স্টার্ট আপ কোম্পানি খোলার ব্যাপারটি ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে। আপনিও যদি স্টার্ট আপ খোলার কথা ভেবে থাকেন বা কিছুদিন হল খুলেছেন, এমন হয়ে থাকেন তবে নিঃসন্দেহে আপনার এই মূহুর্তে একজন প্রোজেক্ট ম্যানেজার দরকার। আবার নতুন স্টার্ট আপ বলে হয়তো এই মুহুর্তে একজন প্রোজেক্ট ম্যানেজার এফোর্ডও করতে পারছেন না। এমন যদি হয়ে থাকে আপনার অবস্থা, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে ৮টি ফ্রি প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার।
ফ্রি প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার
শুধু স্টার্ট আপই নয়, ছোট থেকে বড় যে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন প্রোজেক্টের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পণা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, সময় এবং শিডিউল ম্যানেজ করা, সব কর্মকর্তা-কর্মচারির সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করণ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংরক্ষণসহ বহু ধরণের বিষয় ঠিক মতো ম্যানেজমেন্ট করতে হয়। যা অনেক সময়ই বেশ জটিল এবং কষ্টসাধ্য কাজ।
তবে চিন্তার কিছু নেই, এ সকল জটিল এবং সময় সাপেক্ষ কাজগুলো আপনি নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারেন এখানকার যে কোন প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের ওপর। না, এর জন্য আপনাকে টাকা গুণতে হচ্ছে না, সবগুলোই ফ্রি আর ওপেন সোর্স।
৮. টাইগা (Taiga.io)
আপনি যদি এজাইল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতিতে আপনার প্রোজেক্টটি ম্যানেজ করতে চান, তাহলে টাইগা খুবই ভাল একটি অপশন। এজাইল হল এমন একটি প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যেখানে ক্লাইন্টকে ডেভেলপমেন্ট টিমের একটি পার্ট বানিয়ে সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হয়। ব্যাপারটা আসলে অনেক বিস্তারিত একটি বিষয়। যারা জানেন না, তাদের জন্য হয়তো সামনের কোন একদিন এর উপর একটি আর্টিকেল লিখব।
যাই হোক, মাত্র কয়েকদিন আগেও টাইগা কিন্তু একটি আন্ডারগ্রাউন্ড প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল ছিল, যা এখন পূর্ণাঙ্গ প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে পরিণত হয়েছে। একাধিক মোডের এই সফটওয়্যারটি দিয়ে আপনি ইউজার স্টোরি, ব্যাকলগ-সহ এজাইল প্রোসেসের জন্য যে-সব বিষয় ম্যানেজ করতে হয় তার সবগুলোই ম্যানেজ করতে পারবেন।
এই সফটওয়্যারটি প্রো ভার্সণটি পূর্নাঙ্গ হলেও, এর ফ্রি ভার্শনেও আপনি সবগুলো প্রো ফিচারই ব্যবহার করতে পারবেন। এরা কোন ফিচারই প্রো ভার্শনের জন্য রেস্ট্রিক্টেড করেনি। বরং এর সঙ্গে পাবেন এমন কিছু সুবিধা যা অন্যান্য এজাইল সফটওয়্যারগুলোতে কিন্তু পাবেন না। যেমনঃ ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেন আপনি এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে।
অবশ্য বেশ কিছু লিমিটেশনও আছে এই সফটওয়্যারের। একই সময়ে আপনি একাধিক প্রাইভেট প্রোজেক্ট ম্যানেজ করতে পারবেন না সফটওয়্যারটি দিয়ে। বেটা ভার্শনে থাকার কারণে এদের সার্ভারও কিছুটা স্লো। আর এদের ইউজার ইন্টারফেস নিয়েও অনেক ইউজার নেগেটিভ রিভিউ দিয়েছেন। তবে, আশা করা যায়, মূল ভার্শনে সফলতার সাথে এই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে টাইগা।
৭. জোহো প্রোজেক্টস (Zoho Projects)
টাইগার মত জোহো প্রোজেক্টস সফটওয়্যারটিও আরেকটি আরেকটি ফিচারড্ সফটওয়্যার, যারা ফ্রি ভার্শনে ইউজারদের জন্য কোন ফিচার ব্যবহারে রেস্ট্রিকশন আরোপ করে না। ওয়াটারফল মডেলে সফটওয়্যার ডেভেলপ করার জন্য জোহো প্রোজেক্টস ইউজারের জন্য গ্যান্টচার্ট অপশনও রেখেছে যাতে করে ইউজাররা কমপ্লিকেটেড প্রোজেক্ট এবং মাইলস্টোনগুলোও সেট করতে পারে। এছাড়াও, আপনার টাস্কের রিপোর্ট লেখার কষ্ট কমাতে জোহো প্রোজেক্ট আপনাকে দিচ্ছে ৫০টি প্রি-মেড রিপোর্টিং টেমপ্লেট।
তবে, এর একটা বড় অসুবিধা হল এতে ফ্রি ইউজাররা মাত্র ১০ এমবি স্টোরেজ পাবেন। যদিও মাসে ২৫ ডলার দিয়ে আপনি আপনার ইউজার একাউন্ট আপগ্রেড করে ৫ থেকে ৩০ জিবি পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন। তবুও, ফ্রি ইউজারদের এই স্টোরেজ সমস্যাটার কারণে আমরা এই সফটওয়্যারটিকে লিস্টে একটু নিচের দিকেই রাখছি।
৬. গ্যান্ট প্রোজেক্ট (GanttProject)
গ্যান্ট প্রোজেক্ট আরেকটি অসাধারণ ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। মোটামোটি বলতে পারেন এমন কোন কাজ নেই যা গ্যান্ট প্রোজেক্ট করতে পারে না। গ্যান্টচার্ট এবং পার্টচার্ট তৈরি করে প্রোজেক্ট রিপোর্ট এইচটিএমএল এবং পিডিএফ ফরম্যাটে দেখানো থেকে শুরু করে, দ্রুত প্রোজেক্ট শিডিউল তৈরি করা, টাস্ক এসাইন করা, মাইলস্টোন সেট করা, ওয়ার্কফ্লো এর কোথায় সমস্যা তা বের করাসহ সবই করতে পারবেন এই সফটওয়্যারে।
তবে, এর একমাত্র অসুবিধা হল অসংখ্য ফিচার সমৃদ্ধ বেশ এডভান্স একটি সফটওয়্যার হওয়ায়, নতুন ইউজারদের জন্য এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করাটা বেশ কঠিন হবে।
৫. মেইস্টার টাস্ক (Meister Task):
প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য মেইস্টার টাস্ক খুবই ভাল একটি সফটওয়্যার। এতে আপনার প্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছুই পাবেন। আনলিমিটেড ইউজার, আনলিমিটেড স্টোরেজ, টাইম ট্র্যাকিং, ইস্যু ট্র্যাকিংসহ সব ইম্পরটেন্ট ফিচারই পাবেন মেইস্টার টাস্কে। এর ইউজার ইন্টারফেসও যথেষ্ট সুন্দর আর ব্যবহার করাও বেশ সহজ। আর আপনি এর মাধ্যমে গিটহাব, ড্রপবক্স, গুগোল ড্রাইভ, জেন্ডডেস্কের মধ্যে যেকোন দুইটির সাথে আপনার মেইস্টার টাস্ক একাউন্ট ইন্টিগ্রেট করতে পারবেন।
অবশ্য এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনি গ্যান্টচার্ট, সিসিপিএম (critical chain project management) ফিচারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না।
৪. রাইক (Wrike):
রাইক সফটওয়্যারটা প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আরেকটা অসাধারণ সফটওয়্যার। এতে ফ্রি ইউজারদের জন্য ৫জিবি ফ্রি স্টোরেজ দেয়া হয়। এই সফটওয়্যারে আপনি আপনার রাইক একাউন্টটি গুগোল ড্রাইভ, বক্স, আইক্যাল সহ আরও অনেক সাইটের সঙ্গে ইন্টিগ্রেট করতে পারবেন।
আপনার টিম যদি ছোট হয়, তাহলে রাইক সত্যি একটি অসাধারণ প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। এতে টাস্ক ম্যানাজমেন্টের ইম্পরটেন্ট সব সুযোগ সুবিধা তো পাবেনই। এছাড়াও, বিভিন্ন একাউন্টে ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে আপনি আপনার স্টোরেজও বাড়িয়ে নিতে পারবেন। আর এক্সট্রা ফিচারের জন্য ৯.৮ ডলার প্রতি মাসে দিয়ে আপই আপনার একাউন্টটাও আপগ্রেড করে নিতে পারেন।
কিন্তু, রাইকের একটা বড় সমস্যা হল ফ্রি ইউজারের ক্ষেত্রে এটা সর্বোচ্চ মাত্র ৫জন ইউজার সাপোর্ট করবে। তাছাড়া, আপনি আপগ্রেড করা ছাড়া গ্যান্টচার্ট, টাইম ট্র্যাকিং, রিয়াল টাইম রিপোর্ট ইত্যাদি সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না।
৩. আসানা (Asana)
আসানা একটি অসাধারণ জনপ্রিয় প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। প্রায় দেড় লাখ ইউজারের এই সফটওয়্যারটির ক্যাপটেরা রেটিং ৪.৫/৫। এই স্ট্যাটিকস থেকেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে আপনার প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আপনি চোখ বন্ধ করে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন।
ডাসটিন মস্কোভিচ নামে ফেসবুকের একজন কো ফাউন্ডার ডিজাইন করেছেন এই সফটওয়্যারটি। আপনার টিম যদি খুব বেশি বড় না হয় আর আপনার টিমের জন্য রিয়াল টাইম ইন্টারাকশনের দরকার হয়, তবে এই সফটওয়্যারটি আপনার জন্যই ডিজাইন করা। আসানার ফ্রি ভার্শনেও এটি ১৫জন ইউজারকে সাপোর্ট করে। এটা দিয়ে আপনি আপনার টিমের অন্যদের জন্য গোল সেট করা, টাইম ট্র্যাক করা, তাদের কাজের প্রায়োরিটি সেট করে দেয়া, কতটুকু কাজ করেছে তার আপডেট রাখাসহ সবই করতে পারবেন। আর গত বছর এরা নিজেদের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও লঞ্চ করেছে।
তবে, এটা আপনি অফলাইনে ব্যবহার করতে পারবেন না। আর এর আরেকটা সমস্যা হল, এদের কাস্টমার সাপোর্ট নিয়ে ইউজারদের কমপ্লেইন আছে।
২. ব্রিটিক্স ২৪ (Britix 24)
ব্রিটিক্স ২৪ এর ফ্রি ভার্শনে আপনি পাবেন আনলিমিটেড ইউজার সাপোর্ট। আর স্টোরেজও পাবেন ৫জিবি পর্যন্ত। মাসিক ৩৯ ডলার খরচে আপনি আরও বাড়িয়ে নিতে পারবেন এর স্টোরেজ।
তাছাড়াও আপনি কি ওদের ক্লাউড স্টোরেক ব্যবহার করবেন, না নিজের সেলফ হোস্টেড স্টোরেজ ব্যবহার করবেন তাও আপনার ইচ্ছা। আর এছাড়াও গ্যান্ট চার্ট তৈরি করা, টাইম ট্র্যাক করা, আপনার এমপ্লয়ীদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করাসহ আরও অনেক সুবিধা পাবেন আপনি ব্রিটিক্স ২৪-এ।
প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ছাড়াও ড্রপবক্সের অল্টারনেটিভ হিসেবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন একে। ফ্রি ভার্শনেও এর ৫জিবি স্টোরেজে ডাটা সেইভ এবং সহজে তা শেয়ার করার সুযোগ পাবেন আপনি।
আর অসুবিধা বলতেও এর অসংখ্য ফাংশনালিটির জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে কিছুটা বেগ পেতে হবে আপনাকে এটা ম্যানেজ করতে। যদি ভেবে থাকেন এত কিছুর পরেও কেন এটি ১ নাম্বার নয়, তবে চলুন আমরা এক নাম্বার সফটয়ারটিকেই দেখে নেই।
১. ফ্রিডক্যাম্প (Freedcamp)
ফ্রিডক্যাম্প এর ফ্রি ভার্শনেই আপনাকে দিচ্ছে আনলিমিটেড ইউজার, আনলিমিটেড প্রোজেক্ট, আনলিমিটেড স্টোরেজ, অসাধারণ ইউআই সম্পন্ন অসংখ্য ফাংশনালিটিপূর্ণ একটি সফটওয়্যার।
তাছাড়াও এডমিন চাইলে ইউজারদের একসেস আর মোডিফাই পার্মিশন ক্লাইন্ট লেভেল পর্যন্ত নামাতে পারেন। ফ্রিডক্যাম্প দিয়ে টাইমট্র্যাকিং, ইনভয়েসিংসহ প্রায় সবই করতে পারবেন। আর এর ফ্রি ভার্শনে এতকিছু পাচ্ছেন বলেই এর নাম দেয়া হয়েছে ফ্রিডক্যাম্প।
ইউজারদের ব্যবহারের জন্যও বেশ সহজ এই সফটওয়্যারটি। প্রোজেক্টে কোন আপডেট হলেই ইউজারদেরকে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় ফ্রিডক্যাম্প। শুধু তাই নয়, এদের ওয়েব সাইট মোবাইলে ব্যবহারের জন্যও যথেষ্ট ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং এদের আইওএস এপও আছে।
তবে, সমালোচকরা বলেছেন, ফ্রিডক্যাম্পে গ্যান্টচার্ট, রিকারিং টাস্ক, টাস্ক ডিপেন্ডেন্সি সহ কিছু ফিচারের ঘাটতি রয়েছে। তবে, আশা করাই যায় যে, আগামী আপডেটে তারা এই ফিচারগুলো অ্যাড করে আরও ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তুলবেন।
তো, ফ্রি প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার নিয়ে আজকের মত এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে কোন সফটওয়্যারটি সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে বা আপনার স্টার্টআপের প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য কোনটি ব্যবহার করছেন তা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন আমাদেরকে। আর, পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতে করে আপনার মাধ্যমে আপনার পরিচিত কেউ স্টার্ট আপ বিজনেস খোলার প্ল্যান করলে সেও উপকৃত হবে। ধন্যবাদ।
Leave a Reply