ক্রিকেট ইতিহাসের বিখ্যাত বোলাররা কিছু ফাস্ট বোলিং টিপস দিয়েছেন। ফাস্ট বোলিং এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস জেনে ফাস্ট বোলিং অনুশীলন শুরু করতে পারেন আপনিও।
ফাস্ট বোলিং কি?
ফাস্ট বোলিং এর আরেক নাম পেস বোলিং। এই ধরণের বোলিংকে আবার সুইং বা সীম বোলিংও বলা হয়। ক্রিকেটে যে ২ ধরণের বোলিং সিস্টেম রয়েছে তার মাঝে ফাস্ট বোলিং অন্যতম, অন্য বোলিং সিস্টেমটি হচ্ছে স্পিন বোলিং।
ফাস্ট বোলিং এ খুব দ্রুত গতিতে বল করা হয় যা পীচে পড়েই বাউন্স হয় এবং দ্রুতগতির কারণে বলটি উপরের দিকে উঠে যায় যার ফলে ৪ ও ৬ হওয়ার সম্ভাবণা বেশি থাকে। আবার সেই সাথে ক্যাচ হওয়ারও সম্ভাবণা রয়ে যায়।
ব্যাটস্ ম্যানরা সাধারণত ফাস্ট বোলিংকে ভয় পায়। কারণ, ফাস্ট বলের গতি থাকে ১৩৬ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এ ধরণের বল নিয়ন্ত্রণ করা ব্যাটস্ ম্যানদের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য হয়, অধিকাংশ সময়ই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
ক্রিকেটে স্পিন বোলারদের চেয়ে ফাস্ট বোলারদের কদর বেশি। কারণ, ফাস্ট বোলারই সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি হয়ে থাকে। সব সময়ের সেরা ১০ জন ফাস্ট বোলার সম্পর্কে জেনে নিন যারা ক্রিকেট ইতিহাসে অসংখ্য উইকেট শিকার করেছেন।
বিভিন্ন সময়ে এ সব ফাস্ট বোলারদের দেয়া কিছু ফাস্ট বোলিং টিপস জেনে রাখুন যা আপনাকে দ্রুত ও সহজে ফাস্ট বোলিং করার কৌশল জানিয়ে দেবে।
ফাস্ট বোলিং টিপস
এর আগেও আমরা বিভিন্ন বোলারদের দেয়া ১০ বোলিং টিপস নিয়ে লিখেছিলাম যেগুলো ফাস্ট ও স্পিন উভয় বোলিং এর জন্যই প্রযোজ্য ছিল। এবার লিখছি শুধু ফাস্ট বোলিং নিয়ে আর সামনে আসছে স্পিন বোলিং টিপস নিয়ে আরেকটি লেখা। আপাতত: ফাস্ট বোলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন যারা, তাদের জন্যেই এই ১০টি টিপস।
১. বলকে যত বেশীক্ষণ সম্ভব ঝুলিয়ে রাখুন
বলকে নিয়ে রান-আপে থাকার সময় বলকে ঝুলিয়ে রেখে এগিয়ে যান। অর্থ্যাৎ, হাতে বল নিয়ে হাত ঝুলিয়ে রেখে রান-আপ নিন।
২. চেষ্টা করুন বল ছোড়ার সময় আপনার বাহু যাতে খুব বেশী উঁচুতে না থাকে
রান-আপ নিয়ে আসার পর যখনই হাত ঘুরিয়ে বল ছুড়তে যাবেন, তখন হাত ঘোরানোর শুরুতেই আপনার বাহু যাতে খুব বেশী উঁচুতে না থাকে সেদিকে নজর দিন।
আপনার বাহু যদি উঁচুতে থাকে, তবে আপনার বোলিং এর গতি ও অ্যাক্যুরেসি উভয়ই কমে যাবে। এই অ্যাকশনে আপনি কেবল ইনসুইংয়ে কিছুটা সাহায্য পাবেন।
ভালো গতি ও অ্যাক্যুরেসি পেতে হলে আপনার বাহুর উচ্চতা কমিয়ে ফেলুন বা আপনার বোলিং অ্যাকশন শুধরে নিন।
৩. সামনের পায়ের বোলার হোন
আপনি যখন বল নিয়ে দৌড়ে যাবেন, তখন ক্রিজের কাছাকাছি এসে লাফ দেবেন। কিন্তু উচুঁতে লাফ দেয়ার পরিবর্তে আপনি দীর্ঘ লাফ দেয়ার চেষ্টা করুন। উঁচুতে লাফ দিলে আপনি মাটিতে নেমে আসার পর খুব দ্রুত বল ছুঁড়তে পারবেন না।
দীর্ঘ লাফ দিয়ে সামনের পায়ে ভর দিয়ে বোলিং করুন। এতে আপনার শরীরের ওজন পেছনের পা থেকে হ্রাস পেয়ে সামনের পায়ে চলে আসবে আর আপনি খুব জোরে বল ছুড়তে পারবেন।
পেছনের পায়ের বোলার হবেন না এবং পেছনের পায়ে ভর দিয়েও বোলিং করবেন না। আপনার শরীরের ওজন পেছনের পায়ে থাকলে আপনি বোলিং করার জন্য পর্যাপ্ত গতি পাবেন না।
৪. আপনার বোলিং রান-আপকে রেললাইনের সাথে তুলনা করুন
আপনাকে আপনার রান-আপ সোজা রাখতে হবে, একদম সোজা রেললাইনের মত। সোজা দৌড়ে এসে শরীরের ওজনকে সোজা অ্যাকশনের উপর রেখে সোজা বল ছুঁড়তে হবে।
সোজা লাইনে দৌড়ে এসে বোলিং করা বোলার অন্যান্য বোলার হতে বেশী গতিতে বোলিং করতে পারেন।
আপনার রান-আপ যদি সোজা ব্যাটসম্যানের বরাবর না হয়, তাহলে রান-আপ বদলে ফেলুন।
৫. যে হাত দিয়ে বোলিং করবেন না সেই হাত বেশি গুরুত্বপূর্ণ
অর্থ্যাৎ আপনি যে হাত দিয়ে বোলিং করবেন তার চাইতে যে হাত দিয়ে বোলিং করবেন না সেই হাত বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এই হাতটিকে খুব ভালভাবে ব্যবহার করুন।
যখন আপনি রান-আপে থাকবেন ও বল ছোড়ার পূর্বে হাত ঘোরাবেন, সেই সময়গুলোতে আপনি ঐ হাতটি (যে হাতে আপনি বোলিং করবেন না) উপর-নিচ করুন। অর্থ্যাৎ রান-আপের সময় হাতটি স্থির না রেখে উপর-নিচ করুন।
যদি আপনি এই কাজটি সঠিকভাবে করতে পারেন, তবে এই কাজটিই আপনাকে ভীষণভাবে সাহায্য করবে অনেক গতিতে বল করতে।
৬. কনুই ও বাহুকে আগে-পিছে করুন
যখন রান-আপ করতে থাকবেন, তখন বল হাতে নিয়ে আপনার কনুই ও বাহুকে সামনে-পিছনে করুন এবং আপনার অ্যাকশনে দৃঢ় থাকুন।
কনুই ও বাহুকে আশে-পাশে হেলিয়ে “মোমেন্টাম” বা গতিবেগকে নষ্ট করবেন না।
কনুই ও বাহুকে সোজা রেখে সামনে-পেছনে করুন। এতে গতিবেগ বাড়বে আর আপনিও বলের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে বল ছুড়তে পারবেন।
৭. বল ছোঁড়ার পূর্বে আপনার কাঁধ সম্পূর্ণ একবার ঘোরান
সরাসরি বল ছুঁড়ে না দিয়ে কাঁধ সম্পুর্ণ একবার ঘুরিয়ে বল ছোড়া উচিত। তাই আপনি এমন একটি অ্যাকশনে বোলিং করুন যাতে আপনি আপনার কাঁধ সম্পূর্ণ একবার ঘোরানোর সুযোগ পান।
এই অ্যাকশন আপনাকে কি সুবিধা দেবে তা আমি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চাই।
যখন একজন বোলার দারুণ আর প্রচন্ড গতির একটি ডেলিভারী ছুঁড়ে দেয় ব্যাটসম্যানের দিকে, তখন অধিকাংশ সময়ই ব্যাটসম্যান পরাস্ত হয় আর খানিকটা ভীত অবস্থায় বোলারের দিকে তাকায়।
তখন বোলারের পিঠে থাকা নামটি ব্যাটসম্যানের চোখে পড়ে।
বোলার যখন দারুণ একটি ডেলিভারী করে নিজের বোলিং মার্কে ফিরে যেতে থাকবে, তখন ব্যাটসম্যান বোলারের দিকে তাকালে বোলারের নামটিই কেবল ব্যাটসম্যানের চোখে পড়বে।
আপনি কাঁধ ঘুরিয়ে বোলিং করলে ব্যাটসম্যান আপনার পিঠে থাকা নামটির দিকে তাকাবে।
আর পিঠের নাম দেখেই ব্যাটসম্যান বিচলিত হবে-এমন বোলার হওয়া উচিত আপনার।
৮. চেষ্টা করুন বল ছাড়ার পূর্বে আপনার বুক যেন ব্যাটসম্যান বরাবর সোজা থাকে
মনে করুন, ব্যাটসম্যান আপনার বুক একটি বড় রশি দিয়ে টানছে। এই বাক্যটা আপনাকে বোঝানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে যাতে আপনি ভালভাবে বুঝতে পারেন যে বোলিং করার সময় আপনার বুক কিভাবে থাকবে।
আপনি রান-আপ নিয়ে ক্রিজে ঢুকে বল ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে আপনার বুক সোজা ব্যাটসম্যান বরাবর করে ফেলুন। এটি আপনাকে আপনার বাহুতে টান এবং বলে গতি বাড়াবে।
চেষ্টা করবেন বুকের মত নিজের নাকও বোলারের মুখোমুখী রাখতে।
৯. যে হাত দিয়ে বোলিং করবেন না ঐ হাতকে খুব বেশি উপরে ওঠাবেন না
বোলিংয়ের সময় আপনি যে হাতে বল করবেন না, ঐ হাতকে উপরে ওঠালে আপনার রান-আপের গতি কমে যাবে। আপনি গতিবেগ হারাবেন এবং শেষপর্যন্ত একটা দারুণ ডেলিভারী করার সুযোগ হারাবেন।
মনে রাখবেন, আপনি সামনে এগিয়ে যেতে বোলিং করছেন, পিছিয়ে যেতে নয়।
১০. রান-আপ শেষ করে বুক ও নাক সামনে রেখে হালকা ঝুঁকে বোলিং করুন
সর্বশেষ ধাপ হল রান-আপ শেষ করে বুক ও নাক রেখে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে বল করা। অর্থাৎ সামনে রেখে হালকা ঝুঁকে বোলিং করুন যাতে আপনি আপনার বোলিং হিপের কাছাকাছি থেকে আপনার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ গতিতে বল করতে পারেন।
এই ছিল বিখ্যাত বোলারদের দেয়া ১০ টি ফাস্ট বোলিং টিপস। একজন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আপনার কাছে এই ছোট ছোট টিপসগুলো ভাল লাগলে শেয়ার করতে পারেন বন্ধুদের মাঝে।
Leave a Reply