আমাদের শরীরের সমৃদ্ধির জন্যে ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই জানি। বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থ্যতা ও সুস্বাস্থ্যের জন্যে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে থাকে। এর মাঝে ভিটামিন ‘এ’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বিশেষ করে চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্যে ভিটামিন ‘এ’ এর প্রয়োজনীতা অনস্বীকার্য্য। যদি শরীরে এই ভিটামিনটির অভাব বা ঘাটতি দেখা দেয়, তবে নানা রকম চক্ষুরোগের শিকার হতে হয়। যার মাঝে রাতকানা রোগ অন্যতম। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে যেসব রোগ হয়, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন আর নিজের শরীরকে সুরক্ষিত রাখুন।
ভিটামিন ‘এ’ কি?
ভিটামিন ‘এ’ মূলত একটি ফ্যাট-সলিউবল বা চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন যা শরীরের নানা রকম ফাংশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ্য রাখতে এবং ভাল দৃষ্টিশক্তির জন্যে এই ভিটামিনটি অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষত, শিশুদের শরীরের সঠিক গ্রোথ ও ডেভেলপমেন্টের জন্যে ভিটামিন ‘এ’ এর প্রয়োজনীয়তা ও কার্য্যকারিতা অনস্বীকার্য্য।
ভিটামিন ‘এ’ পুষ্টিকর জৈবযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপ যাতে রয়েছে রেটিনল, রেটিনাল, রেটিনয়িক অ্যাসিড এবং প্রোভিটামিন। ক্যারোটিনয়েডস্ বা বিটা-ক্যারেটিনের সম্ভার হচ্ছে ভিটামিন এ। মূলত শরীরের জন্যে দরকারি রেটিনাল গ্রুপের প্রায় সব ধরণের বেটা আয়োনাইন রিং রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ এর মাঝে।
ভিটামিন ‘এ’ কত প্রকার?
প্রকৃতিতে পাওয়া বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে দুই রকমের ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। প্রথমটি প্রি-ফর্মড্ ভিটামিন ‘এ’ আর এটি পাওয়া যায় মাংশ, পোল্ট্রি, মাছ ও দুধ জাতীয় খাবারে। দ্বিতীয়টি প্রো-ভিটামিন ‘এ’ আর এটি শাক-সবজি এবং উদ্ভিদ জাতীয় জিনিসে পাওয়া যায়।
খাদ্য ও ডায়েট্রি সাপ্লিমেন্টে পাওয়া সবচেয়ে কমন প্রো-ভিটামিন ‘এ’ হচ্ছে ক্যারোটিনয়েড যা মূলত বিটা-ক্যারোটিন হিসেবে পরিচিত। আরেক ধরণের ক্যারোটিনয়েড রয়েছে যাকে বিটা-ক্রিপ্টোক্সাথিন বলে।
ভিটামিন ‘এ’ কেন প্রয়োজন?
শরীরের নানা রকম ফাংশনের জন্যে ভিটামিন ‘এ’ এর প্রয়োজন। এটি শরীরের গ্রোথ ও গঠনের জন্যে এবং ইমিউন সিস্টেমকে সুচারুরূপে পরিচালনার জন্যে অত্যন্ত দরকারি ও কার্য্যকরী। দৃষ্টিশক্তিকে দৃঢ় রাখতে, নানা রকম রোগ থেকে চোখকে রক্ষা করতে এই ভিটামিনের বিকল্প নেই।
ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব দেখা দিলে শিশুদের ও গর্ভবতী মায়েদের নানা রকম চক্ষুরোগ দেখা দেয়। যেমন কনজাংটিভাল জেরোসিস, কর্ণিয়াল জেরোসিস, কর্ণিয়াল আলসার। এছাড়াও, কেরাটোম্যালাশিয়া, হাম, রক্তশূন্যতা ও রাতকানা রোগ হয় এই ভিটামিনটির অভাবে।
কালার ভিশন এর জন্যে, এমনকি অল্প আলোতে স্বচ্চভাবে দেখার জন্যে চোখের একটি আলো শোষণকারি অনুর প্রয়োজন হয়। অপসিন নামক একটা প্রোটিন দ্বারা চোখের রেটিনা যুক্ত থাকে যা চোখকে রোডোপসিন দিয়ে থাকে। যদি ভিটামিন ‘এ’ এর পর্যাপ্ত যোগান না থাকে, তবে চোখ তার প্রয়োজনীয় রেটিনয়িক অ্যাসিড পায় না যা কিনা চোখের মূল হরমোন। ফলে, চোখের ভেতরের ইপিথেলিয়াল সেলের গ্রোথ হয় না। আর তখন চোখে উপরোক্ত রোগগুলো দেখা দেয়। তাই, শরীরের জন্যে, বিশেষ করে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ চোখের জন্যে ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন।
শুধু তাই নয়, শরীর ও মনের নানা রকম সাইকোলোজিক্যাল প্রসেসের জন্যেও ভিটামিন এ এর প্রয়োজন। ইপিথেলিয়ার মতো শরীরের টিস্যুগুলোরে কার্য্যকারিতা ঠিক রাখা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে প্রয়োজন ভিটামিন ‘এ’ এর যথেষ্ট্য যোগান।
এছাড়া, ত্বকের সুস্থ্যতা, রেসপাইরেটরি ট্র্যাক্ট, ব্লেডার ও চোখ ও কানের ভেতরের অংশগুলির ফাংশন ঠিক রাখার জন্যেও ভিটামিন ‘এ’ এর প্রয়োজন।
সুতরাং, জেনে নিন প্রতিদিন আমাদের শরীরে কতটুকু ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন আর কোন কোন খাবারে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। সেই সাথে, আপনার নিজের, পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্যে এ জাতীয় খাবারের দিকে অধিক মনোযোগ দিন।
Leave a Reply