সফল ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া সফলতার টিপস্ আপনাকে নি:সন্দেহে সফলতার পথে অনেকখানি এগিয়ে দেবে। সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন “কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট হলো এই পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য”। উনার এই কথায় একমত হয়ে ডেরেন হার্ডি “দ্যা কম্পাউন্ড অ্যাফেক্ট” নামে একটি বই লিখেন। বইটি নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলিং বুক হিসেবে খ্যাতি অর্জণ করে।
এই বইটি এবং অন্যান্য সোর্স থেকে আমি আজকে আপনাদের কাছে কিছু টিপস্ শেয়ার করবো, যা আপনাদের জীবনে সফল হতে কাজে লাগবে।
সফলতার টিপস্ – কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট
সবার আগে আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করবো কোনো মানুষের উন্নতি বা অবনতির জন্য মূল কারণ কি? তার ছোটবেলা, সে কিভাবে বড় হয়েছে, তার পরিবেশ নাকি অন্যকিছু? লেখকের মতে মূল কারণ হলো মানুষের নিজের নেয়া ছোট থেকে ছোট চয়েজগুলো।
এই পৃথিবীতে একটাই এমন জিনিষ আছে, যদি সেটা আমরা চাই তাহলে পুরোপুরিভাবে কন্ট্রোল করতে পারি। আর সেটা হলো আমাদের চয়েজ। আর এই চয়েজগুলোই আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আউটকামস বা ফলাফলের জন্য দায়ী।
আপনি যদি ইচ্ছা করেন, অফিস থেকে ফেরার পর জিমে যেতে পারেন বা সোফাতে বসে টিভি দেখতে পারেন। আপনি যদি চান তাহলে আপনার ওয়াইফের সাথে ঝগড়ার পর সবকিছু ভুলে তাকে আবার জড়িয়ে ধরতে পারেন। অথবা আপনার ইগোকে প্রশ্রয় দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
এরকম ছোট ছোট আউটকামসগুলোই ঠিক করে দেয় আপনি সারাজীবন স্বাস্থ্যবান থাকবেন, নাকি রোগা হয়ে থাকবেন, সফল হবেন নাকি বিফল হবেন। সারা জীবন একটি স্ট্রং রিলেশনশিপে থাকবেন, নাকি ডিভোর্স দিয়ে আলাদা হয়ে যাবেন। কিন্তু আমরা এই ছোট ছোট বিষয়গুলোতে এত মন দেই না।
যদি আমি আপনাকে এখন দুইটি অফার দেই-
- ১) আমি আপনাকে একটি এক টাকার কয়েন দিবো যেটি আগামী এক মাসের জন্য প্রতিদিন ডাবল হবে।
- ২) আমি এখনি আপনাকে ১০ কোটি টাকা দেবো।
তাহলে আপনি এর মধ্যে কোন অফারটি নিতে পছন্দ করবেন? অবশ্যই দুই নাম্বার, মানে ১০ কোটি টাকা। তাই না? অধিকাংশ মানুষই সেকেন্ড অপশনটিই নেবে, কিন্তু সফল ব্যক্তিদের সফলতার টিপস্ প্রথম অপশনটির দিকেই যাবে।
আচ্ছা এবার আমি এক নাম্বার অফারটি নিজের কাছে রেখে দেই। এবার দেখা যাক, এক মাস পর এর আউটকাম কি আসে। ৫ দিন পর আমার কাছে আছে ১৬ টাকা আর আপনার কাছে সেই ১০ কোটি টাকা। ১০ দিন পর আমার কাছে আছে ৫১২ টাকা। ২০ দিন পর আমার কাছে আছে ৫,২৪২ টাকা আর আপনার কাছে সেই ১০ কোটি। ৩১ দিন পর আপনার কাছে আছে ১০ কোটি টাকা আর আমার কাছে ১০৭ কোটি টাকা। যা ১০ গুণ বেশি।
এবার হয়তো আপনি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন, কেনো আইনস্টাইন কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট কে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বলেছেন।
অর্থাৎ সাকসেস রাতারাতি আসে না। সাকসেস পেতে হলে যেমন পরিশ্রম করতে হয়, তেমনি ধৈর্য রাখতে হয়। আচ্ছা আরেকটা উদাহরণ দেই। মনে করুন, একজন লোক প্রতিদিন কিছু কাজ করা শুরু করলেন যেমন-
- ১) প্রতিদিন একটা ভালো বইয়ের ১০ পেইজ ঘুমানোর আগে পড়া।
- ২) প্রতিদিন ৩০ মিনিটের কোনো মোটিভেশনের ভিডিও দেখা, যা প্রতিদিন অফিস যাওয়ার সময় বাসে বসে দেখেন।
- ৩) প্রতিদিন এক লিটারের দুই বোতল জল খাওয়া।
- ৪) প্রতিদিন দুই হাজার স্টেপ এক্সট্রা হাঁটা শুরু করলো।
- ৫) প্রতিদিন দুটো এক্সট্রা কল করলো নিজের কাস্টমারদের। তারা তার সার্ভিসে কতটা সন্তুষ্ট সেটা জানার জন্য।
লাইফে এই ছোট ছোট পরিবর্তণ এনেও লোকটি কয়েক মাসে নিজের মধ্যে কোনো চেঞ্জ দেখতে পেলো না। কিন্তু ২৫ মাস পর নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তণ সে খেয়াল করলো। ৩১ মাস পর সেটা আরো বড় আকারের হলো। যেমন-
- প্রতিদিন বই পড়ে সে তার জ্ঞানকে অনেক গুণ বাড়িয়ে নিলো, যা শুধু তার ব্যক্তি জীবনেই নয়, পেশাগত জীবনেও তাকে অনেকখানি এগিয়ে দিলো।
- প্রতিদিন মোটিভেশনাল ভিডিও দেখে সে পুরনো ব্যর্থতার কথা ভুলে গেল এবং নতুন উদ্যমে কাজ করে সফলতাকে ছিনিয়ে আনলো।
- প্রতিদিন দুই বোতল জল খেয়ে সে ৩৭২০ গ্যালন জল খেলো। যার মাধ্যমে সে নিজের মধ্যে অনেক অসুখ বেড়ে উঠাকে আঁটকে দিলো।
- প্রতিদিন এক্সট্রা হেঁটে সে ১৫ কেজি ওজন কমালো। যারফলে, তার ডায়াবেটিস স্বাভাবিক হয়ে গেলো, শরীরের বাড়তি শক্তি সঞ্চয় হলো, কাজের উদ্যম ও স্পৃহা বেড়ে গেলো।
- আর প্রতিদিন দুটো এক্সট্রা কল করার কারণে টোটাল ১৮০০টি এক্সট্রা কল করলো। যার কারণে তার কাস্টমাররাও অনেক খুশি এবং তার সেল বেড়ে গেল।
এই ছোট পরিবর্তণগুলো তার মধ্যে অনেক ভালো কিছু নিয়ে আসলো। যদি সাকসেস পাওয়া এই রকম সহজ হয় আর আমরা তা জানি, তাহলে কেনো তা ফলো করি না? কেনো বার বার ফেইল হয়ে যাই?
দ্যা কম্পাউন্ড অ্যাফেক্ট বইটির লেখকের মতে এমন কিছু ফাঁদ আছে, যার কারণে আমরা ফেইল হয়ে যাই। সফলতার টিপস্ হিসেবে শিক্ষা নিতে নিচে সেগুলো দেয়া হলো-
কাজের ফল সঙ্গে সঙ্গে না পাওয়া
কাজ শুরু করার সাথে সাথে আমরা ফল পাই না। মনে করুন আজকে যদি আপনি একটা সিগারেট খান আর পরের দিন গলায় ক্যান্সার নিয়ে ঘুম থেকে উঠেন, তাহলে আপনি কি কখনো সিগারেট খেতেন? সমস্যা হলো শুরুতে কোনো পরিবর্তণ চোখে ধরা পড়ে না। কিছু মাস বা বছর পর রাতারাতি কিছু ভয়ানক ফলাফল সামনে আসে। তাই আপনাকে সতর্ক হয়ে প্রতিটি চয়েজ নিতে হবে।
লক্ষ্য ঠিক রাখতে না পারা
আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই নানা কারণে লক্ষ ঠিক রাখতে পারেন না। একটাতে একটু বিফলতার আভাস পেয়েই আরেকটা ধরেন। কিংবা, আশানুরূপ সফলতা না পেয়ে অর্থাৎ অল্প কিছু সুফল দেখে হতাশ হয়ে আরেকটা লক্ষে ছুটতে থাকেন। মনে রাখবেন, আপনি যদি আপনার ঠিক করা লক্ষ্য থেকে সরে যান, তাহলে ভাবুন দশ থেকে পনেরো বছর পর আপনি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন।
অল্প সময়ের জন্য আনন্দে থাকা
আমরা প্রকৃতিগতভাবেই এমন যে, অল্প সময়ের জন্যে আনন্দে ডুবে যেতে পছন্দ করি। দীর্ঘস্থায়ী আনন্দের জন্যে যে প্রজ্ঞা দরকার হয়, তা আমাদের অনেকের মাঝেই নেই। যারফলে, আমরা ১ টাকার কয়েন ছেড়ে নগদ ১০ কোটি টাকার পেছনে ছুটতে থাকি। ভাবুন আপনি যদি অল্প সময় আনন্দ পাওয়ার জন্য নেশা জাতীয় কিছু বেছে নেন, তাহলে কয়েক বছর পর আপনার কি পরিণতি হবে।
আমরা এই সহজ কাজগুলো কেউ করতে চাই না, সফলতার টিপস্ মেনে চলি না। কিন্তু সফল লোক ও সাধারণ মানুষের মাঝে এটাই পার্থক্য। সফল লোকেরা এই স্বাদহীন কাজগুলো করে থাকেন। আর তাই তো তারা জীবনে সাকসেসফুল। অবশেষে আমি আপনাদের এইটুকু বলতে চাই, যদি মনে করেন যে, আর্টিকেলটি পড়ে আপনি একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন, বিন্দুমাত্র হলেও ভাল লেগেছে, তাহলে তাহলে শেয়ার করুন, নিজেও ফলো করুন, অন্যদেরকেও ফলো করতে উৎসাহিত করুন।
তাজওয়ার উচ্ছাস says
পোস্টটা পড়ে ভাল লাগল। (y)
অভিজিৎ মোদক says
ধন্যবাদ 🙂
অভিজিৎ মোদক says
Thanks 🙂
নাহিদা আক্তার says
খুব ভালো লাগলো আইনস্টাইনের কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট নিয়ে লেখাটি পড়ে।
জেসিকা জেসমিন says
ধন্যবাদ, নাদিয়া আক্তার। আপনার জন্যে এ ধরণের অনেক পোস্ট রয়েছে হৈচৈ বাংলায়।