অধিকাংশ যুবক প্রায়ই প্রশ্ন করে যে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে সফল মানুষের কাছ থেকে কী শিখতে পারে? আসলে এসব সফল মানুষের নেয়া কৌশলগত পদক্ষেপ এবং তারা যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার অধিকাংশ আপনি ইন্টারনেটেই পেয়ে যাবেন।
আর এসব তথ্য আপনি অধ্যায়ন এবং বিশ্লেষণ করলে জানতে পারবেন, কোন কোন পদক্ষেপগুলো তাদের খ্যাতি অর্জন ও কোটি কোটি ডলার আয় করতে সহায়তা করেছে। আপনি আরো জানতে পারবেন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যে এদের মাঝ থেকে কোন কোন বৈশিষ্টগুলো আপনার মধ্যে থাকাটা জরুরী।
প্রত্যেক সফল মানুষের অভিজ্ঞতা এবং জীবনী থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। সুতরাং আজকে আমরা স্টিভ জবস, জ্যাক মা, জেফ বেজস এবং আরও অনেক বিখ্যাত মানুষের কাছ থেকে শিখার মত কয়েকটি বিষয় উপস্থাপন করবো।
বিশ্বের সবচেয়ে সফল মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা
১. স্টিভ জবস
স্টিভ জবস আমাদের শেখায় সমস্যার সমাধানের জন্য গ্রাহক-কেন্দ্রিক পদ্ধতির প্রয়োজন এবং নান্দনিকতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই।
স্টিভ জবস প্রযুক্তি জগতে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও, সত্যিকারের স্বপ্নদর্শী হওয়ার কারণে তাকে সবাই সম্মান করে। অ্যাপল যখন দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম, তখন ১৯৯৭ সালে তিনি অ্যাপলের সিইও হন। সিইও হবার পর স্টিভ জবস অ্যাপলকে আবার পুনরুজ্জীবিত করেন।
স্টিভ জবস পপ সংস্কৃতির উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিলেন তার প্রযুক্তি পণ্য দিয়ে। কেননা তিনি ছিলেন সমস্যা সমাধানকারী এবং গ্রাহক কেন্দ্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। তিনিই প্রথম স্মার্টফোনে ফুল স্ক্রিন ডিসপ্লে টাচ সিস্টেম চালু করেন।
যখন আইফোন তৈরি হচ্ছিল, তখন তিনি তার দলটিকে একটি ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য ভার্চুয়াল কীবোর্ড তৈরির কাজ করতে বলেছিলেন। যখন ডিজাইন দলটি একটি প্রোটোটাইপ নিয়ে আনে, তখন তিনি এটিকে অনেক পছন্দ করেছিলেন এবং পরে তা আইফোনে যুক্ত করেন। পরবর্তীতে এই আইফোন হয়ে উঠে গ্রাহকদের জন্য সহজ এবং জনপ্রিয় স্মার্টফোন। আইফোন অ্যাপলকে নিয়ে যায় সাফল্যের উচ্চ পর্যায়ে।
২. জ্যাক মা
জ্যাক মা হল একটি নিখুঁত উদাহরণ, যিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বড় এবং সফল হতে সিলিকন ভ্যালিতে থাকা খুব বেশী জরুরি বিষয় নয়।
যুবক বয়সে তিনি ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। শুধুমাত্র হার্ভার্ড থেকে তার আবেদন ১০ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। কিন্তু এসব বাধা তাকে বিশ্বের ক্ষমতাবান ব্যবসায়ী হওয়াটা থামাতে পারেনি।
১৯৯৯ সালে জ্যাক ই-কমার্স স্টোর আলিবাবা.কম সহ ইন্টারনেট-ভিত্তিক ব্যবসায়ের সংস্থা আলিবাবা গ্রুপ চালু করার পর, তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আলিবাবাতে ৫০ হাজারেরও বেশি লোক কাজ করে এবং বর্তমানে আলিবাবা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম কোম্পানি।
৩. জে. কে. রাউলিং
জে. কে. রাউলিং শিখায়, কখনো হাল ছাড়া যাবে না, হোক সেটা সবচাইতে কঠিন পরিস্থিতি।
তিনি চরম দারিদ্র্য থেকে উঠে এসে, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের একজন হয়েছেন। ১৯৯০ সালে যখন তিনি একজন গবেষক ও দ্বিভাষিক হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন তার মাথায় হ্যারি পটার সিরিজের আইডিয়াটি এসেছিল।
তবে এর মধ্যে এই ৭ বছর তাকে অনেক ব্যক্তিগত আতংক আর কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। তার মা মারা যান, তার স্বামীর নিকট থেকে তালাক-প্রাপ্ত হয়। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তিনি কয়েকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু তারপরও তিনি তার হ্যারি পটারের আইডিয়াটি ছেড়ে দেননি। যদিও বেশ কয়েকজন প্রকাশক প্রাথমিকভাবে তার বই বাতিল করেছিলেন। বুলমসবারি অবশেষে এটি প্রকাশ করেন এবং এটিই পরে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে।
জে. কে. রাউলিং বই লেখার মাধ্যমেই প্রথম কোটিপতি হয়ে উঠছেন। তবে তিনি তার বেশিরভাগ অর্থ দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন এবং এখন তার নিকট মোট ৬৫০ মিলিয়ন ডলার রয়েছে।
৪. সুন্দর পিচাই
পিচাইয়ের অসাধারণ কর্মজীবন থেকে আপনি শিখতে পারেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ার জন্য, সর্বদা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হওয়া জরুরি নয়।
ভারত থেকে তার মৌলিক শিক্ষা পাওয়ার পর, উচ্চ শিক্ষা এবং ভাল কর্মজীবনের জন্য পিচাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। গুগলে যোগদান করার আগে তিনি ম্যাককিনসে অ্যান্ড কো. তে কাজ করেন। ২০০৪ সালে গুগলে যোগ দেওয়ার পর এবং গুগলের সিইও হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার আগে, তিনি গুগলের প্রোডাক্ট চিফ এবং গুগল আইও ইভেন্টের নেতৃত্ব দেন।
সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেজ যখন পদত্যাগ করেছিল, তখন থেকে গুগলের সিইও হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সুন্দর পিচাই প্রযুক্তি জগতে নতুন এক ঢেউ তৈরি করছেন।
৫. জেফ বেজস
জেফ বেজস আপনাকে একটা অসাধারণ বিষয় শিক্ষা দিতে পারে! আপনার যত ছোট আইডিয়াই হোক, যদি আপনি সঠিক সময়ে শুরু করতে পারেন, তবে আপনি সফল হবেন।
১৯৯৫ সালে জেফ বেজোস অনলাইনে অ্যামাজন শুরু করেন। ৯০ এর দশকে ডট কম বুম ব্যবহার করে তিনি অ্যামাজন ওয়েবসাইটটি চালু করেন, যা প্রথমে কেবল একটি বইয়ের দোকান ছিল। মাত্র এক বছরে, তিনি আমেরিকা এবং ৪৫ টি দেশে বই বিক্রি করে প্রতি সপ্তাহে ২০,০০০ মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন।
পরবর্তী দশ বছরে, অ্যামাজন তার ওয়েবসাইটে সিডি, পোশাক এবং ইলেকট্রনিক আইটেম সরবরাহ করা শুরু করেন। ২০০৪ সালে অ্যামাজনের আয় হয় ৬.৯ বিলিয়ন ডলার এবং ২০০৫ সালে ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
বর্তমানে অ্যামাজন অসংখ্য সহায়ক ব্যবসার সাথে একটি বিশাল অনলাইন ব্যবসা রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে বই বিক্রি থেকে অ্যামাজন এখন তারা নিজস্ব ইলেকট্রনিক্স তৈরি করে, নিজস্ব ক্লাউড কম্পিউটিং সফটওয়্যার রয়েছে, যা অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (AWS) নামে পরিচিত। গত বছর তাদের আয় ১৩৫.৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং জেফ বেজসকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিণত করেছে।
Leave a Reply