সম্পর্কের একটা সময় আমরা একে অপরকে নিজেদের গুরুত্বটা বোঝাতে চাই। বিশেষ করে ঘটনাটি মেয়েদের সাথেই বেশি ঘটে থাকে। সম্পর্কের শুরুতে যেই মানুষটি তার সাথে সময় কাটানো আর কথা বলার জন্যে সবকিছু বাদ দিয়ে অপেক্ষা করতে ভালোবাসতো, সম্পর্কের একটা পর্যায়ে সেই বিষয়গুলি ক্রমেই কেমন যেনো কমে আসতে শুরু করে।
এ ধরনের অবস্থাতে প্রতিটি মেয়ের মনেই প্রথম যে খেয়ালটি আসে তা হলো যে, তার বয়ফ্রেন্ড বা সঙ্গীর জীবনে তার গুরুত্ব হয়তো কমতে শুরু করেছে। তাই নিজের গুরুত্ব উপলব্ধি করানোর জন্য অনেক মেয়েই চায় তার ছেলে বন্ধুটিকে কিছু কাজের মাধ্যমে ঈর্ষাপরায়ন করে তুলতে।
মেয়েরা মনে করেন এর মাধ্যমে তার ছেলে বন্ধুটি নিজের জীবনে তার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুভব করতে পারবে। পাশাপাশি ছেলেটি মেয়েটিকে কতটা ভালোবাসে, তাও বুঝতে পারবে এবং তাকে হারানো ভয়ে আবার আগের মত আচরণ করতে শুরু করবে।
একটি মেয়ের জন্য কোন ছেলেকে ঈর্ষাপরায়ন করে তোলা খুব বেশি কষ্টের কাজ নয়। কিন্তু যাকে ঈর্ষাপরায়ন করছেন সে যদি আপনার ভালোবাসার মানুষ হয়ে থাকে এবং আপনি যদি আপনার সীমা সম্পর্কে না জানেন, তাহলে অবশ্যই সেটি আপনাদের সম্পর্কের চিরস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে আপনি যে কাজটি করতে চলেছেন তার উদ্দেশ্য আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে আপনার প্রতি আরো আকৃষ্ট করে তোলা, তাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলা নয়। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি বলবো কোন ছেলেকে ঈর্ষাপরায়ন করে তোলাটা মোটেও ভালো কাজ নয়। কিন্তু এটাই যদি আপনি চান তাহলে অনুসরন করুন এই অসাধারণ ধাপগুলি।
যেভাবে আপনার বয়ফ্রেন্ডকে ঈর্ষাপরায়ন করে তুলবেন
প্রস্তুতি নিন:
কোন ছেলেকে ঈর্ষাপরায়ন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই আগে তার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। আপনি ছোট খাটো কাপড় পরে বাইরে ঘোরাঘুরি শুরু করলেই যে সে ঈর্ষাপরায়ন হয়ে উঠবে সেটা ভাবা ভুল হবে। কিছুদিন সময় নিন এবং ভাবুন যে আপনার কোন বিষয়গুলি তার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার এবং আপনার কাছ থেকে সে কি কি বিষয়গুলি আশা করে।
প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির একটি তালিকা তৈরী করে ফেলুন, যখন দেখবেন যে তার সম্পর্কে মোটামুটি সব বিষয়গুলিই আপনার তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে, ভেবে নিন আপনি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
নিজের প্রতি গুরুত্ব দিন:
আপনাকে কে কতটা গুরুত্ব দেবে বা মূল্যায়ন করবে তার অনেক বড় একটা সম্ভাবনা নির্ভর করে আপনি নিজেকে কতটা বা কিভাবে মূল্যায়ন করেন তার উপর। আপনার মনের মধ্যে যদি সব সময় এই চিন্তাই ঘুরতে থাকে যে, আপনি তাকে ছাড়া একটি মুহুর্তও ভালো থাকতে পারবেন না, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে বেশিরভাগ সময় অখুশি হয়েই থাকতে হবে।
নিজে খুশি থাকতে শিখুন। বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য মানুষদের সাথে গল্প গুজব করে সময় কাটান, বাইরে ঘুরতে যান আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো এক মুহুর্তের জন্যের নিজের মন খারাপ করবেন না। আপনি যাকে ঈর্ষাপরায়ন করতে চান, তাকে বুঝতে দিন যে তাকে ছাড়াও আপনি সাবলিল জীবন যাপন করতে সক্ষম। এতে একটা সময় সেও আপনার ভালো সময়ের সঙ্গী হতে চাইবে এবং আপনাকে বেশি বেশি সময় ও গুরুত্ব দিতে শুরু করতে।
সতর্কতার বিষয়টি হলো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেওয়া মানেই ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া নয়। আপনার ভালোমানুষটি যদি আপনার এধরনের আচরণ অপছন্দ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
আপনি যা চাইছেন তা আপনার মেয়ে বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনের সাথে আড্ডা দিলেও হয়ে যাবে। কিন্তু যদি তাকে ঈর্ষাপরায়ন করতে আপনি এমন কোন কাজ করেন যা সে পছন্দই করে না, তাহলে ঈর্ষাপরায়ন হওয়ার পরিবর্তে আপনার প্রতি তার বিতৃষ্ণা জন্মানোর সম্ভাবনাই বেশি।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন:
আপনি যা করতে ভালোবাসেন, সেই কাজগুলি করতে থাকুন। এতে একদিকে আপনি তার অপেক্ষাকৃত কম অভাব বোধ করবেন, অপরদিকে সেও আপনার কম সময় পাওয়ার কারণে আপনার প্রতি লক্ষ্য করতে শুরু করবে। এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর এমন একটি পরিস্থিতিতে, যখন আপনার সম্পর্ক প্রায় শেষ হতে চলেছে।
এটি তার মনে এমন চিন্তার উদ্ভব ঘটাবে যে আপনি তাকে ছাড়াও অনেক ভালো আছেন এবং সে চলে যাওয়াতে আপনার জীবনে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। এধরনের পরিস্থিতি বেশিরভাগ ছেলেরাই সামাল দিতে পারে না এবং ঈর্ষাপরায়ন হয়ে ওঠে। কারণ, ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে একটি ছেলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বটিই আশা করে।
সামান্য উপক্ষো করা শুরু করুন:
মনে করুন, আপনি যাকে ঈর্ষাপরায়ন করতে চান এবং আপনার পরিচিত অন্য কেউ একসাথে বসে আছে। আপনি সরাসরি আপনার পরিচিত ব্যক্তিটির সাথে কথা বলুন এবং তার খোঁজখবর নিন আর যাকে ঈর্ষাপরায়ন করতে চান, তার সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
যদি সে সোস্যাল মিডিয়াতে আপনাকে ম্যাসেজ করতে থাকে, তাহলে সাথে সাথে তার ম্যাসেজের উত্তর না দিয়ে কিছু সময় বিরতি নিয়ে উত্তর করুন। যাতে সে মনে করে যে সে ছাড়াও আপনি অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছেন।
আপনাদের সম্পর্কটি যদি এমন হয়ে থাকে যে, সে যখন ইচ্ছা তখনই ফোন করলে আপনার সাথে কথা বলতে পারে, তাহলে সময় এসছে একটু বিরতি নেওয়ার। সব সময় তার ফোন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। বেশ কিছু সময় পর তাকে কল করুন এবং বলুন যে আপনি অন্য কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু কৈফিয়ত দেয়া থেকে বিরত থাকুন অর্থাৎ আপনি যতটুকু বলেছেন এর অতিরিক্ত তার কোন প্রশ্নের উত্তর দেবেন না বা সে জিজ্ঞাসা করলেও এড়িয়ে যান।
সোস্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করুন:
আপনার আনন্দঘন মুহুর্তগুলির ছবিগুলি প্রতিনিয়ত সোস্যাল মিডিয়াতে পোষ্ট করুন এবং সে সময় আপনার মজার মজার কিছু ঘটনা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এর মাধ্যমে আপনার ছেলে বন্ধুটি পরোক্ষভাবে বুঝতে পারবে যে, সে কি হারাতে বসেছে এবং সেও আপনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা শুরু করবে।
ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে কিছু কিছু ছেলে প্রথমেই আপনার সামনে ধরা না দিয়ে উল্টো রাগ দেখানো বা আপনার কাছে প্রশ্ন করে বসতে পারে। আপনি সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে তাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। দেখবেন কিছু সময়ের মধ্যেই সেই আপনার কাছে তার কৃত কর্মের জন্য অনুতাপ করবে।
মেয়েরা বিভিন্ন কারণে ছেলেদের ঈর্ষাপরায়ন করে তুলতে আগ্রহী হয়ে থাকে। যাকে ঈর্ষাপরায়ন করে তুলবেন, আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার প্রতি তার হৃদয়ে কোন অনুভুতি কাজ করে কিনা। কারণ ঈর্ষাপরায়ন সে শুধুমাত্র তখনই হবে যখন আপনার প্রতি তার আবেগ কাজ করবে। যদি তা না হয় তাহলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এ ধরনের কাজে আপনার সফলতার সম্ভবনা তখনই বেশি, যখন আপনি এই পদ্ধতিগুলো এমন কারো উপর প্রয়োগ করবেন যে ইতিমধ্যেই আপনাকে ভালোবাসে।
Leave a Reply