সোশ্যাল মার্কেটিংয়ের শুরুর দিনে ফেসবুক মার্কেটিং ততটা জনপ্রিয় ছিল না। শুরুর দিকে মাইস্পেস ছিল এই ধরনের মার্কেটিং করার জন্য একমাত্র ভরসা। আপনি জেনে অবাক হবে ২০০৩-২০০৬ এর মধ্যে মাইস্পেসে ইউজার সংখ্যা দাড়ায় ১০০ মিলিয়নেরও বেশি। এমনকি ২০০৬ সালে এটি এমন একটি ওয়েবসাইটে পরিণত হয় যার ভিজিটর ছিল গুগলের চাইতেও বেশি।
এরপর আসে ফেসবুক। ফেসবুকের দ্রুত উত্থানের কারণে সবাই ফেসবুক ভিত্তিক মার্কেটিংয়ে আগ্রহী হতে থাকে, যার বর্তমান চাহিদা সহজেই অনুমেয়। আপনি চাইলেই অনলাইন ভিত্তিক ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স এ অংশগ্রহণ করে দক্ষ ফেসবুক মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
তবে তার আগে ফেসবুক মার্কেটিংটা কি আর কেন করবেন সে সম্পর্কে একটা ক্লিয়ার আইডিয়া নিয়ে রাখুন।
ফেসবুক মার্কেটিং
ফেসবুক হচ্ছে একটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক প্লাটফর্ম যেখানে ইউজাররা বন্ধু, বান্ধবসহ পরিচিত বিভিন্ন মানুষের সাথে ছবি, ভিডিও, স্ট্যাটাস ইত্যাদি শেয়ার করার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। এখানে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে বন্ধু তৈরীর সুযোগও থাকে। এর পাশাপাশি ফেসবুক হচ্ছে এমন একটি মিডিয়া চ্যানেল যেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীক পণ্য বা সেবা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে অনলাইন মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিক্রয় করা যায়। ফেসবুক মার্কেটিং সাধারণত দুইটি উপায়ে করা হয়-
- অর্গানিক রিচ
- ফেসবুক অ্যাড
অর্গানিক রিচ:
কোন ধরনের পেইড ডিস্ট্রিবিউশন ছাড়াই যত সংখ্যক মানুষ ফেসবুকে আপনার শেয়ার করা পোষ্ট দেখে বা পড়ে তাকে আমরা অর্গানিক রিচ বলে থাকি।
এর সুবিধা হলো এ ধরনের পোষ্ট করার জন্য আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হয় না। তবে একথা সত্য যে, ফেসবুকে একজন ব্যবহারকারীর নিউজফিডে আসা শত শত পোষ্টের ভিড়ের কারণে বর্তমান সময়ে অর্গানিক রিচ পাওয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।
আপনি যদি পেইড প্রমোশনে অনাগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে অনেক বেশি কৌশলী এবং ক্রিয়েটিভ আইডিয়ার মাধ্যমে আপনার পেজের রিচ বাড়াতে হবে।
ফেসবুক অ্যাড:
ফেসবুক অ্যাড হচ্ছে এক ধরনের পেইড ম্যাসেজ। এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। বিনিময়ে ফেসবুক আপনার টেক্সট, ইমেজ বা ভিডিও কন্টেন্ট আপনার টার্গেটকৃত অডিয়েন্সদের সামনে তুলে ধরবে। এভাবে যত বেশি ব্যবহারকারী আপনার কন্টেন্ট দেখবে, তত বেশি আপনার পেজ রিচ পাবে।
অডিয়েন্স টার্গেটের পাশাপাশি ফেসবুক মার্কেটিংয়ে কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও থাকে। ওয়েবসাইটের ভিজিটর বৃদ্ধি, ভিডিও কন্টেন্টের ভিউ বাড়ানো, ফেসবুক পেজের লাইক বাড়ানো, পণ্য বা সেবা বিক্রয় ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ফেসবুকে পেইড মার্কেটিং করা হয়ে থাকে।
ফেসবুক মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা
বিশ্ববাজারে নিজের ব্যবসায়ীক প্রসার ঘটাতে ফেসবুকের তুলনা নেই। একই সাথে এর মাধ্যমে স্থানীয় বাজারেও ব্যবসায়ীক পরিচিতি বৃদ্ধি করা সম্ভব। যেসব কারণে আজকের বাজারে ফেসবুক মার্কেটিংয়ের বিকল্প নেই তা হলো-
ম্যাসিভ এক্সপোজার লাভ করা:
নিঃসন্দেহে ফেসবুক হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া জগতের বিগ ড্যাডি, যার বর্তমান ইউজার সংখ্যা ১.২ বিলিয়নেরও বেশি। ১ বিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক ইউজার প্রায় সব সময়ই ফেসবুকে অ্যাক্টিভ থাকেন। ফেসবুকর মার্কেটিংয়ের সুবিধার জন্য পেজ, গ্রুপ এবং অ্যাড ভিত্তিক প্লাটফর্ম তৈরী করেছে।
তো সহজেই অনুমান করা যায় যে ফেসবুকের বিপুল সংখ্যক ইউজার আর বিভিন্ন ধরনের মার্কেটিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে খুব সহজেই অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব।
একটা সময় ছিল যখন কোন পণ্যের মার্কেটিং করার জন্যে দৈনিক পত্রিকা এবং টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে হতো যা বেশ ব্যায়বহুল ছিল। এখন, এই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে ফেসবুকের মতো আরো কিছু সোশ্যাল মিডিয়া। আমাদের দেশে যেহেতু, এটির জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি, তাই আপনার পণ্যের প্রচার-প্রসার ও বিক্রি বৃদ্ধির জন্যে ফেসবুকের বিকল্প মার্কেটিং ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই।
স্বল্প মার্কেটিং খরচ:
ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট তৈরী করার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। কারণ ওয়েবসাইট তৈরী করতে হলে ডোমেইন কেনা, হোস্টিং কেনা, সাইট ডেভেলপ এবং সেটির রক্ষণাবেক্ষনে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। সেখানে কোন প্রকার খরচ ছাড়াই যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে ফেববুকে পেজ তৈরী করাসহ কন্টেন্ট পোস্ট করার সুবিধা পেয়ে থাকেন।
ফ্রি মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি কিছু বাড়তি সুবিধার জন্য অনেকে পেইড মার্কেটিং পদ্ধতি বেছে নেন। এর কারণ হলো গতানুগতিক যে কোন টেলিভিশন বা প্রিন্টিং মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার খরচের তুলনায় ফেসবুক ভিত্তিক পেইড মার্কেটিংয়ের খরচ অনেক কম।
টার্গেটেড অডিয়েন্স পাওয়া:
বিক্রেতা হিসাবে আপনার পণ্যটি কোন ধরনের ক্রেতাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী তা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। ফেসবুক ভিত্তিক মার্কেটিং আপনার পোস্টকৃত কন্টেন্ট আপনার টার্গেটকৃত অডিয়েন্সের সামনে উপস্থাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। টার্গেট অডিয়েন্স বলতে সেই ধরণের লোকজন বা ইউজার যাদের আপনার প্রয়োজন।
ফেসবুকের রয়েছে বিশেষ ধরনের অ্যালগরিদম। এর মাধ্যমে ফেসবুক ইউজারদের পছন্দের বিষয়গুলিকে বোঝার চেষ্টা করে। আপনার পেজে যদি ১ লক্ষেরও বেশি লাইক আসে, কিন্তু যদি আপনার পণ্য বিক্রয় না হয়, তবে সে ধরনের মার্কেটিং আপনার কোন কাজেই আসবে না। কিন্তু টার্গেটেড মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এই অ্যালগরিদমকে ব্যবহার করে ফেসবুক এমন ব্যক্তিদেরকেই আপনার বিজ্ঞাপন দেখায় যারা ঐ ধরনের পণ্য বা সেবা গ্রহণে আগ্রহী।
আপ-টু-ডেট থাকা:
ফেসবুক পেজ তৈরী করার সাথে সাথেই সেখানে ইনসাইট নামক একটি ফিচার দেখা যায়। পেইড বা ফ্রি যে ধরনের প্রোমোশনেই আপনি ইনসাইট সুবিধা পাবেন। এর মাধ্যমে আপনি পেজের গ্রোথ, ট্রাফিক, পেজ ভিউ, রিচ, লাইক ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন।
ইনসাইট এর মাধ্যমে আপনার পেজে কোন ধরনের পোষ্টে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে তা সম্পর্কে আপনি সহজেই তথ্য পেয়ে যাবেন। এছাড়া প্রতিটি পেজের জন্য রয়েছে আলাদা ম্যাসেঞ্জার অ্যাকাউন্ট যার মাধ্যমে আপনি ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রেখে প্রাতিষ্ঠানিক আইডি থেকে গ্রাহকদের সাথে চ্যাটিং এর মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করতে পারবেন।
২০০৮ সালে ফেসবুক মাইস্পেসকে চমকে দিয়ে বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল মার্কেটিংয়ের দিক থেকে মাইস্পেসকে টপকে যায়। ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ফেসবুকের কারণে মাইস্পেস তার ২৫ মিলিয়ন ইউজার হারায়। মার্কেটিংয়ে প্রসিদ্ধ সব প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের অধিকাংশ বিনিয়োগ ফেসবুকে করতে শুরু করে।
ফেসবুক মার্কেটিং খুব দ্রুত সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়। সময়ের সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ৯৫০ মিলিয়নেরও বেশি ইউজার তৈরী করে। এদের মধ্যে ১৪৫ মিলিয়ন ইউজার ছিল ইউনাইটেড স্টেট এর যা তাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৩ ভাগ। গুগল ডট কমের পর এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভিজিটকৃত ওয়েবসাইট।
Leave a Reply