ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন। অনেক রিয়াল মাদ্রিদ সাপোর্টারেরই এ কথা এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। এ সপ্তাহেই ইটালিয়ান রেকর্ড ১০৫ মিলিয়ন ইউরোতে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ইটালিয়ান দল জুভেন্টাসে পাড়ি দিয়েছেন রোনালদো। রিয়াল কর্তারা এখন হন্যে হয়েই রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর উত্তরসূরী খোঁজ়ার মিশনে নেমেছেন।
রিয়াল মাদ্রিদের জীবন্ত কিংবদন্তি রোনালদো রিয়ালের জার্সিতে সম্ভাব্য সব কীর্তিই করেছেন। তার এভাবে বিদায় বলাটা খেলায় তো প্রভাব ফেলবেই, প্রভাব ফেলবে রিয়ালের বাণিজ্যিক ইমেজেও। কারণ, রিয়ালের আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই আসতো “ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো” ব্রান্ড ইমেজের কারণে। আর সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী রিয়াল এক রোনালদোর বদলে ২ জন ফরোয়ার্ড নিয়ে হলেও রোনালদোর অভাব পূরণ করতে চাইছে।
রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর উত্তরসূরী
রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর উত্তরসূরী কে হবেন? বিশ্বকাপের এই ডামাডোলের মাঝেও এই প্রশ্নটা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পর্তুগিজ রাজার রেখে যাওয়া রাজত্বের ভার সামলাবেন কে তাই নিয়ে আছে প্রচন্ড কৌতুহল। বাতাসে ভাসছে কয়েকটি নাম। এই নামগুলো থেকেই হয়তো কেউ একজন হবেন রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর উত্তরসূরী।
১। নেইমার
রিয়ালে রোনালদোর শূন্যতা পূরণ করার মতো কেবল ২ জন খেলায়াড় আছে। একজন মেসি, আরেকজন নেইমার। বার্সেলোনা থেকে তো মেসিকে আনা সম্ভব নয়, তাই রিয়াল বস পেরেজ এখন পুরো মনোযোগ দিয়েছেন নেইমারকে রিয়ালে আনতে।
মাত্র এক মৌসুম আগেই ট্রান্সফারের বিশ্বরেকর্ড গড়ে পিএসজিতে ভিড়েছিলেন নেইমার। তাকে রিয়ালে নিয়ে আসাটা সহজ হবে না মোটেই। খরচ করতে হবে মোটা অংকের অর্থ। বিভিন্ন সূত্র হতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী টাকার অংকটা ২৫০-৩১০ মিলিয়নের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে। আর পিএসজিও নেইমারকে ছাড়তে চাইবে না। তাই নেইমারের রিয়ালে আসা একটু কঠিনই হবে।
অন্যদিকে মার্কারের এক জরিপ থেকে জানা যায়, রিয়ালের মাত্র ১৪% ভক্ত নেইমারকে রিয়ালের জার্সিতে দেখতে চায়। অর্থাৎ বেশিরভাগ রিয়াল ভক্তই নেইমারকে রিয়ালে চান না। কিন্তু রিয়ালের কর্তাব্যক্তিদের ভোট নেইমারের বক্সেই।
রিয়াল সব সময়ই তারকা পছন্দ করে। নেইমার এখনই তারকা। খেলোয়াড়ি দক্ষতার পাশাপাশি নেইমারের ইমেজও বাণিজ্যিকভাবে রিয়ালকে লাভবান করবে। এই ভাবনাই রিয়াল কর্তাদের নেইমারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করছে।
নেইমারকে আরো আগেই রিয়ালে আনতে চেয়েছিলেন পেরেজ। কিন্তু আগেরবার বার্সেলোনাকে বেছে নিয়েছিলেন নেইমার। এবারের সুযোগ আর হাতছাড়া করতে চান না পেরেজ। তাই ফ্লোরেন্তিনা পেরেজের মূল টার্গেটই হল নেইমারকে রিয়ালে আনা।
২। কিলিয়ান এমবাপ্পে
পিএসজির আরেক প্রতিভাবান তরূণ। বিশ্বকাপে দারূণ খেলে জয় করেছেন ভক্ত-সমর্থকদের মন। ভয়ংকর গতি আর স্কিলের মিশেলে যে কোনো প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপণ ধরিয়ে দিতে পারেন তিনি।
এমবাপ্পেকে পেতে হলেও ২৭২ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি খরচ হতে পারে রিয়ালের। সমর্থকদেরও পছন্দের শীর্ষে তিনি।
মার্কার জরিপ বলছে ৫৪% রিয়াল সমর্থক রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর উত্তরসূরী হিসেবে এমবাপ্পেকে দেখতে চান। খেলোয়াড়ি দক্ষতায় রোনালদোর সমকক্ষ হতে পারবেন অদূর ভবিষ্যতে। এমন ভাবনাতেই তার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে রিয়ালভক্ত্ররা।
এমবাপ্পেরকে আরো একবার পেতে চেয়েছিল রিয়াল। গত মৌসুমে মোনাকোকে ১৮০ মিলিয়নের প্রস্তাবও পাঠিয়েছিল। তবে সেই প্রস্তাব এমবাপ্পে নিজে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বেছে নিয়েছিলেন পিএসজিকে।
খেলোয়াড়ি দক্ষতায় অসাধারণ হলেও এখনও বাণিজ়্যিক ইমেজটা পাকাপোক্ত হয়নি তার। আর একারণেই রিয়াল কর্তাদের প্রথম পছন্দ নন তিনি।
কিন্তু তবুও এমবাপ্পেকে পেতে মরিয়া হয়েই চেষ্টা চালাবে রিয়াল।
কৈশোরে রোনালদোর পোস্টার আগলে রাখতেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। সুযোগ এসেছে সেই রোনালদোরই শূন্যস্থান পূরণের। রিয়াল ফ্যানরা এমবাপ্পেকে চান। রিয়ালও খরচ করতে প্রস্তুত। এমবাপ্পে এই সুযোগ গ্রহণ করবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
৩। এডেন হ্যাজার্ড
অনেকদিন ধরেই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করছেন। এবারের বিশ্বকাপটাও মনে রাখার মতোই কেটেছে। বেলজিয়ামকে প্রথমবারের মত তুলেছেন সেমি-ফাইনালে। বিশ্বকাপ মিশন শেষে এখন মনোযোগ দেবেন নিজের দল-বদলে।
চেলসিতে আর থাকছেন না, এমন ইংগিত মিলেছে আগেই। যদিও এখনও কিছু নিশ্চিত নয়। তবুও সংবাদ মাধ্যমের গুঞ্জণ, ৮৮ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নতুন দলে যোগদান করতে পারেন। নতুন দলটা কি রিয়াল?
রিয়াল হ্যাজার্ডের প্রিয় ক্লাব, স্বীকার করেছেন নিজেই। রোনালদো চলে যাওয়ার পর রিয়াল নিজেদের ঢেলে সাজাতে চাইছে। আরো ২-১ জন পুরনো সৈনিককে ছেড়ে দিয়ে ২-১ জন পরীক্ষিত নতুন সৈনিককে দলে ভেড়াতে চাইছে তারা। আর সেক্ষেত্রে হ্যাজার্ড নিশ্চিতভাবেই রিয়ালের টার্গেটে থাকবে।
রিয়াল সমর্থকরাও হ্যাজার্ডের ব্যাপারে সহনশীল। অন্যদিকে রিয়ালের চিরপ্রতিদ্বন্দী বার্সাও হ্যাজার্ডের ব্যাপারে আগ্রহী। এখন দেখার বিষয় হল হ্যাজার্ড কোন দলে যেতে চায়।
৪। হ্যারি কেইন
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর গোলশিকারীদের একজন তিনি। রোনালদোর গোল স্কোরিং এর অভাবটা মেটানো যাবে তাকে দিয়ে। কিন্তু তাকে বার্নাব্যুতে আনতে হলে রিয়ালকে বিশাল অংকের অর্থ খসাতে হবে।
হ্যারি কেইন গত কয়েক বছর ধরে প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত গোল করছেন। বিশ্বকাপেও ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। কিন্তু কিছুদিন আগেই ক্লাবে টটেনহাম হটস্পারের সাথে ৬ বছরের নতুন চুক্তি করেছেন। তাই টটেনহামকে রাজি করিয়ে কেইনকে আনতে হলে রিয়ালকে ট্রান্সফারের নতুন বিশ্বরেকর্ডই করতে হবে।
৫। পাওলো দিবালা
এই মুহূর্তে দিবালা রোনালদোর সতীর্থ। কিন্তু তিনিই হয়তো রিয়ালে চলে আসতে পারেন রোনালদোর জায়গা পূরণ করতে। দিবালা একজন সৃষ্টিশীল এবং স্কিলে দক্ষ খেলোয়াড়। “সিরি আ” তে জুভেন্টাসের হয়ে নিয়মিত জাল খুঁজে পাচ্ছেন।
রোনালদোকে জুভেন্টাসে নিয়ে আসায় উয়েফার “ফিনান্সিয়াল ফেয়ার নীতি” বজায় রাখতে হয়তো ১ জন জনপ্রিয় খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে হতে পারে তাদের। আর এই সুযোগটিই নিতে পারে রিয়াল।
দিবালা একজন কুশলী খেলোয়াড়। সংবাদমাধ্যমের গুঞ্জণ ১০০-১২০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’র বিনিময়ে দিবালাকে ছেড়ে দিবে জুভেন্টাস।
৬। রবার্ট লেভানদোভস্কি
বায়ার্ন মিউনিখের এই পোলিশ স্ট্রাইকার একজন গোলমেশিন। গোলের পথটা খুব ভালো করে চেনেন তিনি। বুন্দেসলিগায় ১৮০ গোল করেছেন তিনি। অবদান রাখছেন বায়ার্নের একের পর এক শিরোপা জয়ে।
২৯ বছরের এই স্ট্রাইকার রিয়ালের জন্য বেশ কার্যকর হবে। কিন্তু তিনি খেলোয়াড় হিসেবে উঁচু মানের হলেও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে রিয়ালের জন্য লাভজনক হবেন না। তবে এক রোনালদোর বদলে ২ ফরোয়ার্ড নীতির কারণে তাকে উপেক্ষা করা রিয়ালের জন্য সহজ হবে না।
৭। মাইরো ইকার্দি
তাকে ১০০ মিলিয়নে রিয়ালে নিয়ে আসার গুঞ্জণ গত মৌসুমেই ছিল, এই মৌসুমে যা সম্ভাবনায় পরিণত হয়েছে। গত মৌসুমের ইন্টার মিলানের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন।
তার রিলিজ ক্লজ ১১০ মিলিয়ন ইউরো। তাই তাকে লস ব্লাঙ্কোসদের জার্সি গায়ে চাপানো অবস্থায় দেখার সম্ভাবনা নেহাত কম নয়।
৮। মোহাম্মদ সালাহ
মিশরীয় এই স্ট্রাইকারের সামর্থ্য নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। তাকে মেসির পর ২য় সেরা বাঁ পায়ের খেলোয়াড় ধরা হয়। দুর্ধর্ষ গতি ও নিঁখুত লক্ষ্যবেধ করে ইতোমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
২৬ বছরের এই খেলোয়াড় অবিশ্বাস্য এক মৌসুম কাটিয়েছেন। অতি সম্প্রতিই লিভারপুলের সাথে নতুন চুক্তি করেছেন। তাই তার রিয়ালে যাওয়ার সম্ভাবনা একটু কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।
প্রকৃতির নিয়মেই শূন্যতা তৈরী হয়, আবার প্রকৃতিক নিয়মেই সেই শূন্যতা পূরণ হয়। রোনালদো রিয়ালে যে শূন্যতা রেখে গেছেন তা পূরণ হওয়ার নাক। রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর উত্তরসূরী যিনিই হোন না কেন, শুভ কামনা থাকবে তিনি যেন রিয়ালে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন।
Leave a Reply