এমন কোন বিখ্যাত কোম্পানি বা ব্রান্ড দেখেছেন যাদের কোন লোগো নেই? এরকম প্রশ্ন করাটা যদিও অবান্তর, কেননা লোগো ব্যতীত কখনও কোন ব্রান্ড কল্পনা করা যায় না। লোগো যেকোন কাস্টমারের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। আপনার পণ্য কিংবা সেবার প্রচার বহুগুণে বৃদ্ধি করতে পারে একটি লোগো। তাই, আপনাকে অবশ্যই প্রফেশনাল লোগো ডিজাইন করার চিন্তা করতে হবে, যেনতেন একটা লোগো হলেই হবে না।
পৃথিবীতে কোম্পানির যেমন অভাব নেই, তেমনি অভাব নেই লোগোর। তবে মানুষ সাধারণ লোগোর থেকে অসাধারণ লোগোর কথাই বেশী মনে রাখে। যেমন: গুগল, কোকাকোলা, এলজি, বিএমডব্লিউ, টয়োটা, অ্যাপেল ইত্যাদি।
পৃথিবীর বিখ্যাত কোম্পানির বিখ্যাত যত লোগো তার প্রত্যেকটি লোগোর ডিজাইন দেখে আপনার কাছে সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু এসব লোগো তৈরি করতে কোম্পানিগুলোর যেমন কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করতে হয়েছে, তেমনি ডিজাইনারদেরও মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে।
প্রফেশনাল লোগো ডিজাইন
লোগোর নাম শুনলে আপনার মনে হতে পারে শুধুমাত্র কিছু শেপ তথা বৃত্ত, ত্রিভুজ কিংবা বক্স তৈরি করলাম, তারপর কোম্পানির নাম দিয়ে দিলাম এবং অবশেষে সুন্দর একটি লোগো তৈরি করে ফেললাম। যদিও এইভাবে ডিজাইন করলেও লোগো হবে, তবে এই লোগোকে প্রপেশনাল লোগো বলা যাবে না এবং এই লোগো মানুষের মনেও কোন জায়গা করে নিতে পারবে না।
তাই আজকে আমি প্রফেশনাল লোগো ডিজাইনের কিছু ধাপ নিয়ে আলোচনা করবো। তবে লোগো ডিজাইন করার আগে ৫টি বিষয় জানা উচিৎ যা পূর্বে হৈচৈ বাংলা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
১. লোগো ডিজাইনের পূর্বে পরিকল্পনা
লোগো ডিজাইন শুরু করার পূর্বে কিছু পরিকল্পণা করে নিলে একটি প্রপেশনাল লোগো তৈরির প্রাথমিক ধাপটা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। আসুন, জানি পরিকল্পণায় কী কী থাকা চাই-
উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করুন
লোগো ডিজাইনের পূর্বে প্রথমেই আপনি নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন:
- লোগো ডিজাইনের পরিষ্কার লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন।
- কাদের জন্য ডিজাইন করছেন সেটা নিশ্চিত করুন।
- কোম্পানির আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বি থাকলে তাদের কথা মাথায় রাখুন।
আপনি যদি কোন ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করে থাকেন, তবে ক্লায়েন্টের সাথে উপরের প্রশ্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করুন। তাদের ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য, তারা কি সরবারহ করে প্রভৃতি সম্পর্কে ক্লায়েন্টের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন। মনে রাখবেন, আপনি কি জন্য এবং কাদের জন্য লোগো ডিজাইন করছেন এটা নিশ্চিত হতে না পারলে কখনই ভাল লোগো ডিজাইন করতে পারবেন না।
ব্রান্ড আইডেন্টি নির্দিষ্ট করুন
প্রথমেই নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন যেমন:
- কেন ব্যবসা বা কোম্পানি শুরু করা হয়েছে?
- অন্যদের থেকে কোন দিক দিয়ে কোম্পানি সেরা?
- কি কারণে সেরা?
লোগো সবসময়ে একটি কোম্পানি বা ব্যবসায়ের ব্রান্ড আইডেন্টি। লোগো সবসময় কাস্টমারের সাথে মনস্তাত্ত্বিক যোগাযোগ করে। তাই আপনার মাথায় রাখতে হবে কি জন্য কোম্পানিটি সেরা এবং কেন এটি অন্যদের থেকে আলাদা?
লোগোর সম্পর্কে ধারণা নিন
লোগো ডিজাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন কাজ হলো লোগোর সম্পর্কে ধারণা নেয়া। লোগো ডিজাইন করতে হলে অবশ্যই আপনাকে এই কাজটি করতে হবে। তাই যেহেতু পূর্বে বলা হয়েছে কোম্পানি বা ব্যবসা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নিতে, তাই এবার সেই কোম্পানির মত অন্য কোম্পানির লোগোগুলো দেখুন।
যেমন ধরুন, আপনার কোম্পানি বা ব্যবসা একটি মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানি। তাই দেখুন অন্যান্য মোবাইল কোম্পানির লোগোর ডিজাইনগুলো কেমন। তারা কি ধরনের রং, কি ধরণের শেপ ব্যবহার করেছে, সেগুলোর দিকে নজর দিন।
স্কেচ করে নিন
অসাধারণ ডিজাইনের অন্যতম একটি কাজ হল স্কেচিং। ডিজাইন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে থাকলে এবার আপনরা মাথায় যেসব ডিজাইন কাজ করছে তা খাতায় নকশা তৈরি করে নিন। মনে রাখবেন ভাল ডিজাইনের সূচনা হয় খাতা, কলম আর পেন্সিলের মধ্য দিয়েই। কয়েকটা ছবি আঁকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। বরং আঁকতে থাকুন যতক্ষণ না আপনি ডিজাইনে সন্তুষ্ট হন। প্রয়োজনে আপনার স্কেচটিই আপনার ক্লাইন্টকে দেখান।
২. লোগো ডিজাইনের ধাপ
আপনার যদি একটি সুন্দর পরিকল্পণা হয়ে যায়, তবে এবার মনোযোগ দিন লোগো ডিজাইনের ধাপগুলোর প্রতি যেগুলো নিচে আলোচনা করা হল।
ডিজাইন স্টাইল নির্দিষ্ট করুন
লোগোর মধ্যে অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। ইতোমধ্যে হয়তো আপনি অনেক ডিজাইন খাতায় করেছেন। তবে এবার তার মধ্যে থেকে কাঙ্ক্ষিত ডিজাইনের প্রকারটি নির্বাচন করুন। লোগোর কয়েকটি জনপ্রিয় স্টাইল:
ক্লাসিক: ক্লাসিক লোগোর নান্দনিকতা বেশী থাকে। কালার, রং, ফন্টের পরিমাণ তুলনামূলক বেশী।
ভিনটেগ: ভিনটেগ লোগোতে সাধারণত অতীত বর্তমানের মিশ্রণ থাকে। মাঝে মাঝে কিছুটা রাজকীয় ভাবও থাকে।
মিনিমাল: খুব সাধারণ ডিজাইন। রং কিংবা শেপের প্রভাব বেশী থাকে না। যেমনটা আমরা অ্যাপেল কিংবা নাইকের লোগোতে দেখে থাকি।
বিচিত্র বা হাতের লেখা: হাতের লিখে কিংবা ছবির সমন্বয়ে ডিজাইন করা লোগোকে বোঝায়।
টাইপোগ্রাফি: টাইপগ্রাফি ভিত্তিক লোগোর অন্যতম উদাহরণ হল অ্যামাজন ও স্যামসাং, এচপি ইত্যাদি।
সিম্বল এবং অ্যাবস্ট্রাক্ট: কিছু শেপের মিশ্রণে তৈরি লোগো সেটা হতে পারে বৃত্ত, ত্রিভুজ কিংবা আয়াতক্ষেত্র।
রং নির্দিষ্ট করুন
লোগো মানুষের নিকট আকর্ষণীয় করার জন্য অন্যতম কাজ হল সুন্দর রং নির্দিষ্ট করা। লোগোতে সাধারণত ২টার বেশী রং ব্যবহার না করাই উত্তম। মনে রাখতে হবে রং মানুষের মস্তিষ্কে বিরাট প্রভাব ফেলে। কোন রং কি প্রভাব ফেলে সেটা সম্পর্কে ধারণা রাখাটাও বেশ জরুরি।
সঠিক ফন্ট নির্বাচন করুন
লোগোর ফন্ট কি হবে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লোগোতে সাধারণত একাধিক ফন্ট ব্যবহার করা ঠিক না। এতে লোগোর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া স্ক্রিপ্ট ফন্ট, ডিসপ্লে ফন্ট, শেরিফ, সেনস-শেরিফ ফন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। তবে ভিনটেগ লোগোর ক্ষেত্রে এই বিধান শিথিল যোগ্য।
অন্যের মতামত নিন
আপনি যখন আপনার লোগো অন্যকে দেখাবেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই অনেক মতামত পাবেন। মতামত যত পাবেন, আপনার ডিজাইন ততো উন্নত করতে পারবেন। মতামত হিসাবে আপনি আপনার পরিবার, বন্ধু কিংবা আত্মীয় স্বজনকে নির্বাচন করতে পারেন।
৩. লোগো ডিজাইনের সময় যেসব বিষয় পরিহার করা উচিত
লোগো ডিজাইনের সময় আমাদের অনেকের বেশ কিছু বদ অভ্যাস রয়েছে যেগুলো পরিত্যাগ করা উচিত যথা:
- অতিরিক্ত রং তথা কালার যোগ করা যাবে না।
- খুব বেশী প্রয়োজন না হলে ড্রপ শেডো পরিহার করা উচিত।
- ক্লিপ আর্ট ব্যবহার করা যাবে না।
- অপ্রয়োজনীয় শব্দ যোগ করা যাবে না।
- রাস্টার ইমেজ ব্যবহার করা যাবে না।
- অতিরিক্ত ফন্ট ব্যবহার করা যাবে না।
- ডিজাইন জটিল তথা অনেক বেশী স্টাইল যোগ করা যাবে না।
শেষ কথা
আশা করি, লোগো ডিজাইন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে মূল কথা হল ভাল তথা প্রফেশনাল লোগো ডিজাইন করতে হলে আপনাকেও প্রপেশনাল হতে হবে। আর প্রফেশনাল হওয়ার জন্য নিয়মিত অন্যের ডিজাইন দেখতে হবে এবং নিজেই নিয়মিত ডিজাইন করতে হবে। যাদের গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার আগ্রহ আছে তারা ৫টি ওয়েবসাইট থেকে ফ্রি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন।
Amit Sarker says
গুড পোস্ট, লোগো ডিজাইন বিষয়ে অনেক ইনফরমেশন পেলাম।
ওমর ফারুক says
ধন্যবাদ, অমিত সরকার ভাই।
শহীদুজ্জামান সেতু says
আপনার লেখা পড়েই আমার লোগো ডিজাইনের হাতে খড়ি।
মিলন বেপারী says
অসংখ্য ধন্যবাদ হৈচৈ বাংলাকে লোগো সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য।