সাধারণ বা স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্যে শরীরে যথেষ্ট্য পরিমাণে ভিটামিন বি-৩ বা নায়াসিন থাকা অত্যন্ত জরুরী। ট্রিটমেন্ট হিসেবে বেশি পরিমাণে নায়াসিন বা বি-৩ ভিটামিন রক্তের কোলেস্টেরল লেবেলকে ঠিক রাখে। এমনকি, কার্ডিওভাসকুলার রিস্ক থেকে আমাদেরকে মুক্ত রাখে।
ভিটামিন বি-৩ কি?
৮ প্রকার বি ভিটামিনের মধ্যে এক প্রকার ভিটামিন হচ্ছে বি৩ বা নায়াসিন। আমাদের শরীরে মেইনলি দুই ধরণের কেমিক্যাল ফর্ম করে থাকে এবং প্রত্যেকটির আলাদা ইফেক্ট রয়েছে। তবে, উভয় কেমিক্যাল ফর্মই খাবারের মধ্যে পাওয়া যায়।
- ১. নিকোটিনিক অ্যাসিড
- ২. নায়াসিনামাইড বা নিকোটিনামাইড
নিকোটিনিক অ্যাসিড: নায়াসিনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ফর্ম হচ্ছে নিকোটিনিক অ্যাসিড যা আমাদের হার্ট রিলেটেড প্রায় সকল রোগ থেকে রক্ষা করে। সেই সাথে, আমাদের ব্লাডে থাকা কোলেস্টেরল লেবেলকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করে।
নায়াসিনামাইড বা নিকোটিনামাইড: নিকোটিনিক অ্যাসিডের মতো নিকোটিনামাইড রক্তের কোলেস্টেরল লেবেল নিয়ন্ত্রণ করে না। তবে, এটি সোরিয়াসিস রোগ থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। একই সাথে, নায়াসিনামাইড নন-মেলানোমা নামক স্কিন ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।
ভিটামিন বি-৩ কিভাবে কাজ করে?
অন্যান্য সকল ধরণের ভিটামিন বি এর সঙ্গে ভিটামিন বি-৩ হজম শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি খাবারকে শক্তিকে রূপান্তর করে। অর্থাৎ, যে কোন ধরণের খাবার থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করে সেটা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাঠানোর কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করার কাজটিতে সহায়তা করে ভিটামিন বি-৩।
আমাদের শরীরের সেলুলার মেটাবোলিজমের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান NAD ও NADP এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে ভিটামিন বি৩ বা নায়াসিন। এমনকি, ডিএনএ রিপেয়ারিংয়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নায়াসিন।
ভিটামিন বি-৩ এর অভাবে যেসব রোগ হয়?
বি-৩ ভিটামিনের অভাবে যেসব রোগ হয়, সেগুলো নিম্নরূপ-
- মানসিক বিভ্রান্তি
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস
- অবসাদ
- হতাশা
- মাথা ব্যাথা
- ডায়রিয়া
- ত্বকের সমস্যা, ইত্যাদি
প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন বি৩ প্রয়োজন?
এটা নির্ভর করছে একজন মানুষের লিঙ্গ ও বয়সের উপর।
নাবালক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে-
- ০ থেকে ৬ মাস = ২ মিলিগ্রাম (দৈনিক)
- ৭ থেকে ১২ মাস = ৪ মিলিগ্রাম (দৈনিক)
শিশুদের ক্ষেত্রে-
- ১ থেকে ৩ বছর = দৈনিক ৬ মিলিগ্রাম
- ৪ থেকে ৮ বছর = দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম
- ৯ থেকে ১৩ বছর = দৈনিক ১২ মিলিগ্রাম
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে-
- ১৪ থেকে বেশি বয়সের মেয়েদের ক্ষেত্রে = দৈনিক ১৪ মিলিগ্রাম
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে = দৈনিক ১৮ মিলিগ্রাম
- স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে = দৈনিক ১৭ মিলিগ্রাম
খাবারের বাইরে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন বি৩ খেতে হলে অবশ্যই আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
ভিটামিন বি-৩ পাবেন যেসব খাবারে
সাপ্লিমেন্ট না নিয়ে প্রাকৃতিক খাবারের উপর নির্ভর করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই, জেনে রাখুন যেসব খাবারে বেশি পরিমাণে বি-৩ পাবেন-
- কলিজা
- মুরগির শিনার মাংশ
- টার্কি মুরগি
- টুনা মাছ
- স্যামন মাছ
- হেরং জাতীয় মাছ
- গরুর মাংশ
- চীনা বাদাম
- অ্যাভোকাডো
- বাদামী চাল
- গম
- সবুজ মটরশুটি
- আলু
- মাশরুম
ভিটামিন বি-৩ এর অভাব থেকে বাঁচার জন্যে উপরোল্লেখিত প্রাকৃতিক খাবারগুলো খান। আর মুক্ত থাকুন সব ধরণের মানসিক সমস্যা থেকে। আপনার পরিচিত বা আত্মীয়-স্বজনকে এই ভিটামিনটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে লেখাটি শেয়ার করুন।
Leave a Reply