ভিডিও গেম বিনোদনের একটা মাধ্যম। শুধু বাচ্চারা নয়, ছোট বড় সকলেই সময় কাটানো বা শখের বসেই নিজেদের প্রত্যেকদিনের সঙ্গী হিসেবে রাখেন ভিডিও গেমকে। যেটা শুধু বিনোদনেরই উৎস সেটা কীভাবে বিভিন্ন দেশের সেনসর বোর্ডের অগ্নিদৃষ্টিতে পড়ে! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গেম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, হয়েছে বীভৎস খুনও।
সারা পৃথিবী জুড়েই প্রতিবছর ব্যান হয়ে আসছে বিভিন্ন গেম। আর এর পেছনে রয়েছে একই সাথে ভয়ঙ্কর এবং হাস্যকর কিছু কারণও।
পৃথিবী জুড়ে ব্যান হওয়া ভিডিও গেম এবং পেছনের রহস্য
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে ব্যান হওয়া গেমগুলো থেকে ১৫টি গেম নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুন:
- অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্যে সেরা ১০টি ফ্রি অ্যাকশন গেম
- মোবাইলের জন্যে ১০টি ফ্রি কার রেসিং গেম
- অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য ১০টি সেরা বাইক রেসিং গেম
- ১০টি ফ্রি মাল্টিপ্লেয়ার মুড গেমস
Grand Theft Auto
GTA গেমের থিম ছিল সারা পৃথিবীতে দাঙ্গাহাঙ্গামা এবং মারামারি ঘটানো। কিন্তু সারা পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে একটা দেশ নিয়ে নিল কঠোর পদক্ষেপ। আর সেই একটা দেশ হচ্ছে থাইল্যান্ড।
এই দেশটার কিন্তু দাঙ্গাজনিত কোন বিষয়ে অ্যালার্জি নেই। যদিও অ্যাডাল্ট সেক্সুয়াল কনটেন্ট আছে এমন গেমগুলো দেশটি সচরাচরই ব্যান করে (কিছু বাস্তব জীবনের ফলাফল নিয়ে তৈরি Rockstar’s cash cow গেমটি ব্যতিক্রম)।
এই গেমটা ব্যান হওয়ার পেছনের কারণ রীতিমতো আশ্চর্যজনক। ২০০৮ সালে পলওয়াট চিনো নামে ব্যংককের এক লোক একটা টেক্সিতে উঠল। গন্তব্যে যাওয়ার পর ভাড়া দেয়ার পরিবর্তে সে উপর্যপুরি ছুরির আঘাতে খুন করে ফেলল ড্রাইভারকে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চিনো যা বলল তা শুনলে যে কেউ চমকে যাবে। তার বক্তব্য ছিল GTA গেমে এ ধরনের কাজ খুবই সহজ, “খুন করা গেমে একদমই সহজ”! গেমটা খেলার জন্য তার টাকার প্রয়োজন ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে থাইল্যান্ডবাসীর নিজস্ব কম্পিউটার বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই বললেই চলে। গেমে খেলতে হলে বিভিন্ন ইন্টারনেট ক্যাফেতে টাকা দিয়ে খেলতে হয়।
আর এই ঘটনার পরই থাইল্যান্ড সরকার অনেকটা চিলের মতো ছোঁ মেরে চিরতরে সরিয়ে ফেলল গেমটা।
The Pokemon Trading Card Game
এই গেমটার ইলেকট্রনিক এবং ফিজিক্যাল দুটো ভার্সনের আমদানিই ২০০১ সালে বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। এর কারণ সৌদি আরব অত্যন্ত ধর্মীয় মনোভাব সম্পন্ন একটা দেশ। গেমের পিকাচু, জনপ্রিয় পোকমন এবং তার অনুসারীদেরকে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে ধরা হয়েছিল। কারণ গেমের শক্তির প্রতীক হিসেবে যে ডেভিড স্টার ব্যবহারর করা হয়েছে তা সবার কাছে আন্তর্জাতিক জিওনিজম এবং ইসরাইলের জাতীয় প্রতীক বলে বিবেচিত।
Command & Conquer : Generals
একটা গেম ব্যান হওয়ার জন্য কেবল সেক্সুয়াল বা ভায়োলেন্ট কোন কনটেন্ট রাখতে হবে এমন নয়। মাঝেমাঝে কোন একটা দেশ বোমা মেরে উড়িয়ে দিলেই সে দেশের সরকার গেমটিকে ব্যান করে দিবে।
হ্যাঁ, Command & Conquer : Generals গেমটি ঠিক এই কারণেই ব্যান হয়েছিল। ২০০৬ সালে ইলেক্ট্রনিক আর্টস গেমটি বের করে। এই গেমে প্লেয়ার আমেরিকা বা চায়না যে কোন এক দেশের কমান্ড নিতে পারে। অথবা কোন একটা সন্ত্রাসী সংস্থার কমান্ড নিয়ে দুটো দেশকেই অ্যাটাক করতে পারে। সুতরাং, গেমটা এশিয়ার মানুষদের জন্য মজারই বলা যায়। কিন্তু ব্যাপারটা হয়ে গেল পুরোই খটমটে। কারণ গেমটা শুরু হয় বেইজিংয়ে একটা পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে এবং এরপরপরই তিনটা বাঁধের ধ্বংস। ব্যাস, হয়ে গেল! চায়না সরকার দিল গেমটাকে ব্যান করে।
Bully
GTA গেমটার কথাই ধরি না! ওই গেমটাকে ব্যান করে দেয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ২০০৬ সালে রিলিজ পাওয়া Bully গেমে Bully নামের স্কুলছাত্র যে কি না স্কুলের বোর্ডিংয়ে থেকে সমাজের গঠনটা বদলানোর চেষ্টা করছে- এমন একটা গেম ব্যান করার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?
জানতে হলে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলের রিও সরকারকে জিজ্ঞেসস করতে হবে, যে কি না গেমটা রিলিজ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই ওটাকে ব্যান করে দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে স্কুলের ভিতর গেমের সেটিং টিনেজারদের মেধা এবং বেড়ে ওঠায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এই গেম বিক্রি এবং খেলার জন্য দিনে ১০০০ ব্রাজিলিয়ান রিয়েলের জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে।
EA Sports MMA
এই গেমটা বন্ধ হওয়ার কারণ কী হতে পারে? যেমনটা ভাবছেন তেমন কিন্তু নয়। ২০১০ সালে রিলিজ পাওয়া EA Sports MMA গেমটা ছিল ইউএফসি লাইসেন্স ছাড়া নিষিদ্ধ মারামারি। এখানে যাদেরকে খেলার চরিত্র হিসেবে রাখা হয়েছে তারা একেক জন ফেডর এমিলিয়ানকো এবং রেনডি কোটারের মতো কিংবদন্তি।
তারপরও কেন ডেনমার্কে গেমটি নিষিদ্ধ হলো? খেলার মধ্যে কি বর্বর ভাবে লাথি মারা বা নিষ্ঠুর শ্বাসরোধজনক কোন পার্ট ছিল? না, এমনটাও নয়। এই গেমটা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ একটা ড্রিংক্স! EA Sports MMA গেমের অ্যাডভারটাইজমেন্টে ক্যাফেইন এবং চিনির মিশ্রণে তৈরি একটা ড্রিক্স ছিল যেটা স্টেজে ওঠার আগে পান করতে দেখা যায়। যা ডেনমার্কর আইনে নিষিদ্ধ। তাই গেম থেকে ওই অ্যাড বাদ দিয়ে নতুন করে তৈরি করার পরিবর্তে ডেনমার্কে পুরো গেমটিই ব্যান করে দেয়া হয়।
Outlast 2
Outlast 2 রীতিমতো রক্ত হিম করে দেয়া একটা গেম। এই বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না। এখানে চামড়ার মানুষের হাতে লাঠি, স্তুপাকার মৃত বাচ্চা এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে ৯ ফিট লম্বা দৈত্যাকৃতি এক নারী যার হাতে থাকে বিশাল এক কুড়াল। এই দানবাকার নারীকে দেখা যাবে হাতের কুড়াল দিয়ে আপনাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করতে এবং আপনার শরীর থেকে বের হওয়া রক্তের ঢেউও দেখতে পাবেন চোখের সামনে। শুধু এটাই নয়। সেক্সুয়াল ভায়োলেন্সও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
এই গেমের রেটিং সর্বোচ্চ (R18) হওয়া সত্ত্বেও গেমটির বীভৎস ভয়ঙ্কর সব দৃশ্যের জন্য অস্ট্রেলিয়া গেমটি ব্যান করে দেয়।
Getting Up
এই গেমটাকে ব্যান করার পেছনের কারণ সত্যিই হাস্যকর। গেমটার রিলিজ হয়েছিল ২০০৬ সালে। বলা বাহুল্য Getting Up গেমে রক্তারক্তি, ড্রাগ বা অশ্লীল কিছুই ছিল না। গেমে ট্রেন নামক একটা ছেলেকে সরকারের বিভিন্ন দুর্নিতির বিরুদ্ধে রাস্তার দেয়ালে ছবি আঁকতে দেখা যায়। আর এমন একটা গেমকেই ব্যান করে দিল অস্ট্রেলিয়া!
Getting up গেমের রেটিং ছিল MA15+। তারপরও অস্ট্রেলিয়া গেমটাকে ব্যান করল শুধু এই যুক্তি দেখিয়ে যে, গেম থেকে দেশের জনগণও এভাবে রাস্তায়-রাস্তায় ছবি আঁকতে অনুপ্রাণিত হবে। শুধু তাই নয়, অস্ট্রলিয়ার গেমিং সেনসর বোর্ড বলেছে তারা এমন একটা গেমকে কখনোই রিলিজ করতে পাররে না, যেটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা দেয়!
Fallout 3
অস্ট্রলিয়া গেম রিলিজের বিষয়ে যে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সচেতন তা Getting Up গেমটা ব্যান করা থেকেই বোঝা যায়।
একটা দেশ যদি আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর কোন জন্তুকে মারার জন্য পুরস্কার দিয়ে থাকে তবে সেটা সারপ্রাইজিং তো বটেই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ভায়োলেন্ট ভিডিও গেমের জন্য কঠিন সব নিয়ম নিয়ে হাজির।
যাইহোক, Fallout 3 গেমে আপনার কাজ হচ্ছে একটা বিদঘুটে জন্তুর মুখে গুলি করে মারা, যে যন্তুটা কি না হাতের কাছে পেলেই আপনার অন্ত্র টেনে বের করে নিয়ে আসবে, তাও আবার কান দিয়ে!
আপত্তিকর গেমগুলোতে MA15+ রেটিং থাকে। এর মানে হচ্ছে গেমটি ১৫ বছর বা এর বেশি বয়সের যে কেউ খেলতে পারবে। আর কোন গেম যদি একান্তই আপত্তিকর হয়ে দাঁড়ায় তখন সেটাকে রেট করাই হয় না। অর্থাৎ, ওই গেম বিক্রিই হবে না। Fallout 3 আনরেটেডই ছিল। আর কারণটা হচ্ছে ওই ভয়ঙ্কর জন্তুটার মুখে গুলি করে মারার আগে শুটারকে ড্রাগ নিতে দেখা যায়। এই ড্রাগের পার্টটার জন্যই পুরো একটা গেম ব্যান করে দেয় অস্ট্রেলিয়া।
Mass Effect
গেমটা ব্যান হয়েছে সিংগাপুর থেকে। কারণ?
এই গেমে অ্যাসারি নামে একজন এলিয়েনকে দেখা যাবে। প্লেয়ার একজন নারী কমান্ডো এবং নারী এলিয়েনের ভূমিকায় খেলতে পারবে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে গেমে এই নারীদের মধ্যে সেক্সুয়াল পার্ট রাখা হয়েছে। এলজিবিটি এখনো পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত নয়। যেমন : সিংগাপুর। লেসবিয়ান এই পার্টের জন্যই গেমটি ব্যান হয়েছে বলে জানায় দেশটির সরকার।
এখানে আসলে লেসবিয়ান পার্টের চেয়েও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এলিয়েনদের সিঙ্গেল জেন্ডার করে দেয়া এবং সেখানে হোমোসেক্সুয়ালিটি প্রাধান্য দেয়া। আদৌ এলিয়েনরা এমন কি না সে বিষয়ে ভ্রান্ত একটা ধারণা নিয়ে বয়ে চলতে নারাজ সিংগাপুর।
Battlefield 3
ইরানের রাজধানী তেহরানে ভয়ঙ্কর হামলা নিয়ে তৈরি Battlefield 3. আর খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইরান সরকার কর্তক ব্যান হয় গেমটি। Lebanon Daily Star পত্রিকায় বলা হয়েছিল কর্তৃপক্ষ এই গেমেকে ব্যান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে নিয়েছেন। এটা যে শুধু মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ নয় সেটা বোঝা যায় পরবর্তী কার্যক্রম দেখে। যে দোকানগুলোতে গেমটি বিক্রি হয়েছে সেগুলোতে অভিযান চালিয়ে প্রত্যেকটা কপিকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকি এটাও খবর পাওয়া গেছে যে গেমটা রাখার অপরাধে ইরানে বেশ কিছু ব্যক্তি অ্যারেস্ট পর্যন্ত হয়েছে।
FARS নিউজ অ্যাজেন্সি বলেছে গেমটা ইউএসএ এবং ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্বের ভয় এবং বৈরীতা, যেটা চলে আসছে সেটাকে বৃদ্ধি করছে মাত্র। এখানেই শেষ নয়। অনলাইন পিটিশনে হাজার হাজার সিগনেচারও নেয়া হয়েছিল।
আর মজার বিষয় হচ্ছে Battlefield 3 কখনোই বৈধ ভাবেইরানে পাঠানো হয়নি। কারণ ওই দেশে প্রতিষ্ঠাতার কোন পরিবেশক বা সরাসরি বিক্রেতা নেই। মানে ইরানে নষ্ট করা গেমগুলো ছিল পাইরেটেড।
Silent Hill : Homecoming
গেমের বিষয়ে বলতে গেলে সবক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার অ্যালার্জি দেখা গেছে। Silent Hill : Homecoming সেনসর বোর্ডে দেয়া হয় ২০০৮ সালে। তখন রিভিও বোর্ড এর গ্রাফিক কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এখানে অতিরিক্ত ভায়োলেন্স, মারামারিতে রক্তের স্রোত এবং নির্যাতনের দৃশ্য রাখার কারণে গেমটাকে ব্যান হতে হয়।
বিশেষ কিছু দৃশ্য নিয়ে আপত্তি ছিল অস্ট্রেলিয়ার। আর এখানে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল ড্রিলিং মেশিন। যেটা নিয়ে অস্ট্রলিয়ার ঘোর আপত্তি। সুতরাং, রক্তারক্তির জন্য অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক ব্যান হওয়া গেমগুলোর মধ্যে Silent Hill : Homecoming কেও যোগ দিতে হলো।
Left 4 Dead 2
Left 4 Dead 2 অস্ট্রেলিয়াতে অত কঠোরভাবে ব্যান হয়নি। কিন্তু রিলিজ হওয়ার পর ৫ বছর এটাকে সার্বজনগ্রাহী করা হয়নি।
সারা পৃথিবীতে যত গেম ব্যান হয়েছে তার মধ্যে প্রথম পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখে অস্ট্রলিয়া। কারণ যে কোন ধরনের রক্তারক্তি, দাঙ্গাহাঙ্গামার বিষয়ে এই দেশটির গেমিং সেনসর বোর্ড অতিমাত্রায় সচেতন। অন্যান্য গেমগুলোর সাথে তুলনা করলে এটাতেও তেমন ভিন্নতা দেখা যায় না। কারণ এখানেও রিলিজ পাওয়া জম্বিদের রক্তপাত ঘটিয়ে খুন করা, মানে গুলি করতে হয়।
যাইহোক, পরবর্তীতে গেমটি পুনরায় সেনসর বোর্ডে তোলা হলে R18+ রেটিংয়ে গেমটা রিলিজ হয়। অর্থাৎ, ১৮ বছর বয়স বা এর চেয়ে বেশি বয়সের যে কেউ গেমটা খেলতে পারবে।
Manhunt & Manhunt 2
এই গেমটা ব্যান হওয়ার পেছনের রহস্য GTA গেমের মতই বীভৎস। ২০০৪ সালে ১৪ বছর বয়সী স্টেফেন পাকিরাহ নামের ছেলেটিকে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে এই গেমটির কারণে। স্টেফেনের মা জানায় Manhunt গেমের প্রভাবে ওর বন্ধু, ১৭ বছর বয়সি অপর একটি ছেলে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে স্টেফেনকে খুন করে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যান করা হয় গেমটিকে।
তিন বছর পর Manhunt 2 বের করা হলে যুক্তরাজ্য পুনরায় আরেকটি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেনি। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যান করে দিয়েছিল Manhunt 2.
Mad World
Mad World গেমে প্লেয়ারকে খেলতে হবে একটা বর্বর চরিত্রে। একরোখা-নোংরা-উগ্র একটা চরিত্র। যে কি না ঘুষি মেরে যে কারো মুখ ফাটিয়ে দেয়, লাথি মেরে ভেঙে দেয় মেরুদণ্ড। এ গেমের নিয়মটাই এরকম। কত বীভৎস ভাবে মানুষ মারা যায় এর ওপরই পয়েন্ট। অনেকটা রক্ত দিয়ে গোসল করা যাকে বলে।
তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে যে গেমে বিনোদনের জন্য একে অপরকে খুন করে সেই গেমটা কিন্তু খুব বেশি দেশ ব্যান করেনি। Mad World প্রথমে ব্যান হয় জার্মানিতে এবং জাপানে রিলিজ হয় দেরিতে।
গেমে যত বীভৎস ভাবে মানুষ মারা যাবে তত বেশি পয়েন্ট পাবে। চিন্তা করলেই গা গুলিয়ে যায়। অথচ যুক্তরাজ্যের মতো জায়গায়ও বিশেষজ্ঞদের মানা সত্ত্বেও অ্যাডাল্ট রেটিংয়ে গেমটা রিলিজ পেয়েছিল।
Wolfenstein
Castle Wolfenstein প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। এই গেমের থিম হচ্ছে হিরো বনাম নাজি (হিটলারের জার্মান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য)। আর এই কারণেই চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় যে জার্মানিদের এই গেম পছন্দ হবে না। হ্যাঁ, ব্যান হয়েছে গেমটি।
তবে ২০১৪ সালে জার্মান সরকার গেমটাকে পুনরায় রিলিজ হতে দেয়। এর জন্য অবশ্য পুরো গেমে যথেষ্ট কাটছাট করতে হয়েছে।
সারা পৃথিবী জুড়ে ব্যান হওয়া গেমগুলোর মধ্যে সবগুলো যে যথাযথ কারণে ব্যান হয়েছে তা কিন্তু নয়। কিছু গেম ব্যান করার কারণ শুনলে রীতিমতো হাস্যকর মনে হয়। উদাহরণ স্বরূপ Getting Up গেমটার কথাই বলা যায়। কিন্তু কিছু গেম ব্যান করা যে আবশ্যক ছিল সেটাও অস্বীকার করা যায় না। যেমন : Manhunt, GTA ইত্যাদি। এই গেমগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ঘটানো বীভৎস মৃত্যুগুলো সত্যিই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। যাইহোক, গেমকে গেমের মতো করে নিলেই এবং তৈরির সময়ও ভায়োলেন্স এড়িয়ে গেলেই সবার জন্য ভালো হয়।
Rana says
চমৎকার টপিক, অসাধারণ লেখার স্টাইল, পড়ে খুব ভাল লাগলো। আপু, আপনার কাছ থেকে কিছু শিখতে চাই, আমার ইমেল আইডি (shohel_@hotmail.com) দিলাম। আপনিও যদি আপনার ইমেল আইডি দিতেন, প্লিজ!!