প্রত্যেক মানুষ অন্তরে ধনী হওয়ার স্বপ্ন লালন করে। কিন্তু ধনী হওয়ার আবেগ বা ইচ্ছা শক্তি সবার থাকে না। কেননা ধনী হওয়ার জন্য প্রবল ইচ্ছা এবং আবেগের বিরল সংমিশ্রণ থাকতে হবে। ধনী হওয়ার উপায় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে, তবে সবাই একমত যে ধনী হওয়ার জন্যে চেষ্টা ও সাধনা করতে হবে।
গবেষকরা এখনো কোনো অলৌকিক পিল বা গ্যাজেট তৈরি করেনি, যা কোনও প্রচেষ্টা ছাড়াই আপনাকে ধনী করে তুলবে। আর এটা কখনো সম্ভব না। তাই মনে রাখবেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনাকে কঠোর সংগ্রাম করতে হবে।
আমরা প্রায়শই স্বপ্ন দেখি রাতারাতি মিলিওনেয়ার হয়ে যাওয়ার। কিন্তু ধনী হওয়াটা সময় সাপেক্ষ। আপনার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের সময়ের উপর নির্ভর করে।
তবে নিচের দেয়া ৭টি কৌশল আপনার যুবক বয়স থেকে শুরু করলে ৩০ বছরের মধ্যে এগুলো আপনার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
ধনী হওয়ার উপায়
১. নিজেকে বিনিয়োগ করুন
নিজেকে বিনিয়োগের জন্য তৈরি করুন। আপনার শখ বা পছন্দের দক্ষতাগুলোতে সেরাদের সেরা হতে চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি রান্না করতে পছন্দ করেন, তবে রান্নার উপরে কোর্স করতে থাকুন, নিজেকে এ বিষয়ের উপর দক্ষ করে তুলেন। পরবর্তীতে এই দক্ষতা প্রয়োগ করে অর্থ উপার্জন করা আপনার জন্যে সহায়ক হবে।
এটি পরে আপনি অর্থ উপার্জন করতে যে দক্ষতা ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। রান্নার কথা বললাম বলে শুধু রান্না নয়, আপনি যে বিষয়ে দক্ষ, যে বিষয়ে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে, সেগুলোর উপরে সেরাদের সেরা হওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রচুর পরিমাণে বই পড়ুন, কারণ বই জ্ঞান বৃদ্ধি করার দুর্দান্ত উপায়। প্রয়োজনে টিপস পেতে ধনীদের অনুপ্রেরণীয় গল্প পড়ুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস এবং ব্যায়াম করা শুরু করুন। ভাল স্বাস্থ্য মানসিক চাপ কমাবে এবং আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করার আশ্চর্যজনক সুবিধা প্রদান করবে। ধর্মীয় কাজে মনোযোগী হন, এতে আপনার আত্মা পরিশুদ্ধ হবে এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখবে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বন্ধ করুন
বিংশ শতাব্দীর পর, যে কারো জীবনে সফলতার জন্য অপ্রয়োজনীয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি ডিএক্টিভ করা উচিত। আপনার ফোন থেকে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন আনইন্সটল করুন। যদি একান্ত জরুরি মনে হয়, তবে তা আপনার কম্পিউটার থেকে ব্যবহার করুন এবং চেষ্টা করবেন অযথা সময় নষ্ট না করতে। শুনতে অবাক লাগলেও ধনী হওয়ার উপায় হিসেবে সময়ের সদ্ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সোশ্যাল মিডিয়া আপনার লক্ষ্যের ব্যাপারে মনোযোগ নষ্ট করবে। এটি আপনাকে সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সাথে নিরর্থক হ্যাঙ্গআউট বা চ্যাটাঙয়ের পিছনে অযথা সময় নষ্ট করাবে। আপনি জেনে অবাক হবেন স্বয়ং ফেসবুকের অনেক বড় বড় কর্মকর্তা ফেসবুক ব্যবহার করে না। কারণ এতে তাদের অযথা সময় নষ্ট হয় বলে মনে করেন তারা। ফেসবুক ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্যে এই ৭টি কারণ জানাই আপনার জন্যে যথেষ্ট।
৩. শো অফ করা বন্ধ করুন
ব্যয়বহুল ব্র্যান্ডের ব্যাগ, জুতা বা কাপড়ের পেছনে অর্থ খরচ করে আবার সেটা ফটো তুলো স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার কিংবা মানুষকে দেখানো বন্ধ করুন। এই নষ্ট আকর্ষণের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে, আপনি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল জিনিসের উপর অর্থ খরচ বন্ধ করতে পারবেন।
অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থের অপচয় বন্ধ করলে আপনার ব্যবসায় বা অন্য প্রয়োজনীয় খাতে বিনিয়োগের জন্য আরও বেশি অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন। ওয়ারেন বাফেট বা মার্ক জুকারবার্গের মতো কোটিপতি সম্পর্কে চিন্তা করুন। যারা সহজেই রোলস রয়েস বা দামী প্রাসাদ ক্রয়ের সামর্থ্য রাখে, কিন্তু তারা কোটিপতি হয়েও বিলাসিতার পেছনে টাকা নষ্ট করে না।
তাই আপনি বুদ্ধিমান এবং সফল হওয়ার ইচ্ছা থাকলে শো অফ আর বিলাসিতা বন্ধ করুন।
৪. আয়ের একাধিক পথ তৈরি করুন
অর্থ উপার্জন করতে একাধিক মাধ্যম বা পথ খুঁজুন। টমাস সি. কোরিয় মিলিওনেয়ারদের উপর পাঁচ বছরের গবেষণায় দেখেছেন, বেশির ভাগ মিলিওনেয়ারদের আয়ের একাধিক মাধ্যম রয়েছে। তিনি আরও প্রকাশ করেন যে তাদের ৬৫% লোকের ৩টি, ৪৫% এর ছিল ৪টি এবং ২৯% এর ৫টি বা তার বেশি আয়ের পথ ছিল।
এদের মধ্যে কেউ স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করেছে। তবে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং একটি উত্তম বিকল্প মাধ্যম। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অনলাইনে আয়ের অসংখ্য ওয়েবসাইট আছে। এর মাঝে সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে কাজ করতে পারেন। এটা আপনাকে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের জন্যে অর্থ জমাতে সহায়তা করবে।
৫. একই লক্ষ্য থাকা ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটান
ভিন্ন লক্ষ্যের মানুষের সাথে সময় কাটালে সবচয়ে বড় সমস্যা আপনি আপনার লক্ষ্য থেকে খুব তাড়াতাড়ি বিচ্যুত হবেন। কারণ, তাদের সময় ব্যয় আর আপনার সময় ব্যয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান।
তাই একই লক্ষ্যে থাকা ব্যক্তিদের সাথে সময় ব্যয় করুন এতে আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। এছাড়া তাদের থেকে পরামর্শ বা অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। এ-সব পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা আপনাকে ধনী হওয়ার উপায় বাতলে দেবে।
৬. বাজেট তৈরি করুন
আপনার কাঙ্ক্ষিত আয় এবং আপনার খরচের উপর ভিত্তি করে একটি বিস্তারিত বাজেট তৈরি করুন। আপনার নির্দিষ্ট এবং পরিবর্তনশীল খরচ সনাক্ত করুন। আপনার খরচ থেকে সব নিরর্থক অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিন।
আপনি সঠিক ট্র্যাকে আছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে আপনার বাজেটটি নিয়মিত পর্যালোচনা করুন। হঠাৎ করে আপনার খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে, এক্ষেত্রে আপনি আপনি পুনরায় বাজেট সংশোধন করুন।
৭. আলসেমি বন্ধ করুন
অলসতা আমাদের সবচেয়ে বড় বদ অভ্যাস। সময়ের কাজ সময়ে করাকে আমরা আলসেমির কারণে গুরুত্ব দেই না। আমরা মনে করি, অনেক সময় বাকি আছে তাই পরে এটা করতে পারি। তবে কিছু কিছু দিন এক সময় কয়েক সপ্তাহে বা মাসে পরিণত হতে থাকবে। এছাড়া সামনে কি রকম গুরুত্বপূর্ণ বা কঠিন কাজ আসবে সেটাও অজানা। সুতরাং আপনি যদি আলসেমি বন্ধ করতে না পারেন, তবে আপনাকে দেখতে হবে ব্যর্থতার মুখ।
শেষ কথা
ধনী হওয়ার উপায় হিসেবে আমি যে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছি, সেগুলো হচ্ছে যারা ধনী হয়েছেন, তাদের পরামর্শ। তবে, আপনি যদি একজন ধার্মিক মানুষ হয়ে থাকেন, নিশ্চয়ই জানেন এবং মানেন যে রিজিকের মালিক আল্লাহ্। আল্লাহ্ আপনার জন্যে যতটুকু রিজিকের ব্যবস্থা রেখেছেন, সেটা আপনি পাবেন। তবে, আপনি যদি এই ভেবে বসে থাকেন যে আল্লাহ্ তো আমার রিজিক দিবেনই, তাহলে ভুল করবেন।
কারণ, আল্লাহ্ কারো রিজিক বাসায় পাঠিয়ে দেন না। আপনার জন্যে নির্ধারিত রিজিকের জন্যে আপনাকে কার্যকরী পরিকল্পণা গ্রহণ করতে হবে। সেই অনুয়ায়ী কাজ করতে হবে, উদ্যোক্তা হতে হবে এবং সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যে নিজের মধ্যে এই ১০টি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply