যখন আপনি ইউটিউবে চ্যানেল খুলবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার লক্ষ্য থাকবে একজন সফল হওয়া। কাজেই, সফল ইউটিউবার হওয়ার উপায় জানা দরকার। গুগলের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন হল ইউটিউব। চাইলে আপনিও এখানে অন্যদের মতো সফল হতে পারেন।
ইউটিউব দুনিয়ার সবচাইতে কম বয়সী ইউটিউবার হলেন Ryan ToysReview যার বয়স মাত্র ৭ বছর। এই ইউটিউবার প্রতি বছর ১১ মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে। তাহলে একবার চিন্তা করুন ৭ বছর বয়সী একটা বালক যদি ইউটিউব দুনিয়ায় সফল হতে পারে, তবে আপনি কেন পারবেন না!
সফল ইউটিউবাররা আপনার আমার মত অতি সাধারণ মানুষ হলেও তারা তাদের মেধা, শ্রম এবং কৌশলের মাধ্যমে অসাধারণ হয়েছেন। আজকের এই লেখায় আমি এ রকম কিছু কৌশল তুলে ধরবো, যেসব কৌশল সফল ইউটিউবাররা অনুসরণ করে থাকেন।
সফল ইউটিউবার হওয়ার উপায়
ইউটিউবে সফলতা আসলে কি
ইউটিউব দুনিয়ায় সফলতার সংজ্ঞা একেক জনের নিকট একেক রকম। আসলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল খোলার লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে আপনার সফলতা। আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন, তাহলে ইউটিউবে ভিডিও দেওয়ার মাধ্যমে যখন আপনার পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে, তখন বলা যাবে আপনি একজন সফল ইউটিউবার।
আবার আপনার যদি লক্ষ্য থাকে ইউটিউব থেকে অর্থ আয় করার, সে ক্ষেত্রে আপনার সফলতা হল সাবস্ক্রাইবার এবং ভিউয়ার বৃদ্ধি করা। যাই হোক এখন আমাদের মূল আলোচনার বিষয় হল ২০২০ এ কিভাবে একজন সফল ইউটিউবার হবেন। তার আগে জেনে নিন কিভাবে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন, যদি এখনো না খুলে থাকেন। এবার চলুন, মূল কথায়।
১. আপনার লক্ষ্য এবং কন্টেন্ট ঠিক করুন
যে কোন কিছুতে সফল হওয়ার জন্য পূর্ব শর্ত হল সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা। আর ইউটিউবের ক্ষেত্রে তো লক্ষ্য নির্ধারণ করা অতি জরুরী। কেননা প্রতি মিনিটে ইউটিউবে ৩০০ ঘণ্টার ভিডিও আপলোড হয়। এখন আপনি যদি সঠিক লক্ষ্য এবং কন্টেন্ট নির্ধারণ না করেন, তাহলে এত সব ভিডিওর মাঝে আপনার ভিডিও জনপ্রিয় করা মুশকিল। তাই আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ের উপর ভিডিও কনটেন্ট তৈরির উপর মনোযোগী হতে পারেন।
২. প্রতিদিন অনুশীলন
প্রথম দিকে আপনাকে প্রতিটি ভিডিও তৈরির পূর্বে ভিডিও তৈরির বিষয়ের উপর যথেষ্ট অনুশীলন এবং জ্ঞান অর্জন করে নিতে হবে। যখন ভিডিও করতে করতে অভিজ্ঞ হয়ে যাবেন, তখন হয়তো এই কাজটি আর প্রয়োজন হবে না।
৩. নিজেকে প্রকাশ
স্বাভাবিকভাবেই আপনার কাছ থেকে যখন মানুষ ভালো কিছু পাবে, তখনই কেবল মানুষ আপনার ভিডিও দেখবে। তাই আপনার প্রতিভাগুলো মানুষের মাঝে তুলে ধরুন। এতে করে মানুষ আপনার সম্পর্কে জানবে এবং সাবস্ক্রাইব করতে আগ্রহী হবে। এছাড়া আপনার প্রতিভা আপনার একটি ব্র্যান্ড আইডেন্টি তৈরি করবে।
৪. ট্রেন্ড অনুসরণ
বিভিন্ন সময় বেশ কিছু ভাইরাল টপিক থাকে। সে-সব ভাইরাল টপিকের উপর ইউটিউবে প্রচুর সার্চ হয়। সুতরাং সেই সময় যদি আপনি ইউটিউব ভাইরাল টপিকের উপর ভিডিও তৈরি করেন, তাহলে সহজেই মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এসব ভাইরাল টপিক যেন আপনার চ্যানেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
৫. সঠিক উপকরণ নির্বাচন
সঠিক উপকরণ বলতে সাধারণত সঠিক ক্যামেরা, মাইক্রোফোন এবং লাইটিং বুঝায়। আপনার ভিডিও কোয়ালিটি এবং সাউন্ড খারাপ হলে মানুষ আপনার ভিডিও দেখবেন না। কেননা বর্তমানে ইউটিউব প্রতিযোগিতার পূর্ণ জায়গা। আর তাই বর্তমান সময়ে ইউটিউবে টিকে থাকতে হলে সঠিক উপকরণের বিকল্প নেই। সফল ইউটিউবার হওয়ার উপায় হিসেবে এ বিষয়টিকে অবশ্যই আপনার গুরুত্ব দিতে হবে।
৬. ভাল মানের ভিডিও এডিটর নির্বাচন
ভালো মানের ভিডিও এডিটিং আপনার ভিডিও জনপ্রিয় করতে সহায়তা করবে। ভিডিও এডিটিংয়ের সময় সঠিক ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ, অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলা, গুরুত্বপূর্ণ অংশ যোগ করা ইত্যাদি কাজ করার মাধ্যমে ভিডিওকে প্রাণবন্ত করে তোলা যায়। কম্পিউটারের জন্য সেরা ৪টি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারের তালিকা থেকে আপনার পছন্দ মত একটি নির্বাচন করে নিন।
৭. স্যোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় থাকাটা জরুরী। কেননা এইসব সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিউয়ার এবং সাবস্ক্রাইবার আনা সম্ভব। এছাড়া এসব সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার চ্যানেলের বা আপনার নিজের ব্রান্ড আইডেন্টি তৈরি হবে। ফলে আপনি দ্রুত সফলতা লাভ করতে পারবেন। তাই চেষ্টা করবেন আপনার চ্যানেলের নামে পেইজ এবং গ্রুপ তৈরি করে একটা সক্রিয় কমিউনিটি তৈরি করার।
৮. নিয়মিত ভিডিও আপলোড
নিয়মিত ভিডিও আপলোড বলতে ব্যাপারটা এরকম নয় যে আপনাকে প্রতিদিন ভিডিও আপলোড করতে হবে। বরং আপনি একটা নির্দিষ্ট সময় বা দিন ঠিক করুন। এটা হতে পারে সপ্তাহে একদিন কিংবা মাসে একদিন। এর ফলে মানুষ বুঝতে পারবে আপনি কোন কোন সময় ভিডিও আপলোড করেন। সে সময় তারা আপনার চ্যানেল ভিজিট করবে। এছাড়া স্বয়ং ইউটিউবও এ ধরনের চ্যানেলকে বেশ গুরুত্ব দেয় যারা নিয়মিত অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভিডিও আপলোড করে।
৯. ভিডিও শেয়ার
আপনার ভিডিও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অবশ্যই আপনার ভিডিও শেয়ার করতে হবে। আপনি যত বেশি ভিডিও শেয়ার করবেন, ভিডিও তত বেশি জনপ্রিয় হবে। এছাড়া বেশি ভিডিও শেয়ার করলে ইউটিউব আপনার ভিডিওকে দ্রুত র্যাঙ্ক দিবে। ইউটিউবের কমেন্ট সেকশনে প্রত্যেকের কমেন্টগুলোকে গুরুত্ব দিবেন। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তাদেরকে আপনার ভিডিও শেয়ার করতে বলবেন।
১০. ভিউ বৃদ্ধির কৌশল
আপনার ভিডিওতে মানুষ যাতে ক্লিক করে এজন্য বেশ কিছু কৌশল রয়েছে। যথা:
- ভিডিওর জন্য আকর্ষণীয় টাইটেল নির্বাচন।
- ভিডিওর থাম্বনেলকে আকর্ষণীয় করা। আপনার ভিডিওর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটাকে থাম্বনেল হিসাবে নির্বাচন করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় থাম্বনেলে থাকা কোন বস্তু বা অংশ লাল রং দিয়ে মার্ক করে দেয়া।
- ভুয়া টাইটেল এবং থাম্বনেল দেয়া থেকে বিরত থাকুন। এটা আপনার চ্যানেল সম্পর্কে মানুষকে নেতিবাচক ধারণা দেয়।
- যেসব বাক্য লিখে মানুষ ইউটিউবে বেশি সার্চ করে সেসব ট্যাগ ও কি-ওয়ার্ড বেশি ব্যবহার করা।
- এছাড়াও, ইউটিউব চ্যানেল এবং ভিডিও র্যাংক করার এই টিপস্গুলো অনুসরণ করুন।
শেষ কথা
সফল ইউটিউবার হওয়ার উপায় নিয়ে এই ছিল আমাদের আজকের সংক্ষিপ্ত লেখা। আশাকরি সবগুলো বিষয় অনুসরণ করার চেষ্টা করবেন। আর একটি কথা ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর অবশ্যই আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি লোগো, কভার ফটো এবং ভিডিও ইন্ট্রো তৈরি করে নেয়া জরুরি। এগুলো আপনার চ্যানেলকে আকর্ষণীয় এবং মানুষের সাবকনশাস মাইন্ডে প্রভাব ফেলবে।
Sohan says
ধন্যবাদ ভাই… বাংলা ইউটিউব চ্যানেল কিভাবে ভালো করা যায়, একটু যদি বলতেন?
ওমর ফারুক says
ইউটিউব এই ক্যাটেগরিতে এ নিয়ে অনেক পোস্ট আছে। আপনি চাইলে দেখতে পারেন।