ছেলেরা যত সহজে কোন মেয়েকে নিজের জন্য নির্বাচন করতে পারে, মেয়েরা তা পারে না। একজন মেয়েকে তার জন্য উপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অনেকগুলি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। কোন ছেলে শুধুমাত্র সুদর্শন হলেই একজন মেয়ে তার সাথে সম্পর্কে জড়াতে চায় না। সুদর্শন হওয়ার পাশাপাশি সে যদি ব্যক্তিত্ববান, চরিত্রবান এবং গুণবান হয়, তাহলেই মেয়েরা তার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার ব্যাপারে ভেবে দেখে।
সম্পর্কে যাবার মত সিদ্ধান্তের দিক থেকে মেয়েরা ছেলেদের চাইতে নিজেদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে করে থাকে। নারীরা স্বভাবতই সহজ সরল হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই একজন অচেনা মানুষকে তারা আপন করে নিতে জানে। আর ভুলটাও তাদের এখানেই হয়।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও এখানে বিভিন্ন অচেনা ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব বন্ধুত্ব পরবর্তীতে সম্পর্কের রূপ নেয়। একজন নারী হিসেবে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন যে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসলে কতটা যৌক্তিক?
বাস্তব জীবনে হোক আর ভার্চুয়াল লাইফেই হোক, অজ্ঞতার কারণে মেয়েরা হরহামেশাই ভুল ছেলেদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে ভবিষ্যতে তাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই দেরী না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ছেলেদের সম্পর্কে, যাদের সাথে কখনোই সম্পর্কে যাবেন না বা যাওয়া উচিৎ নয়।
অপরিণত ছেলে:
এ ধরনের ছেলেরা কোনদিন ছেলে থেকে পুরুষে পরিণত হয় না এবং সারা জীবন তারা ছেলে মানুষই থেকে যায়। আর পুরুষত্বই হলো এমন একটি বৈশিষ্ট্য, যা জীবনের গুরুত্বর মুহুর্তে প্রত্যেকটি মেয়ে তার সঙ্গীর মধ্যে খুঁজে থাকেন। আপনি এদের যতই বোঝানোর চেষ্টা করুন না কেন, এরা কোনভাবেই জীবনে স্বাভাবিক আচরণ করবে না।
এ ধরনের ছেলেরা মারাত্বক ধরনের সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হয়ে থাকে এবং তাদের মধ্যে হাসি খুশি থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে, যা শুরুতে সব মেয়ের কাছেই ভালো লেগে যায়। কিন্তু এদের সাথে যে মেয়েরা সম্পর্কে জড়ায়, তারা খুব তাড়াতাড়িই বুঝতে পারে যে তিনি যাকে পছন্দ করেছেন, সে জীবনের জরুরী সময়গুলোতে কতটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।
তাছাড়া কোন বিষয়ের গুরুত্ব তারা বুঝতে অক্ষম আর পারলেও সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাদের নেই। হয় তারা এক্ষেত্রে অন্যের দেখিয়ে দেয়া পথে হাঁটতে শুরু করে অথবা চুপচাপ বসে থাকে।
এ ধরনের ছেলেদের আমরা মাম্মাস বয় বলে সম্বোধন করে থাকি। এর কারণ হলো এদের অপরিণত হয়ে বেড়ে ওঠার পেছনে এদের মায়েদের অনেক বড় একটা হাত থাকে। এরা তাদের মায়ের সাথে আলোচনা না করে নিজেরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলি পালনে এরা সব সময়ই অন্যের মুখাপেক্ষী। আপনি যদি এমন কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েই পড়েন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে ভেতর থেকে সে একটা শিশু ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর শিশুদের সাথে সম্পর্ক দারুণ উপভোগ্য হলেও, পরিণত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অকার্যকর। যেমন ধরুণ, আপনি এমন একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন যে কিনা মায়ের কথার বাইরে কোন কাজ করে না কিংবা নিজের পরিবারের কথাই সবার আগে ভেবে থাকে। এখন আপনার সামনে এমন একটা সময় উপস্থিত হয়েছে যখন আপনাকে ঘর ছাড়তে হচ্ছে। এ রকম সময় আপনি কি ছেলেটাকে কাছে পাবেন? দৌড়ে পালাবে…..
স্বার্থপর ছেলে:
যে-সব ছেলেদের সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে এড়িয়ে যেতে হবে, তাদের মধ্যে স্বার্থপর ছেলেরা অন্যতম। একটি সম্পর্ক কোনও একমুখী রাস্তা নয় যে এখানে শুধু একজনই সুখী থাকবে আর অন্যজন ত্যাগ করে যাবে। সম্পর্কে সফল করতে হলে সেখানে উভয়েরই একে অপরের প্রতি আন্তরিক এবং প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে হলেও অপরকে সুখী করার মন মানসিকতা থাকতে হয়। নৈলে এটি হয়ে যায় প্যারাসিটিক সম্পর্ক। যাছাই করে নিন ইতিমধ্যেই আপনি কোন প্যারাসিটিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন কিনা।
যাই হোক, স্বার্থপর ছেলের সাথে সম্পর্ক করে আজ পর্যন্ত কোন মেয়েই সুখী হতে পারেনি। এরা সব সময়ই নিজের স্বার্থ এবং প্রয়োজনকে আপনার প্রয়োজনের উর্ধ্বে স্থান দেবে। আপনার আবেগ বা অনুভূতির কোন কোন মূল্যায়নই সে করবে না। এমনকি, আপনাদের দুজনের সম্পর্কের খাতিরেও সে কোন ধরনের আত্মত্যাগ করতে রাজী হবে না।
আপনি যদি এমন কোন স্বার্থপর ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েই পড়েন, তাহলে লক্ষ্য করবেন যে সেই মানুষটি শুধু আপনার কাছ থেকে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করে চলেছে। নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সে আপনাকে ব্যবহার করবে, এমনকি আঘাত করতেও পিছু পাঁ হবে না। দিন যত যেতে থাকবে, আপনি নিজেকে একজন জেলে আবদ্ধ কয়েদীর মত ভাবতে শুরু করবেন।
সম্পর্কের একটা পর্যায়ে আপনার দম বন্ধ হয়ে আসার মত অবস্থা হবে, যার চুড়ান্ত পরিণতি ব্রেকআপ ছাড়া আর কিছুই নয়। কাজেই, বুঝে নিন কখন আপনার সঙ্গীর সঙ্গে ব্রেকআপ করা উচিৎ। তবে, আমাকে ভুল বোঝার কারণ নেই, আমি মোটেও চাই না কারো ব্রেকআপ হয়ে যাক। বরং, এটুকু চাইতেই পারি যে, শুধু মেয়েরাই নয়, ছেলেদেরও কোন স্বার্থপর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা উচিৎ নয়।
সন্দেহপ্রবণ ছেলে:
এ ধরনের ছেলেদের সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। আজকের দিনে সন্দেহ প্রবণ নয় এমন ছেলে পাওয়া বরং দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মজার ব্যাপারটি হলো যে, এরা নিজেদের সন্দেহ প্রবণ ভাবে না। এরা এদের সন্দেহকে আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসার অংশ হিসেবেই ভাবে এবং আপনার খেয়াল রাখার জন্যই তাদের এ-সব করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করে।
উদাহরণ স্বরুপ, আজদের দিনে আপনি যখন এমন কোন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াবেন, তখন প্রথম পর্যায়েই সে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টটির পাসওয়ার্ড দাবি করে বসবে। আপনিও যে একজন মানুষ এবং আপনারও যে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা থাকতে পারে এটা আপনি তাকে কখনোই বুঝাতে পারবেন না।
দিনে এবং রাতের বিভিন্ন সময়ে কারণে অকারণে সে আপনাকে ফোন দিয়ে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করবে। কারণ তার মনে এই চিন্তাই সব সময় ঘুরবে যে হয়তো আপনি অন্য কারো সাথে কথা বলেন। আর যদি এর মধ্যে কোন সময় আপনার ফোন ওয়েটিংয়ে থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই। এদের সাথে সম্পর্কে জড়ালে আপনি আপনার আত্মমর্যাদার পাশাপাশি পরিবার এবং সমাজেও নিজের মান-সম্মান হারাবেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে আধুনিকতার এই নতুন সম্পর্কে জড়ানোর প্রক্রিয়াগুলোকে অর্থহীন মনে হয়। এটি হয়তো আপনাকে সুযোগ করে দিচ্ছে এমন ছেলেদের সাথে পরিচিত হওয়ার, যার সাথে স্বাভাবিকভাবে হয়তো আপনার কখনো পরিচয়ই হতো না। এর ভালো এবং মন্দ উভয় দিকই আছে।
ভালো দিকটি হলো বিভিন্ন ছেলেদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আগের চাইতে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। আর খারাপ দিকটি হলো এ প্রক্রিয়ায় আপনার জীবনে এমন অনেক অবাঞ্চিত মানুষের আগমন ঘটবে যারা সুযোগ পেলে আপনার জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলবে।
Leave a Reply