বিয়ের জন্য জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীবনের একটি সময়ে প্রতিটি মানুষকেই কারো না কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। বিয়ের মাধ্যমে দুইজন মানুষ সারাজীবন একসাথে চলার প্রতিশ্রুতি নেয়। উপযুক্ত এবং সঠিক জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়া বিবাহিত জীবন সুখময় হওয়ার পূর্বশর্ত। এই সময়ে করা যে কোন ভুলের মাশুল আপনাকে সারাজীবন ভোগ করে যেতে হবে। সুতরাং, আপনাকে অবশ্যই এটি মাথায় রাখতে হবে যে এটিই আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যেখানে ভুল করার কোন সুযোগই নেই।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, উপযুক্ত জীবনসঙ্গী নির্বাচনের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি পাঠ্যক্রমের অর্ন্তভুক্ত হওয়া উচিৎ। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষা যেহেতু আমরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাভ করে থাকি, তাই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি কিভাবে সঠিকভাবে নিতে হবে, তার হাতেখড়িও বিদ্যালয় থেকেই হওয়া উচিত।
সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচন
আমাদের দেশে বেশিরভাগ বিয়ে পরিবারের ইচ্ছাতেই হয়। পাশাপাশি নিজে পছন্দ করে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে নেওয়ার সংখ্যাটাও কম নয়। একদিকে ব্যক্তিগত পছন্দের ক্ষেত্রে যেমন সৌন্দর্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব রাখে, অপরদিকে পারিবারিক পছন্দের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও ক্যারিয়ার, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব লাভ করে। তবে নিজের ইচ্ছাতে হোক আর পারিবারিক পছন্দেই হোক উপযুক্ত জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখুন।
জীবনসঙ্গী নির্বাচনে সততা ও নির্মোহ
যাকে আপনি সারাজীবনের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, তার মাঝে কতটুকু সততা রয়েছে তা বুঝে নেয়ার প্রচেষ্টা অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। সঙ্গে যদি সৎ না হয়, জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অসততা ঢুকে পড়বে। আর জীবনকে ভীষণভাবে বিষময় করে তুলবে। সততার সবচেয়ে বড় মাপকাঠি হচ্ছে সত্য বলার মানসিকতা। সুতরাং, আপনার ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সঙ্গীর মধ্যে সত্য বলার প্রবণতা কিংবা মিথ্যা বলার অভ্যেশ রয়েছে কিনা তা অন্তত যাছাই করে দেখার চেষ্টা করুন।
অন্যদিকে, সঙ্গীর মাঝে মোহ বা লোভ রয়েছে কিনা সেটাও অনেক গুরুত্ব বহন করে। যেমন, আপনার সঙ্গীটি যদি নির্লোভ হয়, তবে আপনি একটি সহজ ও সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা পাবেন। কিন্তু সঙ্গীটি যদি অতি মাত্রায় লোভী হয়, তবে আপনাকে নানা রকম ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। লোভ প্রায়ই পারিবারিক অশান্তি তৈরিতে অনেক ভূমিকা রাখে। লোভী সঙ্গী সব সময় আপনার পরিবারের সম্পত্তির দিকে চেয়ে থাকবে। কে বাঁচলো, কে মরলো, কে কতটুকু ভাগে পাবে ইত্যাদি হিসেব নিকেশের মধ্যে পড়ে থাকবে। তাই, এমন একজন জীবনসঙ্গী নির্বাচন করুন, যার মাঝে লোভ-লালসা নেই।
জীবনসঙ্গী নির্বাচনে মিশুকতা
যার সাথে আপনি জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেবার স্বপ্ন দেখছেন, সেই মানুষটি যদি মিশুক না হয় তাহলে এটি আপনার জন্য অনেক বড় দুঃসংবাদ। আপনার জীবন সঙ্গীকে অবশ্যই সবার সাথে সহজভাবে মেলামেশা করার মত মন মানসিকতার অধিকারী বা অধিকারীনি হতে হবে। বিষয়টির গুরুত্ব দুই ভাবে বিবেচনা করা যায়। প্রথমত আপনার জীবনসঙ্গী যদি এমন না হয়, তবে কখনোই সে আপনার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনকে আপন করে নিতে পারবে না। আর দ্বিতীয়ত আপনি বা সে কোন কাজে একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করতে বা আলাপ আলোচনা করতে পারবেন না। উভয় ক্ষেত্রেই সম্পর্কে দুরত্বের সৃষ্টি হবে।
আবার এ-দিকেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনার সম্ভাব্য সঙ্গীটি বাইরে কী ধরণের মানুষের সঙ্গে মিশছে। তার বন্ধু-বান্ধব কারা, কেমন তারা, কতটুকু আড্ডা দেয়, কোথায় আড্ডা দেয়, আড্ডায় তারা আসলে কী করে, ইত্যাদি বিষয়ও আপনাকে জেনে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এগুলো জানা কিছুটা জটিল ও বিব্রতকর হবে, এটা সত্যি। তবে, জেনে নেয়া প্রয়োজন এ কারণে যে, এখনকার অনেক তরুণ-তরুণীই নানা রকম নেশায় আসক্ত, তাদের আড্ডার বিষয়ই থাকে কবে, কখন, কোথায়, কিভাবে নেশার আসরে বসা যায়। ভুলক্রমে যদি একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে আপনার বিয়ে হয়ে যায়, তবে নিশ্চিত থাকুন যে, আপনার জীবনটা আর জীবনের পর্যায়ে থাকবে না।
জীবনসঙ্গীর মানসিক অস্থিরতা
ধরুণ, বিয়ের আগে আপনারা দু’জন কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন। হতে পারে, সিএনজি কিংবা প্রাইভেট কারে। মাঝ পথে গিয়ে গাড়িটির চাকা পাংচার হয়ে গেল কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক ক্রুটির ফলে, গাড়িটি আর চলছে না। ড্রাইভার বেচারা এটা সেটা নেড়ে চেড়ে গাড়িটিকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। ভয়ে আপনাদের দিকে ঠিক মতো তাকাতে পারছে না। তার অবস্থা দেখে আপনার মায়া লাগছে। অথচ আপনার সঙ্গীটি ড্রাইভারটিকে নানা রকম বকাঝকা শুরু করেছে। গাড়ি বের করার আগে চাকা চেক করোনি কেন! গাড়ি চালানো শেখার আগে গাড়ি ঠিক করা শেখোনি কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি।
সংসার গোছানো, রান্না বান্না ইত্যাদি দায়িত্ব যখন আপনার হাতে আর আপনি যখন দায়িত্ব পালনে কোন ভুল করে ফেলবেন, এ সঙ্গীটি আপনাকে ‘এমন করেছো, অমোন করেছো কেন, এটা এমন হলো কেন, ওটা এমন হল না কেন’ ইত্যাদি নানা রকম কথা শুনাতে থাকবে। আর আপনি যদি পূরুষ সঙ্গী হয়ে থাকেন আর বাইরের সবকিছু সামলানোর দায়িত্ব যদি আপনার হাতে থাকে, তাহলে আপনার সঙ্গীটি প্রায়ই আপনাকে এ রকম কথা শুনাবে- এটা কিনেছো কেন, ওটা কেনোনি কেন, এটা দেখতে এ রকম কেন, তোমার কি চোখ নেই – ইত্যাদি ইত্যাদি।
সুতরাং, জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার আগে তার মানসিক অস্থিরতার বিষয়টিও আপনাকে বিবেচনা রাখতে হবে। সে যদি একটু বেশি অস্থির প্রকৃতির হয়, তবে তার সঙ্গে জীবন যাপন যুৎসই হবে না। এমন সঙ্গী বেছে নিন, যে কিনা যে কোন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।
জীবনসঙ্গীর পছন্দ ও মতের মিল
আপনি যদি জীবনসঙ্গী হিসেবে এমন কাউকে বেছে নেন যার পছন্দ এবং অপছন্দ অনেকটাই আপনার সাথে মিলে যায়, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই আপনাদের সুন্দর ভবিষ্যতের পক্ষে কাজ করবে। তার মানে এই নয় যে, আপনাদের দু’জনের সব পছন্দ অপছন্দই মিলতে হবে। বেশিরভাগ মিলে যাওয়াটাই ভালো।
কিনিক্যাল সাইকলোজিস্ট এবং রিলেশনশীপ এক্সপার্ট সীমা হিঙ্গোরানী বলেন, আপনি যখন কারো সাথে জীবন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখন আপনার অবশ্যই আপনাদের দু’জনের মধ্যকার সাদৃশ্যের দিকে লক্ষ্য করা উচিৎ। উদাহরণ স্বরুপ, আপনার যদি মুভি দেখা পছন্দ হয়, তবে সেই ব্যক্তির সাথে বসে মুভিটা দেখাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। তাহলে আপনার সঙ্গী ঐ মুভিটা ততটাই উপভোগ করবে, যতটা আপনি। আর সঙ্গীর যদি মুভি দেখা মোটেও পছন্দ না হয় কিংবা দুই জনের পছন্দ দুই ক্যাটেগরির মুভি হয়, তবে এক সঙ্গে টিভি দেখাটা মোটেও উপভোগ্য হবে না।
আমি এমন এক দম্পতিকে চিনি যাদের একজন খেলার পাগল, আরেকজন হিন্দি সিরিয়ালের। তো, এখন যেহেতু বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছে, যেদিন রাত আট খেলা থাকে, সেদিন দু’জনের মাঝে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। না, বড় ধরণের কোন ঝগড়া-ঝাটি নয়, যা হয় তা মনের ভেতরে। আর বাইরের থেকে ভেতরের অবস্থাটাই যে বেশি ভয়ংকর, সেটা আমরা সকলেই জানি। তাই, জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে গিয়ে এমন কাউকে পছন্দ করে ফেলবেন না, যার পছন্দ অপছন্দের সঙ্গে আপনার পছন্দ অপছন্দের বিস্তর ব্যবধান।
জীবনসঙ্গী নির্বাচনে ব্যক্তিত্ব
ব্যক্তিত্ব এমন একটা বিষয় যা কোন কিছু দিয়ে মাপা যায় না কিন্তু ব্যক্তিত্ব সহজেই বোঝা যায়। সঙ্গীর সঙ্গে কিছুদিন মেশার সুযোগ পেলেই আপনি নিজে নিজেই বুঝে ফেলবেন, সে কতটা ব্যক্তিত্বের অধিকারী। একটা মানুষের চিন্তার প্যাটার্ন, অনুভূতির সীমানা আর অন্যদের সঙ্গে আচরণের ধরণ দেখে তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে মোটামুটি একটা আইডিয়া পাওয়া যেতে পারে।
ব্যক্তিত্বের ব্যাপারটা অনেকটাই সাইকোলোজিক্যাল এবং প্রায় পুরোটাই মনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্যক্তি ভেদে ব্যক্তিত্বের ধরণও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই একই রকম, খাওয়া-দাওয়া, ঘুমোনো, কথা বলা, মানুষের সঙ্গে মানসিক লেনদেনসহ সব কাজেই আমরা একই রকমভাবে অভ্যস্থ। ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় তখনই, যখন একটা মানুষ একই কাজ অন্যদের থেকে ভিন্নভাবে করে থাকে। সুতরাং, এমন কাউকে বেছে নিন যে অন্যদের মত সাধারণ কাজই করে, তবে সেই কাজটি করে অসাধারণভাবে।
জীবনসঙ্গীর যোগ্যতা
যোগ্যতার মাপকাঠিতে প্রথমেই আসে শিক্ষা। সুতরাং, শিক্ষাগত যোগ্যতাকে গুরত্ব দেয়া স্বাভাবিকভাবেই বাঞ্চনীয়। তবে, এটা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই নয়, দেখতে হবে পারিবারিক, সামাজিক এবং মানসিক শিক্ষাও। আবার বেশি শিক্ষা, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রি খুঁজতে দিক হারানোর সম্ভাবণাটাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
আজকের সময়ে বেশিরভাগ মেয়ের বাবারাই সফল থেকে সফলতর ব্যক্তির সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন। কিন্তু দেখা যায় যে, অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন বা সফল ছেলে বা মেয়ের সাথে বিয়ে হলে তাদের মধ্যে নিজেদের যোগ্যতা বা সফলতা নিয়ে এক ধরনের অহংকারের সৃষ্টি হয়। একে অপরের মতকে গুরুত্ব দেয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসে এবং যতটা সম্ভব উভয় একে অপরের উপর নিজেদের সিদ্ধান্তকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাই অধিক যোগ্য বা সফল ব্যক্তির সন্ধান না করে নিজের যোগ্যতার সাথ সামঞ্জস্যপূর্ণ কাউকে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা অধিকতর সঠিক সিদ্ধান্ত।
সম্মান দেওয়ার মানসিকতা
আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো যে ব্যক্তি আপনাকে সম্মান করে না সে আপনাকে কখনো ভালোবাসতেও পারবে না। একে অপরের মূল্যায়নের মাধ্যমেই সংসার সুখের হয়ে ওঠে। তাই বিয়ের আগেই আপনি যাকে জীবনসঙ্গী করতে চলেছেন সে কেমন মন মানসিকতার অধিকারী এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তার মনোভাব কেমন তা অবশ্যই বিচার করে দেখুন।
বর্তমান সময়ে এমন অনেক ছেলে পাওয়া যাবে যারা মেয়েদের উপভোগ করার বস্তু ব্যতীত আর কিছুই ভাবে না, আবার এমন অনেক মেয়ে আছে যারা পুরুষ জাতিটাকেই সহ্য করতে পারে না। বলতে বাধ্য হচ্ছি এই দুই ধরনের মানুষ নির্বাচন করাটা চরম একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা:
জীবন চলার পথে, বিশেষ করে দু’জন মানুষের এক সাথে চলার ক্ষেত্রে, কারো না কারো কোন না কোন কাজে ভুল হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী কখনোই আপনার দোষ বা ভুলের জন্য আপনাকে দোষারোপ করবে না বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে আপনার পাশে এসে দাড়াবে। আপনাকে সহজভাবে ভুল আর সঠিকের পার্থক্য বুজানোর চেষ্টা করবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে আমরা শাস্তি ও তিরস্কার করতে বেশি পছন্দ করে থাকি। কিন্তু একটি সম্পর্কের মুধরতা এ ধরনের কার্যকলাপে সারাজীবনের মত শেষ হয়ে যেতে পারে।
জীবনসঙ্গী নির্বাচনে ইসলামের বিধান
আমাদের দেশের বাবা-মা, এমনকি তরুণ-তরুণীরা নিজেরাও বিয়ের আগে ক্যারিয়ার গড়া ও সফলতা পাওয়ার কথা ভাবেন। এদিকে পড়াশুনা শেষ করে ক্যারিয়ার গড়তে গড়তে বয়স বেড়ে যায় আর বেশি বয়সে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসে। অথচ, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, বুখারি ও মুসলিম শরীফে অন্তর্ভূক্ত রাসুল্লাহ (সা:) এর এক হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি একবার এক দল যুব সম্প্রদায়কে সামর্থ হলেই বিয়ে করার পরামর্শ দেন। তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে যে চোখের হেফাজত হয়, লজ্বাস্থানের অপ:ব্যবহার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং সর্বোপরি কবিরা গোনাহ্ থেকে বাঁচা যায়, তাও বুঝিয়ে বলেন।
মুসনাদে আহমাদ এ বর্ণিত আরেক হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল্লাহ্ (সা.) এমন মেয়েকে বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন যে কিনা সতী-সাধ্বী এবং দ্বীনের ব্যাপারে সহযোগী। এই সহযোগীতাকে তিনি সব ধরণের সম্পত্তি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলেছেন।
ইবনে মাজাহ তে বর্ণিত আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.) সকল মাতা-পিতাকে বলেছেন, তাদের ছেলে কিংবা মেয়েকে এমন কারো সাথে বিয়ে দিতে, যার দ্বীন ও চরিত্র মাতা-পিতাকে মুগ্ধ করে। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ও সম্পত্তি দেখে ছেলে-মেয়ে বিয়ে দেয়াকে তিনি দুনিয়াতে অশান্তি ও ফিতনা-ফ্যাসাদের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও, নামাজি, ধার্মিক, পর্দানশীল মেয়েদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি, ভাললাগা মানুষদের বিয়ে করার ক্ষেত্রেও কুরআন ও বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার আরো কিছু টিপস্
১. সঙ্গী নির্বাচনে বয়সের সামঞ্জস্য রাখার দিকে নজর দিন। খুব বেশি বয়সের পার্থক্য যেন না হয়, আবার একেবারে সমবয়সীও যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
২. বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিয়ে করার চিন্তা থেকে বিরত থাকুন, ফেন্ড শুধু ফ্রেন্ডই, সংসারে এলে ফ্রেন্ডও যাবে, লাইফও যাবে। বিয়ে না করলে, বেস্ট ফ্রেন্ড চিরকালই বেস্ট ফ্রেন্ড থাকবে, জীবনের নানা বাঁকে কাজে আসবে।
৩. কোনও ফ্রেন্ডের ভাই বা বোনকেও বিয়ে করার চিন্তা করবেন না। এক্ষেত্রেও বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবণা থাকবে। তবে ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতেই পারেন।
৪. আত্মীয়-স্বজনের মাঝ থেকে (চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই বা বোন) বিয়ের জন্যে কাউকে নির্বাচন না করাই ভাল।
৫. কাউকে পছন্দ হলেই তৎক্ষনাৎ বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন না। কিছুটা সময় নিন, উপরোক্ত বিষয়গুলো যাছাই বাছাই করুন, সম্ভাব্য সঙ্গীকে পুরোপুরি না হলেও, যতটা সম্ভব বোঝার চেস্টা করুন। বিয়ের আগে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করুন, তারপর, সবকিছু মিলিয়ে ভাল মনে হলে, বিয়ে করে ফেলুন।
সব কথার শেষ কথা হলো, জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এমন কাউকে বেছে নেয়া, যাকে আপনি সর্বোপরি বিশ্বাস করতে পারবেন। সন্দেহ প্রবণতা একটি সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। জীবনে যদি এমন কোন পরিস্থিতি আসে যে, আপনার সঙ্গীর কথায় বিশ্বাস করা আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ছে, তবুও তার বিপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস ধরে রাখুন। আর এ ধরনের সমস্যা এড়িয়ে চলতে এমন কাউকে বেছে নিন, যাকে আপনি আগে থেকেই বিশ্বাস করেন। নিশ্চিত থাকুন আপনি যদি এমন কাউকে বিয়ে করে ফেলেন, যাকে বিশ্বাস করা আপনার জন্য মোটেও সহজ নয়, তাহলে আপনি কখনোই আপনার বিবাহিত জীবনে সুখী হতে পারবেন না।
Leave a Reply