পাঁচবারের বিশ্বজয়ী পেলে, নেইমারের ব্রাজিলের হেক্সা মিশন শেষ হয়ে গেল কোয়ার্টার ফাইনালেই। এই পরাজয়ে কেবল ব্রাজিলের ভক্তরাই নয় বরং বিষাদময় হয়েছে পুরো বিশ্ববাসী। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ফুটবল প্রেমীরা। ফ্রান্সের কাছে আর্জেন্টিনার হারার পর ল্যাটিন আমেরিকার একটাই টিম ছিল ব্রাজিল। কিন্তু আর্জেন্টিনার পর সাম্বাদের এমন বিদায়ে শেষ হয়ে গেল ল্যাটিন আমেরিকার স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত ইউরোপিয়ানদের কাছে হার মেনেই নিল ল্যাটিন ফুটবল।
যেখানে ব্রাজিল এবার স্বপ্ন দেখেছিল ৬ষ্ঠ বারের মত শিরোপা জেতার। সেখানে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে গিয়ে সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। বিশ্বকাপের আগের সেই ব্রাজিল যারা একসময় পুরো বিশ্ব কাপিয়ে ছিল, তাদের আজ কেন এমন পরাজয় বরণ?
চলুন দেখে নেয়া যাক ব্রাজিলের পরাজয়ের পেছনে প্রধান পাঁচটি কারণ।
ব্রাজিলের পরাজয়ের ৫টি কারণ
গোলকিপার কুর্তোয়া
বলতেই হয় বেলজিয়ামের গোলকিপার কুর্তোয়া ব্রাজিলের বিরুদ্বে অসাধারণ খেলছেন। তিনিই ব্রাজিলের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করেন। যেখানে নেইমার, মার্সেলো, কুতিনহো, ডগলাস কস্তারার মতো খেলোয়াড়দের আক্রমনের বিরুদ্ধে তিনি বাধা তৈরি করেছেন।
ব্রাজিল যেভাবেই গোল করার চেষ্টা করেছিলেন, সব চেষ্টাকেই কুর্তোয়া বিফল করে দিয়েছেন। কুর্তোয়া শেষ পর্যন্ত নির্বাক ছিলেন একবারের জন্যেও হার মেনে নেন নি। অবশ্য গোলকিপার কুর্তোয়ার সাথে ডিফেন্সে ছিলেন ভিনেসন্ট কোম্পানিরাও।
ব্রাজিলের দক্ষতার অভাব
ফুটবল যারা ভালবাসেন, ব্রাজিলকে যারা ভালবাসেন, আমরা সবাই জানি ব্রাজিলের ফুটবল মানেই সাম্বা। সাম্বা মানেই দক্ষতা আর নিপুণতার ঝলকানি, বলের সাথে এক মায়াময়ী যাদু। আর সেই জাদুকরি আমরা এই খেলায় দেখলামই না।
বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিলের কোন এক্সসেপশনাল কিছুই দেখা যায়নি। শুধু দেখা গেল নেইমারের বার বার পড়ে গিয়ে পেনাল্টি আদায়ের এক ব্যর্থ চেষ্টা। কিন্তু বর্তামান ফিফায় ‘ভিএআর’ প্রযুক্তি চালু হওয়ায় রেফারির কাছে নেইমারের দাবি পাত্তাই পেল না। তিতের আগে থেকে নেয়া সেই চিরাচরিত ৪-৩-৩ ছকেই খেলে গেল।
ব্রাজিলের ডিফেন্স
ব্রাজিলের ডিফেন্স নিয়ে অনেক প্রশ্নই করা হচ্ছে, অনেকেই ব্রাজিলের এই পরাজয়ের জন্য ডিফেন্সকেই দায়ী করছেন। কিন্তু আমি বলব ব্রাজিলের ডিফেন্স মোটেও খারাপ ছিল না। আর এই ম্যাচের আগেও খেলা সব ম্যাচেই এই ডিফেন্স নিয়েই ব্রাজিল খেলছিল। যেখানে মাত্র একটা গোল খেয়েছিলেন থিয়াগো সিলভা, মার্সেলো, মিরান্ডাদের নিয়ে গড়া এই ডিফেন্স।
কিন্তু, কেন বেলজিয়ামের বিপক্ষে খেলা ম্যাচেই দেখা গেল ডিফেন্সের ভঙ্গুরতা। তার কারণ ব্রাজিল যখন বেলজিয়াম আক্রমন করতে যায়, তখনি বেলজিয়ামের বক্স থেকে লুকাকু বল পায়ে দৌড়ে আসলে বার বার তাকে সামলাতে হিমসিম খেতে হতে হয় সিলভা আর মিরান্ডার ডিফেন্সকে।
টিমওয়ার্ক
কেবল মাত্র মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলায় দুই গোলে জেতা ছাড়া ব্রাজিলের আক্রমণ কখনই ছন্দোবদ্ধ বা টিমওয়ার্ক দেখায়নি। প্রতিবারের ন্যায় স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসো বেলজিয়ামের বিপক্ষে বার বার গোল করতে ব্যর্থ হয়। পুরো প্রতিযোগিতায় তিনি কয়েকবার সুযোগ মিস করেন। যাকে নিয়ে আশা করেছিল সেই নেইমারের পা থেকে এসেছে মাত্র একটা গোল। খেলার শেষ পর্যায়ে এসে বারবার বল মিস করায় ছিল পরাজয়ের অন্যতম কারণ ।
ক্যাসেমিরোর হলুদ কার্ড
কোয়ার্টারে আগে সেকেন্ড রাউন্ডের ২টা হলুদ কার্ড কাল হয়ে দাঁড়ায় ক্যাসেমিরোর জন্য। ফলে, এই সমস্যার কারণে ফিফার নিয়ম অনুয়ায়ী খেলতে পারেননি ক্যাসেমিরো। তিনি খেলতে পারেন নি এজন্যই কি ব্রাজিল হেরেছিল? না তা একেবারেই সত্য নয়। কিন্তু তিনি না খেলায় আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্রাজিলকে অনেকটা হিমশিম খেতে হয়েছিল।
ক্যাসেমিরো না খেলায় মাঝমাঠে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ক্যাসেমিরোর পরিবর্তে আনা ফার্নান্দিনহো সেই অভাব পূরণ করতেই পারেননি। বরং তিনি আত্মঘাতী গোল করে দলের জন্য আরও বিপদ নিয়ে আনেন। অন্যদিকে শেষের দিকে লুকাকুর মাঠ ছাড়ার পর যে সুযোগ হয়েছিল সেটিও মিস করেন ব্রাজিল।
Leave a Reply