ইন্টারনেটে যে কেউ ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট হয়ে খুব সহজেই নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারেন। কাজটির সবচেয়ে ভালো দিকটি হচ্ছে, এটি এমন একটি কাজ যা করতে আপনি ভালোবাসেন এবং যা করার জন্য আপনাকে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়।
এটি একটি পরীক্ষিত সত্য যে, বর্তমান সময়ে ক্রমেই ইন্টারনেটে ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্টের কাজের চাহিদা বেড়েই চলছে। ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট ওডেস্ক এর একটি সমীক্ষা মতে, গত ২ বছরের মধ্যে ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট এর চাহিদা কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট হয়ে আপনি একজন উদ্যোক্তার বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে তাকে উপকৃত করতে পারেন। একই সাথে আপনার কাজের উপর ভিত্তি করে তিনি আপনাকে যথাযোগ্য পারিশ্রমিক প্রদান করেন, যা আজকের দিনে খুবই চমৎকার একটি কাজ হিসেবে বিবেচিত।
ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট হয়ে আয়
অনলাইন কিংবা অফলাইনে করার মত সেরা ২০টি পার্ট টাইম জব এর মধ্যে ভার্চুয়াল অ্যাসিসটেন্স অন্যতম। ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট হয়ে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হতে পারে। ধরে নিন, আপনি যদি এমন কোন উদ্যোক্তার কাজ নেন যিনি বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি বা গবেষণা করেন, তাহলে হয়তো আপনাকে তার ইবুক ইন্টারনেটে প্রচার করতে হবে।
পাশাপাশি আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে পোষ্ট করা বা গেষ্ট ব্লগিং করা, বিভিন্ন সময়ে ওয়েবইনারের জন্য ল্যান্ডিং পেজ তৈরী করা এবং সর্বপরি আপনি যার হয়ে কাজ করছেন তার সোস্যাল মিডিয়া পেজগুলি দেখাশোনা করাও একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট এর কাজের অর্ন্তগত।
তাই চলুন দেরী না করে কিভাবে একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট হয়ে আয় করা সম্ভব তা জেনে নিই।
মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা:
সর্ব প্রথমে আপনার একজন ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ করার কথা শুনেও হয়তো ভয় লাগতে পারে। আর লাগাটাই স্বাভাবিক, কারণ আপনি নিজেকে এমন একটি কাজের মধ্যে হয়তো ঠেলে দিতে যাচ্ছেন যা সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট পরিমান ধারণা নেই। কেউ কেউ এতটাই হতাশ হয়ে পড়েন যে তারা ইন্টারনেটে কাজ করার মত বিষয়গুলিরও উপরেও ভরসা করতে পারেন না। তারা ভাবেন যে, কেন একজন মানুষ শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমেই তার দক্ষতার জন্য তাকে পারিশ্রমিক দেবেন।
যাদের মধ্যে এধরনের মানসিকতা কাজ করে, আমি তাদের বলবো যে ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট এর কাজটিই আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।
আপনাকে অবশ্যই নিজের উপর আস্থা থাকতে হবে যে, আপনার দক্ষতার বিনিময়ে অবশ্যই আপনি অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম। প্রয়োজনে একটু সময় নিন এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যে আসলেই আপনি এই কাজের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত কিনা।
উত্তর “হ্যাঁ” হয়ে থাকলে আউটসোর্সিং এর জন্য সেরা ১০টি ওয়েবসাইট থেকে যে কোন ভালো ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরী করে ফেলুন। এ সব ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াটি যদি আপনি না জেনে থাকেন, তবে যে কোন একটি জানলেই বাকীগুলো বুঝতে পারবেন। আপনার সুবিধার জন্যে আমি এখানে আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে একটি লেখার লিংক দিলাম।
তারপর নিজের প্রোফাইলটিকে সুন্দরভাবে সাজান, প্রোফাইল তৈরীর সময় অবশ্যই আপনার পূর্বে কোন কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তা উল্লেখ করুন। তারপর আপনার দক্ষতা সম্পর্কিত কাজগুলি খুঁজতে শুরু করুন এবং কায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করা:
আপনি যদি ইতিমধ্যেই ভালো একটি কাজের সন্ধান পেয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমেই আপনার কাজ হবে কায়েন্ট যে পোষ্টটি করেছে সেটি ভালোভাবে পড়ে ফেলা। কখনোই কায়েন্টের পোষ্ট না পড়েই কাজ পাওয়ার আশা করবেন না। কারণ একজন কায়েন্টট সবসময় তাকেই কাজটি দিতে চাইবেন যে তার কাজ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানে।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি দেখেছি যে অনেক ক্লায়েন্ট আপনি তার পোষ্টটি পড়ে দেখছেন কিনা তা যাচাইয়ের জন্য তাদের কাজটির আবেদনের একটি নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আপনি যদি পোষ্টটি সঠিকভাবে না পড়েন এবং ক্লায়েন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন না করেন, তাহলে অবশ্যই আপনি কাজটি পাবেন না।
কাজের তালিকা তৈরী:
আপনাকে কাজ পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনি আপনা ক্লায়েন্টকে কি কি সেবা দিতে পারবেন, তার একটি তালিকা তৈরী করে রাখতে হবে। কায়েন্ট আপনার কাছ থেকে তার কাঙ্খিত সেবা গ্রহণের পরেও এটি জানতে আগ্রহী থাকেন যে আপনি তাকে আরো কি কি সেবা দিতে সক্ষম। এতে আপনার কাজটি পাওয়া একরম নিশ্চিত হওয়াসহ ভবিষ্যতেও একই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
এখন প্রশ্ন হলো একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট হিসেবে আপনি কি কি সেবা প্রস্তাব করতে পারেন। এক কথায় বলতে হলে, একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট কি কি সেবা দিতে সক্ষম তার কোন সীমা নেই। যে কোন ধরনের সেবা প্রদানে একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্টের জুড়ি নেই, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সেবা হচ্ছে:
- ইমেইল ব্যবস্থাপনা
- সোস্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনা
- মার্কেটিং এবং ওয়েবইনার ব্যবস্থাপনা
- ব্লগ ব্যবস্থাপনা
- ইবুক প্রচার এবং গেষ্ট ব্লগিং
- গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহসহ আরো অনেক কিছু।
ওয়েবসাইট পোর্টফোলিও তৈরী করুন:
আপনি ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট হয়ে আয় করা শুরু করলে, আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার কাজের পরিধিও বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই আপনার একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হবে। পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট হচ্ছে এমন একটি ওয়েবসাইট, যেখানে আপনি ইতিমধ্যে যেসব কাজ করেছেন তার একটি তালিকা থাকবে।
তাছাড়া আপনার কায়েন্টদের ছবি এবং তথ্যও আপনি সেখানে ব্যবহার করতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে আপনি কোন ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে কি কি কাজ পেয়েছেন এবং সেখানে আপনার দায়িত্ব কি কি ছিল। একই সাথে কাজটি শেষে আপনার ক্লায়েন্ট আপনার সম্পর্কে কি মন্তব্য করেছেন সেটি অবশ্যই ওয়েবসাইটের দৃশ্যমান অংশে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখুন।
ইন্টারনেট বর্তমানে অফুরন্ত কাজের উৎস, যার মধ্যে ভার্চুয়াল অ্যাসিট্যান্ট হয়ে আয় অন্যতম। এ কাজটি করে আপনি ঘরে বসেই অনেক বড় অংকের অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। তবে অবশ্যই কাজ শুরু করার পূর্বে কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখবেন যেমন আপনার কায়েন্ট সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং সোস্যাল মিডিয়াতে তাদের ফলো করবেন।
আপনার পূর্বের কাজের যদি কোন ভুল ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে আপনার পরবর্তী কায়েন্টের কাজ করার সময় যেন সেই একই ভুল না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। সর্বপরি একজন কায়েন্ট আপনার সেবা নিয়ে যেন বার বার আপনাকে তার কাজের প্রস্তাব দেয় সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই সেবা প্রদান করবেন।
Leave a Reply