বিভিন্ন সময় কমবেশি সবার নাম্বার গোপণ রেখে এসএমএস করার প্রয়োজন হয় কিন্তু সঠিক পদ্ধতি না জানা থাকার কারণে অনেকে আশাহত হন। নাম্বার গোপণ রাখার অর্থ আপনি যাকে এসএমএস পাঠাবেন সে আপনার আসল নাম্বার না দেখে ভিন্ন নাম্বার দেখবে কিংবা নাম্বারের বদলে নাম দেখতে পাবে।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অথবা ব্যবসায়িক কাজে নাম্বার গোপন রেখে ম্যাসেজিং তথা এসএমএস করার প্রয়োজন হয়। অনেক সময় আবার মজা করার জন্যেও অনেকে নাম্বার গোপন রাখার পদ্ধতি খুঁজে থাকে। তাই আজকে নাম্বার গোপণ রাখার পদ্ধতি নিয়ে হাজির হলাম।
আজকের এই লেখা মূলত নাম্বার গোপন করে এসমএস পাঠানোর নিয়ম নিয়ে। সঠিকভাবে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনিও নাম্বার গোপণ রেখে এসএমএস পাঠাতে পারবেন। যেহেতু ভার্চুয়াল দুনিয়ায় গোপনীয়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই পরিচয় গোপন রেখে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করার পদ্ধতি জেনে নিতে ভুলবেন না।
নাম্বার গোপণ রেখে এসএমএস
নাম্বার গোপন রাখার উপায়
সত্যিকারের অর্থের নাম্বার গোপন রাখার জাদুকরী কোন উপায় নেই। কিন্তু আপনি কিছু কৌশল অবলম্বন করে, আপনার নিজের নাম্বার গোপন রেখে এসএমএস পাঠাতে পারেন। এক্ষেত্রে হতে পারে আপনি ভিন্ন কোন নাম্বার থেকে এসএমএস অথবা নাম্বারের জায়গায় ভিন্ন কোন নাম দিয়ে এসএমএস পাঠিয়েছেন।
নাম্বার গোপণ রেখে এসএমএস করার কার্যকরী পদ্ধতি মূলত দুটি। যথা:
- বাল্ক এসএমএস
- ভিন্ন নাম্বার থেকে এসএমএস
বাল্ক এসএমএস কি
বাল্ক এসএমএস কি এটা বোঝার জন্য সংজ্ঞা প্রদানের পূর্বে উদাহরণ দেয়াটা অধিক জরুরি। আপনি যদি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন, তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন Banglalink, GP, GP offer, BL Info, GP Info, Bkash, Rocket কিংবা ২২২২, ৪৪৪৪, ৩২২ ইত্যাদি নাম বা নাম্বার থেকে এসএমএস পেয়ে থাকেন।
কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে এই ধরনের আজগুবি নাম্বার থেকে কিংবা নাম থেকে কিভাবে এসএমএস আসে? আসলে এগুলোই বাল্ক এসএমএস। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ইন্টারনেট কিংবা অ্যাপ থেকে ইচ্ছামত নাম দিয়ে কিংবা নাম্বার দিয়ে কাউকে এসএমএস পাঠানোকে বাল্ক এসএমএস বলে।
বাল্ক এসএমএস ২ প্রকার। যথা:
- মাস্কিং: আপনার এসএমএস এর নাম্বারটি যদি আপনার কোম্পানির নাম বা অন্য কোন নাম হয়ে থাকে, তবে তাকে মাস্কিং বাল্ক এসএমএস বলে।
- নন মাস্কিং: আপনার এসএমএস এর নাম্বার যদি নাম না হয়ে বরং আপনার ইচ্ছামত কোন নাম্বার হয় যেমন ২২২২, ৩৩৩৩ তবে তাকে নন মাস্কিং বাল্ক এসএমএস বলে।
বাল্ক এসএমএসের প্রয়োজনীয়তা
বাল্ক এসএমএস পাঠিয়ে আপনার বন্ধু বান্ধবকে খুব সহজেই বোকা বানাতে পারবেন। যদিও বাল্ক এসএমএস পাঠানোর মৌলিক উদ্দেশ্য মানুষকে বোকা বানানো নয় বরং কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এই ধরনের এসএমএস পাঠানো হয়। এখন আপনার একটি প্রতিষ্ঠানের নাম যদি হয় হৈচৈ, তবে স্বাভাবিকভাবেই আপনি চাইবেন আপনার এই নামটি সকলের সাবকনশাস মাইন্ডে সংরক্ষিত থাকুক। এতে করে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ডিং এবং প্রসার হবে। আর বাল্ক এসএমএস আপনাকে এই এক ঢিলে দুই পাখি মারার কাজটি করে দিবে। অর্থাৎ এসএমএস পাঠানোর কাজও হয় পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের নামের ব্র্যান্ডিং ও বিজ্ঞাপন হয়ে যায়।
এছাড়া বাল্ক এসএমএস পাঠানোর দ্বারা প্রাপক সহজেই বুঝতে পারে এসএমএসটি কোথা থেকে এসেছে। ফলে আপনার এসএমএসটি প্রাপক গুরুত্ব সহকারে দেখে এবং উপেক্ষা করার সুযোগ থাকে না। এবার আশা করি আপনি উপরের লেখা পড়েই ইতোমধ্যে অনুধাবণ করতে পেরেছেন যে বাল্ব এসএমএস ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম নিয়ামক। এবার চলুন পাঠানোর নিয়ম কানুন জানা যাক।
বাল্ক এসএমএস পাঠানোর উপায়
ফ্রিতে বাল্ক এসএমএস পাঠানোর কোন উপায় নেই, ভবিষ্যতে থাকবে কিনা সে নিশ্চয়তা আপাতত আমি দিতে পারছি না। কিন্তু টাকা খরচ করলে আপনি অনায়াসে যেকোনো নাম্বারে বাল্ক এসএমএস পাঠাতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান বাল্ক এসএমএস পাঠানোর সুবিধা দিয়ে থাকে।
যখন আপনি কোন কোম্পানির নিকট বাল্ক এসএমএস এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করবেন তখন তারা আপনাকে একটি সি-প্যানেল প্রদান করবে। সি-প্যানেল থেকে আপনি আপনার ইচ্ছা মত একসাথে অনেকগুলো নাম্বারে বাল্ক এসএমএস পাঠাতে পারবেন। সুযোগ-সুবিধা ভেদে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন রেটে বাল্ক এসএমএস সেবা প্রদান করে থাকে। নিচে আমি বাংলাদেশের যেসব সিম অপারেটর বাল্ক এসএমএস প্রদান করে থাকে তাদের তালিকা দিচ্ছি। এখান থেকে আপনাদের ইচ্ছে মত অপারেটর নির্বাচন করে নিতে পারেন।
- গ্রামীণফোন – গ্রামীণফোন অপারেটরের বাল্ক এসএমএস সেবা ব্যবহার করলে আপনি একটা অ্যাকাউন্ট থেকে দশটার মত মাস্কিং আইডি তৈরি করতে পারবেন। একসাথে ৪৫৯ ক্যারেক্টারের প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তিকে এসএমএস পাঠানো যায়।
- এয়ারটেল – এয়ারটেলে আপনি মাস্কিং এবং নন মাস্কিং উভয়ভাবেই বাল্ক এসএমএস পাঠাতে পারবেন। একসাথে একের অধিক নাম্বারে এসএমএস পাঠানোর সহ শিডিউল নির্ধারণ করে বাল্ক এসএমএস পাঠানোর সুবিধা পাবেন।
- রবি – রবির বাল্ক এসএমএস সেবার নাম AdReach। এখানে আপনি ৩০ টির মত মাস্কিং করতে পারবেন। ইংরেজি এসএমএসের ক্ষেত্রে ১৬০ ক্যারেক্টার এবং বাংলার ক্ষেত্রে ৭০ ক্যারেক্টারের এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রিপেইডের ক্ষেত্রে প্রতি এসএমএসে নন মাস্কিং এ খরচ হবে ৩৫ পয়সা এবং মাস্কিং হবে ৪৫ পয়সা।
- বাংলালিংক – বাংলালিংকে আপনি মাস্কিং এবং নন মাস্কিং উভয় ধরনের এসএমএস পাঠাতে পারবেন। একসাথে অনেকগুলো নাম্বারে এবং এসএমএস গ্রহণের সুবিধা পাবেন। এর সি-প্যানেলের ইউজার ইন্টারফেস বেশ সহজ এবং গোছানো।
- টেলিটক – খুব সম্ভবত টেলিটকে আপনি পাবেন মাত্র ১৮ পয়সাতে বাল্ক এসএমএস পাঠানোর সুবিধা। তবে তাদের থেকে এসএমএস কেনার পূর্বে অবশ্যই যোগাযোগ করে নেবেন।
আমি উপরে কেবল বাংলাদেশ সিম অপারেটরদের নাম উল্লেখ করেছে। সিম অপারেটর ছাড়াও বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এসএমএসে সুবিধা দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনি একটু গুগলে সার্চ করলেই জানতে পারবেন।
ভিন্ন নাম্বার থেকে এসএমএস
আপনি যখন কাউকে এসএমএস পাঠাবেন, তখন তার নিকট আপনার নাম্বার না উঠে অন্য কোন নাম্বার উঠাকেই ভিন্ন নাম্বার থেকে এসএমএস করা বোঝায়। এই ধরনের সেবা ২ ধরনের হয়ে থাকে। যথা:
- পেইড এসএমএস: অনলাইনে আপনি অনেক ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ পাবেন যারা টাকার বিনিময় নাম্বার গোপন রেখে এসএমএস পাঠানোর সুবিধা দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনি গুগলে সার্চ করে পছন্দমতো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ দেখে নিতে পারেন।
- ফ্রি এসএমএস: ফ্রিতে নাম্বার গোপন রেখে এসএমএস করা যায়। যদিও পৃথিবীতে ফ্রি বলতে কিছু নেই, প্রত্যেক ফ্রি সেবার পিছনে উদ্দেশ্য থাকে। তাই ফ্রি সার্ভিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত। আমি নিচে কিছু ফ্রি এসএমএস পাঠানোর অ্যাপের লিঙ্ক দিচ্ছি, আপনারা নিজ দায়িত্বে এসব অ্যাপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
ফ্রি এসএমএস অ্যাপ
শেষ কথা
এই ছিল আজকে নাম্বার গোপণ রেখে এসএমএস করার কিছু পদ্ধতি। আশা করি এই লেখা আপনাকে ভবিষ্যতে সহায়তা করবে। আপনি যদি ইতোমধ্যে উপরের যে কোনো একটি কিংবা ভিন্ন কোন সেবা ব্যবহার করে থাকেন, তবে কমেন্ট করে আমাদের সাথে আপনার এসএমএস পাঠানোর পাঠানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন।
shafiqul islam says
নাম্বার গোপণ রেখে কারো নাম্বারে এসএমএস পাঠানোর এই পদ্ধতিটি জানানোর জন্যে হৈচৈ বাংলাকে ধন্যবাদ।
ওমর ফারুক says
আপনাকেও ধন্যবাদ
মীর জামিল says
আমার sms একটা যাওয়ার পর আর যায় না। কারণ কি?
Md rasel says
I. D. টা খুলে দেন…
জেসিকা জেসমিন says
ধন্যবাদ রাসেল ভাই। কিন্তু আমরা তো কারো হয়ে কোন কাজ করে দেই না। আমাদের কাজ হচ্ছে আপনাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করা, কাজটা কিন্তু আপনাদেরকেই করতে হবে।