ক্রোয়েশিয়ার কোন খেলোয়াড় এই বিশ্বকাপে যতটুকু আলোচনায় এসেছেন, তার চেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার। ক্রোয়েশিয়া তাদের সবচেয়ে সেরাটা দিয়েই খেলেছে কিন্তু ভাগ্যের কারণেই হোক কিংবা খেলায় ঘাটতি থাকার কারণেই হোক, শেষ পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপের ট্রপিটা ফ্রান্সের ঘরেই গিয়েছে।
একদিকে হঠাৎ বৃষ্টি, অন্যদিকে ফ্রান্সের উচ্ছ্বাস, দৃশ্যটা দেখার মতই ছিল। এর আগে মস্কোতে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামে ক্রোয়েশিয়া কিন্তু ৪-২ গোলে হেরে সব স্বপ্ন সপ্নই থেকে যায় মদ্রিচদের। এই বৃষ্টিতেও বোঝা যাচ্চে ক্রোয়াট খেলোয়াড় এবং তাদের সমর্থকদের চোখের অশ্রু।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেকে ছাতার আশ্রয়ে রাখলেও, বৃষ্টিতে ভিজে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোর সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার। এই সময় দুইজনেই রাশিয়া বিশ্বকাপের পুরস্কার মঞ্চে পুরস্কার নিতে আসা খেলোয়াড়দের জড়িয়ে ধরে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেন।
হারার পরেও ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের জন্য এটি ছিল রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা উপহার। সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে যখন গোল্ডেন বল জেতা ক্রোয়েশিয়ান মদ্রিচকে তাদের প্রেসিডেন্ট কিতারোভিচ অনেক্ষণ পর্যন্ত জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিচ্ছিলেন। সত্যিই এমন প্রেসিডেন্ট যাদের আছে, তারা ভাগ্যবান।
এদিকে ব্রিটেনের এক সংবাদ মাধ্যম তাদের দেয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, এই বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার ফাইনালে উঠার পর থেকে প্রচুর ক্রোয়েশিয়া ভক্ত ও তাদের সমর্থক তৈরি হয়েছে। যে ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপে অভিষেক করেই চমক সৃষ্টি করেছিল। এবারও তারা এক নতুন ইতিহাস তৈরি করে। ফাইনালে হেরে গেলেও খেলোয়াড়দের খেলার স্টাইল, ডিফেন্স ও আক্রমণাত্মক খেলার জন্য তারা গোটা ফুটবল বিশ্বে তাদের প্রচুর সমর্থক তৈরি হয়েছে।
কিন্তু বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া আর মদ্রিচের গোল্ডেন বল ছাড়াও তাদের প্রেসিডেন্টকে নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি আর আলোচনা হয়েছে। তার ফুটবল প্রীতির কারণেই তিনি বিশ্বকাপের ফাইনালে এসে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি পান। ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে এত আলোচনার আসল কারণ কি?
প্রথমেই তিনি আলোচনার মধ্যমণি হন সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কিছু ছবি ভাইরাল হওয়ার কারণে। কিন্তু পরে জানা যায় ছবিগুলো ফেইক ছিল।
এরপর তিনি আবার আলোচিত হন ফাইনাল শুরুর এক মাস আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ভ্লাদিমির পুতিনকে নিজ দেশের একটা জার্সি গিফট করে। আবার বিশ্বকাপ ফাইনালের আগেও পুতিনের নামের একটি ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল দলের জার্সি উপহার দেন।
দেশের প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা ক্রোয়েশিয়ার প্রায় প্রত্যেকটা ম্যাচেই উপস্থিত ছিলেন। এমনকি তিনি কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া জিতার পর তাদেরকে অভিনন্দন জানাতে নিজেই চলে গিয়েছিলেন খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে। এটা নিয়েও মিডিয়ায় অনেক আলোচনা হয়। ক্রোয়েশিয়া জিতার পর মিডিয়ার ক্যামেরা খেলোয়াড়দের চেয়ে প্রেসিডেন্টের দিকেই বেশি ছিল।
তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেক ছবি ভাইরাল হয়। কিন্তু তার বেশিরভাগেই নকল ছবি। তিনি ফুটবল প্রেমী হিসাবেই খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহিত করতেই মাঠে এসেছেন। তার উৎসাহের কারণেই দল অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে গিয়েছে।
কোলিন্ডা গ্রাবার ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে ক্রোয়েশিয়ার রিজিকা নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। সেই সময় বর্তমান ক্রোয়েশিয়া ছিল যুগোস্লাভিয়ার অধীনে একটি দেশ। তিনি জ্যাকব কিতারভিচ নামের একজনকে ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন। তার বর্তমান বয়স ৫০ বছর এবং তিনি দুই সন্তানের জননী।
এক মেয়ে ও এক ছেলে, বড় মেয়ের ক্যাটরিনার এখন বয়স ১৭ বছর। ছোট ছেলে ২০০৩ সালে জন্ম নেয় যার নাম রাখেন লোকা। প্রথম নারী ক্রোয়েশিয়ান প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ২০১৫ সালে নির্বাচিত হন। একজন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নয়, ফুটবলপ্রেমী হিসাবে বিশ্ববাসী তাকে মনে রাখবে।
কয়েকদিন আগেও যাকে অনেকেই চিনতো না, আজ বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে সবাই তাকে চিনে। ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও ফাইনালে খেলাটাই ছোট দেশ হিসাবে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সফলতা। দুইবারের বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স আগামী চার বছরের জন্য বিশ্ব ফুটবল প্রেমীদের কাছে চ্যাম্পিয়ন হিসাবে থাকবে।
Leave a Reply