আমাদের বর্তমান জীবনকে যারপরনাই সহজ করে তুলেছে নানা রকম ইলেকট্রোনিক্স ডিভাইস। তার মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস হচ্ছে ট্যাবলেট পিসি যাকে সংক্ষেপে ট্যাব বলা হয়। অনেকেই এটি ইউজ করছেন, আবার অনেকেই করছেন না।
যারা ইতিমধ্যেই এই ডিভাইসটি ইউজ করেছেন, তারা এর বহুবিধ উপকার সম্পর্কে জানেন। যারা কখনো ট্যাব ব্যবহার করেননি কিংবা করার কথা ভাবছেন না, তাদের জন্যেই ট্যাবের উপকারিতা নিয়ে আমাদের আজকের পোস্ট।
মূল পোস্টে যাওয়ার আগে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার ভেতর ১০টি ভাল মানের ট্যাব দেখে নিতে পারেন। আশা করি, কম দামের এই ট্যাবগুলো দেখে এসেছেন। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক যেসব কারণে আমাদের সবারই একটি ট্যাব থাকা চাই।
মিনি কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহার
ট্যাব একটি মিনি কম্পিউটার। কম্পিউটারে যত ধরণের পেরিপেরালস্ থাকে, ট্যাবেও তার প্রায় সবই থাকে। একটা কম্পিউটার দিয়ে আপনি যত কাজ কর্ম সমাধা করতে পারবেন, ট্যাব দিয়ে আপনি সেগুলোর প্রায় সবই সমাধা করতে পারবেন।
ট্যাবলেটে সাধারণত মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, বর্তমানে এমন অনেক ট্যাব পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলোতে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম, উইন্ডোজ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, ট্যাবলেটে কাজ করার প্রোডাক্টিভিটি বেড়েছে।
ল্যাপটপের চেয়ে দাম কম
আজকাল যদিও কম দামে অনেক ভাল কিছু ল্যাপটপ পাওয়া যায়, তবু ট্যাবের দাম তার চেয়ে আরো কম। ল্যাপটপ দিয়ে একজন ইউজার যেসব দরকারি কাজ করতে পারে, ট্যাব দিয়েও অনায়াসে সেসব করা যায়। উপরন্ত, বেশি টাকা ব্যয় করে ল্যাপটপ কিনতে হয় না। কারণ, ল্যাপটপের চেয়ে ট্যাবের দাম কম।
সহজে বহন যোগ্য
ট্যাবের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে যখন খুশি, যেখানে খুশি, হাতে করে কিংবা ব্যাগে ভরে বয়ে বেড়ানো যায়। সাইজের দিক থেকে স্মার্টফোনের চেয়ে কিছুটা বড় হওয়ার কারণে ট্যাবকে পকেটে রাখা যায় না। কিন্তু হাতে করেই যে কোনও জায়গায় বহন করা যায়। আর স্কুল, কলেজ কিংবা ভার্সিটি ব্যাগের উপরের পকেটেই অনায়াসে রেখে দেয়া যায়।
কোথাও বেড়াতে বা ঘুরতে গেলে ট্যাবের চেয়ে ভাল কিছু আর হতেই পারে না। কারণ, গাড়িতে বসেই কম্পিউটারের কাজ করা যায় ট্যাবের মাধ্যমে। তাছাড়া, যখন কোনও লোকেশনের ম্যাপ দেখার দরকার হয়, তখন ট্যাবে সেটি বড় করে দেখা যায়।
ই-বুক পড়ার জন্যে অসাধারণ
ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপে ই-বুক পড়ার অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, ডেস্কটপে পড়তে হলে আপনাকে চেয়ার টেবিলে বসেই পড়তে হবে। কেননা, ডেস্কটপ কম্পিউটারকে কোলে তুলে নেয়া যায় না, কিংবা ইচ্ছে মতো স্থান পরিবর্তণ করা যায় না। অন্যদিকে, ল্যাপটপকে যে কোনও জায়গায় বহন করা গেলেও, শুয়ে শুয়ে কিংবা কোলে তুলে নিয়ে ই-বুক পড়া বেশ কষ্টসাধ্য।
কিন্তু ট্যাবকে আপনি যেমনি ইচ্ছে তেমনি ব্যবহার করে ই-বুক পড়তে পারেন। আপনি চাইলে বিনামূল্যে যে কোনও ই-বুক ডাউনলোড করতে পারেন আর ট্যাবের স্ক্রিন বড় হওয়ায় স্মার্টফোনের চেয়ে ট্যাবেই বেশি সুন্দরভাবে পড়তে পারেন। এমনকি, শুয়ে, বসে যে কোনভাবেই ট্যাবে বই পড়ার আনন্দ পাওয়া যায়।
গেম খেলার আনন্দ
এমন একটা সময় ছিল যখন গেম খেলা মানেই ছিল কম্পিউটার গেম। আজকাল গেম খেলার জায়গাটা দখল করে নিয়েছে স্মার্টফোন। যদিও আজকাল স্মার্টফোনই গেম খেলার বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে, কিন্তু এমন অনেক গেম আছে যেগুলো স্মার্টফোনের চেয়ে ট্যাবেই বেশি ভাল লাগে।
যেসব গেমের ইন্টারফেস অনেক বড় এবং ফাংশনালিটিও বেশি, সেগুলো ট্যাবেই খেলতে হয়। তাছাড়া, লোকেশন নির্ভর এমন কিছু গেম আছে যেগুলোর গেম ফিল্ড অনেক বড় যা স্মার্টফোনে পুরোপুরি আসে না। সেসব গেমের ক্ষেত্রেও ট্যাবই বেশি গ্রহণযোগ্য। বড় স্ক্রিণের কারণে ফোনের চেয়ে ট্যাবে গেম খেলতে পছন্দ করেন অনেকেই।
মিউজিক ভিডিও ও মুভি দেখার মজা
স্ক্রিন সাইজ ছোট হওয়ায় স্মার্টফোনে মুভি দেখার মজা নেই। স্ক্রিন যত বড় হয়, মুভি দেখতে তত বেশি ভাল লাগে। এ কারণেই আমরা সাধারণত মুভি দেখার জন্যে হলে যাই। কারণ, হলের স্ক্রিন সবচেয়ে বড় হয়। কিন্তু সব সময় তো আর হলে যাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া, ইউটিউবের আমলে এখন আর কেউ হলে যেতে চায় না।
তাহলে উপায়!
উপায় হচ্ছে ট্যাব। ট্যাবের স্ক্রিন স্মার্টফোনের চেয়ে বড় হওয়ায় মিউজিক ভিডিও দেখার মজা বেড়ে যায়।
ইন্টারনেট ব্রাউজিং সুবিধা
পোর্টাবিলিটি এবং দ্রুত স্টার্ট-আপ কম্বিনেশন ট্যাবকে ওয়েব ব্রাউজিং এর জন্যে অসাধারণ করে তুলেছে। যদিও ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনে ওয়েব ব্রাউজিং এর আলাদা আলাদা কিছু সুবিধা রয়েছে, কিন্তু ট্যাবের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
বড় এবং ভারী হওয়ায় ল্যাপটপ সব সময় সব জায়গায় বহন করা কষ্টসাধ্য। কিন্তু ছোট আর ওজনে হালকা হওয়ায় ট্যাব বহন করা বেশ সহজ। আর যে কোনও স্থানেই আপনি ট্যাব দিয়ে নেটের সাথে কানেক্টেড হতে পারবেন এবং নিখুতভাবে ব্রাউজিং করতে পারবেন ।
ডিজিটাল নোট বুক
যে কোনও প্রয়োজনীয় বিষয়ের নোট করার জন্যে আগে আমাদেরকে পকেটে একটা প্যাড এবং একটা কলম রাখতে হতো। প্রয়োজনের সময় পকেট থেকে বের করে আমরা প্যাডে লিখতাম, অর্থাৎ নোট করে রাখতাম। কিন্তু এটা বেশ বাড়তি একটা ঝামেলার কাজ ছিল। তাছাড়া, প্রায়ই কলম হারিয়ে যেতো। ফলে, নোট করার সময় কারো কাছ থেকে কলম ধার চাইতে হতো যা বেশ বিরক্তিকর ছিল।
কিন্তু ট্যাব আসার পর আমাদের আর খাতা কলম বয়ে বেড়াতে হচ্ছে না। এগুলো ছাড়াই আমরা খুব সহজে নোট নিতে পারছি। আর এই ডিজিটাল নোট সংরক্ষণ করা যাচ্ছে কম্পিউটারে, মোবাইলে, ক্লাউড স্টোরে। ফলে, সেগুলো কখনোই হারানোর কোনও ভয় নেই।
প্রজেন্টেশনের ব্যবহার
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেট অফিসের মিটিং, কিংবা ভার্সিটির ক্লাসে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনের জন্যে ট্যাবের চেয়ে বেশি সুবিধা আর কোনও ডিভাইস দিতে পারে বলে মনে হয় না। পাওয়ার পয়েন্টে তৈরি যে কোনও প্রেজেন্টেশন ট্যাবের স্ক্রিনে খুব সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করা যায়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ট্যাবের ব্যবহার
শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশিরভাগ স্টেকহোল্ডার, যেমন ছাত্র-ছাত্রী, পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের সঙ্গে দ্রুত এবং সহজে কানেক্টেড হওয়ার জন্যে ট্যাবের ব্যবহার অপরিহার্য্য। আজকাল, প্রায় প্রতিটি ক্লাসেই ছাত্র-ছাত্রীরা ট্যাবের ব্যবহার করে থাকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে ট্যাব বা ট্যাবলেট পিসি।
ট্যাব দিয়ে শিক্ষকরা অনায়াসেই ছাত্র-ছাত্রীদের মনিটর করতে পারেন। যে কোনও সময় প্রয়োজনীয় এডুকেশন মেটেরিয়ালস্ খুব সহজেই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। একই সঙ্গে, পিতা-মাতাও তাদের সন্তাদের পড়াশুনার প্রগ্রেস দেখে নিতে পারেন।
mili Mandal says
ওয়াও! সো নাইস! খুব ভাল লাগলো ট্যাবের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জেনে, ধন্যবাদ আপনাদের।
রবীন্দ্র নাথ রায় says
বোঝানো খুব ভালো। নেওয়ার আগে আমার প্রয়োজন মিটবে কি না বোঝা যায়।
ধন্যবাদ ।