কিছুদিনের মধ্যেই এই মেডিকেল কলেজটি তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে শুরু করে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এটি দেশের শীর্ষ মেডিকেল কলেজগুলির মধ্যে নিজেদের স্থান করে নেয়। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে এমবিবিএস সহ বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করে থাকে। তাদের মধ্য থেকে মেধানুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যাক শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। এছাড়াও বর্তমানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যাপিঠে অধ্যায়নের জন্য আবেদন করে যাচ্ছে।
এদেশে সর্বপ্রথম ১৯৮৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে মেডিকেল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার পর পরই বেশকিছু প্রাইভেট মেডিকেল কলেজও গড়ে ওঠে। সর্বমোট বাংলাদেশ ৮৩টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে যার মধ্যে ২৯টি পাবলিক এবং ৫৪টি প্রাইভেট। এগুলোর মধ্য থেকে ৬টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের সেরা মেডিকেল কলেজ ও ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে যত বেশি বলা হবে ততই যেন কম হবে। এই মেডিকেল ইউনিভার্সিটিগুলি দেশের মধ্যে যোগ্য ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক তৈরীসহ দীর্ঘদীন যাবত বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে আসছে যা বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে গৌরবের।
Leave a Reply