হিমোগ্লোবিন, সংক্ষেপে Hb বা Hgb হচ্ছে এক ধরণের প্রয়োজনীয় প্রোটিন যা মূলত আমাদের রক্তে অবস্থান করে। আমাদের সমগ্র শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে, শরীরের যেখানে যতটুকু অক্সিজেন প্রয়োজন, ততটুকু অক্সিজেন পৌঁছাতে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে, সেটি হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ জানার আগে আসুন জেনে নেই হিমোগ্লোবিন কি আর আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের কাজ কি।
কারো শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শ্বাস প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি হয় অর্থাৎ অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনে সমস্যা তৈরি হয়। এখন আমাদের জানতে হবে এই কমে যাওয়া আসলে কতটুক কমে যাওয়া। সুতরাং, আগে জানা দরকার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কতটুকু স্বাভাবিক, মানে নরমাল রেঞ্জ কত। তাহলে, জানা যাবে রক্তে হিমোগ্লোবিনের লো লেবেল কত। অর্থাৎ, কতটুকু কমে গেলে লো লেবেল বলা যায়।
আশা করি, জেনেছেন হিমোগ্লোবিন কি আর রক্তে এর পরিমাণ বা বিভিন্ন লেবেল কত। এবার আসুন জানা যাক, কি কি কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ
প্রায় ৪০০ কারণ রয়েছে। তবে, চিকিৎসকরা এগুলোকে ৩টি গ্রুপে ভাগ করেছেন। সেগুলো হল-
- রক্তক্ষরণের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া
- ক্রুটিপূর্ণ ব্লাড সেলের কারণে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া
- ব্লাড সেলের মরে যাওয়া বা নিস্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া
রক্তক্ষরণের মাধ্যমে: অনেক সময়ই রক্তক্ষরণের মাধ্যমে লোহিত রক্ত কণিকা কমে যায় কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা খুব সামান্য আকারে শুরু হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে চলতে পারে। অনেক সময় এটি ডিটেক্টও করা যায় না। এই ধরণের ক্রনিক রক্তক্ষরণ যে-সব কারণে হয়ে থাকে।
- আলসার, হেমোরয়েডস্, গ্যাস্ট্রিটিস (পেটের প্রদাহ) এবং ক্যান্সারের মতো কিছু গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল অবস্থার কারণে।
- অ্যাসপিরিন বা ইবুপ্রোফেন হিসাবে nonsteroidal অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ঔষ গ্রহণের কারণে। এ জাতীয় ঔষধ গ্রহণও অনেক সময়ই শরীরে আলসার ও গ্যাস্ট্রিটিস সৃষ্টি করে থাকে যা পরবর্তীতে রক্তক্ষরণে রূপ নেয়।
ক্রুটিপূর্ণ ব্লাড সেলের কারণে: এ রকম অবস্থায় শরীরে সামান্য পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপন্ন হয়, এমনকি রক্ত কণিকা ঠিক মতো কাজও করে না। উভয় ক্ষেত্রেই রক্তস্বল্পতা বা হিমোগ্লোবিনের অভাব পরিলক্ষিত হতে পারে। লোহিত রক্ত কণিকা ক্রুটিপূর্ণ হয় অস্বাভাবিক সেলের কারণে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে। এ রকম অবস্থায় নানা ধরনের অ্যামেনিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দেয়-
- সিকল সেল অ্যানেমিয়া
- আয়রনের অভাব জণিত অ্যানেমিয়া
- ভিটামিনের ঘাটতি জণিত অ্যানেমিয়া
- বোন ম্যারো এবং স্টেম সেল সমস্যা
- অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা
সিকল সেল অ্যানেমিয়া এক ধরণের বংশগত ডিজঅর্ডার। জেনেটিক ক্রুটির কারণে লোহিত রক্ত কণিকা ক্রিসেন্ট শেপ হয়ে থাকে এবং সেগুলো ক্রমান্বয়ে ভেঙ্গে যেতে থাকে। যারফলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক মতো কাজ করে না।
শরীরে যথেষ্ট্য পরিমাণে মিনারেল আয়রণ না থাকলে আয়রনের অভাব জণিত অ্যানেমিয়া দেখা দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্যে বোনের কেন্দ্রের বোন ম্যারোতে আয়রণের প্রয়োজন হয় যার সাহায্যে হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে।
ভিটামিন বি১২ ও ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিডের অভাবে ভিটামিন জণিত অ্যানেমিয়া বা রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি হয়। আর এটাকে মেগালোব্লাস্টিক অ্যানেমিয়া বলে। আর ভিটামিন বি১২ যদি খুবই সামান্য হয় আর এর কারণে যে রক্তশূন্যতা তৈরি হয়, তাকে পার্নিসিয়াস অ্যানেমিয়া বলে। যথেষ্ট্য পরিমাণে মাংশ ও শাক সবজি না খাওয়ার কারণে ভিটামিন বি১২ এর অভাব দেখা দেয়।
শেষ কথা
মেডিকেল টার্মগুলোর কারণে লেখাটা পড়তে একটু খটোমটো লাগলেও আমরা রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ জেনেছি। সুতরাং, এখন থেকে আমরা ওইসব খাবারগুলো বেশি খাবো যেগুলো রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। আর সেই সাথে সতর্ক থাকবো অ্যানেমিয়া রোগ থেকে।
Leave a Reply