বিদেশে পড়াশুনার সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। তবে, আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন-যাপনের মান ও শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে সুবিধাটাই বেশি। আর অসুবিধাগুলো এতই সাধারণ যে সেগুলো নিয়ে ভাবার খুব একটা প্রয়োজন নেই। তবু, জেনে রাখার জন্যেই উল্লেখ করা।
বিদেশে পড়াশুনার সুযোগ ও আগ্রহ দুটিই আজকাল ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বেড়েছে। কারণ, এদেশে পড়াশুনা করার পর ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ কতটা সুবিধাজনক তা আমরা সকলেই জানি। অন্যদিকে, বিদেশে পড়াশুনা করলে, বিশেষত কোন বিশেষ ডিগ্রি নিতে পারলে ক্যারিয়ারটা অনেকটাই নিশ্চিত, সেটাও আমরা জানি।
যাইহোক, আপনার যদি বিদেশে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে জেনে নিন বিদেশে পড়াশুনার প্রস্তুতি নেবেন কিভাবে। আর তার আগে এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো ভালভাবে বিবেচনা করে নিন।
বিদেশে পড়াশুনার সুবিধা-অসুবিধা
সবার আগে বিদেশে পড়াশুনার সুবিধাগুলোই চিন্তা করা যাক। সবচেয়ে বড় সুবিধা আপনি যদি কোনও স্কলারশিপ পেয়ে যান। যেমন, কেউ যদি কমনওয়েলথের পিএইচডি ফুল স্কলারশিপ পায়, তার তো কোন চিন্তাই নাই। যাইহোক, আসুন বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করার ৫টি সুবিধা জেনে নেই।
বিদেশে পড়তে যাওয়ার সুবিধা
১। ভাল জায়গায় পড়ার সুযোগ
ভাল একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগই তো বিদেশে পড়তে যেতে চাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। ভাল দেশের ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেলে তা শুধু দেশে আপনার দামই বাড়াবে না, বরং আপনি অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবেন। ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবহই অন্যরকম হয়, মানুষকে সঠিক পথে মোটিভেট করতে এর কোন জুড়ি নেই।
২। বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে নেটওয়ার্কিং
বিদেশে পড়তে গিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে সংযোগ ঘটানোর সুযোগ আপনার আসতে পারে। এতে করে আপনি আপনার কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসবেন। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী, বিভিন্ন সংস্কৃতির এবং বিভিন্ন চরিত্রের মানুষের সাথে আপনার পরিচয় হবে। ফলে পৃথিবীর অনেক দেশে আপনার বন্ধুত্ব গড়ে তোলার সুযোগ হবে। এই বন্ধুরা ভবিষ্যতে আপনাকে অনেক সাহায্য এবং সাপোর্ট দেবে যা একটি মাত্র দেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে না।
৩। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার
বিদেশে পড়তে যাওয়ায় আপনার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার বাড়বে। কারণ আপনি অনেক কিছু জানতে এবং শিখতে পারবেন যা একটি দেশের গণ্ডিতে বাধা থাকলে কখনোই হবে না। আপনি অনেক শিক্ষিত এবং আকর্ষণীয় মানুষের পরিণত হবেন । অনেক ধরনের মানুষের সাথে আপনার পরিচয় হবে এবং অনেক ধরনের নতুন পরিস্থিতি সামলাতে হবে, এতে আপনার যোগ্যতা ও আত্মবিশ্বাস দুটোই বাড়বে।
৪। বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতা অর্জন করার সুযোগ
বিদেশে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে এবং যোগ্যতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন। যেমন, বিদেশে গিয়ে থাকার ফলে আপনি একটি নতুন ভাষা শিখতে পারেন। বিশেষ করে যে-দেশ আপনি যাচ্ছেন সেটা যদি ইংরেজিভাষী দেশ না হয় । যদি ইংরেজিভাষী দেশ হয়েও থাকে, তাহলেও সমস্যা নয়। কারণ নিয়মিত প্র্যাকটিসের ফলে আপনার ইংরেজি ভাষা বলার ক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়ে যাবে।
এছাড়া অনেক ইউনিভার্সিটিতে আপনার বিষয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক বাড়তি কোর্স কম খরচে বা বিনা খরচে শিখতে পারবেন। বিদেশে যাওয়ার ফলে আপনার আরো অনেক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যেতে পারে। যেমন সেখানে আপনি হয়তো কোন চাকরি বা ইন্টার্নশিপের অফার পেতে পারেন।
৫। নিজের মূল্য বৃদ্ধি ও রিজিউম তৈরি
চাকরির বাজারে আপনার দাম অনেক গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে একটি বিদেশি ডিগ্রি। বিশেষ করে যদি তেমন ভাল দেশ এবং ভাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রিটি অর্জন করতে পারেন। বিদেশে যাওয়ার যোগ্যতা আপনার আছে, এটি ছাড়াও এতে বোঝা যাবে যে আপনি এমন একজন মানুষ যে মোটিভেটেড এবং স্মার্ট। এছাড়াও কোনোকিছু অর্জন করার প্রচেষ্টা আপনার রয়েছে।
এই গুণগুলো একজন চাকরিদাতার কাছে আপনার মূল্য অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও বলতেই হয় যে একটি বিদেশি ডিগ্রি আপনার রিজিউমকে অনেক সমৃদ্ধ করবে।
বিদেশে পড়তে যাওয়ার অসুবিধা
বিদেশে পড়ার সুবিধাগুলো তো দেখা হল, আসুন এবার অসুবিধাগুলোও একটু দেখি।
১। দেশের ও পরিবার পরিজনের টান
বিদেশে পড়তে গেলে আপনি সবার আগে নিজের দেশের জন্য কাতর হয়ে পড়বেন, এবং এটি খুবই স্বাভাবিক। একটি সম্পূর্ণ নতুন দেশে, নতুন পরিস্থিতিতে অন্যধরনের আচার-আচরণ এবং অচেনা মানুষের মাঝে মানিয়ে নেওয়াটা সোজা কথা নয়। বিশেষ করে সেখানে যখন আপনার বন্ধু, পরিবার-পরিজন বা সাপোর্ট দেওয়ার মত প্রায় কেউই থাকবে না।
আপনার পরিবারও এদিকে আপনাকে মিস করবে। অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারেন না। আপনি যদি বিদেশে যান তবে চেষ্টা করুন আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে। তাদের মানসিক সাপোর্ট আপনাকে বিদেশি পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
২। ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যবধান
ভাষার পার্থক্যের কারণে অনেক সময় আপনি অনেক কিছু বুঝতে পারবেন না বা সহজে বন্ধুত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারবেন না। এছাড়া সংস্কৃতি ও রীতিনীতির পার্থক্য তো রয়েছেই, বিশেষ করে যদি আপনি দূরের কোন দেশে পড়তে চান।
আরেকটি বড় সমস্যা হল খাবার। বিদেশে যাওয়ার পর প্রথম বছরে অনেকেরই ওজন কমে যায়। কারণ তারা ভিন্ন স্বাদের খাবারগুলো আরাম করে খেতে পারেন না। এই সমস্ত বাধা এবং কমিউনিকেশনের অভাবের কারণে অনেকেই বিদেশে পড়তে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারেন না।
৩। যাতায়াতের সমস্যা
যাতায়াতের জন্য অনেক লম্বা সময় লাগাটাই স্বাভাবিক। আপনাকে অনেক দূরে যেতে আসতে হবে। ফ্লাইটে এবং এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করে যাত্রার একটা বড় অংশ কাটতে পারে। অনেক সময় আপনার পরিবারের আপনাকে প্রয়োজন হলেও আপনি দ্রুত তাদের পাশে ফিরে আসতে পারবেন না। তবে আজকাল আধুনিক প্রযুক্তির কারণে যোগাযোগ রাখা অনেক সোজা হয়ে গেছে, তা মানতেই হয়।
৪। পড়ার খরচ যোগানো ও অন্যান্য ঝুঁকি
বিদেশে পড়ার খরচ যোগানো সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সম্ভব হয় না। এজন্য ভালো স্কলারশিপের সুযোগ না পেলে বিদেশে পড়তে যেতে পারেন না মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। তবে চাইলে আপনিও পেতে পারেন ভ্যানিয়ের কানাডা গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ এর মতো আরো অনেক স্কলারশিপ। কারো কারো ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়ার পরও থাকা-খাওয়া এবং বিভিন্ন বাড়তি খরচ থাকতে পারে, এক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
এছাড়া আপনি যদি কোনো কারণে মানিয়ে নিতে না পারেন, তবে পড়া শেষ না করেই আপনাকে দেশে ফিরে আসতে হবে। এতে আপনাকে আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও মানসিক চাপের মুখোমুখি হতে পারে।
অবশ্যই সবসময় সতর্ক থাকতে হবে প্রতারকের পাল্লায় যাতে না পড়েন। এছাড়া বিদেশে অনেকেই হেইট ক্রাইমের শিকার হন এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে পড়েন। এ সকল বিষয়ে খুব সাবধানে থাকতে হবে।
৫। কাজের চাপ:
বিদেশে পড়ার খরচ যোগাতে অনেকেই বিভিন্ন কাজ করেন। কিন্তু যে ধরনের অড জব ছাত্রছাত্রীরা সে দেশগুলোতে করে, বাংলাদেশী মানুষেরা, বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা অনেকেই এ ধরনের কাজে অভ্যস্ত থাকেন না। এতে তাদের অনেক শারীরিক ও মানসিক পীড়া সইতে হয়।
আপনি যদি বিদেশে যেতে চান তাহলে বিদেশে পড়াশুনার সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে বিবেচনা করুন আপনি এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে পারবেন কিনা। কারণ সব মানুষ সমান নয়, একই পরিস্থিতিতে কেউ হয়তো ফুটে ওঠে, কেউ ভেঙ্গে পড়ে। এতে লজ্জা পাবার কিছু নেই। তাই আপনার জন্য যেই সিদ্ধান্তটি সবচেয়ে ভালো হবে সেটি অনেক ভেবে-চিন্তে বেছে নিন।
Leave a Reply