নতুন কোন কম্পিউটার ক্রয়ের ক্ষেত্রে সিপিউ নিয়ে আমরা যতটা মাথার ঘাম পাঁয়ে ফেলি, মনিটর নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তেমন কিছুই হয় না। প্রকৃত পক্ষে সিপিউ এর সাথে সাথে মনিটর কেনার আগে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ভেবে দেখা উচিৎ। কারণ আপনার সিস্টেম এর পারফরমেন্স কেমন হবে তার অনেকটাই নির্ভর করে এই মনিটরের উপর।
আপনি যে উদ্দেশ্যেই কম্পিউটার ক্রয় করেন, সেটি বাস্তবায়নে মনিটর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মনিটর নির্বাচনের পূর্বে অবশ্যই সেটি আপনার চাহিদা পূরণে সক্ষম কিনা তা দেখে নেয়া বাঞ্চনীয়।
মনিটর কি?
মনিটর মূলত কম্পিউটারের একটি আউটপুট ডিভাইস যা চিত্রাঙ্কিত আকারে তথ্য প্রদর্শণ করে থাকে। এটি কম্পিউটারের এমন একটি ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে যাতে একটি স্ক্রিণ থাকে, একটি সার্কিট সিস্টেম থাকে এবং থাকে একটি পাওয়ার সাপ্লাই। আর এই সবকিছু একটি কেসের ভেতরে আবদ্ধ থাকে।
পুরনো মনিটরগুলো CRT বা ক্যাথোড রে টিউব দিয়ে তৈরি হতো যাকে মূলত কোল্ড ক্যাথোড ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প বা CCFL বলা হতো। তখনকার মনিটরের সাইজ তাই অনেক বড় হতো, ওজনে ভারী হতো। বর্তমানে ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপ কম্পিটারের মতো ডিভাইসগুলোতে ফ্ল্যাট-স্ক্রিণ এলসিডি ব্যবহার করা হয় যা মূলত TFT-LCD বা থিন ফিল্ম ট্রানজিটর লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে। ফলশ্রুতিতে এখনকার মনিটরগুলো ওজনে হালকা এবং দেখতে সুন্দর হয়ে থাকে।
মনিটর কম্পিউটার বা সিপিউ’র সাথে যে-সব পার্টস্ ও পেরিফেরালস্ দ্বারা কানেকটেড হয়ে থাকে, সেগুলো হল-
- ভিডিও গ্রাফিক্স অ্যারে (VGA)
- ডিসপ্লে পোর্ট
- ডিজিটাল ভিজ্যুয়াল ইন্টারফেস (DVI)
- হাই ডেফিনিশন মাল্টিফল ইন্টারফেস (HDMI)
- লো ভোল্টেজ ডিফরেন্সিয়াল সিগন্যালিং (LVDS) এবং
- আরো কিছু কানেক্টরস্ ও সিগন্যালস্
মনিটরের আবিস্কারক ও প্রথম মনিটর
১৮৯৭ সালে জার্মাণ বিজ্ঞানী, নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ Karl Ferdinand Braun প্রথম ক্যাথোড রে টিউব আবিস্কার করেন। আর সেই ক্যাথোড রে টিউব থেকেই পৃথিবীর প্রথম মনিটর ডেভেলপ করা হয় এবং পরবর্তীতে বহু পরিবর্তণ ও পরিমার্জণের মাধ্যমে আধুনিক মনিটর আসে।
মনিটর কেনার আগে বিবেচ্য বিষয়
উইকিপিডিয়ার ভাষায় মনিটর হচ্ছে সেই ডিভাইস যার মাধ্যমে আপনার পিসি আপনাকে ফলাফল প্রদর্শন করে থাকে। যদি সঠিক মনিটর নির্বাচন না করেন তাহলে ফলাফলও সঠিক পাবেন না।
অনেকে ভাবতে পারেন এটা কিভাবে সম্ভব? সব সিপিউ যে আউটপুট দেবে মনিটর ও সেটাই দেখাবে। তাহলে আলাদা আলাদা ফলাফল কিভাবে সম্ভব?
ধরে নিন, আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। এবার ভাবুন তো আপনি যদি ভুল মনিটর নির্বাচন করে ফেলেন তাহলে কি হতে পারে?
স্বাভাবিকভাবেই গ্রাফিক্স ডিজাইন করার সময় মনিটরে দেখবেন এক রকম কিন্তু প্রিন্ট আউটপুটে আসবে অন্যরকম। আর শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইন নয়, ভুল মনিটর কিনলে পিসিতে যে কোন ধরনের কাজেই আপনাদের কোন না কোন সমস্যায় পড়তেই হবে।
তাই চলুন দেরি না করে জেনে নিই মনিটর কেনার সময় কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
কানেকশন টাইপ:
একটি মনিটর কেনার আগে এটিই হয়তো এমন একটা বিষয় যেটা নিয়ে আপনার মাথা ঘামাতেই হবে। আপনি যে মনিটরটি ক্রয় করতে যাচ্ছেন, সেটি আপনার সিপিউ এর এর গ্রাফিক্স কানেকশন পোর্ট এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা অবশ্যই চেক করে নিবেন। যদি তা না হয়, তাহলে সিপিউ এর সাথে মনিটরের সংযোগ দেয়া এক প্রকারে প্রায় অসম্ভব।
তাই প্রথমেই লক্ষ্য করুন আপনার কম্পিউটারে কি ধরনের পোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণত আমরা যে ভিজিএ পোর্ট দেখতে পেয়ে থাকি, তার বাইরেই ডিজটাল ভিজুয়াল ইন্টারফেস (ডিভিআই) এবং হাই ডেফিনেশন মাল্টিমিডিয়া ইন্টারফেস (এইচডিএমআই) পোর্টের মনিটরও বাজারে সহজলভ্য। এগুলির মধ্যে থেকে আপনার কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত মনিটরটি বেছে নিন।
এছাড়া আপনি যদি আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড ব্যববার করতে চান, তাহলে অনলাইনে গ্রাফিক্স কার্ড বাইং গাইড থেকে সেটির সাথে কোন ধরনের মনিটরগুলি ভালো কাজ করে সেটিও জেনে নিতে পারেন।
সাইজ:
মনিটর কেনার সময় হয়তো সাইজটাই এমন একটা বিষয় যা নিয়ে আমরা একবার ভেবে দেখি। অবশ্যই এটি বিবেচনা করে দেখার মতই একটি বিষয়। অনেকেই বড় সাইজের মনিটর পছন্দ করে থাকেন। তবে আমার মতে এটা নির্ভর করা উচিৎ আপনার কম্পিউটার সেটআপটি দিয়ে আপনি কি করতে চান, সেই উদ্দেশ্যের উপর। যেমন, গ্রাফিক্স সম্পর্কিত কাজের ক্ষেত্রে বড় মনিটরগুলি কোন সন্দেহ ছাড়াই কার্যকর।
মনিটর কেনার আগে একজন সাধারণ ক্রেতাকে দুই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে দেখা যায়। প্রথমটা হলো সে আগে থেকেই মনস্থির করে যে সে কত ইঞ্চি মনিটর কিনবে এবং সেই অনুযায়ী বাজেট করে। আর দ্বিতীয়টা হলো তার পিসিটি ক্রয় করার যে বাজেট তার মধ্যে সমন্বয় করে মনিটর ক্রয় করেন। বড় মনিটরগুলির দামও বেশি. তবে ছোট মনিটর থেকে এতে কিছু অতিরিক্ত ফিচার থেকে থাকে।
এ্যাসপেক্ট রেশিও:
আপনার সাধের মনিটরটি আকারে কেমন হবে তা নির্ভর করে এ্যাসপেক্ট রেশিও এর উপর। এটি প্রকাশ করা হয় স্ক্রিন প্যানেলের প্রসস্ততা ও উচ্চতার সমন্বিতভাবে। আগের সময়ের যে-সব মনিটর তৈরী হতো, তার অধিকাংশেরই রেশিও হতো ৪:৩। কিন্তু আজকের দিনে বাজারে সবচেয়ে বেশি ১৬:৯ রেশিও মনিটর দেখা যায়।
এই রেশিওর মনিটরগুলি গ্রাফিক্স, গেমিং বা ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির জন্য দারুন। এর সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো এই রেশিওতে এ ধরনের কাজগুলি ফুলস্ক্রীনে করা সম্ভব হয়। এছাড়াও, বাজারে ২১:৯ এর মত ওয়াইডস্ক্রীনের মনিটরও পাওয়া যায়। তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
রেজুলেশন:
অনেকে এই ব্যাপারটাকে সাইজের সাথে গুলিয়ে ফেলে। মনে রাখতে হবে যে, মনিটরের সাইজ এবং রেজুলেশন সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ভালো রেজুলেশন সম্পন্ন মনিটরে ছবিও অনেক নিখুঁত দেখা যায়।
আধুনিক ডিসপ্লে ডিভাইসগুলি পিক্সেল এর সাহায্যে ইমেজ তৈরী করে। আর একটি মনিটরের মোট কত পিক্সেল প্রদর্শনের ক্ষমতা রয়েছে তা প্রকাশ পায় সেটির রেজুলেশন এর মাধ্যমে।
কালার ডিসপ্লে:
এটি নিয়ে অবশ্য খুব বেশি একটা চিন্তিত হবার মত কিছু নেই। কারণ, বর্তমান সময়ে বাজারে যে-সব মনিটর পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই ১৬.৭ মিলিয়ন (২৪ বিট) কালার দেখাতে সক্ষম। তবে, যদি আপনার বাজেট কম থাকে, তাহলে অবশ্যই কেনার পূর্বে ডিভাইসটির স্পেসিফিকেশন ভালোভাবে পড়ে নিন।
এটা স্বীকার করতেই হবে যে ভালো মানের মনিটর ক্রয় করাটা একটু ব্যয়বহুল। স্বল্প বাজেটের মধ্যে খুব ভালো মানের মনিটর খুঁজে বের করাটা আসলেই কষ্টসাধ্য কাজ। এর জন্য মাঝে মাঝেই ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ভিত্তিক বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ঘাটাঘাটি করলে খুব সহজেই আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে গুনগত মানসম্পন্ন একটি মডেল পেয়ে যাবেন।
কম্পিউটার কেনা কোন সময়েই সহজ কাজ ছিল না। নিজের জন্য সঠিক কনফিগারেশন এর কম্পিউটার তৈরী করতে হলে সময় নিয়ে গবেষণা করতে হয়।
যদিও কম্পিউটার শপগুলিতে বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে বা অনলাইনে বিভিন্ন প্রোডাক্ট গাইডের মাধ্যমে অনেক ডিভাইস সম্পর্কেই জানা সম্ভব। কিন্তু মনিটর কেনার আগে তা নিয়ে গবেষণার করার প্রবণতা বেশিরভার মানুষেরই নেই। তবে, আপনি যদি চান যে আপনার ক্রয়কৃত কম্পিটটারটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সুখকর হোক, তবে সিপিইউ এর পাশাপাশি মনিটর নিয়েও আলাদাভাবে ভাবতে হবে।
Leave a Reply