কম্পিউটারের মৌলিক অংশ সিপিউ। সিপিউ ব্যতীত কম্পিউটার কল্পনা করা অসম্ভব।কম্পিউটারের সকল কাজকর্ম সম্পাদন হয় এই সিপিউ এর মধ্যে। তাই এই অংশ সব সময় ঠান্ডা রাখা জরুরি। এই ঠান্ডা করার কাজটি করে থাকে কুলিং ফ্যান।
একদম সাধারণ একটা পিসিতে ৩টি কুলিং ফ্যান থাকে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য, প্রসেসরের জন্য এবং সম্পূর্ণ সিপিউ এর জন্য, আর কেউ যদি গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে তার জন্য।
একটি কথা জেনে রাখা ভাল এই ফ্যানগুলোর কাজ ঠান্ডা রাখা। আপানার পিসি যদি ঠান্ডা থাকে, সেক্ষেত্রে এটা বন্ধ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন এই কুলিং ফ্যান পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি? আজকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
কম্পিউটারের কুলিং ফ্যান
সমস্যা চিহ্নিত করুন
সকল কম্পিউটারে কুলিং ফ্যান পরীক্ষা করার জন্যে সিস্টেম ডায়গনস্টিক টুলস আছে। এর জন্য আপনার কম্পিউটার রিস্টার্ট করুন। বায়োসে প্রবেশ করুন। আপনার স্ক্রিনে বায়োসে প্রবেশের কি দেখতে পারবেন। না পেলে আপনার ব্রান্ড অনুযায়ী নিচের কি-বোর্ড কি দিয়ে চেষ্টা করুন।
বায়োসে প্রবেশ করার কি-বোর্ড কি সূমহ:
- BIOSTAR – Del
- GIGABYTE – Del
- Intel – F2
- MSI – Del
- ASRock – F2
- Acer – F2
- ASUS – F2/Del
- Dell – F10
- Fujitsu – F2
- HP – F10
- Intel – F2
- Lenovo – F2
- Sony Vaio – F10
- Toshiba – F12
মাদারবোর্ড ভেদে এর ইন্টারফেস ভিন্ন হতে পারে। আপনার বায়োস থেকে Diagnostics বা Test শব্দটি খুঁজে বের করুন। তারপর আপনার কুলিং ফ্যান পরীক্ষা করে দেখুন ভাল আছে কিনা।
১. কম্পিউটার রিস্টার্ট করুন
কম্পিউটারের অধিকাংশ সমস্যা সমাধান হয় শুধু মাত্র রিস্টার্ট দেয়ার মাধ্যমে। আপনার ভাগ্য ভাল হলে রিস্টার্ট দেয়ার মাধ্যমে হয়তো কুলিং ফ্যান কাজ করা শুরু করে দিবে। তাই আপনি একবার আপনার পিসি রিস্টার্ট দিয়ে দেখতে পারেন কাজ করে কিনা।
২. কুলিং ফ্যান পরিষ্কার করুন
কম্পিউটারের প্রধান শত্রু ধুলোবালি। কম্পিউটারের যন্ত্রাংশে ধুলোবালি জমে অকার্যকর করে দেয়। সেক্ষেত্রে আপনার কাজ হলো কম্পিউটারথেকে ধুলোবালিকে দূর করা। কুলিং ফ্যানগুলোতে সাধারণত সবচেয়ে বেশী ধুলো জমে। ফলে অনেক সময় ফ্যানের মটর বন্ধ হয়ে যায়।
এরকম পরিস্থিতিতে আপনার কাজ হল কুলিং ফ্যান পরিষ্কার করা। পরিষ্কারের কাজটি ভাল মত করতে চাইলে কমপ্রেস এয়ার ব্যবহার করতে পারেন। এটা ফ্যানের মটরকে দ্রুত কার্যকর করতে পারবে। বাজারে একটু খোঁজ করলে আপনি এই ধরণের টুলস পাবেন। এই টুলস ব্যবহার করে খুব সুন্দরভাবে কম্পিউটার পরিস্কার করতে পারবেন। তবে শুরু করার আগে কম্পিউটার পরিস্কার করার সঠিক পদ্ধতি জেনে নিলে ভাল হয়।
বায়োস রিসেট কিংবা ফ্লাশ করুন
ফ্যান কতটুকু স্পিডে ঘুরবে তা বায়োসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই কুলিং ফ্যান কাজ না করলে আপনি আপনার বায়োস রিসেট বা ফ্লাশ করে দেখতে পারেন। বায়োস রিসেট করার ফলে আপনার পিসির কোন ক্ষতি হবে না। তাই এটা নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করার কিছু নেই।
বায়োস রিসেট বা ফ্লাশ করার পদ্ধতি:
- আপনার পিসি রিস্টার্ট করুন।
- F2 (আপনার মাদারবোর্ডে ডিফল্ট বায়োস এক্সেস কি জানতে উপরের লেখাটি দেখুন) অথবা আপনার স্ক্রিনে দেখানো কি অনুযায়ী বায়োসে প্রবেশ করুন।
- এবার Load Setup Defaults অপশন খুঁজে বের করুন এবং সেভ করুন।
- পিসি পুনরায় চালু করুন এবং ফ্যান কাজ করে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
৪. ফ্যান রিপ্লেস করুন
যদি আপনি অন্য পিসিতে আপনার ফ্যান পরীক্ষা করে থাকেন এবং এটি কাজ না করে, তবে আপনাকে নতুন কুলিং ফ্যান ক্রয় করতে হবে। তার আগে আপনি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনার পিসিতে অন্য একটি ভাল কুলিং ফ্যান লাগিয়ে দেখতে পারেন কাজ করে কিনা।
৫. মাদারবোর্ড পরিবর্তণ করুন
আপনার মাদারবোর্ডের সমস্যা বোঝার জন্য অন্য একটি ভাল ফ্যান দিয়ে পরীক্ষা করুন। এটি যদি না ঘুরে, তবে আপনার মাদারবোর্ড প্রতিস্থাপন করতে হবে। আপনার যদি ভাল ইলেকট্রনিক্স দক্ষতা থাকে, তবে আপনি ভোল্টেজ আউটপুট যাচাই করে দেখতে পারেন। 3-5V বা 12V এর মধ্যে থাকলে বুঝবেন সঠিক ভোল্টেজ পাচ্ছে। আর যদি কোন ভোল্টেজ না থাকে অথবা 3V এর নিচে থাকে, তবে আপনার কম্পিউটারটি ফ্যান চালানোর জন্য যথেষ্ট শক্তি সরবরাহ করতে পারছে না।
৬. পাওয়ার সাপ্লাই পরিবর্তন করুন
যেহেতু ল্যাপটপে পাওয়ার সাপ্লাই মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত থাকে, তাই মাদারবোর্ড পরিবর্তণ করলে সমস্যাটি সমাধান হবে। আপনার যদি ডেস্কটপ কম্পিউটার হয়, তাহলে শুধু মাদারবোর্ড পরিবর্তণ করে অনেক সময় সমস্যাটি সমাধান নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার পাওয়ার সাপ্লাই পরিবর্তণ করা জরুরি। কারণ প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎপাওয়ার সাপ্লাই থেকে আসে।
পাওয়ার সাপ্লাই ক্রয়ের সময় অবশ্যই সেটা আপনার মাদারবোর্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা দেখে নেয়া জরুরি। এছাড়া পাওয়ার সাপ্লাইয়ের পোর্টগুলো মাদারবোর্ডে কাজ করে কিনা তাও দেখে নিতে হবে।
শেষ কথা
যেহেতু কুলিং ফ্যান কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের একটি অংশ, তাই এর সমাধান হার্ডওয়্যারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে আমি চেষ্টা করেছি তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিগুলো সামনে নিয়ে আসতে। আপনাদের কাছে যদি এর থেকে ভাল সমাধান থেকে থাকে, তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের ৮টি কার্য্যকরী উপায় জানতে ভুলবেন না। এতে আপনার কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ ভাল থাকবে, সহজে নষ্ট হবে না।
Leave a Reply