বেস্ট ফ্রেন্ড সৃষ্টিকর্তার এক আর্শিবাদের মত। জীবনের ভালো সময়গুলির পাশাপাশি কঠিন থেকে কঠিন সময়েও একজন বেস্ট ফ্রেন্ড কখনো আপনাকে ছেড়ে যাবে না। আর সেই বন্ধুটি যদি হয় বিপরীত লিঙ্গের, তাহলে আপনার চেয়ে সৌভাগ্যবান সম্ভবত খুব কমই আছে, কিন্তু সেটি ততক্ষনই যতক্ষন না আপনাদের মধ্যে কেউ একে অপরের প্রেমে না পড়ে যান। বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া উচিৎ নয় কথাটি আমি এজন্যই বলছি যে, যদি আপনারা দুজনই একে অপরের জন্য একই জিনিস অনুভব করেন, তাহলে সেটি ভালো কথা কিন্তু যদি কোন কারণে এর ব্যতিক্রম ঘটে বিপত্তিটা ঘটে তখনই।
একদিক থেকে এটা খুবই ভালো, কারণ বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ে গেলে বাড়তি অনেক ঝামেলা থেকেই মুক্তি পাওয়া যায়। যেহেতু আপনার বন্ধুটি আপনার সম্পর্কে কম বেশি সবই জানেন, সেহেতু আপনি যেমনটি আছেন সেভাবেই সে আপনাকে মেনে নেবে।
রূপকথার গল্পের মতো এটিরও দুইটি অংশ থাকে, একটি যা আপনাকে বলা হয় আর দ্বিতীয়টি যা আপনার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়। আর এক্ষেত্রে যা আপনার কাছে গোপন থেকে যাচ্ছে, তা হলো এ ধরনের সম্পর্কের ভালোর চাইতে খারাপ প্রভাবটাই আপনার আত্মবিশ্বাস এবং মানুষকে বিশ্বাস করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলবে।
বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া উচিৎ নয়
গবেষণায় দেখা যায় যে, একটি স্বাভাবিক ব্রেক-আপের চাইতে ফ্রেন্ডশীপ ব্রেক-আপ অনেক বেশি খারাপ হয়ে থাকে। আর বিষয়টি তার চাইতেও অনেক বেশি ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায় সেই ব্যক্তিটির ক্ষেত্রে, যে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে আপনার ভালোবাসার মানুষে পরিণত হয়েছিল।
বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে
আপনার মধ্যে যদি সত্যিই আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ার লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অধ্যই এই মুহুর্তে আপনার আরো একবার ভেবে দেখা উচিত। স্বাভাবিকভাবে পছন্দ করে গড়ে ওঠা সর্ম্পের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাগুলো বজায় রাখার সুযোগ থাকে।
মানুষের জীবনের অতীতে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যায়, যা সে ভালোবাসার মানুষটিকেও জানাতে চায় না। এর মধ্যে খারাপের কিছু নেই, কারণ যে জিনিসগুলি আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে অশান্তি বয়ে আনে, তা কাউকে না জানানোটাই সবচেয়ে ভালো। কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে আগে থেকেই আপনার গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়ে যায়।
এমনকি, ঐ সময়ে ফ্রেন্ড থাকার কারণে বিষয়টি নিয়ে আপনাকে সাপোর্ট করলেও যদি সে আপনার বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফেন্ড এর তকমা পাওয়ার পর পরই আপনার অতীতে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে পারে। এমনকি রীতিমত আপনার সাথে অশান্তি করাও শুরু করে দিতে পারে। তাই সময় নিন, ভাবুন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
সম্পর্কে একঘেয়েমির সৃষ্টি হবে
সর্ম্পকের শুরুর দিকের সময়গুলো খুব ভালোভাবে পার হলেও, কিছুদিনের মধ্যেই আপনার বন্ধু থেকে যেই মানুষটি আপনার ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে, তিনিই আপনার জন্য সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন।
আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে আপনি হাসি-তামাশা এবং সেই সব কিছুই হয়তো শেয়ার করেছেন যা আপনার বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড নতুন করে পেতো। কিন্তু যেহেতু সেই মুহুর্তগুলো আপনারা আগেই উপভোগ করে ফেলেছেন, সেহেতু নতুন করে দেওয়ার মত কিছুই আপনার বা তার কাছে অবশিষ্ট আর থাকবে না। সম্পর্কে যদি নতুনত্ব না থাকে, তাহলে তার মধ্যে একঘেয়েমির সৃষ্টি হয় এবং দুরত্ব সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাচ্ছন্দ কমে যাওয়া
আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করলে আপনি কখনোই তাকে কারণে অকারণে কোন কাজে ডাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন না। এমনকি আপনাদের মধ্যে কারো যদি পূর্বে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক থেকে থাকে, তাহলে আগের মত তাদের নিয়েও আপনারা কথা বলতে পারবেন না।
আগে যেমনটি খুব সহজেই তার কোন বিষয়ে আপনি সমালোচনা করলে সেও সহজভাবে নিতো, প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে হয়তো সেটি আর সে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবে না। এছাড়া আপনিও সবকিছু আর তাকে স্বাচ্ছন্দে বলতে পারবেন না। কোন কথা বলার আগেই আপনার মনে এই খেয়াল আসবে যে, সে কথাটিকে কিভাবে নেবে।
কারণে অকারণে ঝগড়া হওয়া
বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে প্রেমের আরো একটি নেতিবাচক দিক হচ্ছে যে, আপনার সম্পর্কে সবকিছু জানে। আর এটি মাথায় রাখুন আমি যখন বলছি সবকিছু, তার মানে সবকিছুই। তাই যখনই কোন বিষয়ে আপনার সাথে তার মত মিলবে না বা এমন কোন কাজ যা আপনি পূর্বে করতে পছন্দ করতেন কিন্তু এখন আর করতে চান না, এমন কোন বিষয় সে জানা মাত্রই আপনার সাথে তর্কে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। এমনকি, আগের জিনিসগুলো নিয়ে আপনাকে কটুক্তি করতেও দ্বিধা বোধ করবেনা। সে ভাববে যে হয়তো আপনি এখনও কাজটি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন কিন্তু তার বেলাতে এসেই আপনার যত সমস্যা।
আর যখন সে আপনার সাথে এমন ব্যবহার করবে, নিশ্চয়ই আপনিও তাকে ছেড়ে কথা বলবেন না। ফলে প্রতিনিয়ত আপনাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ আর অশান্তি লেগেই থাকবে। তাই সময় থাকতে এখনই সচেতন হয়ে যান। কারণ, যার সাথে আপনি সম্পর্কের সব সমস্যার সমাধান করতে চান. সেই যখন আপনার সম্পর্কের সব সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে, হয়তো আপনার কাছে দ্বিতীয় আর কোন উপায়ই থাকবে না।
নতুন বন্ধুত্বের সন্ধান করা
বেস্ট ফ্রেন্ড খুঁজে পাওয়া মুখের কথা নয়। সব ফ্রেন্ড বেস্ট ফ্রেন্ড এর জায়গা নিতে পারে না। একে অপরকে জানতে বুঝতে অনেক সময় বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু যখনই আপনি সেই মানুষটির সাথেই ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ছেন এবং উপরের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে শুরু করছেন, তখন আপনার সেই মানসিক অবসাদ থেকে বের হয়ে আসার জন্য একজন বন্ধুর প্রয়োজন হবে।
তবে সেটি খুঁজে পাওয়া বা খুঁজে পেলেও আপনার সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনাগুলো অনেক কম। কারণ, যখনই আপনি তার ব্যতীত অন্য কারো সাথে এমন কোন বিষয় শেয়ার করবেন, যা সম্পর্কে সে নিজে অবগত নয়, তখনই সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ আর অবিশ্বাস কাজ করতে শুরু করবে।
আমি পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে এটা বলতে পারবো না যে বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়া উচিৎ নয়। কিন্তু উপরের সবগুলি ঘটনা যদি আপনার সাথে ঘটতে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনি এক সময় সম্পর্কটি থেকে বের হয়ে আসতে চাইবেন। কিন্তু এক্ষত্রেও আপনাকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। একদিকে আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলবেন অপরদিকে আপনি কখনই আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডকে আর ফিরে পাবেন না।
আপনারা যদিও ভেবে থাকেন যে ভালোবাসারা সম্পর্ক না থাকলেও আপনারা পূর্বের মতই বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে থাকবেন, তা কখনই সম্ভব হবে না। সম্পর্কের মধ্যে অভিযোগ, সংকোচবোধ একে অন্যকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা তখন আরো বেড়ে যাবে। তারপরেও যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন, আপনার জন্য আমার শুভকামনা রইল।
Leave a Reply