পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য মানুষের হাতে স্মার্টফোন আর তাদের অনেকেই ভুগছেন চার্জিং সমস্যায়। এ সমস্যা থেকে ফোন ব্যবহারকারীদের মুক্তি দিতে প্রযুক্তি প্রোভাইড করেছে নতুন ডিভাইস, যার নাম পাওয়ার ব্যাংক।
২০১০ সালে আমেরিকার দুই কলেজ বন্ধুর মাথায় আসে পাওয়ার ব্যাংকের আইডিয়া। একটি AA ব্যাটারি (ডাবল ব্যাটারি) ও একটি কন্ট্রোল সার্কিট দিয়ে পাওয়ার ব্যাংক তৈরির আইডিয়া মাথায় নিয়ে প্রায় এক বছর খেটে-খুটে ২০১১ সালে ইন্টারন্যাশনাল কনজিউমার ইলেকট্রিক শো’তে উপস্থাপন করে। এরপর ২০১২ সালের শেষের দিকেই বাজারে চলে আসে প্রথম পাওয়ার ব্যাংক।
পাওয়ার ব্যাংক কি?
পাওয়ার ব্যাংক এমন একটি পোর্টেবল ডিভাইস যা একটি স্পেশাল সার্কিটের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে চার্জ নিয়ে থাকে। আর প্রয়োজনের মুহূর্তে অন্যান্য ডিভাইসে পাওয়ার সাপ্লাই দিয়ে থাকে। ব্যাংকিং কনসেপ্ট থেকে এই ডিভাইসের নাম রাখা হয়েছে পাওয়ার ব্যাংক। ব্যাংকে যেমন বেশি টাকা রাখা যায়, আবার দরকার হলে তোলা যায়; পাওয়ার ব্যাংকেও বেশি পরিমাণে চার্জ নিয়ে রাখা যায় এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে ব্যবহার করা যায়। মূলত: পাওয়ার ব্যাংক একটি বহনযোগ্য চার্জার।
বিভিন্ন প্রয়োজনে বর্তমান সময়ে একটি বহনযোগ্য চার্জার সাথে রাখা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। এই বহনযোগ্য চার্জারগুলি পাওয়ার ব্যাংক চার্জার নামে পরিচিত। আকারে অনেক ছোট বলে এ ধরনের পাওয়ার ব্যাংক আপনি সব সময় সাথে রাখতে পারবেন আর এই পাওয়ার ব্যাংক চার্জারগুলি প্রয়োজনের মুহুর্তে আপনার মোবাইলসহ ইউএসবি চার্জযোগ্য যে কোন ডিভাইসকে কিছু সময়ের মধ্যেই নতুন চালিকা শক্তি প্রদান করতে পারে।
একটি পাওয়ার ব্যাংক চার্জার দ্বারা একাধিকবার কোন ডিভাইসকে চার্জ করা সম্ভব। সংখ্যাটি কত তা নির্ভর করে আপনার ডিভাইস এবং পাওয়ার ব্যাংক চার্জারের ক্ষমতার উপর। পাওয়ার ব্যাংক চার্জার এর ক্ষমতাকে সাধারণত মিলিঅ্যাম্পায়ার ঘন্টা (mAh) হিসাবে পরিমাপ করা হয়। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে একটি আইফোন ৭ এর ১৯৬০ মিলিঅ্যাম্পায়ার ঘন্টার ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারী থাকে, যেখানে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৮ রয়েছে ৩০০০ মিলিঅ্যাম্পায়ার ঘন্টার ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারী। সে হিসাব মতে ১০০০০ মিলিঅ্যাম্পায়ার ঘন্টার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাওয়ার ব্যাংক চার্জার একটি আইফোন ৭ কে ৩ বারেরও কিছু বেশি বার চার্জ করতে পারবে।
তবে পাওয়ার ব্যাংক চার্জার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার ফোনের ব্যাটারীর ক্ষমতা যেন কোনভাবেই আপনার পাওয়ার ব্যাংক চার্জার এর ক্ষমতার ৭০% এর বেশি না হয়।
কেন আপনার একটি পাওয়ার ব্যাংক প্রয়োজন?
এই ব্যস্ত জীবনে বিভিন্ন কারণে আপনার একটি পাওয়ার ব্যাংক চার্জার প্রয়োজন। যেমন-
স্মার্টফোনের ব্যাটারির সীমাবদ্ধতা: প্রায় সময়ই দেখা যায় যে আমাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোনগুলি সম্পূর্ণ এক দিন শেষ হবার আগেই তার ব্যাটারির চার্জ হারিয়ে ফেলে। এমন সময়ে আমাদের স্মার্টফোনটিকে পাওয়ার সেভার মোডে নেয়া, ফোনের ব্রাইটনেস পুরোপুরি কমিয়ে দেয়া বা ফোনটি যেন কোনভাবে চার্জে বসানোর মত কোন স্থানে পৌছানোর আগেই বন্ধ না হয়ে যায় সে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোন উপায়ই থাকে না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের হাজার প্রচেষ্টার পরেও কাঙ্খিত স্থানে পৌছানোর পূর্বেই আমাদের ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। এ রকম সময় পাওয়ার ব্যাংকই আপনার স্মার্টফোনে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের মূল সমাধান।
অরিজিনাল চার্জার অরিজিনাল নয়: ফোন কেনার সময়ই আমরা একটি চার্জার পেয়ে থাকি, যেটা অরিজিনাল অর্থাৎ ফোন কোম্পানীর নিজস্ব তৈরি চার্জার। কিন্তু আদতে অধিকাংশ ফোন কোম্পানিই নিজেরা চার্জার তৈরি করে না, বরং কোন থার্ড পার্টিকে দিয়ে তৈরি করিয়ে নেয়। ফলে, গুণগত মানের দিক থেকে সেগুলো খুব একটা ভাল হয় না। যার কারণে কয়েক মাস পরই দেখা যায় সেগুলো আগের মত সার্ভিস দিতে পারে না। দিন যেতে থাকে আর সেগুলো পাওয়ার হারাতে থাকে, তাই পাওয়ার ব্যাংকের প্রয়োজন।
ডুপ্লিকেট চার্জার দ্রুত নষ্ট হয়: অরিজিনাল চার্জার হারিয়ে ফেলা কিংবা নষ্ট হওয়ার পরে আমরা প্রায় অধিকাংশ ব্যবহারকারিই যেটা করে থাকি, সেটা হচ্ছে বাজার থেকে যেন তেন একটা চার্জার কিনে আনি। কিন্তু ভেবে দেখি না যেখানে অরিজিনাল চার্জারই ঠিক মতো সার্ভিস দিতে পারে না, সেখানে ডুপ্লিকেট চার্জার কিভাবে বেশি দিন টিকবে! অনেক সময় দেখা যায় ডুপ্লিকেট কিংবা অন্য ব্র্যান্ডের চার্জার দিয়ে চার্জ দিতে দিতে আমাদের সাধের ফোনটিই নষ্ট হতে শুরু করে। নষ্ট হওয়ার আগেই যদি পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করা শুরু করা যায়, তো সাধের ফোনটিকেও রক্ষা করা যায়।
দ্রুত চার্জ করার জন্য: দেয়ালে লাগানো প্লাগ আর মোবাইলের চার্জার দুইয়ে মিলে যে সময়ে একটি স্মার্টফোন চার্জ হয়, তার অনেক গুণ কম সময়ে চার্জ ফুল করে দেয় পাওয়ার ব্যাংক।
এক সঙ্গে অনেক ডিভাইস চার্জিং: পাওয়ার ব্যাংকের অন্যতম একটা বড় সুবিধা হচ্ছে, এক সঙ্গে আপনি স্মার্টফোনসহ অন্যান্য অনেক ডিভাইস চার্জ দিতে পারেন। ২ থেকে শুরু করে এখন ৬ সকেটের পাওয়ার ব্যাংক পাওয়া যায়, যার মানে এক সঙ্গে আপনি ৬টি ডিভাইস চার্জ দিতে পারবেন।
সব ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনই চার্জ দেয়া যায়: আপনি নোকিয়া বা স্যামসাং কিংবা যে কোন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনই ব্যবহার করুন না কেন, পাওয়ার ব্যাংক চার্জার দিয়ে আপনি অনয়াসেই চার্জ দিতে পারবেন সব ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন।
Leave a Reply