ওয়ার্ডপ্রেস একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম যেখানে যে কেউ ফ্রিতে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। এমনকি, মাত্র ৫ মিনিটেই ওয়ার্ডপ্রেসে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলা যায়। তবে, নানা রকম সুবিধার পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইটের অসুবিধা রয়েছে অনেক, রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা।
ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইটের অসুবিধা
শখের বশে অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকেন, যেহেতু এখানে ফ্রিতে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। ডোমেইন কিনতে হয় না, হোস্টিং কিনতে হয় না, ডিজাইন করতে হয় না, যে কোন একটা ফ্রি থিম ইউজ করলেই হয়ে যায়।
তবে, আপনি যদি প্রপেশনাল্লি ব্লগিং করতে চান কিংবা কোন বিজনেস ওয়েবসাইট দাঁড় করাতে চান, কিছুতেই ফ্রি ইউজ করা আপনার ঠিক হবে না। কারণ, ফ্রি ওয়েবসাইট ব্লগিংয়ের জন্য কিংবা বিজনেসের জন্যে মোটেই ফলপ্রসূ নয়। বরং, ফ্রি ওয়েবসাইটের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চলুন, জেনে নেই ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইটের সীমাবদ্ধতাগুলো।
সাব-ডোমেইন ব্যবহার করতে হবে
ওয়ার্ডপ্রেসের ফ্রি ওয়েবসাইট হয় সাব-ডোমেইনে যা ব্লগিং এর ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের বিপরীত। সাব-ডোমেইন বলতে আপনি যে ডোমেইনই চুজ করুন না কেন, আপনার ডোমেইন নেমের পরই অটোমেটিক .wordpress.com চলে আসবে। যেমন, আপনার ওয়েবসাইটের নাম যদি হয় techtrainee, তাহলে আপনার ডোমেইন হবে techtrainee.wordpress.com।
এ ধরণের ডোমেইন নাম নিয়ে ব্লগিং কিংবা বিজনেস করতে গেলে নানা রকম অসুবিধার সন্মুখীণ হতে হয়। এমনকি, এ ধরণের নাম দেখতে কিংবা পড়তেও ভাল লাগে না।
গুগল অ্যাডসেন্স পাবেন না
সাব-ডোমেইন দিয়ে আপনি গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন না। গুগলের অ্যাডসেন্স গাইডলাইনে এটি স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এরপরও, আপনি যদি সাব-ডোমেইন দিয়ে অ্যাপ্লাই করেন, তবে অ্যাডসেন্স পাওয়া তো দূরের কথা, গুগলের পক্ষ থেকে কোন রিপ্লেও পাবেন না।
গুগল অ্যাডসেন্স পেতে হলে, আপনার ডোমেনটিকে টপ-লেবেল ডোমেইন হতে হবে। আগেই জেনেছেন, প্রি ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করলে টপ-লেবেল ডোমেইন পাবেন না, পাবেন সাব-ডোমেইন।
অ্যালেক্সা র্যাংক পাবেন না
আপনার ওয়েবসাইটে যত ভিজিটরই থাকুক না কেন, সাব-ডোমেইনের কারণে অ্যালেক্সা র্যাংক পাবেন না। কারণ, আমাজনের এই অ্যালেক্সা সার্ভিসটি সাব-ডোমেইনকে কাউন্ট করে না। আপনার কন্টেন্টের কোয়ালিটি, নিয়মিত এসইও, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটি এবং আরো নানা কার্যক্রমের ফলে আপনি হয়তো সাব-ডোমেইন নিয়েই প্রচুর ভিজিটর ধরে ফেলতে পারেন। কিন্তু অ্যালেক্সা র্যাংক না পাওয়ার কারণে অন্যান্য ব্লগার এবং ব্যবসায়ীরা আপনার ওয়েবসাইটকে গুরুত্বই দেবে না।
অন-পেজ এসইও অপটিমাইজেশন অনেক জটিল
ফ্রি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটকে সার্চ রেজাল্টে সাইট ভিজিবল করার জন্য অন-পেজ এসইও অপটিমাইজেশন প্রক্রিয়া অনেক জটিল। শুধু জটিলই নয়, প্রায় অসম্ভবই বলতে গেলে। অনেক পিএসপি এক্সপার্টও হিমশিম খেয়ে যান। অন-পেজ এসইও মূলত এইচটিএমএল কোড সোর্স যেখান থেকে আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ভিজিবল হবে।
কাস্টম থিম ব্যবহার করতে পারবেন না
ফ্রি ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে নিজস্ব ডিজাইন ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি, কোন কেনা থিমও আপলোড করতে পারবেন না। কাজেই, আপনার ওয়েবসাইটকে আপনার মনের মত করে সাজানোর আশা মন থেকে মুছে ফেলতে হবে।
ফ্রি ওয়েবসাইটের জন্য প্রি থিম ব্যবহার করতে হয় আর ফ্রি থিমের ডিজাইনগুলো হয় যাচ্ছে-তাই। ওয়ার্ডপ্রেসের পুরো থিম গ্যালারি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আপনার কন্টেন্টের সঙ্গে সম্পূর্ণ ম্যাচ করবে এমন একটা থিম পান কিনা সন্দেহ।
আবার বেশিরভাগ ফ্রি থিমই ওয়েল-অপটিমাইজড্ হয় না। কোডিং এবং লে-আউট ক্লিন থাকে না। আবার অনেক ফ্রি থিমে বিভিন্ন প্রকার বাগ থেকে যায় যা আপনার ওয়েবসাইটকে ডুবিয়ে দিতে পারে। যে কোন ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে থিম প্রোভাইডরের সাপোর্টও পাবেন না।
প্লাগইন ব্যবহার করতে পারবেন না
ওয়ার্ডপ্রসের প্রচুর ফাংশনালিটি জেনারেট করতে হয় প্লাগইন দিয়ে। যেমন, স্প্যাম কমেন্ট প্রোটেকশন, সাইটের সিকিউরিটি নিশ্চিত করুন, ব্যাকআপ রাখা, কন্টাক্ট ফর্ম তৈরি ইত্যাদি। ফ্রি ওয়েবসাইটে কোন প্লাগইন ইউজ করতে পারবেন না।
আপনার ওয়েবসাইটের মালিক আপনি নন
ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইট খুলতে পারবেন কিন্তু সে ওয়েবসাইটের মালিক আপনি নন, ওয়ার্ডপ্রেস কতৃপক্ষ। এমনকি, আপনার ওয়েবসাইটের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও আপনার হাতে থাকবে না।
ওয়ার্ডপ্রসের কিছু রুলস্ এন্ড রেগুলেশন রয়েছে। ভুলে যদি কোন রুল ভেঙ্গে ফেলেন, তাহলে যে কোন সময় ওয়ার্ডপ্রেস কতৃপক্ষ আপনার ওয়েবসাইটি বন্ধ করে দিতে পারে, আপনার অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে দিতে পারে।
শেষ কথা
ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইটের অসুবিধা সমূহ জানলেন। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, আপনাকেই ঠিক করতে হবে আপনি কি ফ্রি ইউজ করবেন না টাকা খরচ করবেন। যদি শুধু বন্ধু-বান্ধবদের দেখানোর জন্যে কিংবা নিজের শখ মেটানোর জন্যে ওয়েবসাইট চান, তবে ফ্রি ইউজ করাই আপনার জন্যে ভাল হবে।
আর যদি ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে চান, ফ্রি’র চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। যেহেতু আপনার ওয়েবসাইটকে ঘিরে আপনার একটা ভবিষ্যৎ প্ল্যান আছে, সেহেতু যত টাকাই খরচ হোক না কেন সেটাকে প্রপেশনাল রূপ দিন। টপ লেবেল ডোমেইন ইউজ করুন, হোস্টিং কিনুন, ভাল মানের একজন ডেভেলপারকে দিয়ে ডিজাইন করে নিন কিংবা একটি প্রিমিয়াম থিম কিনুন। প্রয়োজনীয় প্লাগইন এবং টুলগুলোও কিনুন, পুরোপুরি পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্লগিং করুন।
Leave a Reply