ওয়েব সাফিং করার সময় নিজের প্রাইভেসী রক্ষা ও সিকিউরিটি মেইনটেইনের জন্যে বিজ্ঞরা ভিপিএন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলে থাকেন, পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় ভিপিএন আপনার এবং ওয়েব সার্ভারের মাঝে এনক্রিপটেড কানেকশন তৈরি করে।
আর এই প্রাইভেট কানেকশনের কারণে কেউ আর জানতে পারে না যে আপনি ইন্টারনেটে কি করছেন বা কোথা থেকে ওয়েব ব্রাউজ করছেন।
এটা খুবই মজার ব্যাপার যে আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা ইন্টারনেট ব্রাউজ করবেন কিন্তু ভিপিএন বা ভার্সুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের কারণে কেউ সেটা জানতে পারবে না। অনলাইনে আপনার প্রতিটি মূহুর্ত প্রাইভেট, একান্তই আপনার, হাইলি সিকিউরড্। আর পুরোটাই ভিপিএনের কল্যাণে।
আপনি হয়তো জানেন যে ভিপিএন কি আর এটি কিভাবে কাজ করে। কিন্তু ভিপিএন ব্যবহারের ফলে আপনি যে-সব সুবিধা পাবেন, তার সবটাই কি জানেন? এই লেখায় আমি আপনাকে সেগুলো জানাবো এবং দেখিয়ে দেবো যে-সব কারণে আপনার ভিপিএন ব্যবহার করা দরকার।
ভিপিএন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে ভিপিএন ব্যবহার করা কি নিরাপদ? এটি যেমন একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন, তেমনই রয়েছে এর উত্তরও। সেটা আপনি এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে এসেছেন নীল লিংকটি থেকে। এবার জানুন ভার্সুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহারের আবশ্যিকতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. সিকিউরলি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা
শপিং শেষে অনেক ক্নান্ত হয়ে পড়েছেন, তাই নিজেকে চাঙ্গা করার জন্যে কোন কপি শপে ঢুকলেন। আর দেখলেন যে দেয়ালে লেখা রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই।
কিংবা, পাবলিক বাসে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন, হতে পারে সেটা শর্ট কিংবা লং জার্নি। বাসের গায়ে “ফ্রি ওয়াইফাই” লেখাটি চোখে পড়লো।
অথবা, সেলুন কিংবা বিউটি পার্লার প্রবেশ করেছেন, আপনার সিরিয়াল আসতে সময় লাগছে। আপনি যাতে অপেক্ষা করতে গিয়ে বিরক্ত না হয়ে যান, সেজন্যে মালিক ফ্রি ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা করেছেন।
এ-রকম যে কোনও অবস্থাতেই আপনি চাইবেন যে নেট ব্রাউজ করে কিছু দরকারি কাজ সেরে ফেলতে। কিংবা, সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে বন্ধুদের অ্যাক্টিভিটি দেখে নিতে।
কিন্তু সমস্যা হলো, এ-সব ফ্রি অফারের সবই পাবলিক ওয়াইফাই যা ভিপিএন ছাড়া ব্যবহার করা খুবই রিস্কি। কারণ-
আমাদের সকল ওয়েব ব্রাউজিংই আন-এনক্রিপটেড আর যে কেউ’ই আন-এনক্রিপটেড রেডিও ওয়েভ ধরে ফেলতে পারে।
যে কারো ডিভাইসে থাকা ম্যালওয়্যার আমাদের ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে।
ফিশিং স্ক্যামের মতো কোনও ফেক ইন্টারনেট কানেকশন অপারেটিং চালাতে পারে।
তাই, পাবলিক ওয়াইফাই ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভিপিএন হতে পারে অন্যতম সতর্কতা। কেননা, পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় নিজেকে সুরক্ষিত রাখার ৬টি উপায় এর মধ্যে ভিপিএন ব্যবহার একটি।
২. সরকারের সেন্সরশিপকে থোড়াই কেয়ার
বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশের সরকারও বিশেষ বিশেষ কারণে কিছু ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস বন্ধ করে রাখে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি পড়তেই পারেন যে বিশেষ কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের সেন্সরশিপের কারণে প্রয়োজনের মূহুর্তে আপনি ভিজিট করতে পারছেন না।
এমন অবস্থায় ভিপিএন হতে পারে আপনার ভাল বন্ধু যা দিয়ে সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে থোড়াই কেয়ার করে ঢুকে যেতে পারেন যে কোনও ওয়েবসাইটে।
৩. অনলাইন গেমিং স্পিড বাড়াতে পারে ভিপিএন
আপনি হয়তো অনলাইনে কোন ম্যাসিভলি মাল্টি-প্লেয়ার রোল প্লেয়িং গেম খেলছেন যেখানে লেটেস্ট এফপিএস গেমের কড়া ফাইটিং চলছে। কিংবা আপনার প্রতিপক্ষের পরবর্তী টার্নের জন্যে অপেক্ষা করছেন। এমন সময় আপনার আইএসপি আপনাকে দেয়া গেমিং ডাটার উপর কন্ট্রোলিং নিয়ে নিচ্ছে। কেমন লাগবে তখন! খুন করতে ইচ্ছে করবে না!
না, খুন করার দরকার নেই। আপনি জাস্ট গেম খেলা শুরুর আগে ভিপিএন দিয়ে কানেক্ট করে নিন।
৪. গেম খেলায় ফক্স লেন তৈরি করতে পারেন
ধরুন, আপনি এবং আপনার বন্ধু দু’জনেই কোন একটা কম্পিউটার গেম একসঙ্গে খেলতে পছন্দ করেন। কিন্তু গেমটির ডেভেলপার এটা সাপোর্ট করা বন্ধ করে দিয়েছে কিংবা তাদের সার্ভার শাট ডাউন করে দিয়েছে। এখন কি করবেন?
কোন সমস্যা নেই, ভিপিএন ব্যবহার করে আপনার কম্পিউটারকে বোকা বানিয়ে দিন। ভিপিএনের কারণে আপনার কম্পিউটার চিন্তাই করতে পারবে না যে আপনারা উভয়েই একই নেটওয়ার্কে আছেন এবং ল্যান গেম খেলছেন।
৫. প্রাইভেট ও নিরাপদ ভয়েস চ্যাট সুবিধা
আপনি কি চান আপনার ও আপনার বন্ধু কিংবা কলিগ কিংবা ব্যবসায়ীক পার্টনারের ভয়েস চ্যাট অন্যরাও শুনে ফেলুক?
নিশ্চয়ই, চান না।
তাহলে, ভিপিএন ব্যবহার করুন।
কারণ, হোয়াটস্অ্যাপ ছাড়া বাকি কোনও ভয়েস ওভার আইপি (ভিওআইপি) অ্যাপেই বিল্ট-ইন এনক্রিপশন ফিচারটি নেই।
- ৬. লোকেশন বেইজড্ ভিডিও স্ট্রিমিংকে বিট দিতে পারবেন। অর্থাৎ, নেটফ্লিক্সের মতো ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটে লোকেশন রেসট্রিকশন থাকলে, সেটাকে ওভারকাম করে যে কোন লোকেশনে ভিডিও স্ট্রিমিং করতে পারবেন।
- ৭. অনলাইন শপিং-এ, বিশেষ করে বিদেশী শপিং-এ টাকা বাঁচাতে পারবেন।
- ৮. ইন্টারফেস ছাড়াই যে কোনও সেনসিটিভ রিসার্চ করতে পারবেন।
- ৯. টরেন্ট ওয়েবসাইট প্রাইভেটভাবে ব্রাউজ করতে পারবেন।
- ১০. অনলাইন ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
- ১১. ফুটবল কিংবা ক্রিকেটের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেমিং শো দেখতে পারবেন।
- ১২. যে-সব গেম বা অ্যাপ আমাদের দেশের জন্যে উন্মুক্ত নয়, ভিপিএনের মাধ্যমে সেগুলো অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারবেন।
- ১৩. কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন কিছু ডাউনলোড কিংবা আপলোড করার সময় স্পিড বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
- ১৪. গুগল যে সব সময় আপনার উপর নজরদারি করে, সেটাকে বন্ধ করতে পারবেন ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে।
- ১৫. পৃথিবীর যে কোনও দেশের যে কোন রেস্ট্রিকটেড ওয়েবসাইটে অনায়াসেই প্রবেশ করতে পারবেন।
- ১৬. নিজের পরিচয় গোপণ রেখে যে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন ভিপিএনের ব্যবহারে।
- ১৭. যদি দেশের বাইরে যান, তবে ফেসবুকসহ সোশ্যাল ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করতে পারবেন না। কিন্তু ভিপিএন ব্যবহার করে নিজ দেশ সিলেক্টিং এর মাধ্যমে কোন ঝামেলা ছাড়াই সবগুলো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারবেন।
- ১৮. আপনার আইএসপি ট্রেকারকে টেক্কা দিতে পারবেন ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে।
- ১৯. যে-সব অফিসে বিশেষ কিছু ওয়েবসাইটের ব্যবহার বন্ধ থাকে, ভিপিএন দিয়ে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
- ২০. নিজের প্রাইভেসির উপর নিজের কন্ট্রোল রাখতে পারবেন।
ভিপিএন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা জানলেন। ধারণা করে নিতে পারি যে, উপরোক্ত ২০টি কারণের মধ্যে আপনার ক্ষেত্রে কোন না কোন কারণ অবশ্যই মিলে যাবে। সুতরাং, আপনার জন্যে ভিপিএন ব্যবহার করা অপরিহার্য্য। অতএব, সেরা ৫টি ফ্রি ভিপিএন এর সাথে পরিচিত হয়ে নিন আর পছন্দ মতো যে কোনটি ব্যবহার করুন।
Leave a Reply