কম্পিউটার বর্তমান সময়ের বহুল ব্যবহৃত একটি ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ডিভাইস। একটি কম্পিউটারকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য সর্বপ্রথম তাতে উইন্ডোজ দেওয়া লাগে। উইন্ডোজের প্রায় ৩০ বছরের ইতিহাসে অনেক উইন্ডোজই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নিত্যনতুন আবিষ্কারের ফলে ৩০ বছর আগের উইন্ডোজ আর আজকের উইন্ডোজের মধ্যে ব্যবধান অনেক। এই পোস্টে আমরা মাইক্রোসফট্ উইন্ডোজের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো, জানবো উইন্ডোজের আদ্যোপান্ত।
মাইক্রোসফট্ উইন্ডোজের ইতিহাস
Windows 1.01 থেকে শুরু করে Windows 10 পর্যন্ত অনেক ভার্সনের উইন্ডোজই বাজারে এসেছে। কিন্তু ব্যবহার উপযোগিতা বিবেচনায় আজ হাতে গোনা কিছু ভার্সণই থেকে গেছে। বাকিগুলো অতটা জনপ্রিয়তা না পাওয়ায় দখলে রাখতে পারেনি বাজার। কিন্তু শুরু থেকে যে-সব ভার্সন ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে, আজ জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্বন্ধে।
Windows 1.01
Windows 1.0 বা Windows 1.01 প্রথম উইন্ডোজ হিসাবে আবির্ভূত হয়। ২০ নভেম্বর, ১৯৮৫ সালে এটি প্রথম মাইক্রোসফট কর্তৃক রিলিজ পায়। অ্যাপল এবং মাইক্রোসফট এক সাথে অ্যাপলের ম্যাকিনটোশ এর জন্য এই প্রোগ্রামটি ডেভেলপ করে।
Windows 1.02
এটি মে, ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত সংস্করণ যা প্রথম আন্তর্জাতিক রিলিজ ছিল। গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ভিত্তিক এই উইন্ডোজটি ২ মাসের মাথায় বাতিল করা হয় এবং শুরু হয় পরবর্তী ভার্সণের কাজ।
Windows 1.03
ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম ভিত্তিক এই উইন্ডোজ ভার্সনটি আগস্ট ১৯৮৬ সালে রিলিজ পায়। ইউরোপীয় কি-বোর্ড ও অ্যাডিশনাল স্ক্রিন এবং প্রিন্টার ড্রাইভার এই উইন্ডোজের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
Windows 1.04
এটি এপ্রিল ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয়। এতে নতুন আইবিএম পিএস/ ২ কম্পিউটার সাপোর্টের জন্য অ্যাড করা হয়। তবে পিএস/২ মাউস বা নতুন ভিজিএ গ্রাফিক্স মোডের জন্য সাপোর্ট প্রদান করা হয়নি।
Windows 2.0
উইন্ডোজ ১ এর পরবর্তী সংস্করণ হিসেবে নভেম্বর, ১৯৮৭ সালে বাজারে আসে উইন্ডোজ ২ যা ছিল জিইউআই ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। কি-বোর্ড শর্টকাটের সংযোজনসহ এ ভার্সণে মাইক্রসফট্ উইন্ডো সাজানোর ব্যবস্থা, একটা উইন্ডোর ওপর আরেকটা উইন্ডো বসানোর কাজ করে। এছাড়াও, উইন্ডোগুলোকে মিনিমাইজ করা ও ম্যাক্সিমাইজ করার ব্যবস্থা রাখা হয় এই সংস্করণেই।
Windows 2.01
উইন্ডোজ ২.০ যে বছর আলোর মুখ দেখে, ঠিক সে বছরই এর পরবর্তী সংস্করণ চলে আসে। এই সংস্করণে যুক্ত করা হয় রিয়েল মুড মেমোরি মডেল যা হাই মেমোরি এরিয়া সাপোর্ট করার প্রথম সংস্করণ।
Windows 2.02
উইন্ডোজ ২.০১ এর পর পরই চলে আসে উইন্ডোজ ২.০২। কিন্তু এটি আসার পরেই অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন ফিচার কপি করার দায়ে অভিযুক্ত হয় মাইক্রোসফট্। বিশেষ করে অ্যাপলের ‘লুক এন্ড ফিল’ নকল করায় তুমুল সমালোচনার মুখে কোম্পানিটি।
Windows 2.03
একটি ১৬-বিটের একটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ যা ৯ ই ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে রিলিজ হয়। এটিতে GUI- ভিত্তিক অপারেটিং এনভাইরনমেন্ট ছিলো।
Windows 2.10
এই উইন্ডোজটি বাজারে উইন্ডোজ / ২86 এবং উইন্ডোজ / 386 হিসাবে স্থান পায়। যা মাইক্রোসফট উইন্ডোজ গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস-ভিত্তিক অপারেটিং এনভাইরনমেন্ট। এটি ২৭ শে মে ১৯৮৮ সালে রিলিজ পায় অর্থাৎ ২.০ এর রিলিজের ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এটি রিলিজ পায়।
Windows 2.11
১৩ মার্চ ১৯৮৯ সালে উইন্ডোজের এই ভার্সনটি রিলিজ পায়। মেমরি ম্যানেজমেন্ট, অ্যাপলটক সমর্থন এবং দ্রুত প্রিন্টিং এবং আপডেট প্রিন্টার ড্রাইভারের সুবিধা এবং কিছু ক্ষুদ্র পরিবর্তন নিয়ে এই উইন্ডোজের আবির্ভাব হয়।
Windows 3.0
২২ মে ১৯৯০ মাইক্রোসফট, উইন্ডোজের তৃতীয় প্রধান উইন্ডোজ হিসাবে রিলিজ দেয় Windows 3.0। এই উইন্ডোজটি প্রথম ব্যাপক সফল সংস্করণ হিসাবে প্রকাশ পায় এবং গ্র্যাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস সিস্টেমে অ্যাপল ম্যাকিনটোশ এবং কমোডর অ্যামিগার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল।
Windows 3.1
এই উইন্ডোজটি ১৬-বিট অপারেটিং সিস্টেমের জন্য ব্যক্তিগত কম্পিউটারগুলিতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মাইক্রোসফট কর্তৃক তৈরি করা হয়। ৬ ই এপ্রিল ১৯৯২ সালে এটি রিলিজ পায়। ৩১ শে ডিসেম্বর ২০০১ এ এটির অফিশিয়াল সাপোর্ট শেষ হয়।
Windows NT 3.1
এটি মাইক্রোসফট কর্তৃক তৈরিকৃত একটি ৩২-বিট অপারেটিং সিস্টেম। যা ২৭ জুলাই ১৯৯৩ এ রিলিজ পায়। এটি উইন্ডোজ এনটি সিরিজের প্রথম প্রকাশিত অপারেটিং সিস্টেম।
Windows for Workgroups 3.11
এই উইন্ডোজের কোডনেম ছিল “স্নোবল”। যা ১১ আগস্ট ১৯৯৩ এ রিলিজ পেলেও বাজারে আসে নভেম্বর ১৯৯৩ সালে। এটি ৩২-বিট ফাইল অ্যাক্সেস সমর্থন করে।
Windows 3.2
এই ভার্সনের উইন্ডোজ সর্বপ্রথম ২২ শে নভেম্বর ১৯৯৩ সালে প্রকাশ পায়। চীনা বাজারের জন্য একটি সিম্পল চীনা সংস্করণ প্রথমে রিলিজ পায়। এক বছর পর একটি আপডেট রিলিজ করা হয় যা উইন্ডোজ ৩.২ হিসাবে বাজারে প্রকাশ পায়।
Windows NT 3.5
২১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ সালে উইন্ডোজ এনটি’র দ্বিতীয় সংস্করণ হিসাবে এটি রিলিজ হয়। উইন্ডোজ এনটি ৩.৫ ডেভেলপমেন্টের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি ছিল অপারেটিং সিস্টেমের পারফরম্যান্সকে উন্নত করা। যে কারণে এর কোডনেম হিসাবে “ডেটোনা” নামটি বাছাই করা হয়।
Windows NT 3.51
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এনটি’র তৃতীয় সংস্করণ হিসাবে এই ভার্সনটি রিলিজ করা হয়। এটি ৩০ মে ১৯৯৫ সালে, উইন্ডোজ এনটি 3.5 এর নয় মাস পর রিলিজ করা হয়। মাইক্রোসফট ৩১ ডিসেম্বর ২০০১ পর্যন্ত এটির সাপোর্ট করে।
Windows 95
মাইক্রোসফট দ্বারা ডেভেলপ করা উইন্ডোজ 95 ছিল একটি ভোক্তা-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম যার কোডনেম ছিল “শিকাগো”। এটি ২৪ আগস্ট ১৯৯৫ সালে রিলিজ পায়। মাল্টিটাস্কড 16-বিট আর্কিটেকচার থেকে 32-বিট প্রিয়েমপটিভ মাল্টিটাস্কিং আর্কিটেকচারের দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো প্রধান পরিবর্তনগুলি ছিল এই ভার্সনের উইন্ডোজে। টাস্কবার এবং স্টার্ট বাটন এর মতো ফাংশন এই উইন্ডোজের মধ্যে ছিল।
Windows NT 4.0
এটি প্রিয়েমপটিভলি মাল্টিটাস্কড গ্রাফিকাল অপারেটিং সিস্টেম যা একক প্রসেসর বা সিম্যাট্রিক মাল্টি-প্রসেসর কম্পিউটারের সাথে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়। এটি ২৪ আগস্ট ১৯৯৬ সালে রিলিজ পায়।
Windows 98
“মেমফিস” কোডনেমে ডেভেলপ হওয়া Windows 98 একটি গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম। যা ১৯৯৮ সালের ১৫ মে থেকে মুক্তি পেলেও বাজারে আসে ২৫ শে জুন ১৯৯৮ তারিখে।
Windows 2000
১৫ ই ডিসেম্বর ১৯৯৯ মাইক্রোসফট থেকে তৈরি হলেও তা প্রথম বাজারে আসে ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০০০ এ। এটাকে উইন্ডোজ এনটি 4.0 এর উত্তরাধিকারী হিসাবে ধরা হয় এবং “উইন্ডোজ এনটি” সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ হিসাবে বাজারে আসে।
Windows ME
উইন্ডোজ মিলেনিয়াম এডিশন বা উইন্ডোজ এমই যা জুন ২০০০ এ তৈরি হলেও ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০০ সালে রিলিজ পায়। এটি মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ 9 এক্স সিরিজের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম ছিল।
Windows XP
“হুইসলার” কোডনেম দিয়ে মাইক্রোসফটের Windows XP পারতপক্ষে এনটি পরিবারের অংশ হিসাবে তৈরি করা হয়। এটি ২৪ শে আগস্ট ২০০১ সালে তৈরি হলেও ২৫ শে অক্টোবর ২০০১ সালে বৃহৎভাবে বিক্রির জন্য বাজারে ছাড়া হয়।
Windows XP Professional x64
এটি ২৫ শে এপ্রিল ২০০৫ সালে উইন্ডোজ এক্সপি x86 এর সংস্করণ হিসাবে বাজারে আসে। বড় পরিসরে 64-বিট মেমরি অ্যাড্রেস স্পেস ব্যবহার করার জন্য এটি ডিজাইন করা হয়।
Windows Vista
কোডনেম “লংহর্ন” ব্যবহার করে তৈরিকৃত Windows Vista ৮ নভেম্বর ২০০৬ সালে ডেভেলপ করা হলেও ৩০ জানুয়ারী ২০০৭ এ এটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায়। সাথে উইন্ডোজ মার্কেটপ্লেস থেকে ক্রয় এবং ডাউনলোড করার জন্য সহজলভ্য করা হয়।
Windows 7
বহুল ব্যবহৃত উইন্ডোজ, Windows 7 যার কোডনেম “ভিয়েনা” যা পূর্বে ছিল “ব্ল্যাককম্ব” ২২ শে জুলাই ২০০৯ সালে মুক্তি পেলেও ২২ শে অক্টোবর ২০০৯ সালে সবার জন্য সহজলভ্য করা হয়। উইন্ডোজ ভিস্তা রিলিজের তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি পাওয়া যায়। উইন্ডোজ 7 এর সার্ভার প্রতিরূপ, উইন্ডোজ সার্ভার 2008 R2, একই সময়ে মুক্তি পায়।
Windows 8
২০০৯ সালে Windows 7 প্রকাশের আগেই Windows 8 এর কাজ শুরু হয়। যা সর্বসাধারণের জন্য ২৬ অক্টোবর ২০১২ সালে উন্মুক্ত করা হয়।
Windows 8.1
১৭ অক্টোবর ২০১৩ সালে প্রকাশ পাওয়া “ব্লু” কোডনেমের উইন্ডোজ 8.1, ২৭ শে আগস্ট ২০১৩ সালে প্রথমবার পাবলিক বিটা হিসাবে মুক্তি পায়।
Windows 10
এটি ২৯ শে জুলাই ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। এটি উইন্ডোজ এর প্রথম সংস্করণ যা অনগোয়িং ফিচার আপডেটগুলি গ্রহণ করে।
মাইক্রোসফট্ উইন্ডোজের ইতিহাস নিয়ে লেখা আমার প্রয়াসটি আশা করি আপনাদের ভাল লেগেছে। আজ পর্যন্ত যতগুলো উইন্ডোজ মাইক্রোসফট থেকে উন্মুক্ত করা হয়েছে তার প্রতিটি নিয়েই এখানে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও এগুলো জানা কাজের ক্ষেত্রে কোনও উপকারে আসবে না, কিন্তু আপনার জ্ঞানার্জণকে কিছুটা হলেও এগিয়ে দেবে।
Leave a Reply