একটা সময় মানুষের বাসস্থান কিংবা সিন্দুকের নিরাপত্তার জন্য তালার ব্যবহার ছিল। কালের বিবর্তনে নিরাপত্তারও বিবর্তন হয়েছে। প্রযুক্তির এই যুগে এসে প্রযুক্তির সাথে মানুষের নিত্য বসবাস। তাই মানুষকে বাসস্থানের পাশাপাশি অনলাইন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করতে হয়। সেই নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই প্রচলন হয়েছিল পাসওয়ার্ডের। আর শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি না করলে যে কোন অ্যাকাউন্টই হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
পাসওয়ার্ডও এখন ক্র্যাক করা সম্ভব। তাই আপনি যদি কোন সহজ সরল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, তবে খুব সহজে এটা ক্র্যাক করা সম্ভব। এজন্য সব সময় উচিত শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। এখন প্রশ্ন হল শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির বা বোঝার উপায় কি?
চিন্তা করার দরকার নেই, আজকে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করার উপায় নিয়ে আমার এই লেখা।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করবে যেভাবে
দীর্ঘ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
আপনি কি এমন ছোট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করছেন যা সহজে অনুমান করার করা যায়? ছোট পাসওয়ার্ডের কারণে যে কারো ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড বের করা সহজ হয়ে যায়। বর্তমানে এমন অনেক সফটওয়্যার আছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাধারণ অক্ষর বা পাসওয়ার্ডকে অনুমান বা ক্র্যাক করতে সক্ষম। তাই পাসওয়ার্ড তৈরির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির পদ্ধতি:
- নিজের নাম, জন্ম তারিখ বা কমন শব্দ ব্যবহার করবেন না
- শুধু অক্ষর বা নাম্বার ব্যবহার করে ছোট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না
- প্রতীক, ছোট/বড় হাতের অক্ষরের সমন্বয় রাখুন
- একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের উদাহরণ: .tk24$Om*@R
পাসওয়ার্ড পরীক্ষা করুন
আপনার পাসওয়ার্ডটি শক্তিশালী এবং হ্যাকিং প্রুফ কিনা এটা খুব সহজে জানতে পারবেন। এটা জানার জন্য আপনাকে অর্থ ব্যয় করতে হবে না। অনলাইনে এরকম ৩টি ওয়েবসাইট:
এই সাইটগুলোর মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনার পাসওয়ার্ড কত বড় ? আপনার পাসওয়ার্ড কতটা শক্তিশালী? অবশ্যই অপরিচিত সাইটে নিজের পাসওয়ার্ড দেয়া খারাপ অভ্যাস। তাই চেষ্টা করবেন আপনার নিজের পাসওয়ার্ডের অনুরূপ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার। যদিও সাইটগুলো দাবি করে তারা আপনার পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে না।
একই পাসওয়ার্ড সব জায়গায় ব্যবহার করবেন না
পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্তক থাকার পাশাপাশি চেষ্টা করবেন ভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার। যাতে একটি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড হ্যাক হলেও, অন্যগুলো হ্যাক হতে না পারে।
পাসওয়ার্ড নোট করে রাখুন
একসাথে অনেক অ্যাকাউন্টের ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড মনে রাখা বেশ কষ্টকর। ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে, অবশ্যই নোট করে রাখবেন এবং নোট খাতাটি নিরাপদ স্থানে রাখবেন।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন
যদিও পাসওয়ার্ড ম্যানেজার থেকে নোট করা বেশী নিরাপদ। তবে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সুবিধা বেশী। কেননা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার তথা আপনার কম্পিউটারটি আপনার জন্য আপনার পাসওয়ার্ডগুলো মনে রাখাতে সহায়তা করবে। এছাড়া শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতেও সহায়তা করে।
তবে প্রশ্ন এসে যায়, যদি কম্পিউটার হ্যাক হয়ে যায়? এক্ষত্রে ২টি কাজ করতে পারেন:
- প্রথমত আপনি ড্রপ বক্স বা গুগল ড্রাইভের মতো ফ্রি ক্লাউড সার্ভিস এর সাথে আপনার এনক্রিপ্ট করা পাসওয়ার্ড ফাইলটি সিঙ্ক করে রাখুন।
- এবং আপনার পাসওয়ার্ড ম্যানেজার লক করে রাখার জন্য একটি শক্তিশালী মাস্টার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। একটি শক্তিশালী মাস্টার পাসওয়ার্ড তৈরি করতে, আর্টিকেলে দেয়া সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করুন।
ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সেভ করবেন না
অনেকেই ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সেভ করে অর্থাৎ Remember Password দিয়ে রাখে। এই কাজটি করবেন না। কেননা ব্রাউজার কুকি হ্যাক হয়ে গেলে আপনার পাসওয়ার্ড গুলো হ্যাক হয়ে যাবে। তবে গুরুত্বহীন অ্যাকাউন্ট গুলোর পাসওয়ার্ড সেভ রাখতে পারেন।
সিকিউরিটি কোশ্চেন দিয়ে রাখুন
অনেক অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি সিকিউরিটি কোশ্চেন সুবিধাটি রয়েছে। সিকিউরিটি কোশ্চেন গুলো সাধারণত এমন থাকে:
- আপনার মায়ের প্রথম নাম
- আপনার প্রথম হাই স্কুলের নাম
- প্রিয় ফল বা ফুলের নাম ইত্যাদি
এসব সিকিউরিটি কোশ্চেন গুলো সবসময় ভুল দিবেন। যেমন আপনার প্রথম হাই স্কুলের নাম ঢাকা হাই স্কুল আপনি দিলেন ফাঁকা হাই স্কুল। তাহলে এসব কোশ্চেনের উত্তর কেউ অনুমান বা ক্র্যাক করতে পারবে না।
টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন যোগ করে রাখুন
আজকাল প্রায় সকল ওয়েবসাইটে টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন যোগ করার সুবিধা রয়েছে। তাই চেষ্টা করুন সকল সাইটে টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন যোগ করে রাখার। এটা আপনার পাসওয়ার্ডকে আরও বেশী শক্তিশালী করে তোলে। যেমন: জিমেল অ্যাকাউন্টে টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন যোগ করার নিয়ম দেখুন।
শেষ কথা
মনে রাখবেন বর্তমান পৃথিবীর কোন কিছুই সিকিউর না। সব সিকিউরিটিকে ভাঙ্গা সম্ভব। আজকাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট চুরি হওয়ার মত খবরও পাওয়া যায়। তাই সবসময় নিজে সচেতন থাকবেন। কারণ আপনার নিজের সচেতনতাই আপনাকে অনলাইনে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।
আর আপনি যদি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করেন, তবে অবশ্যই টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন চালু করে রাখবেন। যাতে হ্যাক হলেও আপনি জানতে পারেন।
Leave a Reply