মানসিক চাপ যেন এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আমরা সেটিকে যতই অপছন্দ করি না কেন আর যতই মানসিক চাপ কমানোর উপায় নিয়ে ভাবিনা কেন, খুব বেশি ভালো ফলাফল অর্জণ করতে পারি না। কর্মক্ষেত্রে হোক আর ব্যক্তিগত জীবনেই হোক, প্রতিনিয়তই আমাদের কোন না কোন মানসিক চাপের সম্মুখীন হতে হয়।
কিন্তু এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে একদিকে যেমন আমাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে, অন্যদিকে তেমনি আমরা কাজের প্রতি এবং পরিবারের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলি।
মানসিক চাপ সব সময় আমাদের অস্বস্থিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়, একই সাথে এটি আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাতেও বাধা সৃষ্টি করতে থাকে। ফলে, এক সময় দেখা যায় যে আমাদের স্বাস্থের অবনতি ঘটতে থাকে এবং মাথা এবং হৃদপিন্ডের বিভিন্ন রোগে আমরা আক্রান্ত হয়ে পড়ি। প্রচন্ড মানসিক চাপে অনেকের স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
যদিও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ১২টি ব্রিলিয়ান্ট উপায় আছে, তবু মানসিক চাপ কমানোটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ, মানসিক চাপের ফলে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্কগুলোর মধ্যেও অবনতি ঘটতে থাকে। তাই, সুস্থ্য জীবন যাপনের জন্য এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই জরুরী।
মানসিক চাপ কমানোর উপায়
মানসিক চাপের কারণে অনেক ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আপনি যদি মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন এবং গাড়ী চালানোর সময়ও সেই সব বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকেন, তাহলে যে কোন সময় আপনি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবেন।
বলাই বাহুল্য যে, আমাদের উপর যদি মানসিক চাপ কম থাকে, তাহলে আমরা তুলনামূলকভাবে স্বস্তি এবং প্রফুল্ল মনে থাকি এবং এ ধরনের জীবনই আমাদের সবার কাম্য।
যদিও জীবনে চলার পথে কোন না কোন সময় এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেই হয় আর একেবারেই আমাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসবেনা, তাও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে এমন পরিস্থিতে আমাদের কি করণীয় চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।
গভীর নিশ্বাস নিন
এ ব্যাপারটি আমরা অনেকে জেনে থাকলেও বিশ্বাস খুব কমই করি। কিন্তু গবেষনায় প্রমাণিত যে, যদি মানসিক চাপের মুহুর্তে আপনি গভীর নিশ্বাস নিতে থাকেন, তাহলে আপনার মস্তিষ্ক শরীরে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে মানসিক চাপের দিকগুলো থেকে আপনার মনোযোগ দূরে সরিয়ে রাখে।
এমনকি এ ধরনের অবস্থায় আপনার যতটা বিচলিত থাকার কথা তার পরিবর্তে আপনি স্বাভাবিক অনুভব করতে শুরু করেন।
যদি অল্প কথায় বোঝাতে যাই, তাহলে বলতে হবে যে মানসিক চাপের মুহুর্তে গভীর নিশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে আপনি আসলে আপনার মস্তিষ্ককে বোকা বানাচ্ছেন যে আপনি আসলে স্বাভাবিক রয়েছেন। আর যখনই আপনি সেটা করতে সক্ষম হবেন, তখনই আপনার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক সময়ে আপনাকে প্রফুল্ল রাখতে যা করা প্রয়োজন সে সকল কার্যাদি সম্পাদনের মাধ্যমে কিছু সময়ের মধ্যেই আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে দূরে সরিয়ে নেবে।
ডিপ্রেশন স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সম্পূর্ণ অন্তরায়। ডিপ্রেশনের কারণে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। তাই, বেঁচে থাকার জন্যে ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে হবে। তাই, প্রথমেই জেনে নিতে হবে ডিপ্রেশনের আসল কারণ, প্রধান প্রধান লক্ষণ এবং ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির কার্যকরী উপায়।
পরিকল্পনা গ্রহণ করুন
আমাদের প্রত্যেকের চিন্তার কোন শেষ নেই। আমরা প্রথমে চিন্তা করি, তারপর চিন্তা করতে শুরু করি যে আমরা কতটুকু চিন্তা করছি, তারপর সেটা নিয়ে আবার চিন্তা করতে শুরু করি। মোটকথা আমরা কোন সমাধানের কথা না ভেবেই শুধুই চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকি।
জার্নাল অফ সাইকোথেরাপি এবং সাইকোসোমেটিকস এর এক গবেষণা অনুযায়ী, যখন আমরা কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করে মানসিক চাপের সম্মুখিন হই, তখন আমাদের সমস্যার দিকে খুব বেশি মনোযোগ না দিয়ে সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। সেই সাথে, কিভাবে সেটি সম্পাদন করতে হবে, তা নিয়ে ভাবা উচিৎ।
একবার যখন আপনি কোন সমাধান পাবেন এবং কিভাবে সেটি করবেন তা বুঝে যাবেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ওই বিষয়ে চিন্তা করা বন্ধ করে দেবে।
ঘটনার বাইরে অবস্থান করুন
মানসিক চাপ সব সময় আমাদের মনে অবাস্তব ধারণা আর ভীতির সৃষ্টি করতে থাকে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি এমন সব চিন্তা হয়, যার বাস্তবে ঘটার সম্ভাবণা আসলে খুবই কম। প্রিয়জনকে হারানোর ভয় বা চাকরি চলে যাওয়ার মত সব আজে বাজে চিন্তা মাথায় আসলে আমরা আসলে যেটা ঘটার নয় তা নিয়েই বেশি ভাবতে থাকি।
এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে ভাবতে হবে যে আপনি আসলে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি নন। বরং আপনার পরিচিত কেউ এ ধরনের সমস্যায় ভুগছে এবং সমাধানের জন্য আপনার নিকট এসেছে।
এবার বিষয়টির সমাধান নিয়ে কিছু সময় ভাবুন যে অন্য কাউকে এমন পরিস্থিতিতে আপনি কি পরামর্শ দিতেন আর সমাধান যাই হোক তা নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন।
ঘুম এবং বিশ্রামের দিকে নজর দিন
মানসিক চাপের মুখে আমাদের শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ক্লান্তি অনুভব করে। অনেকে চাপ নিয়ে ঘুমাতে পারেন না। কিন্তু এ সময় আপনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম ও বিশ্রাম নেয়া খুবই জরুরী। এর ফলে আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে চাপ থেকে বের হয়ে আসবে এবং আপনাকে সমাধানের দিকে মনোযোগ দিতে আগ্রহী করে তুলবে।
তাই যদি চাপে পড়েই যান, তাহলে সময় মতো খাওয়া দাওয়া করুন, তারপর একটু ঘুমানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। দেখবেন ঘুম থেকে ওঠার পরই আপনার শরীর ও মন পুনরায় যুদ্ধে জয়ী হবার জন্য প্রস্তুত। আর ঘুম না এলে করণীয় কিছু কাজ আছে, সেগুলো করুন।
মানসিক চাপ কমানোর উপায় নিয়ে আমরা যতই ভাবি না কেন, যদি বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ ঘটাতে না পারি, তাহলে আমাদের জীবন অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়বেই। আর এ ধরনের সমস্যাকে কখনোই ছোট করে দেখা উচিৎ নয়, কারণ এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। আর আপনি চিন্তা করলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাও কিন্তু নয়। অতএব জীবনে চলার পথে চাপ আসবেই, সেটির মোকাবেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
Leave a Reply