‘মানুষবাহী ড্রোন’ এই শব্দটি শুনলেই প্রথম যা মনে হবে তা হল হলিউড মুভিগুলোর কাল্পনিক কোন যানবাহন। যাতে থাকবে না কোন ড্রাইভার কিংবা মস্তিষ্কের ইশারায় উড়তে পারা কোন বস্তু। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের কিছু আজকাল চিন্তা করা গেলেও, বছর দশেক আগেও মানুষ ভাবত হলিউড মুভি দেখে হয়ত মাথা খারাপ করা কোন ব্যক্তি।
বাস্তবেই এখন এই প্রযুক্তি দেখা যেতে পারে কয়েক বছর এর মধ্যে। মানুষের সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই মানুষবাহী ড্রোন নিয়ে আসছে চীনের প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইহ্যাং করপোরেশন।
মানুষবাহী ড্রোনের আগে সাধারনত যে সকল ড্রোন আমরা এখন পর্যন্ত দেখে আসছি তা হল আকারে ছোট উড়ন্ত বস্তু এবং যা ক্যামেরা সহ হালকা কিছু বহন করার কাজেই এখন পর্যন্ত ব্যবহার হত। পন্য ডেলিভারির কাজে ই-কমার্স সাইট আমাজন ও সাম্প্রতিক কালে ড্রোন এর ব্যবহার শুরু করেছে। তবে মানুষবাহী ড্রোন এই প্রথমই আলোচনায় আসল।
আরো পড়ুন:
- আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময় ‘সোফিয়া’
- ভবিষ্যতের তাক লাগানো সেরা ১০ প্রযুক্তি
- বাংলাদেশে নকিয়ার রাজত্ব, পতন ও প্রত্যাবর্তন
প্রযুক্তির নতুন বিস্ময় মানুষবাহী ড্রোন!
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দারুণ মিশেল এর ফলে পৃথিবীর মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে দারুন গতিতে। তারই ফল হল এই মানুষবাহী ড্রোন। এই ড্রোনটির কথা আজই অনেকে প্রথম জানলেও এর কাজ শুরু করা হয়েছে অনেক আগেই। ইহ্যাং করপোরেশন একটি চাইনিজ ড্রোন তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান এবং এটি যে মানুষবাহী ড্রোনটি তৈরী করেছে তার নাম দেয়া হয়েছে Ehang 184। মানুষবাহী এই ড্রোনটি তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে আমেরিকার লাস ভেগাস এ।
মানুষবাহী প্রথম ড্রোন Ehang 184!
ছবিতে আমরা যে বিশাল ড্রোনটি দেখতে পাচ্ছি সেটিই হল Ehang 184। এই ড্রোনটির পক্ষে এখন পর্যন্ত একজন মানুষ নিয়ে যে কোন পরিস্থিতিতে উড়তে পারার সক্ষমতা রয়েছে। এই বিশাল মানুষবাহী ড্রোনটি তৈরী করতে ব্যবহার করা হয়ছে অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম ও কার্বন ফাইবার। এতে করে এটি মজবুত হওয়ার পাশাপাশি হালকাও হয়েছে, যা একে আকাশে ভাসতে সাহায্য করে। আর এই ড্রোনটিকে উড়ার সক্ষমতা দান করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক ব্যাটারি, এয়ারফ্রেম কন্সট্রাকশন এবং ইলেকট্রনিক মোটর।
মানুষবাহী এই ড্রোনটির উড়ার জন্য একে দেয়া হয়ছে বৈদ্যুতিক শক্তি চালিত ৮টি পাখা। এর সাহায্যে এই ড্রোনটি প্রায় ১০ মাইল থেকে ৮০ মাইল প্রতি ঘন্টা বেগে উড়তে পারে। এছাড়াও এই ড্রোনটি যাতে উড়ার সময় পথ হারিয়ে না ফেলে কিংবা কোন দূর্ঘটনার শিকার হলে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার ব্যবস্থা।
বিশাল এই মানুষবাহী ড্রোনটির গায়ে লাগানো হয়েছে অসংখ্য সেন্সর। এই সেন্সর ব্যবহার করে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং করার মাধ্যমে ড্রোনটি সঠিক রাস্তা খুজে নিতে পারে। পাশাপাশি কোন বিপদের সম্মুখিন হলে যাতে সহজে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব হয় তার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে এই ড্রোনটিতে। মানুষবাহী ড্রোন Ehang 184 এ ব্যবহার করা হয়েছে বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স। এর ফলে এটি কাজ করবে কোন চালক ছাড়াই। আর এ জন্য এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করা হয়েছে মজবুত। এ সকল প্রযুক্তি ব্যবহারের এর ফলে এটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোড়দার হয়েছে বলাই যায়।
তবে এখনি এই ড্রোনটির বাজারে আশার কোন সম্ভাবনাই নেই। কারণ, এখনও চলছে এটির পরীক্ষা নিরীক্ষা। এই মানুষবাহী ড্রোনটির পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ করা হচ্ছে আমেরিকার লাস ভেগাস ও দুবাইতে। ইতোমধ্যেই ১০০০ বার পর্যন্ত এই ড্রোনটিকে আকাশে উড়ানোর পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলাফল আশাজনকই বলা যায়। কারণ প্রথম মানুষবাহী ড্রোন হিসেবে এটি একটানা ২০ মিনিট এর বেশি আকাশে উড়ার ক্ষমতা দেখিয়েছে। এছাড়া এটি ৫০০ পাউন্ড সমান ওজনও সাথে বহন করতে পারে।
এই আবিষ্কারের ফলে এখন আর জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার কোন দরকারই হবে না বলে ধারণা করাই যায়। এছাড়াও আরও অনেক সুবিধা এর মাধ্যমে মানুষ পেতে পারে। যেমন অসুস্থ রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার কাজে, দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোতে ত্রান কিংবা ওষুধ বিতরণের কাজে ইত্যাদি। মিলিটারি বা সামরিক প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দ্রুত কোন সাপ্লাই দেয়ার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এই মানুষবাহী ড্রোন!
তবে এই প্রযুক্তি আসলেও তা এখনই বা নিকট ভবিষ্যতে সাধারন মানুষ এর আয়ত্তের মধ্যে আশার সম্ভাবনা নেই। কারণ এর উচ্চাবিলাসী মুল্য শুধুমাত্র বিত্তবানদের পক্ষেই দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন ইহ্যাং করপোরেশন এর সিইও। আর এই লক্ষ্যেই এটি প্রথম বাজারজাত করা হবে দুবাই ও লাস ভেগাস এর মত বড় শহর গুলোতে। তবে প্রযুক্তির এত দ্রুত উন্নতি হচ্ছে যে ভবিষ্যতে মানুষ শুন্যে গাড়ি চালাবে তা ভাবা বোধহয় এখন আর অবিশ্বাস্য কিছুই নয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে । তারই ফসল হচ্ছে আজকের এই মানুষবাহী ড্রোন। সাধারন ড্রোন অনেক আগেই আবিষ্কার হলেও এই প্রথম তৈরী করা হল মানুষ বহন করা জন্য কোন ড্রোন। বিজ্ঞানের আবিষ্কার এই ড্রোন যেমন আমাদের অনেক উপকার সাধন করে চলেছে, ঠিক তেমনি অনেক অপকার ও করেছে এই আবিষ্কারটি। আমদের উচিত বিজ্ঞান এর এই জ্ঞান এর সঠিক ব্যবহার করা এবং বিজ্ঞান চর্চা করা। তবেই আমরা মানুষবাহী ড্রোন ছাড়িয়ে আরও অনেক দূর যেতে পারব।
Leave a Reply