প্রেমে পড়তে কে না ভালোবাসে? কারো প্রেমে পড়েছেন কিনা বোঝার জন্য বা কাউকে নিজের প্রেমে আকৃষ্ট করার পরামর্শ প্রায় অনেকেই চাইতে শোনা যায়। কিন্তু কিভাবে কারো প্রেমে পড়া থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে, সেই বিষয়টি বলা একটু কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।
আপনি যাকে মনে মনে ইতিমধ্যেই পছন্দ করে ফেলেছেন, তার প্রেমে পড়া থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হলে অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু সময়ে এবং পরিস্থিতিতে আপনাকে নিজের শরির, মন এবং আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। এমনকি, তার কাছে আপনার আবেগ-অনুভূতি গোপণ রাখতে হবে এবং সেই অনুভূতিগুলোকে বাড়তে দেয়া যাবে না বরং কমিয়ে ফেলতে হবে।
অনেকের মনে এই প্রশ্ন আসতেই পারে যে, একজন মানুষ কেন প্রেম পড়তে চাইবেন না। হ্যাঁ, জীবনের কিছু পর্যায়ে একজন মানুষের মধ্যে এই ধরনের আবেগের সাথে না জড়ানোর প্রবণতা আসাটা অতি স্বাভাবিক। তাই নিজের স্কুল, কলেজ বা অফিসের সুন্দর মানুষটির প্রেমে পড়া থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন, সেটা জানা তার জন্য অনেক বেশি জরুরী হয়ে পড়ে।
হতে পারে আপনি এমন একজনের প্রেমে পড়েছেন, এ জীবনে যাকে পাওয়ার কোন সম্ভাবণাই নেই। হয়তো সে আপনার টিচার, যার কাছে আপনি পড়ছেন। হতে পারে আপনি এমন কারো প্রেমে পড়ে গিয়েছেন, যে হয়তো সম্পর্কে আপনার এমন কেউ যাকে কোনদিন বিয়ে করতে পারবেন না, পারিবারিক ও ধর্মীয় বাধা রয়েছে। সুতরাং আপনাকে তার প্রেমে পড়া থেকে নিজের আবেগ-অনুভূতি কন্ট্রোল করতে হবে।
আবার এমনও হতে পারে, আপনি প্রেমে পড়েননি বরং আপনি বুঝতে পারছেন কেউ একজন আপনাকে পছন্দ করে, যার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক যায় না। তাহলেও তার প্রেমে পড়ে যাওয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। মোটকথা, আমাদের জীবনে এমন অনেক মানুষই আসতে পারে এবং আমরা তাদের প্রেমে পড়ে যেতে পারি, যা আমাদের উচিৎ নয়। তাই, সাবধাণতা অবলম্বণ করতে হবে।
কারো প্রেমে পড়া থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করবেন যেভাবে
চলুন নিজেকে কিভাবো কারো পড়া থেকে বিরত রাখতে হবে তার উপায়গুলি জেনে নিই।
পূর্বের সম্পর্ক থেকে কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকলে সেটি স্মরণে রাখুন:
একজন মানুষের জন্য কারো প্রেমে পড়া থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করার একটি অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে, পূর্ববতী কোন সম্পর্কের তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলিকে মনে করা। এক্ষেত্রে কখনোই পুনরায় আপনার অতীত নিয়ে ভাবতে শুরু করবেন না কিন্তু সে সময়ে কিছু খারাপ অভিজ্ঞতাকে স্মরণ করুন। এ ধরনের সম্পর্কের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করুন।
অনেকের সম্পর্কে দেখা যায় যে তার গার্লফ্রেন্ড ঠিকমতো তার ফোন রিসিভ করে না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডকে যথাযোগ্য মূল্যায়ন করে না। আর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিটি হলো কিছু মেয়ে তাদের বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিথ্যা বলে একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে।
আপনার জীবনেও এমন কিছু ঘটে থাকলে সেই খারাপ সময়গুলি এবং সে সময়ে উৎপন্ন পরিস্থিতিগুলির কথা ভাবতে পারেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন যে, আপনি যদি আবার একটি সম্পর্কে নিজেকে জড়ান এবং একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি যদি ঘটে, তাহলে আপনি তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত কিনা।
ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, টাম্বলার, পিনটারেস্ট ব্যবহারে সতর্ক হোন:
প্রতিনিয়ত আপনি যাকে পছন্দ করেন তার ফেসবুক প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করা, তার পোষ্টগুলি পড়ে দেখা বা সে কার সাথে সোস্যাল মিডিয়াতে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, সে-সব ব্যাপারে অনুসন্ধান করার ফলে আপনি প্রতিনিয়তই ভালোবাসার চোরাবালিতে ডুবতে থাকবেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, যেহেতু আপনি তার সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতেই চাইছেন না, সেহেতু তার থেকে নিজেকে যতটা দুরে রাখতে পারবেন, আপনার জন্য ব্যাপারটি ততই সহজ হবে।
আর যদি আপনি মনে করেন যে আপনার পক্ষে ফেসবুক, টুইটার, টাম্বলার, ইনস্টাগ্রাম বা পিনটারেস্টে আপনার পছন্দের মানুষটির কার্যাবলি পর্যবেক্ষণ না করে থাকা সম্ভব নয়, তাহলে এক্ষেত্রে নিজেকে কিছু সময়ের জন্য সোস্যাল মিডিয়া থেকে দুরে রাখুন।
মনে রাখবেন, আপনি তার সম্পর্কে যত তথ্য লাভ করতে থাকবেন ততই কার প্রতি আপনার আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং একসময় তার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া আপনার কোন উপায়ই থাকবে না। তাই হয় সোস্যাল মিডিয়াতেও আপনার ক্রাশ থেকে দুরে থাকুন, নয়তো সোস্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দুরে রাখুন।
সিঙ্গেল থাকার উপকারি দিকগুলো ভাবুন:
আপনার জীবনে যখনই কোন মেয়ের আবির্ভাব ঘটবে এবং আপনি তার সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে পড়বেন, তখন আপনি মোটেও আর নিজেকে পুরোপুরি স্বাধীন ভাবতে পারবেন না। পক্ষান্তরে, আপনি যদি সিঙ্গেল হন, তাহলে আপনার যখন মন যা চাইবে তাই করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। নিজের জন্য যথেষ্ট সময় আপনার হাতে থাকবে এবং কাউকে কোন প্রকার জবাবদিহি করার চিন্তা ভাবনা ছাড়াই আপনি আপনি একটি স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারবেন।
বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যদি কারো মন একবার ভেঙ্গে যায়, তাহলে সেই মানুষটির পক্ষে অন্য কাউকে নতুনভাবে বিশ্বাস করতে পারাটা যথেষ্ট কঠিন কাজ। এছাড়াও কারো দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়া, সম্পর্কে ঘন ঘন ঝগড়া বিবাদ, সর্বপরি ভালোবাসার মানুষটির দ্বারা জীবনে বিভিন্ন দুর্বিসহ পরিস্থিতির উদ্ভবের কারণেও অনেকে দ্বিতীয়বার এধরনের সম্পর্ক থেকে নিজেকে দুরে রাখাকে উত্তম ভাবেন।
যদিও কারো প্রেমে পড়া থেকে আপনি যদি নিজেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েই যান, তাহলে আমি বলবো আপনি যথেষ্ট ভাগ্যবান। আর একবার যদি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনার দ্বারা এ ধরনের কোন কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই, তাহলে একটি চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে থাকুন। আর ভাবুন যে, যদি আপনি কোন সম্পর্কে জড়িয়েই পড়তেন, তাহলে এই পরিস্থিতির তুলনায় আপনার সাথে আর কি কি হতে পারতো।
ভালোবাসার সম্পর্ক যে খুব খারাপ কিছু তা আমি বলছি না। প্রত্যেক মানুষের তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের পিছনে কিছু যুক্তি এবং কারণ থাকে। যারা প্রেম করার বা প্রেমে পড়ার বিপক্ষে, তাদের কাছে যেমন এটি করার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে, তেমনি যারা প্রেমে পড়েছেন বা পড়তে চান, তাদের কাছেও একইভাবে কিছু কারণ রয়েছে।
আমার যেহেতু যারা প্রেমে পড়তে অনিচ্ছুক, তাদের বিষয়ে কথা বলছি, তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই যে, আপনি যখন কোন সম্পর্কের মধ্যে আটকা থাকবেন, তখন এটি অতি স্বাভাবিক যে আপনি আপনার জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে অপেক্ষাকৃত কম সময় ব্যয় করতে পারবেন।
আপনি দিবানিদ্রায় থেকে স্বপ্ন দেখার মত ডুবে থাকবেন বা হয়তো রাতের অনেক গভীর সময় পর্যন্ত আপনার প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলবেন, যা আপনাকে আপনার কর্ম এবং লক্ষ্য থেকে দুরে সরিয়ে দেবে। আর যদি আপনি শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কারণ, জীবনের একটা সময় হয়তো আপনি আবার প্রেম করতে পারবেন। কিন্তু যে সময়টি আপনার হাত থেকে চলে যাচ্ছে তা দ্বিতীয়বার ফেরত আসবে না। তাই যথেষ্ট ভাবুন এবং সিদ্ধান্ত নিন।
Leave a Reply