দেশের বাজারে যখন আইফোন, সামস্যাং, নোকিয়া তাদের নতুন নতুন মডেল নিয়ে হাজির হচ্ছে, তখন এলজি ব্র্যান্ডও তাদের নতুন বেজেল লেস স্মার্টফোন এলজি জি৭ থিনকিউ নিয়ে এসেছে। তবে বলা বাহুল্য তাদের এই স্মার্টফোনটির দাম আকাশচুম্বী হবে। যারা ইতোমধ্যে এলজি ইউজার রয়েছেন তারা নিশ্চই জানেন, এলজি স্মার্টফোন কতটা মানসম্মত এবং এর পারফরমেন্সও কতটা ভালো। এই মাসের ভিতরেই দেশের বাজারে আসতে চলেছে এলজি জি৭ থিনকিউ স্মার্টফোনটি। যাইহোক, এখন এলজি জি৭ থিনকিউ স্মার্টফোনের স্পেসিফিকেশন, পারফরমেন্স এবং এই স্মার্টফোনের সুবিধা-অসুবিধা দেখে নেওয়া যাক।
এলজি জি৭ থিনকিউ এর স্পেসিফিকেশন
- অপারেটিং সিস্টেম : অ্যান্ড্রয়েড ৮.০ (ওরিও)
- ডিসপ্লে সাইজ : ৬.১ ইঞ্চি ফুল এইচডি ডিসপ্লে
- প্রসেসর : কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৪৪৫ অক্টা কোর
- ক্যামেরা : ১৬ মেগাপিক্সেল ডুয়েল ব্যাক ক্যামেরা এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা ৮ মেগাপিক্সেল
- র্যাম : ৪ জিবি
- স্টোরেজ : ৬৪ জিবি
- ব্যাটারি : ৩,০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার
- কালার : Moroccan Blue, Aurora Black, Platinum Gray এবং Raspberry Rose
ডিসপ্লে
এলজি জি৭ থিনকিউ ফোনটিতে ৬.১ ইঞ্চির ফুল এইচডি ৩১২০x১৪৪০ পিক্সেল রেজ্যুলেশনের প্রতি ইঞ্চিতে ৫৬৪ পিক্সেল ঘনত্বের এবং ১৬ এম কালারসের নজর কাড়া বেজেল লেস ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে। আইপিএস এলসিডি সুপার ব্রাইট ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে এবং ডিসপ্লেতে মূল বডির ৮২.৯০ শতাংশ স্ক্রিন রয়েছে যা সত্যিই ফোনটিকে অসাধারণ করে তুলেছে। রয়েছে মাল্টিটাচও, আর প্রটেকশন হিসেবে ডিসপ্লেতে কর্নিং গোরিলা গ্লাস ৫ ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রসেসর
এলজি জি৭ থিনকিউ স্মার্টফোনটিতে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৪৪৫ (২.৮ গিগাহার্জ) অক্টা কোর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। জিপিইউ হিসেবে দেওয়া হয়েছে অ্যাডরিনো ৬৩০ যারফলে ফোনটিতে উচ্চমানের গেম খেলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এই ফোনটি হার্ডকোর গেমারদের জন্যও বেশ ভালো হবে আশা করা যায়।
ক্যামেরা
ক্যামেরা হিসেবে ফোনটির রেয়ার বা ব্যাকে দেওয়া হয়েছে ডুয়েল ১৬ মেগাপিক্সেলের এফ ১.৬ এপেচার যুক্ত ক্যামেরা এবং সেলফি বা ফ্রন্টে দেওয়া হয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের এফ ১.৯ এপেচার যুক্ত ক্যামেরা। ব্যাক ক্যামেরর সাহায্যে ৪২৯০x২৮০০ পিক্সেলের ছবি তোলা সম্ভব হবে এবং ১০৮০পিক্সেল@৩০এফপিএস-এ ভিডিও করা সম্ভব হবে।
মূল আকর্ষণটি হলো এর ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা, যার সাহায্যে আপনি অনেকটা জায়গা জুড়ে ছবি তুলতে পারবেন। ফ্রন্ট ক্যামেরার সাহায্যে ৩২৬৪ x ২৪৪৮ পিক্সেলের ছবি তুলতে পারবেন এবং ১০৮০পিক্সেল@৩০এফপিএস-এর ভিডিও করতে পারবেন। ক্যামেরাতে Geo-tagging, Face detection, Touch Focus, Panorama, HDR মোড রয়েছে। ব্যাক এবং ফ্রন্ট উভয় ক্যামেরাই বেশ ভালোমানের পারফরমেন্স দিবে ডে-লাইটে এবং লো-লাইটে।
র্যাম এবং স্টোরেজ
জি৭ থিনকিউ স্মার্টফোনটিতে ৪ জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ পাবেন এবং মাইক্রোএসডি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ৪০০জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারবেন।
ব্যাটারি, কালার এবং দাম
ফোনটিতে ৩,০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের নন-রিমুভেবল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ফাস্ট ইউএসবি চার্জিং ৩.০ এবং ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জিংও দেওয়া হয়েছে। স্মার্টফোনটি Moroccan Blue, Aurora Black, Platinum Gray এবং Raspberry Rose এই চারটি কালারে পাওয়া যাবে। ফোনটির দাম পড়বে ৭৪,৯৯০-৭৮,৯৯০ টাকার মত।
সাউন্ড
এলজি জি৭ থিনকিউ ফোনটির সাউন্ড কোয়ালিটি অসাধারণ। ফোনটিতে বুমবক্স স্পিকার দেওয়া হয়েছে, ফলে আপনি বেশ ক্লিয়ার এবং লাউড ভয়েস শুনতে পারবেন। DTX 3D Audio দেওয়ার ফলে আপনি মুভি দেখার সময় দারুনভাবে সাউন্ড উপভোগ করতে পারবেন।
জি৭ থিনকিউ এর পারফরমেন্স
ফোনটির ওভারঅল পারফরমেন্সই যথেষ্ট ভালো। স্ন্যাপড্রাগন ৪৪৫ প্রসেসর এবং অ্যাডরিনো ৬৩০ জিপিইউয়ের সাথে ৪ জিবি র্যামের ফলে বড় ধরনের গেম খেলার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ল্যাগের দেখা পাওয়া যায়নি। ডুয়েল ১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার সাহায্যে বেশ ভালো মানের এবং নিখুত ছবি তোলা সম্ভব। সেলফি ক্যামেরাও যথেষ্ট ভালো এবং ৮ মেগাপিক্সের ক্যামেরা দিয়ে খুবই ভালো সেলফি তোলা সম্ভব। ব্যাক এবং ফ্রন্ট ক্যামেরায় নয়েজ একেবারে নেই বললেই চলে। তবে ব্যাটারি ব্যাকআপ খুব বেশি সন্তোষজনক নয়।
সুবিধা এবং অসুবিধা
এলজি জি৭ থিনকিউ ফোনটিতে সুপার ব্রাইট স্ক্রিন দেওয়া হয়েছে, যারফলে রোদের মধ্যেও স্ক্রিন দেখতে কোনোপ্রকার অসুবিধা হবে না। এই ফোনটিতে চাইলে আপনি Notch হাইড করে রাখতে পারবেন। ফোনটির বামপাশে ভোলিউম বাটনের নিচে একটি এক্সট্রা বাটন দেওয়া হয়েছে যেটি Google Assistant বাটন নামে পরিচিত।
ফোনটিতে সাউন্ড কোয়ালিটি যথেষ্ট ভালো এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টও যথেষ্ট ফাস্ট। ডিসপ্লেতে কর্নিং গোরিলা গ্লাস ৫ প্রটেকশনের ফলে ফোনটি চলার সময় হঠাৎ হাত থেকে পড়ে গেলেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না এবং ফোনটি আইপি ৬৮ ওয়াটার এন্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স।
ওভারঅল বিবেচনায় ফোনটিতে তেমন কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাটারি ৩,০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার হওয়াতে কিছুটা কম মনে হয়েছে। যদিও ফাস্ট চার্জিং দিয়ে সেই সমস্যাটি অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে।
এলজি জি৭ থিনকিউ এককথায় অসাধারণ একটি স্মার্টফোন। যারা বেশি বাজেটের ফোন কিনতে অভ্যস্ত অথবা যারা স্টাইলিশ এবং নিত্যনতুন স্মার্টফোন পছন্দ করেন তাদের তালিকায় জি৭ থিনকিউ অনায়াসেই জায়গা করে নিতে সক্ষম। আপনার কাছে ফোনটি কেমন লাগলো তা নিচের কমেন্ট বক্সে জানান।
Leave a Reply