নোট নেওয়ার জন্য একটা সময় মানুষ শুধুমাত্র কাগজের নোটবুক এবং পেনসিল বা কলম ব্যবহার করতো। কিন্তু এখনকার চিত্র ভিন্ন। হাতের স্মার্টফোনেই এখন নোট নেওয়ার কাজ সেরে ফেলা যায়। প্রয়োজন শুধু একটি ডিজিটাল নোটবুক অর্থাৎ একটি নোট টেকিং অ্যাপ স্মার্টফোনে ইন্সটল থাকা।
ডিজিটাল এবং সাধারণ কাগজের নোটবুক দুইটার কাজই আসলে এক অর্থাৎ নোট নেওয়া। তবে, কাজ এক হলেও যেহেতু মাধ্যম ভিন্ন, তাই মৌলিক কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে দুই ক্ষেত্রেই।
দুই ধরণেই এই নোটবুকের এসব সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো আজকে। লেখার শেষের দিকে জানার চেষ্টা করবো, টাইটেলে থাকা প্রশ্নটির উত্তর।
কাগজের নোটবুক বনাম ডিজিটাল নোটবুক
চলুন, তাহলে আর কথা না বড়িয়ে সরাসরি এদের সুবিধা অসুবিধাগুলো দেখে জানার চেষ্টা করি, কোনটি বেশি উপযোগী।
ফাংশনালিটি
ফাংশনালিটির দিক চিন্তা করলে অবশ্যই ডিজিটাল নোটবুক অর্থাৎ নোট টেকিং অ্যাপ এগিয়ে থাকবে সাধারণ কাগজের নোটবুক এর চেয়ে। কারণ এখানে শুধু লেখাই না, এর সাথে অডিও, ভিডিও কিংবা ছবি যুক্ত করার সুবিধাও থাকছে। চাইলে, মুখে বলে লেখার কাজটিও সেরে নেওয়া যায় এতে যেগুলো সাধারণত নোটবুকে একদম অসম্ভব।
সাধারণ নোটবুকে সব কিছুই লিখে রাখতে হয়। কোন ছবি সংযুক্ত করার প্রয়োজন হলে সেটা হয় হাতে আঁকতে হয় কিংবা প্রিন্ট করে এর সাথে যুক্ত করতে হয়।
অন্যদিকে হাতে একে ছবি যুক্ত করার সুবিধাটি রয়েছে ডিজিটাল নোটবুকেও। এমনকি শুধু হাতে লিখে নোট করে রাখা যায় এতে। অর্থাৎ, আপনি এখানে সাধারন নোটবুকের সব সুবিধা তো পাবেনই, সেই সাথে পাবেন আরো অনেক অনেক বেশি সুবিধা। আর এটা সাধারণ নোটবুকে কোনোভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়।
গ্রহণযোগ্যতা
ডিজিটাল নোটবুক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন একটি ডিজিটাল ডিভাইস। অর্থাৎ মোবাইল ফোন, কম্পিউটার কিংবা ট্যাবলেট ছাড়া আপনি ডিজিটাল নোটবুক ব্যবহার করতে পারবে না। এবং খুব সংগত কারণেই এখনও সবখানে এসব ডিভাইসের গ্রহণযোগ্যতা নেই।
যেমন, ধরা যাক ক্লাসের কথা। ক্লাসে বসে আপনি ডিজিটাল নোটবুক ব্যবহার করে নোট করতে পারবেন, এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু আপনি কাগজ-কলমে সে কাজটি খুব সহজেই সব জায়গাতেই বসে করতে পারবেন। কেউই আপনার দিকে বাঁকা চোখে তাকাবে না। সুতরাং এদিক দিয়ে কাগজের নোটবুকের গ্রহণযোগ্যতা ডিজিটাল নোটবুকের চেয়ে অনেক বেশি।
নিরাপত্তা
নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে অবশ্যই ডিজিটাল নোটবুক এবার এগিয়ে থাকবে। কারণ, এতে আপনি আপনার পছন্দমত পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে রাখতে পারবেন। আপনার অনুমতি ছাড়া কেউই এই নোটবুকের কোন কিছু পড়তে পারবে না।
কাগজের নোটবুকে এই সুবিধাটি নেই। যে কোন সময় যে কেউই এটি খুলে পড়তে পারবে। যদি না আপনি সাংকেতিক ভাষায় লেখেন! তবে সেটি আমরা কেউই সাধারণত করি না।
তাই, আপনি যদি ব্যক্তিগত কোন কিছু নোটগুলো ঠিক রাখতে পছন্দ করেন, তাহলে ডিজিটাল নোটবুক অবশ্যই এক্ষেত্রে আপনার জন্য উপযোগী হবে।
স্থায়িত্ব
স্থায়িত্বের দিক থেকে ডিজিটাল নোটবুক অবশ্যই কাগজের নোটবুকের চেয়ে অনেক বেশি স্থায়ী। বর্তমানে প্রায় সব নোট টেকিং অ্যাপই তাদের নিজস্ব সার্ভার কিংবা গুগল ড্রাইভে অথবা অন্য কোন ক্লাউড স্টোরেজে স্টোর করে রাখার সুবিধা দেয়।
যার ফলে, আপনার নোটটি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, দীর্ঘদিন চলার কথা চিন্তা করে বিলিয়ন ডলার খরচ করে এসব ক্লাউড সার্ভিস বানানো হয়েছে। তাছাড়া আপনি চাইলে আপনার নোটগুলো অফলাইনে ব্যাকআপ করে পেনড্রাইভ কিংবা মেমোরিতে অক্ষত অবস্থায় রেখে দিতে পারবেন শত শত বছর ধরে।
কাগজের নোটবুক এর ক্ষেত্রে এটি খুবই কঠিন একটা বিষয়। খুব যত্ন করে রেখে দিলেও কয়েকশো বছর পর তা নষ্ট হয়ে যায়।
সহজলভ্যতা
কাগজ না ডিজিটাল নোটবুক কোনটি বেশি সহজলভ্য এটা একটু তর্কের বিষয়। কারণ, ডিজিটাল নোটবুক আপনাকে বয়ে বেড়াতে হবে না। ক্লাউড এ নোটগুলো স্টোর হয়ে থাকার কারণে যখন খুশি যেখানে থেকে খুশি এটি অ্যাক্সেস করতে পারবেন। শেয়ারও করে নিতে পারবেন খুব সহজে অন্যদের সাথে। যেটি কাগজের নোটবুকে সম্ভব না।
তবে, ডিজিটাল নোটবুকের এই সহজলভ্যতার জন্য প্রয়োজন একটি ডিজিটাল ডিভাইসের। আর এখানেই তর্কের শুরু। আপনার হাতের কাছে কোন ডিজিটাল ডিভাইস না থাকলে কিংবা আপনার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলেই ডিজিটাল নোটবুকের সব বন্ধ।
অন্যদিকে, কাগজের নোটবুক চালানোর জন্য কোন চার্জের প্রয়োজন হয় না। একটুখানি আলো আর একটা কলম বা পেন্সিল থাকলেই আপনি যে কোনো জায়গায় কাগজের নোটবুক ব্যবহার করে নোট করতে পারবেন।
সময় এসেছে শিরোনামে থাকা প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার। এর সঠিক উত্তর হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণই আপনার পছন্দের উপর নির্ভরশীল।
কারণ, যারা স্মৃতিকাতর তারা সব সময় কাগজের নোটবুক এগিয়ে রাখবেন ডিজিটাল নোটবুকের চেয়ে। কেননা, এতে হাতের স্পর্শ থাকে, অনেক গল্প লুকিয়ে থাকে লেখার আড়ালে। তাছাড়া, কাগজে নোট করার জন্য প্রয়োজন নেই কোন বিদ্যুতের। যেখানে দুইদিন ফোন চার্জ না দিলে ডিজিটাল নোটবুক অচল, সেখানে কাগজের নোটবুকে এ সমস্যা হওয়ার কোনভাবেই সম্ভাবনা নেই।
অন্যদিকে ডিজিটাল নোটবুকের ফিচার, নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং যুগোপযোগীতা নিঃসন্দেহে বেশি। তাই, যুগের সাথে নিজেকে আরও গতিশীল করতে ডিজিটাল নোটবুকের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। ব্যবসায়িক কিংবা অফিশিয়াল কাজ আরও স্মার্টলি করতে পারবেন এটি ব্যবহার করে।
তো, সাধারণ ও ডিজিটাল নোটবুক নিয়ে এই ছিলো আজকের আলোচনা। এ দুইটির মধ্য কোনটা ব্যবহার করছেন কিংবা কোনটি ব্যবহার করবেন আপনি তা জিজ্ঞাসা বা মন্তব্যসহ জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্ট বক্সে।
ওমর ফারুক says
অনেক দিন পর, আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগলো।
মাকসুদ says
অনেক অনেক ধন্যবাদ ওমর ফারুক ভাই!
প্রায় তিনমাস যাবত পরীক্ষার যন্ত্রণায় সবকিছু থেকে দূরে ছিলাম। এবার যখন লেখা শুরু করেছিলাম, তখন পরীক্ষার মাঝে বিরতি চলছিলো। অবশেষে গতোকাল লিখিত পরীক্ষা সব শেষ হয়েছে।
এখন ইনশাআল্লাহ আবার নিয়মিত থাকতে পারবো! 🙂