বিল গেটস একবার একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওয়েটারকে ৫ ডলার টিপস্ দিলেন। ওয়েটার রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বিল গেটসের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওয়েটারের অভিব্যক্তি দেখে বিল গেটস ‘কি হয়েছে’ জানতে চাইলেন। ওয়েটার বলল, আমি খুবই অবাক হলাম। কাল ঠিক একই টেবিলে বসে খাওয়া শেষ করে আপনার ছেলে আমাকে ৫০০ ডলার টিপস্ দিলো। আর আপনি কিনা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়েও মাত্র ৫ ডলার টিপস্ দিলেন! বিল গেটস হেসে ফেললেন আর প্রতুত্ত্যরে বললেন, ওর বাবা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, ও ৫০০ ডলার টিপস্ দিতেই পারে। আমার বাবা একজন কৃষক ছিলেন, আমি কীভাবে ৫ ডলারের বেশি টিপস্ দেই!! বিল গেটস ও মাইক্রসফট সম্পর্কে এ রকম অনেক মজার তথ্য রয়েছে।
পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষদের মধ্যে বিল গেটস অন্যতম। মাইক্রসফট এবং বিল গেটসের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। বিশ্বের এই বিশাল ধনী ব্যক্তির কোম্পানির সফটওয়ারেই চলে পৃথিবীর বেশির ভাগ কম্পিউটার। কিন্তু বিল গেটস ও মাইক্রোসফট সম্পর্কে সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আছে যেগুলো অনেকেরই অজানা।
বিল গেটস ও মাইক্রোসফট সম্পর্কে অজানা তথ্য
পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে মাইক্রোসফট এবং বিল গেটসের নাম পরিচিত। নামের সাথে পরিচয় থাকলেও এই কোম্পানি এবং তার মালিক অর্থাৎ বিল গেটস ও মাইক্রসফট সম্পর্কে দারুণ সব তথ্য এখনো অনেকের অজানা। এমন ২১টি তথ্য দেয়া হলো এখানে।
বেশিরভাগ মানুষ বিল গেটস সম্পর্কে যা জানে-
- বিল গেটস সেরা ধনী।
- বিল গেটস মাইক্রোসফট এর সহ প্রতিষ্ঠাতা।
- বিল গেটস ‘বিল এন্ড মিলিন্ড গেটস’ এর পরিচালক।
কিন্তু এর বাইরে রয়েছে বিল গেটস ও মাইক্রসফট সম্পর্কে আরো নানা তথ্য যা প্রযুক্তি দুনিয়ার বহু মানুষের আগ্রহের কারণ। জেনে নেই, সে-রকম কিছু তথ্য—
- বিল গেটস্ এর ছেলেবেলা ও স্কুলের নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস আর ডাক নাম ছিল ট্রে।
- বিল গেটস এর বাবা চেয়েছিলেন বিল গেটস বড় হয়ে উকিল হোক, দেশ সেরা উকিল হিসেবে নাম করুক।
- লেক সাইড স্কুলে পড়ার সময়ই বিল গেটস প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন, টিক-ট্যাক-টো নামক এই প্রোগ্রামটি কম্পিউটারের বিপরীতে গেম খেলার জন্য তৈরি প্রযুক্তি দুনিয়ার প্রথম প্রোগ্রাম।
- কম্পিউটারের বিরুদ্ধে গেম খেলার প্রোগ্রাম তৈরি করে প্রশংসিত হলেও বিল গেটস স্কুল থেকে বহিস্কার হন প্রথম কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম তৈরির জন্য। স্কুল কতৃপক্ষের দৃষ্টিতে ওই প্রোগামটি ছিল নীতি-বিরুদ্ধ।
- মজার ব্যাপার হল ট্রোজান নাম ভাইরাস থেকে কম্পিউটারকে সুরক্ষিত করার সফটওয়্যার আবিস্কার করে আলোড়ন তোলার পর, যে স্কুল তাকে বহিস্কার করেছে সে-ই স্কুলেরই কম্পিউটার বিভাগ আবার তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বিল গেটস সাদরে সে আমন্ত্রন গ্রহণ করেছেন।
- মাইক্রোসফটের স্রষ্টা বিল গেটসকে সত্তুরের দশকে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়তে হয়েছিল। যাইহোক, ২০০৭ সালে সেই হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি পান।
- SAT পরীক্ষায় ১৬০০ নম্বরের মধ্যে ১৫৯০ পেয়ে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন বিল গেটস।
- টাকা চেয়ে যারা বিল গেটসকে মেইল করে তাদেরকে সাহায্য না করলেও তাঁর দানের হাত যথেষ্ট বিস্তৃত। বিল গেটস এবং তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের নামে পরিচালিত ‘বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ সর্বত্র পরিচিত। অবাক করা তথ্য হচ্ছে মোট সম্পদের ৯৫% দান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই দম্পতি।
- বিল গেটস এর ৭২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মধ্যে মাত্র ১০ মিলিয়নের মালিক হবে তার সন্তান। বাকী সব ‘বিল এন্ড মিলিন্ডা গেটস’ এর ফান্ডে গিয়ে খরচ হবে সামাজিক ও প্রযুক্তি উন্নয়েনর কাজে। ইতিমধ্যেই বিল গেটস ২৮ বিলিয়ন ডলার ডোনেট করেছেন বিভিন্ন কাজে।
- নিউ ইয়র্ক টাইমস্ এর হিসেব মতে, বিল গেটস যদি প্রতি দিন ১ মিলিয়ন ডলারও ব্যয় করেন, তাতেও তার সম্পত্তি শেষ হতে ২১৮ বছর লেগে যাবে।
- বিল গেটস এর বিশাল বাড়ির বাৎসরিক সরকারি ট্যাক্স দিতে হয় ১ মিলিয়ন ডলার।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো এবং চলন্ত অবস্থায় সার্বক্ষণিক রেড লাইট জ্বালিয়ে রাখার জন্য একবার জেল খেটেছিলেন বিল গেটস।
- প্রযুক্তি বিষয়ে বিল গেটস অনেক ভবিষ্যৎ বাণী করলেও তার একটাও এ পর্যন্ত সত্যি হয়নি, তাই এখন আর কেউ বিল গেটস এর ভবিষ্যৎ বাণীতে বিশ্বাস করেন না।
- বিল গেটস এর সাম্প্রতিক একটা ভবিষ্যৎ বাণী খুবই আলোচিত, আর তা হচ্ছে – ২০৩৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে কোন গরীব দেশ থাকবে না। কী জানি এ ভবিষ্যৎ বাণীটি ফলেও যেতে পারে।
- আব্রাহাম লিংকন, ওয়াল্ট ডিজনি, মার্ক জুকারবার্গ, থমাস আলভা এডিসন, হেনরি ফোর্ড এবং স্টিভ জবস্ এর মতো বিল গেটস এরও কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই।
- অ্যাপলের মালিক স্টিভ জবস্ যখন অভিযোগ করলেন যে বিল গেটস অ্যাপলের অনেক প্রযুক্তি তথ্য চুরি করেছেন, বিল গেটস তখন জবাব দিলেন এভাবে, ‘এটা এ রকম একটা ব্যাপার যে আমি জিরক্স এর বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ঢুকেছি তার টিভিটা চুরি করবো বলে, কিন্তু ঢুকে দেখি স্টিভ জবস্ সেটি আগেই চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। ’
- মাইক্রোসফট এর প্রথম নাম ছিল মাইক্রো-সফট। মাইক্রোকম্পিউটার এবং সফটওয়ার- এই দুইয়ের সমন্বয়ে নামকরণ করা হয়েছিল।
- প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাইক্রো-সফট চালু হয় ১৯৭৬ সালে। তখনকার প্রেসিডেন্ট ছিল Gerald Ford আর এক গ্যালন গ্যাসের দাম ছিল মাত্র $০.৫৯!
- ১৯৭৯ সালে ‘মাইক্রো-সফট’ থেকে কোম্পানির নামটি ‘মাইক্রোসফট’ করা হয়। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা শুধু বিল গেটস নয়; বিল গেটসের মাধ্যমিক স্কুলের বন্ধু পল এলেন কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা।
- বিল গেটস এবং পলের সাড়া জাগানো সৃষ্টির মধ্যে মাইক্রোসফটই প্রথম নয়। অন্যান্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি এই দুই বন্ধু ট্রাফ-ও-ডাটা নামক একটা কম্পিউটারাইজড মেশিন বানিয়েছিল যেটা দিয়ে ট্রাফিক কাউন্টারের ডাটা প্রসেস করা যায়।
- মাইক্রোসফট কিন্তু প্রথমেই অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ শুরু করেনি। মাইক্রসফট এবং বিল গেটসের প্রথম কাজ ছিল Microsoft BASIC নামক প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ নিয়ে।
- মাইক্রোসফট কর্তৃক প্রথম সরবরাহকৃত অপারেটিং সিস্টেম UNIX এর একটা ভার্সন। ১৯৮০ সালে সরবরাহকৃত এই অপারেটিং সিস্টেমের নাম দেয়া হয়েছিল Xenix.
- Windows 1.0 নিয়ে বিল গেটস কাজ শুরু করেছিল ১৯৮৩ সালে। আর সেটার রিলিজ দিয়েছিল ১৯৮৫ সালে। এটা আসলে সত্যিকারের কোন অপারেটিং সিস্টেস ছিল না। যদিও প্রথমবারে তৈরি উইন্ডোজের এই ভার্সন দেখতে এবং কাজেও অপারেটিং সিস্টেমের ভূমিকা রেখেছিল।
- উইন্ডোজের বড় ভুলগুলোর নাম দেয়া হয়েছিল The Blue Screen Death. এটা মূলত প্রথম দেখা গিয়েছিল OS/2 অপারেটিং সিস্টেমে।
- ১৯৯৪ সালে বিল গেটস ৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির লেখা Leicester Codex কিনে নেন। সেগুলোর কিছুকে স্ক্যান করে পরবর্তীতে তিনি তা মাইক্রোসফটের স্ক্রিনসেভার হিসেবে ব্যবহার করেন!
- ১৯৮৫ সালে গুড হাউজ কিপিং ম্যাগাজিনে ’50 মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলর’ এর একজন নির্বাচিত হয়েছেন বিল গেটস। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৮ বছর।
- কম্পিউটারের রাজত্বে বিল গেটসকে রাজা হিসেবে সবাই চিনলেও ব্রিটিশ সম্রাটের নাইট কমান্ডার হিসেবে তাঁর পরিচয় অনেকেরই অজানা।
- মাইক্রোসফট এবং বিল গেটস সম্পর্কে সবচেয়ে মজার তথটি হচ্ছে কোস্টারিকায় প্রাপ্ত একটি মাছির নামকরণ করা হয়েছে বিল গেটসের নামে।
- সবশেষে একটা মজার তথ্য দিচ্ছি। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সেভেন রিলিজ করে ২০০৯ সালে, এরপর উইন্ডোজ এইট, তারপর উইন্ডোজ টেন! এক মিনটি, উইন্ডোজ নাইনের কী হলো তাহলে! এটাই হচ্ছে বিষয়। মাইক্রোসফট এবং বিল গেটস উইন্ডোজ নাইন নামক কিছু বানায়ইনি!
বিল গেটস ও মাইক্রসফট অনেকেরই অনুপ্রেরণার উৎস। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া সে দিনের বালক আজ পৃথিবীর শেষ্ঠ ধনী! বিল গেটস একদিন কথার প্রসঙ্গে বলেছিলেন- তিনি একবার পরীক্ষায় সব বিষয়ে ফেইল করেছিলেন। তাঁর যে বন্ধুটি সব বিষয়ে পাশ করেছে সে এখন মাইক্রোসফটের ইঞ্জিনিয়ার। আর বিল গেটস মাইক্রোসফটের মালিক।
বিল গেটস ও মাইক্রসফট নিয়ে লিখতে গেলে পাতার পর পাতা শেষ হবে। কিন্তু লেখা শেষ হবে না। তারপরও শেষ করছি বিশ্বের সেরা ধনী বিল গেটসের সেরা একটি উক্তি দিয়ে-
যখন তোমার পকেট ভর্তি টাকা থাকবে তখন শুধুমাত্র তুমি ভুলে যাবে যে ‘তুমি কে’। কিন্তু যখন তোমার পকেট ফাঁকা থাকবে তখন সমগ্র দুনিয়া ভুলে যাবে ‘তুমি কে’।
Leave a Reply