স্মার্টফোনের উপকারিতা আর অপকারিতা নিয়ে বির্তকের শেষ নেই। কারো কারো মতে স্মার্টফোন আমাদের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে, অপরদিকে কিছু মানুষ বলে থাকেন যে এটি আমাদের জন্য আর্শিবাদ স্বরুপ, কোন কোন ক্ষেত্রে স্মার্টফোন আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে। প্রতিটি জিনিসেরই ভালোর পাশাপাশি কিছু খারাপ প্রভাবও থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে আমাদের বিবেচ্য বিষয়গুলি হচ্ছে স্মার্টফোন আমাদের জীবনে কোন ধরনের প্রভাব বেশি বিস্তার করছে।
বর্তমান বিশ্বে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে প্রযুক্তি তার নিজের স্থান শক্তভাবে গড়ে তুলেছে, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সর্বপ্রথম কম্পিউটার আবিষ্কারের দিন থেকে শুরু করে হাল সময়ের স্মার্টফোনের আধুনিকায়ন পর্যন্ত প্রতিনিয়তই আমরা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি। প্রয়োজনীয় তথ্যের সরবরাহ ছাড়াও আধুনিক জীবনের বিভিন্ন জটিল কাজকেও স্মার্টফোন সহজ করে তুলেছে, যার মধ্যে এমনও কিছু ব্যবহার রয়েছে যা বিপদের মুর্হুতে আপনার জীবন বাঁচাতেও সক্ষম।
স্মার্টফোন আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে
আমরা সবাই মোটামুটিভাবে স্মার্টফোনের সাথে পরিচিত এবং অধিকাংশই ব্যবহারে অভ্যস্ত। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা স্মার্টফোনের প্রতি এতটাই আসক্ত যে, তারা এর মাত্রারিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের সময় ও সৃজনশীলতাকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে চলেছেন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই স্মার্ট ডিভাইসটিই যে আপনার জীবন রক্ষাকারী বন্ধুর পরিচয় দিতে পারে, সেদিকে আমরা লক্ষ্য করতে বেমালুম ভুলে যাই। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক, যেভাবে আপনার স্মার্টফোন আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবণা নির্ণয়:
স্মার্টফোন এখন আর শুধু কলিং, ম্যাসেজিং আর চ্যাটিং এর জগতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনি। দিন যত যাচ্ছে এর ব্যাপ্তি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যোগাযোগ, মাল্টিমিডিয়া আর ইন্টারনেটের পাশাপাশি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও বর্তমানে এটি অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
অলিভ কোর নামের একটি কোম্পানী সম্প্রতি স্মার্টফোনের জন্য এমন একটি স্মার্টফোন কভার বাজারে ছেড়েছে যা আপনার হার্টের বিভিন্ন সময়ের অবস্থা নির্ণয় করতে সক্ষম। মূলত আপনি যখন আপনার ফোনের কভারটি স্পর্শ করেন, তখন কভারটিতে থাকা সেন্সর আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাহায্যে একটি ইসিজি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং আপনাকে একটি অ্যাপের মাধ্যমে তার ফলাফল প্রদর্শন করে।
ঠিক এই মুহুর্তে আপনার মধ্যে যদি কোন লক্ষণ ধরা নাও পড়ে, তবুও এই অ্যাপটির অ্যালগরিগম সেন্সর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ঠিক কখন আপনার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবণা রয়েছে, তা আপনাকে জানাতে সক্ষম।
অবস্থান নির্ণয়:
গ্রাহকসেবা ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে সব সময়ই গুগল অন্যান্য কোম্পানীগুলোর চাইতে নিজেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি গুগল বিপদকালীন সময়ের জন্য ট্রাস্টেড কনট্যাক্ট নামে একটি অ্যাপ প্লে ষ্টোর ও অ্যাপল ষ্টোরে ছেড়েছে। আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে আপনি এটি ডাউনলোড করবেন এবং আপনার বন্ধু এবং পরিবারের মানুষগুলিকে ট্রাস্টেড কনট্যাক্ট হিসাবে যুক্ত করে নেবেন।
এর ফলে আপনার যুক্তকরা মানুষগুলি আপনার সাম্প্রতিক সব কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত হতে থাকবেন। যদি আপনি কোন কারণে বিপদ অনুভব করেন, তাহলে এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি আপনার সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে আপনার পরিবার ও বন্ধুদের অবগত করতে পারবেন।
অ্যাপটি বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংয়ক্রিয়ভাবেও কাজ করতে সক্ষম। আপনি ইচ্ছা করলে একটি অ্যালার্ম সেট করে রাখতে পারেন। তখন নির্ধারিত সময় পর পর অ্যাপটি আপনাকে নোটিফিকেশন দেবে। যদি আপনি তাতে প্রতিক্রিয়া দেখান তাহলে ভালো, নতুবা এটি তখনই আপনার কাছের মানুষগুলোর কাছে আপনার ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় সর্বশেষ প্রাপ্ত অবস্থানের তথ্য প্রেরণ করবে।
নাইট ভিশন:
নাইট ভিশন প্রযুক্তি মূলত সেনাবাহিনীর জন্য ডেভেলপ করা হয়। ওই সময় এটি একটি গোপনীয় প্রযুক্তি ছিল যেটা দিক নির্ণয়, নিরাপত্তা এবং লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করার জন্য ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হত। এমনকি বিচার বিভাগেও এটিকে এমন সব বস্তুকে খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হতো, যা খালি চোখে দেখা অনেকটাই দুষ্কর।
তবে বর্তমান সময়ে প্লে ষ্টোর ও অ্যাপল ষ্টোরে এমন হাজারো অ্যাপ রয়েছে যা আমাদেরকে এই সুবিধা দিয়ে থাকে এমনকি কিছু কিছু ফোন রয়েছে যাতে এই নাইট ফিশন ফিচারটি প্রি-ইনষ্টলডভাবে ক্যামেরার সাথে যুক্ত থাকে।
অপরাধ দমন:
স্মার্টফোন যদি কিনতেই হয় তাহলে তার সর্বোত্তম ব্যবহারটিও নিশ্চিত করা উচিৎ। বর্তমান সময়ে সমাজে অপরাধ প্রবণতা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে যে কারো সামনেই যে কোন সময় অপরাধের শিকার অথবা সাক্ষী হতে পারেন। আজকের সময়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে উক্ত অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করতে আপনার স্মার্টফোনটি অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। আপনি চাইলে ঘটনাটি ভিডিও করে অথবা যে কোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লাইভ শেয়ার করে আইনি সহায়তা প্রাপ্তিসহ অপরাধের বিচারে ভূমিকা রাখতে পারেন।
স্মার্টফোনের উপকারিতা ঠিক কতটুকু তা একটি পোস্টের মধ্যে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে যাদের মতে উপকারের চাইতে ক্ষতিকর দিকটাই বেশি, আমি তাদের বলবো যে, কোন ভালো জিনিসকেই ইচ্ছা করলে খারাপ দিকে ব্যবহার করা যায়। এর জন্য ওই জিনিসটিকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত যতগুলি প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রয়োজন হয়, তার সবগুলিই কম বেশি একটি স্মার্টফোনে থাকে। তাই এর সঠিক ব্যবহার আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে যাতে আমরা এটিকে নিছক একটি অনলাইন সার্ফিং ডিভাইস, ক্যামেরা বা মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস হিসেবে না ভেবে এর সুফল লাভ করতে পারি।
মুনতাকিমুল আবেদীন says
খুব ভাল এবং সময়োপযোগী একটা টপিক। ভাল লিখেছেন ভাইয়া