সম্প্রতি ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ নামক একটা অনলাইন গেম সবার মনে ভীতির সৃষ্টি করেছে। এই গেমটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেক অভিভাবককেই তাদের সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অথচ ভাইরাল হওয়ার আগেই বিভিন্ন সময়ে গেমটি প্রাণ নিয়ে নিয়েছে ১৩০জন টিনেজারের।
অনলাইনে এমন ভয়ঙ্কর গেম শুধু ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ নয়। আরো এমন অনেক গেম আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা এখনো জানি না। বাচ্চারা এই গেমগুলো খেলে নিজেকে আহত করা সহ বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কাজ করে সেগুলোর ভিডিও বা ছবি আপলোড দেয় অনলাইনে। যা তাদের মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে!
অভিভাবকরা মনে করে তাদের বাচ্চারা কখনোই এমন ভয়ঙ্কর কোন ফাঁদে পা দিবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় অভিভাবকের অজান্তেই টিনেজাররা জড়িয়ে পড়ছে এই সমস্ত সুইসাইডাল গেমে। অথচ ভাইরাল হওয়ার আগ পর্যন্ত যেগুলো সবার অজানাই রয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
- পৃথিবী জুড়ে ব্যান হওয়া সেরা ১৫টি ভিডিও গেম এবং এর পেছনের রহস্য
- অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্যে সেরা ১০টি ফ্রি অ্যাকশন গেম
- অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য ১০টি সেরা বাইক রেসিং গেম
- মোবাইলের জন্যে ১০টি ফ্রি কার রেসিং গেম
- ছোটদের জন্য সেরা ১০টি মোবাইল গেম
- ১০টি ফ্রি মাল্টিপ্লেয়ার মুড গেম
ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ সহ যে-সব গেমগুলো থেকে নিরাপদে রাখবেন আপনার সন্তানকে
শুধু ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ নয়; মুত্যুর কারণ হতে পারে এমন আরো কিছু অনলাইন গেম আছে যেগুলো সবার অজান্তেই টিনেজাররা খেলছে। কিন্তু সে-সব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ ব্লু হোয়েলের মতো অন্য গেমগুলো এখনো ভাইরাল হয়নি। এখানে ব্লো হোয়েল সহ মো্ট ৫টি সুইসাইডাল গেমের বিবরণ দেয়া হলো।
The Blue Whale Challenges
রাশিয়ান যুবক ফিলিপ বুদেকিন এই গেমের প্রতিষ্ঠাতা। Blue Whale Challenge গেমটি ৫০টি টাস্কের সমন্বয়ে তৈরি। শুরুর দিকের টাস্কগুলো নিতান্তই সহজ বলা চলে। কিন্তু আস্তে-আস্তে পরবর্তী ধাপগুলো হতে থাকে ভয়ঙ্কর। যেমন : নিজের শরীরে ছুরি বা ব্লেড দিয়ে আঘাত করা, ড্রাগ নেয়া, গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে কবরস্থানের মতো ভয়ঙ্কর জায়গায় হাঁটা, রাতের অন্ধকারে ভূতুড়ে ভিডিও দেখা, কোন প্রাণীকে নির্মমভাবে খুন করা ইত্যাদি।
এই কাজগুলো করে সেগুলোর ভিডিও পাঠাতে হয় কিউরেটর বা গেম অ্যাডমিনকে। একটার পর একটা ধাপ শেষে সর্বশেষ ৫০তম ধাপটি হয় আত্মহত্যা!
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেকটা ধাপেই কিউরেটর ভিকটিমের কাছ থেকে তার ব্যক্তিগত সব তথ্য হাতিয়ে নেয়। ড্রাগ অ্যাডিকটেড থাকার কারণে ঘোরের বশেই এসব কাজ করতে থাকে টিনেজাররা। হঠাৎ গেম খেলতে অস্বীকার করবে তারও কোন উপায় থাকে না। কারণ এই গেম একবার ইন্সটল করলে আর কিছুতেই আনস্টল করা যায় না। অপরদিকে কিউরেটরের কাছে ভিকটিমের ব্যক্তিগত তথ্য তো থাকেই! গেম খেলতে অস্বীকার করলে কাছের মানুষদের খুন করা এবং ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের হুমকির মুখে বাধ্য হয়ে ভিকটিম গেম খেলা চালিয়ে যায়। আর সর্বশেষ ধাপে গিয়ে কিউরেটরের কথা মতো আত্মহত্যা করে। এই গেম খেলে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩০ এ।
তবে আশার বাণী এই যে, গেমটি ইন্টারনেটের ডার্ক ওয়েভে থাকার কারণে চাইলেই যে কারো পক্ষে এটাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
The Pass Out Challenge
এটা Choking Game নামেও পরিচিত। এই চ্যালেঞ্জটাও ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জের মতো টিনেজারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এটা একটা ভয়ঙ্কর মৃত্যু ফাঁদ। এখানে বাচ্চারা নিজেদের গলা চেপে ধরে সর্বোচ্চ পরিমাণ সময় শ্বাসরোধ করে থাকে। এতে তাদের মস্তিষ্ক হয়ে পড়ে অক্সিজেন শূন্য। নির্দিষ্ট সময় পর শ্বাস নিয়ে তারা এক ধরনের মজা পায়। কিন্তু এই মজার মধ্য দিয়েই প্রাণ হারায় অনেকে।
আমেরিকায় প্রতি বছর ২৫০ থেকে ১,০০০ টিনেজার এই গেমের কারণে মৃত্যুবরণ করে বলে জানা গেছে।
The Salt and Ice Challenge
টিনেজাররা এই গেম খেলার জন্য প্রথমে নিজের শরীরের চামড়ার ওপর লবণ রাখে। তারপর এর ওপর রাখে বরফ। লবণের ওপর বরফ রাখার ফলে খুব দ্রুত বরফের তাপমাত্রা কমে যায়। একেবারে -২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায় তাপমাত্রা। এর ফলে শরীরের চামড়া যায় পুড়ে।
টিনেজাররা সাথের খেলোয়াড় থেকে এগিয়ে থাকার জন্য এসব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সহজেই। যাকে রীতিমতো ভয়ঙ্কর বলা চলে।
The Fire Challenge
এটা একটা অদ্ভুত গেম। এমন ভয়ঙ্কর গেম কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ খেলবে বলে মন হয় না। কারণ, এই গেমে টিনেজাররা নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। খালি গায়ে শরীরে দাহ্য তরল পদার্থ মেখে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া এই গেমের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ!
এরকম একটা ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড দেয়া হয়েছিল। তাতে ১৫ বছর বয়সী নিউ ইয়োর্কের এক তরুণকে এই গেম খেলে তার পরবর্তী ক্ষত থেকে মৃত্যুবরণ করতে দেখা যায়।
আরেকটি ছেলে এভাবে বুকে অ্যালকোহল ঢেলে আগুন লাগানোর পর কারণ জানতে চাইলে ছেলেটি বলে- কেন করেছে সে বিষয়ে ও জানে না।
The Cutting Challenge
এই খেলাটা খেলার জন্য টিনেজাররা যেটা করে সেটা হচ্ছে নিজেদের শরীর কেটে কেটে তার ছবি অনলাইনে আপলোড করা! এতে তারা এক ধরনের আনন্দ পায় এবং ছবি আপলোডের পরে নিজেদের একটা জনপ্রিয় গ্রুপের সদস্য বলে মনে করে।
এই গেমগুলো ভাইরাল হওয়ার আগ পর্যন্ত সবার অগোচরেই রয়ে যায়। অভিভাবকরা যখন জানতে পারে এবং নিজেদের বাচ্চাদের ফিরিয়ে আনতে চায় তখন আর সময় থাকে না।
তাই এখন থেকেই বাচ্চাদের প্রতি মনোযোগী হোন। তারা অনলাইনে কোথায়-কোথায় যাচ্ছে, কী-কী করছে বা কোনো ব্যাপারে হতাশ কি না এ-সব দিকে খেয়াল রাখুন। ব্যস্ততার ভিড়েও বাচ্চাদের সময় দিতে ভুলবেন না।
Leave a Reply