মানুষ জন্মায়, বড় হয়, বিয়ে করে, সংসার করে, ব্যবসা কিংবা চাকরি করে; আর এ সবকিছুর জন্যেই আর্থিক পরিকল্পণা প্রয়োজন। আর সব পরিকল্পণার প্রাইমারি পার্ট হচ্ছে লাইফ ইন্সুরেন্স।
উন্নত বিশ্বে প্রায় প্রতিটি দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই লাইফ ইন্সুরেন্স রয়েছে। যার কারণে তাদের লাইফ অনেক সিকিউরড্। বিশেষ করে, আর্থিক দিক থেকে তারা অনেকটাই নিশ্চিন্ত জীবন-যাপন করে থাকেন।
আমাদের দেশের মানুষ এখনো লাইফ ইন্সুরেন্সের ব্যাপারে অতোটা সচেতন নয়, তাই এটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না। আবার, লাইফ ইন্সুরেন্স সম্পর্কে এমন ৫টি বিষয় আছে যা অনেকে জানে না। তাই, অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না কি কারণে তাদের লাই্ফ ইন্সুরেন্স দরকার।
আসুন, যেসব কারণে লাইফ ইন্সুরেন্স দরকার, সেগুলো আজ আমরা বোঝার চেষ্টা করি।
চূড়ান্ত আর্থিক ব্যয় বহন করার জন্যে
এমন কিছু মুহূর্ত মানুষের জীবনে এসে পড়ে, যাতে চূড়ান্তভাবে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ব্যয়ের প্রয়োজন হয়। এ সময় নিশ্চয়ই আপনি মানুষের কাছ আর্থিক সহযোগীতার জন্যে হাত পাততে চাইবেন না। যদি না চান, তবে লাইফ ইন্সুরেন্স আপনার ব্যয় ভার বহন করবে, আপনার সন্মাণ রক্ষা করবে।
উদাহরণ স্বরূপ, চিন্তা করুন যে আপনার মেয়ে কিংবা বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু বিয়ের এই বিশাল ব্যয় বহন করার মতো সাধ্য আপনার নেই। তাই বলে কি আপনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না! আবার, মেয়ে বা বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে কি আপনি মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চেয়ে বেড়াবেন! নিশ্চয়ই না। কাজেই, লাইফ ইন্সুরেন্স বা জীবন বীমা আপনার জীবনকে সহজ করে তুলবে।
বিয়ের খরচ বহন করার জন্যে
ধরা যাক, আপনি বিয়ে করার পরিকল্পণা করছেন। কিন্তু হাতে যথেষ্ট পরিমাণে টাকা-পয়সা নেই। তাই, টেনশনে আছেন এই ভেবে যে কিভাবে বিয়ের খরচ ভার বহন করবেন। আপনাকে এই টেনশন থেকে মুক্ত করতে পারে বিয়ের আগেই করে রাখা একটি লাইফ ইন্সুরেন্স।
বেবি নেয়া ও তার খরচ বহন করার জন্যে
বিয়ের পর অনেক দম্পত্তিই এই ভয়ে বেবি নিতে চান না যে, বেবির বার্থ কষ্ট অর্থাৎ হাসপাতালের খরচ কিভাবে বহন করবেন। আবার, বেবি পৃথিবীতে আসার পর তার পেছনে যেসব খরচ হবে, সেগুলোইবা কিভাবে বহন করবেন। আপনি যদি বিয়ের আগেই একটি লাইফ ইন্সুরেন্স করে রাখেন, তবে বিয়ের পর বেবি নিতে আপনাকে আর আর্থিক বিষয় নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না।
সন্তানের পড়াশুনার খরচ কাভার করার জন্যে
অন্য অনেক বাবা-মায়ের মতো আপনিও নিশ্চয়ই আপনার সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে চান, ভাল স্কুল, কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করাতে চান। আর ভাল মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্যে আপনাকে অবশ্যই উচ্চ মানের ব্যয় ভার বহন করতে হবে।
করোনাকালীণ বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই হুমকির মুখে। অনেকেই তাই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আপনিও চাইলে আপনার সন্তানকে অনলাইনেই দেশ বা বিদেশের ভাল কোনও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন। যেমন, আপনার সন্তানের জন্যে রয়েছে আমেরিকার ৫টি প্রধান অনলাইন স্কুল। এ ধরণের স্কুলে পড়ানোর জন্যে যে ব্যয় বহন করতে হবে, সেটা আপনাকে কাভার দিতে পারে লাইফ ইন্সুরেন্স।
আয়ের রিপ্লেসমেন্ট করার জন্যে
আপনি যদি চাকরি করেন, কিংবা আপনার পরিবারের যারাই চাকরি করে, তাদের যে কেউ যদি মারা যায়, তবে তার ইনকামটা বন্ধ, তাই না? কিন্তু তার যদি একটি লাইফ ইন্সুরেন্স থাকে, তবে এটি তার আয়ের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ, মৃত্যুর পরও তার আয় বন্ধ হয়ে যাবে না। জীবন বীমা থেকে সে আর্থিকভাবে লাভবান হতে থাকবে যা তার পরিবার ভোগ করতে পারবে।
ঋণ পরিশোধের জন্যে
বাড়ি করতে গিয়ে বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার সময় কিংবা অন্য যে কোনও বড় ধরণের কাজে হাত আপনি যদি ঋণগ্রস্থ হয়ে থাকেন, তবে লাইফ ইন্সুরেন্স আপনাকে সেই ঋণ থেকে উদ্ধার করবে।
অনেক জমি বা বাড়ি মর্টগেজ দিয়েও অনেকে ঋণ নিয়ে অন্য কোনও কাজ করে থাকেন। কিন্তু সে ঋণ শোধ করতে না পেরে জমি বা বাড়ি হারানোর উপক্রম হয়। এরকম ক্ষেত্রেও জমি বা বাড়ি বাঁচানোর একটা বড় উপায় হচ্ছে একটি লাইফ ইন্সুরেন্স থাকা।
বৃদ্ধ বাবা-মা’র দেখা-শুনা করার জন্যে
বৃদ্ধ বাবা মা’র দেখা-শুনা করা, তাদের চিকিৎসাসহ সব ধরণের খরচ বহন করা আমাদের সবারই দায়িত্ব। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই এই দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন। কিন্তু কেউ যদি একটি জীবন বীমা ইস্যু করে রাখেন, তবে বাবা-মাকে যে কোনও বয়সেই সাহায্য সহযোগীতা করতে পারেন।
চাকরি ক্ষেত্রে রিস্ক ফ্রি হওয়ার জন্যে
এভিয়েশন, কনস্ট্রাকশন, অয়েল এন্ড ন্যাচারাল গ্যাস, ফায়ার ফাইটিংসহ এমন অনেক চাকরি আছে, যেগুলোতে চাকরিজীবির জীবন সব সময়ই রিস্কে থাকে। যে কোনও সময় অপ্রত্যাশিতভাবে যে কোনও দূর্ঘটনাই ঘটে যেতে পারে। এ ধরণের চাকরি যারা করেন, তাদের অবশ্যই একটা লাইফ ইন্সুরেন্স পলিসি থাকা উচিৎ।
যদি দূর্ঘটনার কারণে কোনও অঙ্গ বিকল হয়ে যায়, তবে ইন্সুরেন্স কাজে আসবে চিকিৎসাসহ অন্যান্য অনেক ব্যয় বহনের জন্যে। আর যদি চাকরিজীবি মারা যায়, তবে তার করে যাওয়া লাইফ ইন্সুরেন্স দিয়ে পরিবারের লোকজন কোন রকমে হলেও জীবনকার্য চালিয়ে যেতে পারবে।
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যে
কেউ তো আর চিরকাল চাকরি করবে না। কিংবা, চাকরি করলেও নিজে কিছু একটা করার ইচ্ছে তো জাগতেই পারে, যেহেতু নিজে কিছু করার মাঝে রয়েছে অবাধ স্বাধীনতা এবং উন্নতির সিঁড়ি। কাজেই, কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করে এক সময় উদ্যোক্তা হতে চান, তবে তার উচিৎ আগে থেকেই একটি ইন্সুরেন্স পলিসি কিনে রাখা। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যে একজন মানুষের মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট থাকা দরকার, তার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে মানি সেভিং যা লাইফ ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে হতে পারে।
Leave a Reply