ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্যে ভীষণ প্রয়োজন, আমরা সকলেই জানি। আর শরীরের জন্যে ভিটামিন সাধারণত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। একটি হচ্ছে ফ্যাট সলিউবল বা চর্বি দ্রবণীয় আর অন্যটি হচ্ছে ওয়াটার সলিউবল বা পানি দ্রবণীয়।
ফ্যাট সলিউবল ভিটামিনের তালিকায় রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে। এ সমস্ত ভিটামিন আমাদের শরীরে জমা হতে পারে এবং এগুলো শরীরের চর্বি দ্রবীভূত করে থাকে। আর ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন হচ্ছে বি ও সি। এগুলো শরীরে জমা হতে পারে না কিন্তু এগুলো পানি দ্রবীভূত করে থাকে।
আমাদের শরীরে যদি ঠিক মতো পানির দ্রবণ না হয়, তবে আমাদের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে, শরীর থেকে গাম নির্গমণ বন্ধ হয়ে যাবে এবং শরীরে নানা ধরণের জটিলতা তৈরি হবে। তাই, ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন হিসেবে ভিটামিন বি এর গুরুত্ব অনেক।
ভিটামিন বি কিছু ভিটামিনের সমন্বিত নাম যাকে এক কথায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বলে। আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই জেনেছেন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আসলে কি এবং কেন আপনার এটি প্রয়োজন। এবার জানুন এর প্রকারভেদ।
ভিটামিন বি অন্যান্য ভিটামিনের মত একক কোন ভিটামিন নয়, এটি একটি গ্রুপ ভিটামিন যেখানে ৮ ধরণের ভিটামিন বি রয়েছে। আসুন, ভিটামিন বি এর বিভিন্ন টাইপ সম্পর্কে জেনে নেই-
ভিটামিন বি কত প্রকার ও কি কি
ভিটামিন বি ৮ প্রকার আর সেগুলো হলো-
- ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)
- ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাবিন)
- ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন)
- ভিটামিন বি৫ (প্যানটোথেনিক অ্যাসিড)
- ভিটামিন বি৬ (পিরিডক্সাইন)
- ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন)
- ভিটামিন বি৯ (ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড)
- ভিটামিন বি১২ (সায়ানোকোবালামিন)
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)
এই ভিটামিনটির আরেক নাম থায়ামিন যা শর্করা ও অ্যামিনো অ্যাসিডের সংশ্লেষণে শরীরের জন্যে এনজাইম তৈরিতে কাজ করে। শক্ত পেশি ও স্বাস্থ্যকর স্নায়ুর জন্যে থায়ামিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, ভাত, রুটি, পাস্তা, ফল-মূল ও শাক-সবজি ভেঙ্গে হজম করা ও এগুলো থেকে প্রয়োজনীয় শক্ত সঞ্চয়ের জন্যেও ভিটামিন বি স্বত:স্ফূর্তভাবে কাজ করে।
১৮৯০ গ্রীস্টাব্দে খ্রিস্টিয়ান এইকম্যান নামক একজন ডাচ মিলিটারি ফিজিশিয়ান এই ভিটামিনটি আবিস্কার করেন। তিনি মূলত বেরিবেরি রোগের জন্যে দায়ী মাইক্রোব খুঁজতে গিয়ে এই ভিটামিনটির সন্ধান পান। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অসাড়তা, শ্বাস কষ্ট এবং মাঝে মাঝে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া এই কঠিন রোগটির মূল কারণ অনুসন্ধান করতে গিয় খ্রিস্টিয়ান এইকম্যান ভিটামিন বি১ এর সন্ধান পান।
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাবিন)
ভিটামিন বি২ এর আরেক নাম রিবোফ্লাবিন যা রক্তের শ্বেত কণিকা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়া, হজম কার্য্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা এবং ভিটামিন বি৩ ও বি৬ কে কার্য্যকর করার জন্যেও ভিটামিন বি২ এর প্রয়োজন হয়।
শরীরের জন্যে রিবোফ্লাবিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি রক্তের শ্বেত কণিকার মাধ্যমে শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহে কাজ করে থাকে।
ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন)
ভিটামিন বি৩ এর মেডিটিক নাম নায়াসিন যা নায়াসিনামাইড নামেও পরিচিত। খাদ্য গ্রহণের সাথে শরীরের আসা কার্বোহাইড্রেড ও চর্বিকে শক্তিকে রূপান্তরিত করতে এই ভিটামিনটির প্রয়োজন হয়। এছাড়াও, ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা, নার্ভাস সিস্টেমের কার্য্যকারিতা বজায় রাখা ও পেটের পরিপাক ঠিক মতো পরিচালনার জন্যে ভিটামিন বি৩ বিশেষ ভূমিকা রেখে থাকে। এই ভিটামিনটির অভাবে তিন ধরণের রোগ হয় যার প্রতিটিই ডি দিয়ে শুরু। এগুলো হল ডিমেনশিয়া, ডায়রিয়া ও ডার্মাটাইটিস।
ভিটামিন বি৫ (প্যানটোথেনিক অ্যাসিড)
ভিটামিন বি৫ মূলত শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় এক ধরণের অ্যাসিড যার নাম প্যানটোথেনিক অ্যাসিড। এটি বিভিন্ন ধরণের খাদ্য, যেমন মাছ, মাংশ, মশুর ও ডিম থেকে প্রোটিন সংগ্রহে শরীরকে সাহায্য করে থাকে। এমনকি, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেড ভেঙ্গে শরীরের জন্যে পুষ্টি উৎপাদনেও ভিটামিন বি৫ এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
ভিটামিন বি৬ (পিরিডক্সাইন)
পিরিডক্সাইন শরীরের জন্যে এক ধরণের প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল আর এটি সাধারণভাবে ভিটামিন বি৬ নামেই পরিচিত। আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের সুচারু কার্য্যকারিতার জন্যে পিরিডক্সাইন প্রয়োজন। এটি আমাদের ব্রেনের জন্যে সেরোটোনিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেমিক্যাল উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেই ভিটামিন বি৬ এর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন)
বায়োটিন একটি ওয়াটার সলিউবল বি ভিটামিন যা ভিটামিন বি৭ নামে পরিচিত। শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিন, কোলেস্টোরেল ও কিছু ফ্যাটি অ্যাসিডের সুষ্ঠূ বিপাকের জন্যে ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিনের প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্যকর চুল, উজ্জ্বল ত্বক ও নকের সুষ্ঠু গঠনে ভিটামিন বি৭ বেশি কাজ করে থাকে।
ভিটামিন বি৯ (ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড)
ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিডই হচ্ছে ভিটামিন বি৯ যা সাধারণত প্রাকৃতিক খাবারের মধ্যে পাওয়া যায়। সঠিকভাবে গর্ভ ধারণ নিশ্চিত করতে গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে ফলিক অ্যাসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভের সন্তানের সুষ্ঠু বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, সেই সাথে অনাগত সন্তানের নার্ভাস সিস্টেম এবং ডিএনএ তৈরিতেও সাহায্য করে। আর সন্তানের শারীরিক বিকাশ এবং সুষ্ঠু জীবনের জন্যে যে ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি৯ এর বিকল্প নেই, এটি আমরা সবাই জানি।
ভিটামিন বি১২ (সায়ানোকোবালামিন)
মানুষের মস্তিস্ক এবং নার্ভাস সিস্টেমের নর্মাল কার্য্যকারিতার জন্যে সায়ানোকোবালামিনের প্রয়োজন যা ভিটামিন বি১২ নামে বহুল পরিচিত। রক্তের শ্বেত কণিকা গঠন এবং শরীরের জন্যে শক্তির উৎপাদনসহ নানা রকম শারীরিক প্রয়োজন মেটাতে ভিটামিন বি১২ অপরিহার্য্য।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। এটি কি ও কত প্রকার সে সম্পর্কে আইডিয়া পেলাম। এখন আমাদের শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় এই ভিটামিনটির জন্যে আমরা সেসব খাবার খাবো যেগুলোতে যথেষ্ট্য পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে। সুতরাং, জেনে নিন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায় যে ১০টি খাবারে। এই ১০টি খাবার আমাদের চারপাশে সব সময়ই পাওয়া যায়। সুতরাং, প্রতিদিনের খাবারে এগুলো রাখতে ভুলবেন না।
Leave a Reply