পৃথিবীতে যৌনশক্তি বর্ধক বা দ্রুত পতনের মত সমস্যা প্রতিরোধে যতগুলি ঔষধ রয়েছে, ভায়াগ্রা তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং জনপ্রিয়। এই ঔধষটি রিভাটিও নামেও বিক্রয় করা হয় যা উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ফুসফুসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের রোগগুলির ক্ষতিকর প্রভাবগুলির সংক্রমনের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য চিকিৎসকেরা এই ঔষধটি সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ভায়াগ্রা সেইসব ঔধষের ক্যাটাগরীতে পড়ে যা চিকিৎসের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া সেবন বা বিতরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তথাপি আমাদের দেশের বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ী এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক ফার্মেসীর বদৌলতে এখন যে কেউ চাইলেই এই ঔষধটি ঘরে বসেই পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কোন কিছু না জেনে বা বিশেষজ্ঞ কারো পরামর্শ ছাড়া ভায়াগ্রা সেবন কতটা মারাত্বক ক্ষতির কারণ হতে পারে তা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই।
ভায়াগ্রার সাইড ইফেক্ট
দ্যা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ১৯৯৮ সালে এই ঔষধটিকে অনুমোদন প্রদান করেন। পিফিজার ইনক্ নামীয় একটি কোম্পানী এই ঔষধটি প্রথম বাজারজাত করার লাইসেন্স পায়। বলাই বাহুল্য যে, বাজারে আসার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। সবচেয়ে ভয়ের কথাটি হলো যে প্রতিবছরই এ ধরনের ঔষধ সেবনের পরিমাণ আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলছে।
আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে, ভায়াগ্রা কি ও এটি কিভাবে কাজ করে। আজ জানুন, ভায়াগ্রার যত সাইড ইফেক্ট আছে, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভায়াগ্রার সতর্কীকরণ:
এমন অনেক ঔষধই রয়েছে যা সেবন করা অবস্থায় ভায়াগ্রা সেবন করা যায় না। বিশেষ করে নাইট্রেট ড্রাগ জাতীয় কোন ঔষধ যা হৃদরোগ বা বুক ব্যাথার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, এমন কোন ঔষধের পাশাপাশি ভায়াগ্রা সেবন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ধরনের ঔষধের সাথে ভায়াগ্রা গ্রহণ করলে হঠাৎ করেই আপনার রক্তচাপ পড়ে যেতে পারে।
এমন কিছু শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন যাদের এটি ব্যবহারে গুরুত্বর সর্তকতা অবলম্বন করে পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন:
- হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদস্পন্দন জনিত সমস্যা।
- উচ্চ অথবা নিম্ন রক্তচাপ।
- উচ্চ কোলেষ্টেরল।
- ষ্ট্রোক।
- কিডনী এবং লিভারের সমস্যা।
- ডায়বেটিস।
- রক্তকণিকার কোন রোগ ব্যাধি।
- হিমোফিলিয়ার মত রক্ত পতনের রোগ।
- রক্তপ্রবাহ জনিত সমস্যা।
- শিরা বা হৃদপিন্ডে রক্ত চলাচল সমস্যা।
- স্টোমাক আলসার
ভায়াগ্র গ্রহণে মনস্থির করার পূর্বে অবশ্যই আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে একবার কথা বলুন। আপনার উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলির কোনটি রয়েছে কিনা বা আরো যদি অন্য কোন সমস্যা থাকে, তাহলে সেগুলি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করুন। এটি গ্রহণ করার পূর্বে আপনার উপর এটি কেমন প্রভাব ফেলবে তা জানা আপনার জন্য অনেক বেশি জরুরী।
অনেকেই মনে করেন যে, ভায়াগ্রা সেবনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সাইড ইফেক্ট নেই। সবার সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে চলুন জেনে নিই ভায়াগ্রার এমন কিছু সাইড ইফেক্ট যা হয়তো এটি থেকে আপনাকে দুরে থাকতে সাহায্য করবে। দূরে রাখার কথা বলছি এ কারণে যে, মেডিকেল সায়েন্টস্টরা সব সময় ভায়াগ্রা থেকে দূরে থাকতে বলেন এবং ভায়াগ্রার বিকল্প খাবার খেতে বলেন যেগুলো দীর্ঘস্থায়ীভাবে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে।
ভায়াগ্রার সাইড ইফেক্ট:
ভায়াগ্রা সম্পূর্ণভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত কোন ঔধষ নয়। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরে এটির কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মাত্রার উপর ভিত্তি করে এগুলিকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়:
অতি সাধারণ সাইড ইফেক্ট:
ভায়াগ্রার অতি সাধারণ সাইড ইফেক্ট হলো মাথা যন্ত্রণা। যারা এটি নিতে অভ্যস্ত, তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে এক জনের এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। তবে এটি খুব গুরুতর আকারের হয় না এবং দ্রুত সময়েই আবার সেরে যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অ্যাসপিরিন বা প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সাধারণ সাইড ইফেক্ট:
সর্দি, শ্বাসকষ্ট, মুখের মাংস ফুলে যাওয়া, চোখ ফুলে ওঠা, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া এগুলি হচ্ছে ভায়াগ্রার সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, যা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১ জনের হয়ে থাকে। কিছু ব্যবহারকারী এটাও বলে থাকেন যে, ট্যাবলেট গ্রহণের পরবর্তী কিছু সময়ের মধ্যেই তাদের নাকের কিছুটা জালাপোড়া সহ শ্বাস প্রক্রিয়াতে সমস্যা দেখা যায়।
আর সবচেয়ে বেশি যেটি শোনা যায় সেটি হচ্ছে, ট্যাবলেট সেবনের পর ঘুম ঘুম ভাব বেড়ে যাওয়া। কিন্তু এটা খুব বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় না বললেই চলে।
উপরে যতগুলি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে তা খুব বেশি ক্ষতিকারক নয় বা এগুলো অনেক বেশি সময় আপনার শরীরে অবস্থান করবেও না। কিন্তু যদি ঘুম পায়, তাহলে অবশ্যই সে সময় কোন যানবাহন বা যন্ত্র চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
ভায়াগ্রার আরো কিছু সাধারণ সাইড ইফেক্ট রয়েছে যার কারণে মাঝে মাঝে ব্যবহারকারী সামনের সবকিছু ঘোলা দেখা শুরু করেন। অনেক ব্যবহারকারীর কিছু সময়ের জন্যে সামনের সবকিছু নীলচে এবং অস্পষ্ট দেখার অভিজ্ঞতার কথাও জানা যায়।
তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেটাই হোক না কেন, তা কয়েক মিনিটের বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় না। যদি আপনার ক্ষেত্রে এটি তার চেয়ে বেশি সময় থাকতে দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
অসাধারণ সাইড ইফেক্ট:
অসাধারণ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে সেই সব সাইড ইফেক্টকে যা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১ জনেরও কম মানুষের হয়ে থাকে। চোখে লালচে ভাব দেখা, চোখ ব্যাথা করা বা চোখে সংবেদশীলতা বেড়ে যাওয়া এ ধরনের সমস্যার অর্ন্তগত। এছাড়াও অসাধারণ সাইড ইফেক্টগুলির মধ্যে আরো রয়েছে:
- দ্রুতগতিতে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
- আকষ্মিক রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
- মাংসে খিচুঁনি অনুভব হওয়া
- নাক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া
- শরীরে দাগ পড়ে যাওয়া
দূর্লভ সাইড ইফেক্ট:
সাধারণত প্রতি ১০০০ জনের মধ্যে ১ জনের মানুষেরই দূর্লভ সাইড ইফেক্টগুলির ভুক্তভোগী হতে হয়। এধরনের সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে।
- হঠাৎ করেই চোখে সবকিছু দুটি করে দেখতে পাওয়া, চোখের কোণা দিয়ে রক্ত বের হওয়া, চোখে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যাথা অনুভব হওয়া।
- রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে ষ্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের পর্যায়ে চলে যাওয়া।
- হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
- মুখ, ঠোটের ভিতরের মাংশে কামড়ানো বা যন্ত্রণা অনুভব হতে থাকা।
- পুরুষাঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়া।
- কানে কম শোনা শুরু করা।
- অতিরিক্ত বিরক্তি লাগতে থাকা।
বর্তমানে বাজারে যেসকল ঔষধ পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগেই কোন না কোন সাইড ইফেক্ট রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সাইড ইফেক্ট তেমন ক্ষতি না করলেও এটি যে আপনার জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে না তা পুরোপুরি নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। তাই উপরে অনেকবার বলেছি এবং শেষ করার আগেও অনুরোধ করবো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভায়াগ্রা জাতীয় যে কোন ঔষধই সেবন করবেন না।
Leave a Reply