শিক্ষাজীবনে পড়াশোনা করার পাশাপাশি কাজ করার মাধ্যমে আয় করা একটি কার্যকরী সিদ্ধান্ত। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত আমাদের দেশেরও অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আবার অনেক শিক্ষার্থীই আছেন যারা তাদের অবসর সময় শুধুমাত্র ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং করেই কাটিয়ে দেন।
সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের চিন্তাধারার মধ্যেও পরির্বতণ এসেছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা তাদের অবসর সময়কে বৃথা অপচয় না করে অনলাইনে কাজ করে নিজেকে ও পরিবারকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করে তুলছেন।
আপনিও যদি পড়াশোনার সাথে অনলাইনে কাজ করার প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে চলুন জেনে নিই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে অনলাইনে আয় করার কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে অনলাইনে আয় করার উপায়
এর আগে আমরা এমন ৫টি চাকরির কথা বলেছিলাম যা ছাত্রাবস্তায় করা যায়, অর্থাৎ পড়াশুনার পাশাপাশি যেগুলো অনায়াসেই করা যায়। আমাদের অনেক পাঠকই লেখাটি থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং কেউ কেউ আরো কিছু সহজ উপায় জানতে চেয়েছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আজকের আয়োজন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অনলাইনে আয় করার সহজ উপায় খুঁজে দেয়া। তো চলুন, শুরু করি উপায়গুলো সম্পর্কে জানা।
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করা:
শিক্ষার্থীদের কাজের জন্য ইউটিউব আমার সর্বপ্রথম পছন্দ। এখানে কাজ করার জন্য অতিরিক্ত কোন বিষয় খুঁজে বের করার পরিবর্তে আপনি চাইলে আপনার শিক্ষাগত দক্ষতা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে পারেন। বাংলাদেশে শিক্ষাভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল ব্যাপকভাবে সমাদৃত, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো টেন মিনিট স্কুল নামক ইউটিউব চ্যানেল।
শুধু টেন মিনিট স্কুলই নয়, বর্তমানে বাংলাদেশে বহুসংখ্যক শিক্ষাভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল তৈরী হয়েছে যা শিক্ষামূলক বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করার মাধ্যমে একই সাথে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার পাশাপাশি নিজেরাও আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। শিক্ষাগত বিষয় ছাড়াও আপনার যদি অন্য কোন বিষয়ে দক্ষতা থাকে, তাহলে সেই বিষয়েও ইউটিউব চ্যানেল তৈরী করা যেতে পারে। যেমন, ইউটিউব ভিডিও তৈরির ১০টি আইডিয়া থেকে যে কোনটি নিয়ে কাজ করতে পারেন।
ফেসবুকে ভিডিও মনিটাইজ করা:
সম্প্রতি ফেসবুক বাংলাদেশের জন্য ভিডিও মনিটাইজিং ফিচার উন্মুক্ত করেছে। যেহেতু অন্যান্য প্লাটফর্মে কাজ করার চাইতে ফেসবুকে কাজ করা আমাদের সবার জন্যেই তুলনামূলকভাবে সহজ। তাই আপনি চাইলে ফেসবুকে পেজ তৈরী করে ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে অনলাইনে ইনকামের যাত্রা শুরু করতে পারেন।
বাংলাদেশ থেকে ফেসবুকে ভিডিও পোষ্ট করে ইনকাম করবেন যেভাবে তার বিস্তারিত পদ্ধতি আগে জেনে নিয়ে সঠিকভাবে কাজ করলে আপনার আয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত।
অনলাইন টিউশন:
আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই শিক্ষাজীবনে বাড়তি আয়ের জন্য টিউশনি করতে দেখা যায়। ইন্টারনেট বিপ্লবের এই যুগে এখনই সঠিক সময় আপনার শিক্ষাগত দক্ষতা এবং জ্ঞানকে অনলাইনে কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেট ভিত্তির টিউশন সার্ভিসের মাধ্যমে আয় করার।
একই সাথে আপনি চাইলে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলির পাশাপাশি সংগীত, শিল্পকলা, সোশ্যাল মিডিয়া, ফ্যাশন এবং অন্যান্য বিষয়েও অনলাইনে টিউশন সার্ভিস দিতে পারেন। অনলাইনে এ ধরনের সার্ভিস প্রদানের জন্য আপনি চাইলে www.wyzant.com অথবা Tutor.com এর মত ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন করতে পারেন। একই সাথে Skillshare.com এবং Udemy.com এর মত ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স তৈরীর মাধ্যমেও আয় করতে পারেন।
শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সেবা প্রদান করা:
আপনার মোবাইল, ল্যাপটপ আর ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের তাদের পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করার মাধ্যমে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। শিক্ষাজীবনে একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন, স্কলারশীপ অ্যাপ্লিকেশন, রিসার্চসহ বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে হয়।
আপনি চাইলে এসব বিষয়ে তাদের সহায়তা করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফি গ্রহণ করে নিজে অর্থ উপাজর্ন করাসহ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করতে পারেন।
শিক্ষামূলক ব্লগিং করা:
আপনার যদি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি শিক্ষাজীবনে যা শিখছেন তা নিয়ে ব্লগিং শুরু করুন। আপনার বিষয় সম্পর্কিত সুন্দর একটি ব্লগ তৈরী করে সেখানে আপনার শেখা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরুন এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।
ব্লগটিতে অবশ্যই গেষ্ট পোষ্ট করার সুবিধা রাখুন, যাতে আপনার পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও সেখানে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন এবং সেগুলির সমাধান করার চেষ্টা করুন।
এতে আপনার ব্লগে প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর আসা শুরু হবে এবং আপনি গুগল অ্যাডসেন্সের মত জনপ্রিয় অ্যাড নেটওয়ার্কগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনার ব্লগে আসা ট্রাফিককে অর্থতে রূপান্তর করতে পারবেন। একই সাথে আপনি বিভিন্ন ছোট ছোট শিক্ষামূলক কোর্সের ই-বুক তৈরী করে সেগুলিকে আপনার ওয়েবসাইটের মধ্যেমে বিক্রি করেও ইনকাম করতে পারবেন।
ফিল্যান্সিং করা:
শিক্ষার্থীদের অবসর সময়ে কাজ করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটি উপযুক্ত পেশা। কাজের কোন নির্দিষ্ট সময় না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী সময় বেছে নিয়ে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারে। তবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে অবশ্যই কোন কাজের বিষয়ে দক্ষ হওয়া আবশ্যক।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারনায় প্ররোচিত না হয়ে সম্ভব হলে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের পরই কাজ শুরু করা উচিত। আর যদি আপনার আগে থেকেই কোন কাজের বিষয়ে দক্ষতা থেকে থাকে, তাহলে আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, ফাইভারের মত ফ্রিল্যান্সিংক প্লাটফর্মগুলিতে প্রোফাইল তৈরী করে কাজ করার মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি আর্থিক সাবলম্বিতা অর্জন করা সম্ভব।
একই সাথে পড়াশোনা করা এবং পাশাপাশি অন্য কোন পেশা চালিয়ে যাওয়াটাকে অসম্ভব বলে মনে করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভাবেন যে তারা এই দুইটি কাজকে একসাথে কোনভাবেই সম্পাদন করতে পারবেন না। কারণ দুটি কাজের জন্য সমানভাবে একাগ্রতা নিবেশের প্রয়োজন রয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা বিশ্বাস করিনা। আমার মতে যেকোন শিক্ষার্থী অনলাইনে কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি পড়াশোনায় অনেক ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে। এক্ষেত্রে যেটির প্রয়োজন তা হলো পড়াশোনা ও কাজের সময়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
raju says
আমিও একমত, এ উপায়গুলো ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইনে আয় করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারবে।